আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর।

আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর

উত্তর :  নিবার্পণকারী মঙ্গলের মতো বর্বর হলে ইউরোপের পুনর্জাগরণ আরো শতবছর বিলম্ব হতো।আর দর্শন যদি মানুষকে প্রকৃত সত্যে উপনীত হতে সাহায্য করে তবে সেটা ইসলামি দর্শনকেই প্রকৃত দর্শন হিসেবে গ্রহণ করাই শ্রেয় । আর এ দর্শনের মূলভিত্তি হলো কুরআন ও হাদিস। কেননা কুরআন ও হাদিস মানুষকে সত্যের অনুসন্ধানে সাহায্য করে বা অনুপ্রেরণা যোগায় । 

পরবর্তীকালে রোম পারস্য মুসলমানদের শাসনভুক্ত হলে গ্রিকরা মুসলমানদের সংস্পর্শে আসে এবং মুসলমানরাও গ্রিকদের সংস্পর্শে যায় এবং উভয় উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয় এ দিক থেকে অর্থাৎ প্রভাবের দিক থেকে মুসলিম দর্শন দুভাগে ভাগ করা যায়-

→ দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান : অন্যান্য শাখার ন্যায় দর্শনশাস্ত্রটিও মুসলমানদের নবরূপে রূপান্তরিত হয়েছিল। এর প্রসারে মুসলমানরাই ছিল অগ্রদূত। যৌক্তিক পদ্ধতিতে সত্যে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে দর্শন বলা হয়। 

গোড়াপন্থি : যারা কুরআন ও হাদিস শিক্ষা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে দর্শন চর্চা করতেন এবং যারা ইসলামি দর্শনে গ্রিক দর্শনের অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করতেন তাদেরকে গোড়াপন্থি বা ইসলামি দার্শনিক বলা হয়। 

এ মতবাদের ওপর যারা বিশ্বাসী তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো হজরত আলী, ইমাম জাফর সাদেক, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এবং ইমাম গাজালী প্রমুখ পণ্ডিত।

উদারপন্থি : যারা দর্শনের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে দর্শন চর্চা করে এদের উদারপন্থি বা এরিস্টটলীয় দর্শনিক বলা হয়। এ মতবাদের ওপর বিশ্বাসী ছিলেন আল কিন্দি, আল ফারাবী, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ ও ইবনে তোফায়েল প্রমুখ পণ্ডিত।

নিম্নে আব্বাসীয় শাসনামলে দর্শনশাস্ত্রে যেসব মুসলিম দার্শনিক অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. আল-কিন্দি : দর্শনশাস্ত্রের উন্নতিতে মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়েছিলেন আল-কিন্দি। তিনি প্লেটো ও এরিস্টটল এর দর্শনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে চেয়েছিলেন এবং পীতাগোরাসের অঙ্কশাস্ত্রকেই সকল বিজ্ঞানের উৎস বলে মত দিয়েছিলেন।

 তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ২৬৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অনেক গ্রিক ভাষার বই তিনি আরবিতে অনুবাদ করেছেন। সংগীত বিষয়ে তিনি বারোটি গ্রন্থ রচনা করেন এবং এতে গ্রিকদের প্রভাব ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। 

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দার্শনিক আল কিন্দি মুতাজিলীয় ধর্মতত্ত্ববিদ, নিও পীথাগোরিয়ান চিন্তাধারার সমৃদ্ধ নিও প্লেটোনিক দার্শনিক। তিনি প্রথম এরিস্টট তথা গ্রিক দর্শনকে মুসলিম দর্শনের সাথে পরিচিত করান। মুসলিম দর্শনের জনক বলে তিনি সর্বকালের সর্বযুগে সমাদৃত হবেন ।

২. ইমাম গাজালি :  ইমাম গাজালি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। ইসলামি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখেছে তাদের মধ্যে ইমাম গাজালি অন্যতম। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০০টি।

 “ফাওহাতুল সালাসিফা” তার রচিত দর্শন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। তার রচিত “ইহইয়া উল উলুমুদ্দীন” কিমিয়ায়ে সায়াদাত” তার প্রভৃতি গ্রন্থ মুসলিম দর্শন ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি মুসলিম দর্শনকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করেছে। | তিনি সারা বিশ্বে “হুজ্জাতুল ইসলাম নামেও পরিচিত।

৩. আল ফারাবী : আল ফারারি দর্শনশাস্ত্রে অপূরণীয় অবদান রেখেছেন। তিনি মুসলিম জাহানের একজন মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন। সংগীত বিষারদ হিসেবেও তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। সংগীতের ওপর তার লিখিত গ্রন্থ হচ্ছে “কিতাৰ উল মাসকি আলকবির”।

 তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি যুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুক্তিবিদ হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি যথার্থই বলেছেন, ইসলামের সাথে গ্রিক দর্শনের সমন্বয় সাধন করে আল কিন্দি সুদূরপ্রসারী করেন তুর্কি বংশোদ্ভূত ফারাবী এবং পূর্ণতাদান করেন পারস্যবাসী ইবনে সিনা ।

৪. ইবনে সিনা : দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম অবদান রাখেন দার্শনিক ইবনে সিনা। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, গণিতজ্ঞ, ভাষাবিদ, কবি ও শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ১২৫টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত। আল শিফা” দর্শনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। 

তিনি ছিলেন প্রাচ্যের শেষ ও শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার চর্চাতে এরিস্টটলীয় দর্শনের সর্বোচ্চ সীমানায় উপনীত হয়। উল্লেখ্য ইবনে সিনার রচিত গ্রন্থ “আল-শিফা” গ্রন্থটি দর্শনশাস্ত্রের বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়। অনেক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত করেছেন। 

মূলত দর্শনশাস্ত্রের প্রতিটি শাখায় মুসলমানরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আব্বাসীয় খলিফাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা অনুপ্রাণিত হয়ে চিকিৎসা ও দর্শনে অতুলনীয় অবদানের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় নবযুগের সূচনা করেন ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  আব্বাসীয় মুসলমানদের দর্শনশাস্ত্রে অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় মুসলমানদের দর্শনশাস্ত্রে অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ