মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা  টি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা

মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা

সূচনা: বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের পরিপূরক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বাঙালি জাতির পিতা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। বছরটিকে আখ্যায়িত করা হয়েছে 'মুজিববর্ষ' নামে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান- কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে উদযাপিত হয় স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী যা বাঙালির ইতিহাসকে করেছে তাৎপর্যমণ্ডিত ।

মুজিববর্ষ: ‘মুজিববর্ষ' হলো স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্যে সরকার ঘোষিত একটি বর্ষ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ২০২০-২১ খ্রিষ্টাব্দকে ‘মুজিববর্ষ' হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ পালিত হয়।

  • ক্ষণগণনা: ১০ই জানুয়ারী ২০২০ সাল থেকে ক্ষণগণনা শুরু। সংসদ অধিবেশন: ৮ই নভেম্বর ২০২০ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশেষ অধিবেশন ।
  • স্লোগান: “মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি, আর্থিক খাতের অগ্রগতি” । লোগো ডিজাইনার: সব্যসাচী হাজরা। অনুমোদন দেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
  • থিম সং: "গানের কথা— তুমি বাংলার ধ্রুবতারা তুমি হৃদয়ের বাতিঘর; গীতিকার- কামাল চৌধুরী; সুর— নকীব খান ।
  • বঙ্গবন্ধু স্মারক ডাকটিকেট: প্রকাশ- জাতিসংঘ, অবমুক্ত করা হয়: ২৯শে মে, ২০২০
  • ২০০ টাকার নোট: বাংলাদেশ ব্যাংক মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বাজারে ছাড়ে ২০০ টাকার নোট
  • মুজিববর্ষে ইউনেস্কো: বাংলাদেশের সাথে মুজিববর্ষ পালন করেছে ইউনেস্কোর ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম সায়েরা খাতুন ।

বঙ্গবন্ধু গ্রামের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেন। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৪৪ সালে আইএ ও ১৯৪৬ সালে বিএ পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন । ম্যাট্রিক পাশের পর ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৮ সাল ১১ মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পালিত ধর্মঘট থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন জনদাবি আদায়ের আন্দোলনে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৬৬ সালে ৬ দফা পেশ করেন। ১৯৬৮ সালে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র জনতা শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন এবং বাঙালির প্রধান নেতায় পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২৫শে মার্চ মধ্যরাত শেষে, অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে । এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। ৮ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তিসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কতিপয় কুচক্রী, ক্ষমতালোভী সদস্য তাঁকে সপরিবার হত্যা করে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা ঐ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান ।

মুজিববর্ষ উদযাপনের কমিটি গঠন: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করে সরকার ।

  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে ১০২ সদস্য বিশিষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
  • জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র: সমকাল, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২১/

মুজিব চিরন্তন: মুজিববর্ষে ১৭ই মার্চ ২০২১ থেকে ২৬শে মার্চ ২০২১ পালিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর প্রধান উৎসব ‘মুজিব চিরন্তন'। প্রধান অতিথি ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ। সভাপতিত্ব করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জীবন- কর্ম, জীবনব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সর্বোপরি তার বৈচিত্র্যময় জীবনের নানান অনুষঙ্গকে উপজীব্য করে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয় ।

  • জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনায় পর্দা ওঠে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার।

মুজিববর্ষের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের এবং গর্বের পুরোটা জুড়েই রয়েছে একটি নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ যে বাঙালি জাতির উৎসাহ উদ্দীপনার মূল প্রেরণা বিন্দু হবে এবং এর তাৎপর্য যে এ জাতির সমগ্র চেতনায় প্রোথিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী একটি বিশেষ সময় কালের অর্জন ও গৌরবের সাথে যুক্ত । বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র জীবন-কর্ম ও ধ্যান-ধারণাকে নিবেদন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। সেখানে ছিল না বিলাসিতা, ছিল না অর্থের লোভ, ছিল না হিংসা-বিদ্বেষ, মানবতা ও মানবতাবাদী আদর্শই ছিল তাঁর একমাত্র আদর্শ ও প্রেরণা। তিনি নিজের সমগ্র জীবন সংগ্রামে নিবেদন করে বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। লাল সবুজের পতাকা ও স্বাধীন দেশের মানচিত্র। তিনি শুধু জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি চেয়েছিলেন একটি সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গড়ে তুলতে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছে বাংলাদেশের স্থপতি, তাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর কর্ম ও অবদানকে স্বীকার করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেছে সর্বান্তকরণে। বিশ্বব্যাপী তাঁর জন্মশতবর্ষ পালনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর জীবন দর্শন ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের প্রত্যাশা: বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে যেতে পারলেও উন্নতি ও সমৃদ্ধির চূড়ায় নিয়ে যেতে পারেননি। তাই স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বটি এসে বর্তায় পরবর্তী প্রজন্মের উপর। আমাদের এ দায়িত্ব পালনের শিক্ষাই দিয়েছে মুজিববর্ষ। মুজিবশতবর্ষে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি তা আমরা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নিবেদন করতে পারি তবে তা হবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। মুজিবশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি এবং বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে, ভালোবাসা জানিয়েছে, তাঁকে অনুসন্ধান করেছে, অনুশীলন করেছে। এই সকল চর্চার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলারূপে গড়ে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

উপসংহার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কর্ম, কীর্তি, আদর্শ ও জীবনদর্শনের বাস্তব প্রতিরূপ। আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও জাতিকে মুক্ত করার সংগ্রামে জেল, জুলুম, অত্যাচার কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাঁর আদর্শ ও চেতনা যুগে যুগে প্রতিটি স্বাধীনতাকামী দেশ ও জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। মুজিববর্ষে আমরা সেই আলোকিত ও আদর্শ ব্যক্তিত্বকেই বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছি তাঁর আদর্শ অনুসরণের মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, যা বিশ্বে আমাদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ