কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল ।

১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর
১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর

কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল

  • আগরতলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া কেমন ছিল?
  • অথবা, কোন প্রক্রিয়ায় আগরতলা মামলার বিচার হয়েছিল?
  • অথবা, আগরতলা মামলার উদ্দেশ্যগুলো বর্ণনা কর । 
  • ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনোই চাইত না যে, পূর্ববাংলা থেকে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠুক। তাই তারা সবসময় পূর্ব-বাংলার মানুষকে দরিদ্র রাখার চেষ্টা করতো যেন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গড়ে না উঠে। কিন্তু পূর্ব-বাংলার আওয়ামী লীগ নেতা জনপ্রিয় হতে থাকলে তার পথ রুদ্ধ করার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর এরূপ ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এ মামলায় বিচারব্যবস্থা সব পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ মামলার আসামি করা হয় ৩৫ জনকে। তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা আখ্যা দেওয়া হয় । নিম্নে প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো :

→ আগরতলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া : পাকিস্তান সরকার আগরতলা মামলা রাজনৈতিকভাবে করার চেষ্টা করে। তারা মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাক্ষীসহ সবকিছু দলীয়করণ করে ফেলে। ইচ্ছামতো আইনের সংশোধন করে বিচার নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করে। নিম্নে তার বিচারক কাজে গৃহীত পদক্ষেপ আলোচনা করা হলো :

১. আইনের সংশোধন : রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের পর তাদের প্রকাশ্যে বিচার দাবি উঠে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। সরকার ১৯৬৮ সালে ১২ এপ্রিল আগরতলা মামলার বিচার পরিচালনার জন্য আইন ও বিচার পদ্ধতি সংক্রান্ত এক ফৌজদারি আইন জারি করে। এতে বলা হয়-

(i) মামলার বিচার সাধারণ আদালতের পরিবর্তে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সম্পাদিত হবে।

(ii) সুপ্রিম কোর্টের একজন জজ (চেয়ারম্যান) এবং হাইকোর্টের দুজন জজের (সদস্য) সমন্বয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে।

(iii) পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি আইন সাবেদ হবে। (iv) আসামিদের কোনো জামিন দেওয়া যাবে না এবং তাদের সামরিক হেফাজতে রাখা হবে।

(v) বিশেষ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না ।

২. বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও মামলার অভিযোগ : ১৯৬৮ সালের ২২ এপ্রিল আইয়ুব খান কর্তৃক জারিকৃত অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট মামলার বিচারের স্থান নির্ধারিত হয় এবং ১৯ জুন বিপুল সংখ্যক দেশি বিদেশি সাংবাদিক ও টেলিভিশন প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে মামলার শুনালি শুরু হয়। পূর্বের ফৌজদারি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস এ রহমান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস আর খান ও পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টের বিচারপতি মনসুর হাকিম এর সদস্য নিযুক্ত হন। প্রধান ফরিয়াদী হিসেবে থাকেন পাকিস্তানের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিখ্যাত আইনজীবী মঞ্জুর কাদের। অপরদিকে আসামি পক্ষ নেন ইংল্যান্ডের রানির আইন বিষয়ক উপদেষ্টা প্রখ্যাত আইনজীবী টমাস উইলিয়াম। এছাড়া তাদের পক্ষে ছিলেন ড. আলীম আল রাজী, আতাউর রহমান খান, আবদুস সালাম খান, জুলমত আলী মোল্লা, জালাল উদ্দীন ও মওদুদ আহমদসহ বহু সংখ্যক আইনজীবী ।

৩. অভিযোগ গঠন : সরকার দুটি প্রধান খাতে ৪২ পৃষ্ঠার একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কয়েকটি পরিশিষ্টে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামের তালিকা, সাক্ষী, দলিলপত্রাদি, আলামত এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছদ্মনাম সংযোজন করা হয়। অভিযোগে বলা হয় যে, অভিযুক্তরা ভারত কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং তহবিলের সাহায্যে অনুষ্ঠেয় একটি সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। এক্ষেত্রে অর্থ গ্রহণ, অস্ত্র লেনদেন সংক্রান্ত কিছু দলিলপত্র উত্থাপন করা হয় যা পরে অবশ্য তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয় । অপর পক্ষে মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ প্রধান, তরুণ নেতা, বাঙালি জাগরণের অগ্রদূত শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয় ।

৪. সাক্ষী : সরকার দলীয়রা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে তারা ইচ্ছামতো মনগড়া সাক্ষী উপস্থাপন করে। এছাড়া আদালতে ১১ জনের নামের একটি তালিকা রাজসাক্ষী হিসেবে এর ১২টি চিঠি ২ কপি টেলিগ্রাম, বাংলাদেশের ও বেতারবাণী লেখা দুটির তারিখবিহীন সাক্ষ্য, অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত দলিল, ১০টি প্রবন্ধের একটি তালিকা এবং ২০০ জন সাক্ষীর নামসহ ৮২টি দলিল আদালতে উপস্থাপন করানো হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর অভিযুক্তদের পক্ষাবলম্বনকারীদের মামলা তৈরির সুযোগ দিয়ে আদালত চার সপ্তাহের জন্য মামলা মুলতবি করা হয়। তবে যে এগারো জন রাজ সাক্ষী করা হয় তাদের নামেও মামলা দেওয়া হয়। তারা সাক্ষী দিতে সম্মত হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হয় ।

৫. মামলার কার্যক্রম : চার সপ্তাহের মুলতবি শেষে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। আসামিদের জবানবন্দি ও সওয়াল জবাব শুরু হয়। জবানবন্দিতে প্রথমেই আত্মপক্ষ সমালোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ প্রধান তার জবানবন্দিতে বলেন, আগরতলা মামলা স্বার্থান্বেষী সরকারের হীন ষড়যন্ত্র ও মামলাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দেন এবং এতে তালিকাভুক্ত আসামিদের নির্দোষ দাবি করেন। এভাবে সকল আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। অপরপক্ষে রাজসাক্ষীদের অনেকেই গোপন কথা ফাঁস করে দেন এবং তাদের জোরপূর্বক সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এর ফলে বিচারকগণ বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন। এর মাধ্যমে শুনানি ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

৬. মামলা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত প্রমাণিত : এক দিকে সাক্ষীর মিথ্যা বলার অনীহা অপরদিকে আসামিদের জোরালো প্রতিবাদের মুখে আগরতলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শিথিল হয়ে আসে। আবার ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান নামে এক ছাত্র নেতাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলে আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যা করার প্রতিবাদে মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান ব্যাপক গণআন্দোলনের দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নিজের দুর্বল অবস্থান অনুমান করতে পেরে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বেতার ভাষণে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করেন। এভাবে আগরতলা মামলা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা বলে প্রমাণিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সত্যের জয় আর মিথ্যার পরাজয়। ঠিক এই প্রবাদটি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়েছিল । পাকিস্তান সরকার তার স্বার্থ হাসিলের জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত যে মামলাটি দায়ের করেছিল তা প্রমাণ পাওয়া যায়। আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে বা সাক্ষীগুলো আসামিদের বিপক্ষ দেওয়ার কথা কিন্তু তারা সত্য প্রকাশের জন্য আসামিদের পক্ষ নিয়ে মামলা যে মিথ্যা ছিল তার প্রমাণ দেয়। সুতরাং বলা যায়, আগরতলা মামলার মাধ্যমে শেখ মুজিব আরও অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কবে আগরতলা মামলার বিচার কাজ শুরু হয় | আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য কি ছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ