উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর।

উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর
উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর

উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উৎপত্তি আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত ও চমকপ্রদ ঘটনা হলো উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয়দের উত্থান। নিজেদেরকে শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী ঘোষণা করে আব্বাসীয়দের প্রতি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী আব্দুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃত্বে এই খিলাফত সুদৃঢ় হয়।

→ ফাতেমীয়দের পরিচয় : খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) ও তাঁর স্ত্রী বিবি ফাতিমা (রা.) এবং তার পুত্র হজরত হাসান ও হুসাইনের মাধ্যমে যে বংশ ধারা প্রবর্তিত হয়েছে তাদেরকে ফাতেমীয় বলা হয়।

ঐতিহাসিক কারবালার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর ফাতেমীয়রা বারবার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল কিন্তু আব্বাসীয় খিলাফতের দুর্বলতার সুযোগে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালাতে থাকে। 

অবশেষে তারা আব্বাসীয়দের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের প্রতিবাদস্বরূপ ৯০৯, খ্রিস্টাব্দে ওবাইদুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃত্বে একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে । ইতিহাসে এটি ফাতেমীয় খিলাফত নামে পরিচিত। 

কিন্তু ঐতিহাসিক সূয়ুতি ইবনে ইজারী শাহ কিছু ঐতিহাসিক তাদেরকে ফাতেমীয় বলে স্বীকার করে না। তবে আধুনিক গবেষণায় এইচ ম্যামর বলেন তারা ফাতেমী ।

→ উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় খিলাফত আন্দোলন : নিম্নে উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় খিলাফত আন্দোলনের বিবরণ তুলে ধরা হলো :

১. ফাতেমীয়দের ক্ষমতা লাভের পটভূমি : ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর সমর্থকগণ ইতিহাসে শিয়া সম্প্রদায় নামে পরিচিত। কালক্রমে তারা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল হজরত আলীর পুত্র মুহম্মদ-বিন-হুনায়ফাকে ইমাম গ্রহণ করে ৷ 

অপর দল মহানবি (সা.) এর কন্যা বিবি ফতিমার (র.) পুত্র হুসাইন বংশে ইমামত গ্রহণ করে। তারা আবার দুই শ্রেণিতে বিভক্ত হয় । 

(ক) ইশানা আশারিয়া-দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাসী।

(খ) সাবিয়া সপ্তম ইমামে বিশ্বাসী ।

২. আব্দুল্লাহ্ বিন মায়মুনের প্রচারণা : আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন ছিল ইসমাইলীয় মতবাদের প্রচারক। তিনি ইসমাঈলীয় মতবাদ প্রচারের জন্য আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে 'দাই' প্রেরণ করেন। তার প্রচারণার ফলে মিশরে ফাতেমীয় বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ।

৩. উত্তর আফ্রিকার ইসমাঈলী মতবাদ : হাওসার উত্তর আফ্রিকার ইসমাঈলী মতবাদ প্রচারের জন্য হুরওয়ানী ও আবু সুফিয়ানকে পাঠান। তারা স্বল্প সময়ে কাতামা সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তারে সফলতা লাভ করেন।

৪. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ইসমাঈলী মতবাদ প্রচার : আবু সুফিয়ানের ইস্তেকালের পর আবু আব্দুল্লাহ আসস মসীঙ্গ ইসমাঈলী মতবাদ প্রচারের নেতৃত্ব দেন। তিনি অতি সুকৌশলে হজের সময় উত্তর আফ্রিকায় গমণ করে ইসমাঈলী মতবাদ প্রচার করতে থাকে। তিনি বলেন যে, অত্যাচারিত জনগণকে মুক্তির জন্য আল খায়ের উপত্যকায় ইমাম মাহদী আগমন করবেন এবং কাতামার সহায়তায় তিনি তথায় স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন।

৫. আবু আব্দুল্লাহর তাহারূদ ও মিলার জয় : আবু আব্দুল্লাহর কৌশলগত ও উত্তেজনামূলক প্রভাবে উত্তর আফ্রিকার বর্বার সম্প্রদায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে আঘলাবীয় শাসনের বিরোধিতা শুরু হয় এবং আবু আব্দুল্লাহর দলপতি তাহারূদ ও মিলার জয় করেন।

৬. কায়রোয়ানে শিয়া অধিপত্য প্রতিষ্ঠা : ঐতিহাসিক লেনপুন বলেন, ইমামের মৃত্যুর পর জিয়াদাতুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করে আহওয়ালাকে সরিয়ে নিয়ে কায়রোয়ান অঞ্চল পর্যন্ত শিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠত করেন।

৭. মাহদীর উপস্থিতির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ : উত্তর আফ্রিকার কায়রোয়ান পর্যন্ত শিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করলে আবু আব্দুল্লাহ তার ভ্রাতা আব্বাসকে সিজিলমাসাতে প্রেরণ করেন ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীকে আনার জন্য। কিন্তু পথে তিনি মিশরের শাসনকর্তা দ্বারা বন্দি হলেও পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াদাতুল্লাহ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জানতে পেরে তাদের চার বছর বন্দি করে রাখে।

৮. আবু আব্দুল্লাহর বিভিন্ন রাজ্য জয় : ড. ইমামুদ্দিন বলেন, এদিকে আবু আব্দুল্লাহ ইব্রাহীমকে পরাজিত করে মিলার, লতিফ এবং ইব্রাহীমের অপর বাহিনীকে পরাজিত করে বাকায়া, বেনজাল মাজানা এবং রাজ্য জয় করে।

৯. মাহদীর ঘোষণা : হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য জিয়াদাতুল্লাহ বাগদাদের খলিফার নিকট আবেদন করলে কোনো সাড়া না পেয়ে প্যালেস্টাইনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু পথে তিনি মৃতুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর আব্দুল্লাহ ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ওবায়দুল্লাহকে মুক্ত করেন। অতঃপর আবু আব্দুল্লাহ ওবায়দুল্লাহকে প্রতিশ্রুত মাইদী বলে প্রচার করতে থাকে এবং হাতে বায়াত গ্রহণ করতে থাকে।

১০. ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা : এভাবে অসীম ক্ষমতার লোভে ওবায়দুল্লাহ তার পরম বন্ধু আবু আব্দুল্লাহ ও ভ্রাতা আবুল আব্বাস এবং জাকিকে হত্যা করে কায়রোয়ানে ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন, ওবায়দুল্লাহ, আব্বাস ও আবু আব্দুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। তাদের কঠোর শ্রমের ফলেই উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমীয় বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। সর্বোপরি ওবায়দুল্লাকে খলিফা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই উত্তর আফ্রিকার শিয়া শাসনের গোড়াপত্তন হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উদ্ভব লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উত্তর আফ্রিকার ফাতেমীয় আন্দোলনের উদ্ভব লিখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ