বিদ্যাপতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
বিদ্যাপতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
![]() |
বিদ্যাপতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও |
উত্তর: বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ বৈষ্ণব পদাবলী। বিদ্যাপতি পদাবলীর অন্যতম কবি। চৈতন্য-পূর্ব কবি বিদ্যাপতির জন্মমৃত্যু সম্ভবত (১৩৮০খ্রিঃ-১৪৬০খ্রিঃ)। তিনি বৈষ্ণবশাক্ত ছাড়াও বহু দেবদেবীর উপাসনা করতেন।
ফলে বৈষ্ণব পদ ছাড়াও তিনি অন্য বিষয়ে প্রচুর পদ লিখেছেন। তাঁর পদ সংখ্যা সহস্রাধিক। রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদই পাঁচশ'র বেশি। বিদ্যাপতি বিভিন্ন শাস্ত্র ছিলেন, তবে সংস্কৃত কাব্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। তাঁর পদাবলী তত্ত্বাক্রান্ত ছিল না।
রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে তিনি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছেন। তাঁর অসংখ্য পদের মধ্যে রাধার বয়ঃসন্ধি, রাধার অভিসার, প্রেম বৈচিত্র্য আক্ষেপানুরাগ, বিরহ ও ভাব সম্মিলনের পদগুলো আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদ লিখেছেন।
তাঁর রাধাকে বয়ঃসন্ধি থেকে খরদীপ্তিময়ী নায়িকায় পরিণত করতে অপূর্ব চরিত্রাঙ্কন দক্ষতার পরিচয় মেলে। রাধার বয়ঃসন্ধি বর্ণনায় শিল্পচাতুর্য, কিশোরী রাধার দেহে যৌবনাগম এবং তার ক্রমবিকাশ, মনোজগতের পরিবর্তন, সবার অলক্ষে কৃষ্ণকে দেখে নেবার কৌশল অপূর্ব-
“তহি পুন মতিহার তোড়ি ফেলিল
কহত টুহার টুটি গেল।"
কৃষ্ণের সাথে রাধা মিলনে ব্যগ্র, অথচ লজ্জায় বিনম্র। সলজ্জ সুতীব্র মিলনাকাঙ্ক্ষার পদ অতুলনীয়। ভীরু বালিকা আস্তে আস্তে কৃষ্ণপ্রেমে আত্মহারা। অভিসারের পদে বিদ্যাপতি যেন ঈশ্বর সাধনার দুরূহতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিদ্যাপতির মননশীলতা ও মার্জিত বাচনভঙ্গি, আলঙ্কারিতায় ও রূপ নির্মিতিতে প্রকাশ পেয়েছে। নায়িকার চরিত্র চিত্রণে তাঁর পারঙ্গমতা অসাধারণ।
বিদ্যাপতি ভক্ত নন, কবি। তাঁর রাধায় দেহের অংশের চেয়ে হৃদয়ের অংশ কম। অনেক ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণ উপলক্ষ মাত্র, কাব্যসৌন্দর্যই তার মূল উদ্দেশ্য।
বিদ্যাপতি নবীন এবং মধুর। তাঁর পদে যে ঐশ্বর্য, লীলা, উল্লাস সহস্র সুখ হীরকের মত দীপ্তি পেয়েছে তা বিবরণধর্মী। তার পদে ঐকান্তিক আর্তি থাকলেও তাতে মিলন আকাঙ্ক্ষা প্রবল।
"কবহু বান্ধএ কচ কবহু বিধারী।
অভিসারের পদ নির্মাণে বিদ্যাপতির কবিশক্তির উচ্ছলতা চোখে পড়ে। মিলনের আনন্দ কবহু ঝাপএ অঙ্গ কবহু উঘারি।” তিনি মনোহর ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন।
বিরহ বর্ণনায় তিনি তাঁর কাব্য বীণায় যে নতুন সুর ধ্বনিত করে তুলেছেন তাতে রাধার দেহগত মিলনের আকাঙ্ক্ষা অপহৃত হয়েছে।
বিদ্যাপতির উল্লেখযোগ্য পদ-
(i) "পিয়া যব আওব এ মন্টু গেছে।
মঙ্গল যতই করব নিজ দেহে।”
(ii) “জীবন যৌবন সফল করি মানলু।
দশ দিশ ভেল নিরদন্দা।"
(iii) টুটইতে নাহি টুটে প্রেম অদভুত।
জৈসন বাঢ়এ মৃণালক সুত
(iv) এ সখি হামারি দুঃখের নাহিক গুর।
এ ভরা ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।
মাহ ভাদর
এমনি শত শত পদ রচনার মধ্য দিয়ে বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদাবলীকে সমৃদ্ধ করেছেন।