উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মাওয়ালী কারা। উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মাওয়ালী কারা। উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর ।

মাওয়ালী কারা। উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর
মাওয়ালী কারা। উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর

মাওয়ালী কারা। উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি ব্যাখ্যা কর

  •  অথবা, মাওয়ালী কারা? তাদের পদমর্যাদা এবং উমাইয়া প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ আলোচনা কর

 উত্তর : ভূমিকা : ইসলাম একটি সার্বজনীন শান্তির ধর্ম। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু ইসলামের এই চিরন্তন বাণী মাওয়ালীদের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়নি। মাওয়ালীগণ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও আরবীয় মুসলমানদের মতো সকল বিষয়ে সমান মর্যাদা লাভ করেনি। উমাইয়া যুগে রাজ্য সম্প্রসারণের সাথে সাথে মাওয়ালীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা হ্রাস পেতে থাকে। উমাইয়া আমলে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পায়।

→ মাওয়ালীদের পরিচয় : প্রাচীন আরবে একটি আশ্রিত জনগোষ্ঠীকে মাওয়ালী বলা হতো। ইসলামি যুগে আরবদের বাইরে যে সকল অনারব ইসলাম গ্রহণ করতো তাদেরকেই সাধারণভাবে মাওয়ালী বলা হতো। যুদ্ধ বন্দী, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী বা দাসদাসী ইসলাম গ্রহণ করে মাওয়ালীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হতো। তবে তাদের কোনো না কোনো আরব গোত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হতো। নতুবা সরকার কর্তৃক তারা স্বীকৃতি পেত না। অন্য কথায় বলা যায় যে, যে সকল আরব মুসলমান আরবদিগকে মাওয়াল বা প্রভু বলে স্বীকার করতো তাদেরকে মাওয়ালী বা নওমুসলিম বলা হতো ।

→ উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি : উমাইয়া রাজ্য | সম্প্রসারণের সাথে সাথে উমাইয়াদের মাওয়ালী নীতি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। নিম্নে তাদের মাওয়ালী নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. মাওয়ালীদের প্রতি অসাম্য নীতি : ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষেরই অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য সমান। কিন্তু উমাইয়া শাসকগণ মাওয়ালীদের সমমর্যাদা দেয়নি। তারা মাওয়ালীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতো। একদিকে রাষ্ট্র কর্তৃক কম সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতো অপরদিকে তাদের রাষ্ট্রকে অতিরিক্ত কর দিতে হতো প্রায় সকল উমাইয়া শাসকদের দ্বারা তারা হয়েছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। বিশেষ করে মালিক ও হাজ্জাজ- বিন-ইউসুফের শাসননীতি মাওয়ালীদের মনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ জাগিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ওমর বিন আব্দুল আজিজ তাদের এই নীতি কিছুটা শিথিল করেন।

২. আব্দুল মালিক ও হাজ্জাজের আচরণ : আব্দুল মালিক ও হাজ্জাজ কর্তৃক প্রণীত মাওয়ালী নীতি দ্বারা তাদের উপর আইন ও শাসনের কড়াকড়ি আরোপ করেন। তারা সুযোগ সুবিধা হতে | বঞ্চিত রাখা ছাড়াও মাওয়ালীদের এক গোত্র হতে অন্য গোত্রের আশ্রয়ে যেতে দিতেন না। খলিফা মালিকের শাসন আমলে মাওয়ালীগণ অসন্তুষ্ট হয়ে উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের মাওয়ালী নীতি নিম্নরূপ।

(ক) মাওয়ালীদের জিজিয়া প্রদান : আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মাওয়ালীদের মর্যাদার উপর আঘাত হানে। এ আমলে ব্যাপক রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয় তাই রাষ্ট্রীয় আয়ের অন্য পথ, অনুসন্ধান না করে হাজ্জাজ মাওয়ালীদের উপর জিজিয়া ধার্য করেন। কিন্তু জিজিয়া কেবল অমুসলমানদের দিতে হতো।

(খ) শহর হতে বিতাড়ন : জিজিয়া আরোপের প্রতিবাদে মাওয়ালীগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাদেরকে নগর হতে বিতাড়িত করেন এবং বকেয়া জিজিয়া কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে স্ব স্ব গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য করেন।

(গ) খারাজ প্রদান : ইসলামের প্রথমদিকে কোনো অমুসলিম মুসলিম হলে তাকে খারাজ দিতে হতো না উমাইয়া আমলেও প্রথমে এ নিয়ম কার্যকর ছিল। কিন্তু হাজ্জাজ এ নীতির পরিবর্তন করেন। তিনি আদেশ দেন যে ইসলাম গ্রহণ করলেও মাওয়ালীদের ভূমি কর বা খারাজ দিতে হবে।

(ঘ) ভূমি বিক্রয় নিষিদ্ধ : হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মাওয়ালীদের সকল জমি বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মাওয়ালীগণ যেহেতু খারাজ দিত সেহেতু আরব মুসলমানরা যাতে তাদের জমি ক্রয় করতে না পারে তার ব্যবস্থা তিনি করেন। কারণ আরব মুসলমানদের ব্যবহৃত জমি উশরী হিসাবে গণ্য হতো। আর এসব জমিতে করের পরিমাণ খারাজি জমির করের চেয়ে কম। তাই হাজ্জাজ এ নীতি কঠোরভাবে প্রবর্তন করেন।

(ঙ) মাওয়ালীদের গ্রামমুখীকরণ : উমাইয়া আমলে রাজ্য সম্প্রসারণের সাথে মাওয়ালীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই নতুন ধর্ম গ্রহণ করে অনারব মুসলমানগণ বা মাওয়ালীরা আরো সরকারি সুযোগ সুবিধা লাভের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করে ফলে গ্রাম্য কৃষি কাজের প্রভূত ক্ষতিসাধিত হয়। তাই হাজ্জাজ এ সমস্ত মাওয়ালীদের পুনরায় গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য করেন। এ নীতিতে মাওয়ালীগণ অসন্তুষ্ট হয় এবং তাদের পতন কামনা করে ।

(চ) কৃষকদের ঋণ দান : হাজ্জাজ মাওয়ালী বিদ্রোহ দমন করে তাদের উন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি গ্রাম্য কৃষি খামারে মাওয়ালীদের ফিরিয়ে এনে তাদের নিয়মিত ঋণ দানের ব্যবস্থা করেন। তিনি অনুর্বর ও পতিত জমি মাওয়ালীদের মধ্যে বিতরণ করে তাদের তিন বছরের রাজস্ব মওকুফ করেন। অতঃপর তৃতীয় বছর ফসলের অর্ধেক রাজস্ব হিসেবে ধার্য করেন। হাজ্জাজের এ নীতিতে মাওয়ালীদের অর্থনৈতিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়।

৩. চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি : উমাইয়া খলিফাগণ মাওয়ালীদের সবসময় ঘৃণার চোখে দেখতেন। তারা চাকরি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে । উমাইয়া খলিফাগণ প্রশাসনে উমাইয়াদের বেশি প্রাধান্য দিতেন । ধর্মীয় ক্ষেত্রে বৈষম্য। উমাইয়াগণ মাওয়ালীদের ইমামতিতে নামাজ পড়তেন না। তাছাড়া তারা মসজিদে মাওয়ালীদের পিছনের কাতারে দাঁড়াতে বাধ্য করতেন। এভাবে উমাইয়াগণ মাওয়ালীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ব্যাপক আঘাত করেন।

৪. বিবাহ ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি : উমাইয়া আমলে আরব ও মাওয়ালীদের বিবাহবন্ধন মেনে নেওয়া হতো না। একজন সম্ভ্রান্ত, সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতবান পারসিক মাওয়ালীদের সাথে একজন নিম্নমানের আরব কন্যার বিবাহ দেওয়া সম্ভব ছিল না।

৫. সামরিক ক্ষেত্রে বৈষম্য : উমাইয়ারা শুধুমাত্র মাওয়ালীদেরকে পদাতিক বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ দিতেন। অশ্বারোহী বাহিনীতে তারা যোগদান করতে পারতো না। তাছাড়া তারা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখলেও গনিমতের মালের ভাগ তাদের দেওয়া হতো না।

৬. দ্বিতীয় ওমরের সময় মাওয়ালী নীতি : উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ খলিফা। তাই তিনি খিলাফত লাভ করে মাওয়ালী নীতির পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি মাওয়ালীদের নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি মাওয়ালীদের ওপর হতে জিজিয়া ও খারাজ রহিত করেন। এছাড়াও আরব মুসলমানদের সাথে তাদের সমান সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেন।

৭. পরবর্তী পর্যায়ে মাওয়ালীদের অবস্থা : ন্যায় নীতিবান উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় ওমর এর সময় মাওয়ালীরা সরকারি কার্যক্রমে প্রভাব সৃষ্টি করার ফলে রাষ্ট্রীয় আয়ের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। কারণ দ্বিতীয় ওমর তাদেরকে অর্থনৈতিক অনেক সুযোগ-সুবিধা দান করেন এবং এ সুযোগে মাওয়ালীরা নিজেদের সুযোগ গ্রহণে ব্যস্ত থাকে ফলে হয় ওমরের মৃত্যুর পর অন্যান্য শাসকগণ এ নীতির পরিবর্তন সাধন করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া শাসন আমলে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সাথে সাথে মাওয়ালী বা নও মুসলিমদের | সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু উমাইয়া খলিফাগণ এই সংখ্যাগরিষ্ঠ | মাওয়ালীদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করেননি। একমাত্র দ্বিতীয় ওমর এর সময় মাওয়ালীগণ কিছুটা সুযোগ সুবিধা ভোগ করলে পরবর্তী খলিফাগণ এই সুযোগ হ্রাস করেন। পরবর্তীতে অসম নীতি উমাইয়া শাসনের পতনকে অনেকাংশে ত্বরান্বিত করেছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মাওয়ালী কারা? তাদের পদমর্যাদা এবং উমাইয়া প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মাওয়ালী কারা? তাদের পদমর্যাদা এবং উমাইয়া প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ আলোচনা কর  । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ