মেট্রোরেল সম্পর্কে রচনা | মেট্রোরেল সম্পর্কে ১০, ১৫ টি বাক্য

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মেট্রোরেল সম্পর্কে রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি মেট্রোরেল প্রকল্প রচনা pdf টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মেট্রোরেল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য  টি।

মেট্রোরেল সম্পর্কে রচনা
মেট্রোরেল সম্পর্কে রচনা

মেট্রোরেল সম্পর্কে রচনা

ভূমিকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল । বিশ্লেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এটি পুরো ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা কমিয়ে আনবে। যেহেতু ঢাকা বিশ্বের জনবহুল মেগা সিটিগুলোর মধ্যে অন্যতম সেহেতু এই শহরের ট্রাফিক সমস্যা দূর করার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্প একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে মেট্রোরেল আগে থেকেই রয়েছে। ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১২ সালে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । এটি নির্মাণ করা বড়ো চ্যালেঞ্জ হলেও প্রকল্পটি শেষ করার জন্য সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । ঢাকাতে এখনো কোনো ম্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থা নেই । তাই মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকাবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেট্রোরেল কী?: ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থাকে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সংক্ষেপে MRT হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। এটি সুবিধাজনক, দ্রুতগামী, স্বাচ্ছন্দ্যময় নগরকেন্দ্রিক যানবাহন। মেট্রোরেল একটি বিদ্যুৎচালিত পরিবহণ ।

প্রকল্প বর্ণনা: ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহণ হিসেবে ৬টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে Dhaka Mass Transit Company Limited (DMTCL)-এর আওতায় মোট ১২৮.৭৪১ কিমি (উড়াল ৬৭.৫৬৯ কিমি ও পাতাল ৬১.১৭২ কিমি) দীর্ঘ ও ১০৪টি স্টেশন (উড়াল ৫১টি ও পাতাল ৫৩টি) বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্তে সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে ।

কাজের অগ্রগতি ও সম্ভাব্যতা:

১. এমআরটি লাইন-৬, বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল: এই লাইন ২০.১০ কি.মি দীর্ঘ । প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা ৩য় পর্ব হতে মতিঝিল পর্যন্ত Mass Rapid Transit (MRT) Line 6 বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৮৬%। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের অগ্রগতি ৯২.২% । দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৫.৮০% । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে MRT Line-6 মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার নিমিত্ত Detailed Design পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই অংশের পরিসেবা যাচাই এর কাজ শুরু করা হয়েছে। দায়িত্বরতরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে কাজ চলছে তা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই রেলপথটি সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চালানো হয়। এর আগে গত ২৭ আগস্ট, ২০২১ উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুরের পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলাচল করে।

২. এমআরটি লাইন-১ বা বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল: ৩১.২৪১ কিমি দীর্ঘ MRT Line-1 দুটি অংশে বিভক্ত। 

ক. বিমানবন্দর, .

খ. পূর্বাচল ।

ক. বিমানবন্দর: বিমানবন্দর রুটের দৈর্ঘ্য ১৯.৮৭২ কিমি এবং মোট পাতাল স্টেশনের সংখ্যা ১২টি। এ রুটেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে।

খ. পূর্বাচল: পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১.৩৬৯ কিমি। সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে ৭টি উড়াল স্টেশন ।

৩. এমআরটি লাইন-৫; নর্দান রুট: ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর হতে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে ২০ কিমি দীর্ঘ মেট্রোরেলের পরিকল্পনা রয়েছে। পাতাল ১৩.৫০ কিমি এবং উড়াল ৬.৫০ কিমি । এতে ১৪ টি স্টেশন (পাতাল ৯টি ও উড়াল ৫টি) রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে । বর্তমানে নকশা পরিকল্পনা ও জরিপের কাজ চলমান। ৪. এমআরটি লাইন-৫; সাউদার্ন রুট: ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে ১৭.৪০ কিমি দীর্ঘ এবং ১৬টি স্টেশন বিশিষ্ট মেট্রোরেলের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে । পাতাল ১২.৮০ কিমি ও উড়াল ৪.৬০ কি.মি এতে স্টেশন থাকবে ১৬টি। ১২টি পাতাল ও ৪টি উড়াল স্টেশন । ৫. এমআরটি লাইন-২: ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিমি দীর্ঘ G2G ভিত্তিতে PPP পদ্ধতিতে MRT Line-2 নির্মাণের লক্ষ্যে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে ।

৬. এমআরটি লাইন-৪: ২০৩০ সালের মধ্যে PPP পদ্ধতিতে কমলাপুর - নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাকের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিমি দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন আছে।

মেট্রোরেলের উপকারিতা:

ক. যানজট দূরীকরণ: ঢাকায় বর্তমানে ১.৭০ কোটির বেশি লোক বসবাস করে। আয়তনের তুলনায় এই জনসংখ্যা অনেক বেশি তাই স্বভাবতই যানজট সমস্যা আমাদের নিত্যসঙ্গী। মেট্রোরেল প্রকল্প ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে বলে যানজট অনেকটা হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায় । খ. জনগণ সহজেই চলাফেরা করতে পারবে: জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা অপ্রতুল। লোকজন গণপরিবহণে ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করে। বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী, নারীদের জন্য এভাবে • চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর। মেট্রোরেল যথাসময়ে অনেক যাত্রী পরিবহণ করবে বলে লোকজন স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে। গ. অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালীকরণ: মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকাবাসীর পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। সরকারেরও এই প্রকল্প থেকে ব্যাপক আয় হবে । অপচয় রোধ হবে, দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে।

ঘ. সময়ের অপচয় রোধ: ঢাকাবাসীর প্রধান সমস্যা সময় অনুযায়ী কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারা। মেট্রোরেল প্রতিটি স্টেশনে মাত্র ৪০ সেকেণ্ড দাঁড়াবে । তাই সকলে নির্ধারিত সময়ে যার যার কর্মস্থলে পৌছতে সক্ষম হবে।

ঙ. সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকা: মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অকেজো যানবাহন হ্রাস পাবে । যত্রতত্র যানবাহনের জট থাকবে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী যানবাহন চলাচল করবে। যাত্রীরা নির্ধারিত স্থান থেকে ওঠানামা করবে। ফলে একটি সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকা উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। রেলের ধারাবাহিক চলাচল মনোরম দৃশ্য ধারণ করবে। বিশ্ববাসীর কাছে আর ঢাকা অপরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে পরিচিতি পাবে না । বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে।

উপসংহার: এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গড়ে ১৭০০ মানুষ নতুন বসবাসকারী হিসেবে ঢাকায় আসে। এমনিতে ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি, আবার বাড়তি জনসংখ্যার চাপ মোকাবিলার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪ মিনিট পরপর একটি ট্রেন ১৮০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে ট্রাফিক জ্যাম দ্রুত হ্রাস পাবে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে ঢাকা ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মেট্রোরেল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ঢাকা মেট্রোরেল রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই মেট্রোরেল রচনা pdf download  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ