ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যাবলি কীভাবে দানশীলতা থেকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে ব্যাখ্যা কর
ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যাবলি কীভাবে দানশীলতা থেকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর
প্রশ্ন ২.২৪ | ইংল্যান্ডে সমাজকর্মের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
অথবা, ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যাবলি কীভাবে দানশীলতা থেকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক সমাজকর্মের সূতিকাগার বলা হয় ইংল্যান্ডকে । তবে একথা সত্য যে ইংল্যান্ডে পেশাগত সমাজকর্মের আজকের এ আধুনিক রূপ একদিনে বা একক কোনো প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। প্রাথমিক দানশীলতা থেকে শুরু করে নানাবিধ আইনগত পদক্ষেপ ও বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। ইংল্যান্ডের প্রাথমিক সমাজকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো ছিল অসংগঠিত ও অপরিকল্পিত। পেশাগত সমাজকর্মের আজকের এ সংগঠিত রূপদানে কতিপয় মনীষী ও সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যাবলি কীভাবে দানশীলতা থেকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে ব্যাখ্যা কর |
● ইংল্যান্ডে সমাজকর্মের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ : আধুনিক পেশাগত সমাজকর্মের জন্মস্থান বা পীঠস্থান বলা হয় ইংল্যান্ডকে। বিশ্বে যে কয়টি স্বীকৃত পেশা রয়েছে তার মধ্যে সমাজকর্ম একটি। অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্মেরও রয়েছে ক্রমবিকাশের এক ধারাবাহিক ইতিহাস। প্রাথমিক সমাজকল্যাণমূলক ধারণা ও দর্শন অনুযায়ী পেশাগত সমাজকর্মের ধারণা সংগঠিত ও বিকশিত হয় । নিম্নে ইংল্যান্ডে পেশাগত সমাজকর্মের ক্রমবিবর্তনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলো
১. প্রাথমিক দানশীলতা থেকে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত : পেশাগত সমাজকর্মের ধারণা বিকাশে ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত দানশীলতা কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তিগণ পরকালীন মুক্তি লাভের আশায় নিজেদের ইচ্ছায় এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতো । ইংল্যান্ডের প্রাথমিক দানশীলতার ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ লক্ষ করা যায় তা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. খ্রিস্টানধর্ম ও গির্জা : খ্রিস্টানধর্মের অনুসারীদের দানশীলতা কার্যক্রম সমাজকর্ম ধারণার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গির্জার মাধ্যমে দুস্থ, অসহায়, অন্ধ, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, নির্ভরশীল প্রভৃতিদের সাহায্য করা হতো ।
খ. দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ ও দানশীলতা : দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমকে সংগঠিত ও পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালিত করার জন্য কতিপয় বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করা হয়; যেমন- অক্ষম দরিদ্র ও সক্ষম দরিদ্র। সক্ষমতার ভিত্তিতে দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করার ধারণা পেশাগত সমাজকর্মের ধারণা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. গিল্ড : সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে ব্যবসায়ী, ধনী, শ্রমজীবী মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি সামাজিক সংঘ হচ্ছে গিল্ড । এসব গিল্ড অসহায়, এতিম, অসুস্থ, নির্ভরশীলদের সাহায্য করতো ।চনা করা হলো-
২. ১৩৪৯ থেকে ১৫৯৭ সাল পর্যন্ত গৃহীত আইনগত পদক্ষেপ : ১৩৪৯ থেকে ১৫৯৭ সাল পর্যন্ত সময়ে গৃহীত আইনগত পদক্ষেপগুলো সমাজকল্যাণমূলক ধারণাকে সংগঠিত, দৃঢ় করতে সাহায্য করে। এ সময়কালে গৃহীত আইনগত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে কাজে আগ্রহী করে তোলে পরনির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ সময়ে প্রণীত আইনের মধ্যে অন্যতম হলো ১৩৪৯ সালের শ্রমিক আইন, অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রবর্তিত ১৫১৩ এবং ১৫৩৬ সালের আইন, ১৫৬২ সালের স্টাটুট অব আর্টিফিশার্স, ১৫৭৬ সালের সংশোধনাগার আইন ইত্যাদি। এসব আইনের মাধ্যমে সমাজকল্যাণের ধারণাকে সংগঠিত করার জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো সক্ষম ভিক্ষুকদের ভিক্ষাদান নিষিদ্ধ করে কাজ করতে বাধ্য করা।
৩. ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন থেকে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন পর্যন্ত : পূর্ববর্তী সময়ে প্রণীত আইনগুলো দারিদ্র্য সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। তাই পূর্ববর্তী আইনগুলোর সমালোচনাকে বাদ দিয়ে ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করে প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন। এ আইনের আদর্শ, দর্শন, মূলনীতি ও সুপারিশসমূহ পেশাগত সমাজকর্মের ধারণার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। কিন্তু পরিবর্তিত সময়ে চাহিদা পূরণ করার জন্য ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন সংস্কার করে প্রণয়ন করা হয় ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন।
সংশোধিত ও পরিমার্জিত এ আইনের বিধানসমূহ দরিদ্রের পরনির্ভরশীলতা ও সাহায্যনির্ভরতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যা পেশাগত সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও দর্শনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।করে। পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠান মনো সমাজকর্ম, প্রবেশন সেবা, শিশুকল্যাণ সেবা ইত্যাদির ওপর প্রশিক্ষণ চালু করে। ইংল্যান্ডের এ জাতীয় তাত্ত্বিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেশাগত সমাজকর্মের বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৪. দান সংগঠন সমিতি : পেশাগত সমাজকর্মের ধারণা প্রতিষ্ঠা ও বিকশিত করার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত দান সংগঠন সমিতির সাহায্য দান কৌশল, কার্যপদ্ধতি, মূল্যবোধ ও দর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দান সংগঠন সমিতির কার্যপ্রণালি পেশাগত সমাজকর্মের পদ্ধতির বিকাশে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৫. বিভারিজ রিপোর্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত : ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে বিভারিজ রিপোর্ট। বিভারিজ রিপোর্ট জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা পেশাগত সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটায়। বিভারিজ রিপোর্ট সমাজের সবার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা পেশাগত সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ সবার অংশগ্রহণ ও সবার সমান সুযোগের বিকাশ ঘটায়। বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণীত সামাজিক নিরাপত্তামূলক সেবা পেশাগত সমাজকর্মের জন্য পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে ।
৬. ইংল্যান্ডে সমাজকর্ম শিক্ষা : ইংল্যান্ডে সরকারি উদ্যোগে বিংশ শতাব্দী থেকেই সমাজকর্ম এবং প্রশিক্ষণ এ দুই ভাগে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রচলন হয়। ইংল্যান্ডে চিকিৎসা সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য 'Institute of Almoners' প্রশিক্ষণ কোর্স চালু
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজকর্মের ধারণার সূচনা হয় ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ড পেশাগত সমাজকর্মের ধারণা প্রতিষ্ঠার পীঠস্থান। পেশাগত সমাজকর্মের ধারণার বিকাশ মূলত আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত নানা ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র করে। ইংল্যান্ডের সমাজকর্মের বিকাশের ক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপগুলো, দান সংগঠন সমিতি, বিভারিজ রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব পেশাগত সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।করে। পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠান মনো সমাজকর্ম, প্রবেশন সেবা, শিশুকল্যাণ সেবা ইত্যাদির ওপর প্রশিক্ষণ চালু করে। ইংল্যান্ডের এ জাতীয় তাত্ত্বিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেশাগত সমাজকর্মের বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।