ময়নামতীর গান মানিকচন্দ্রের গান কী
ময়নামতীর গান/মানিকচন্দ্রের গান কী?
![]() |
ময়নামতীর গান/মানিকচন্দ্রের গান কী? |
উত্তর: বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে, বিশেষত উত্তরবঙ্গের কৃষক সমাজে রাজা গোপীচন্দ্র ও তাঁর মা রানী ময়নামতী সম্বন্ধে অনেক অলৌকিক কাহিনী ছড়া, পাঁচালি আকারে গীত হয়। কোন কোন স্থানে লোকনাট্য হিসেবেও গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস বিষয়ক কাহিনী রয়েছে।
বাংলাদেশে মৌখিক ছড়া, পাঁচালি ছাড়াও এ কাহিনীর দু একটি পুঁথিও পাওয়া গেছে। এ কাহিনীর বাস্তব সত্তা ও ঐতিহাসিকতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সত্যাসত্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
রাজা গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস গ্রহণই এ পাঁচালির মূল বিষয়। রানী ময়নামতী অদ্ভুত শক্তি মহাজ্ঞানের অধিকারিণী ছিলেন। সেই জ্ঞানের প্রভাবে তিনি দেখলেন তার স্বামী
মানিকচন্দ্রের শীঘ্র মৃত্যু হবে। তাকে দীর্ঘায়ু দিতে রানী স্বামীকে মহাজ্ঞান শিক্ষা গ্রহণে অনুরোধ করেন। কিন্তু পৌরুষে আঘাত লাগায় রাজা তা করলেন না। শীঘ্রই রাজার মৃ হল। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর রানীর পুত্র সন্তান হল।
নাম তার গোপীচন্দ্র গোপা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে রানী তাকে অদুনা-পদুনা নামে দুই সহোদরা রাজকুমারীর সাথে বিয়ে দেন। রানী মহাজ্ঞানে দেখলেন তার পুত্রের অকাল মৃত্যু হবে। হাড়িসিঙ্গার কাছে মন্ত্রদীক্ষা নিয়ে কিছুদিন সন্ন্যাস গ্রহণ ছাড়া পুত্রের বাঁচার পথ নেই।
পুত্র যুবতী স্ত্রী ফেলে যেতে চায় না, স্ত্রীরাও স্বামীকে ছাড়তে নারাজ। স্ত্রীদের প্ররোচনায় গোপীচন্দ্র জালস্করীপাদকে জড়িয়ে প্রকাশ্যে মায়ের নামে অসতীত্বের অভিযোগ আনে। ছেলের কাছে মাকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়।
মায়ের নির্দেশমত হাড়িসিঙ্গার কাছে দীক্ষা নিতে হল। মাথা মুড়ে সন্ন্যাসী সাজতে হল। হাড়িসিঙ্গা তাকে হীরা নটীর বাড়িতে বাঁধা দিয়ে এলেন। অনেক কষ্টে গোপীর দিন কাটে। মেয়াদ শেষ হলে গুরু তাকে উদ্ধার করে মহাজ্ঞান দিলেন। তার আর অকাল মৃত্যু হল না।
নাথ সাহিত্যের একটি শাখা ময়নামতীর বা গোপীচন্দ্রের গান। জর্জ গিয়ার্সন ১৮৭৮ সালে। রংপুরের স্থানীয় গায়কদের কাছ থেকে ময়নামতীর কাহিনী অবলম্বনে লিখিত গানের সংগ্রহ আবিষ্কার করেন। প্রথমে এটিকে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির মুখপত্রে প্রকাশ করেন।
তিনি তখন এর নাম দিয়েছিলেন The Songs of Manik Chand বা মানিকচাদের গান। ১৯২২ ও ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গোপীচন্দ্রের গানের ১ম ও ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয়।
ময়নামতী বা গোপীচন্দ্রের গানের কবিদের মধ্যে দুর্লভ মল্লিক, ভবানীদাস ও শুকুর মামুদের নাম উল্লেখযোগ্য। শুকুর মামুদের 'গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস' প্রকাশিত হয় ডঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালীর সম্পাদনায়। এ কাব্যের ভাষায় সরলতা আছে, তবে কোথাও কোথাও সংস্কৃত শব্দের অপপ্রয়োগ আছে।
গোপীচন্দ্রের গীত/ময়নামতীর গান নামক আখ্যান কাব্যটির কাহিনী, চরিত্র ও বর্ণনা ঢঙে অশিক্ষিত মনের ছাপ পড়লেও ধর্মতত্ত্বাদি ব্যাখ্যায় কবিরা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। গোপীর মাতৃ চরিত্রে সন্দেহ, বধূদের ষড়যন্ত্র প্রভৃতি বিষয় বাস্তব সমাজেরই সাক্ষ্য দেয়।