ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা

শৃঙ্খলা বা, নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলাবােধ বা ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা টি লিখ।

ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা
ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা

ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা

ভূমিকা: ‘প্রকৃতির রাজ্যে অনিয়মের অস্তিত্ব নাই, সর্বত্রই শৃঙ্খলা।'—রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী। বিশ্বের অণু-পরমাণু থেকে শুরু করে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা দিন-রাত-মাস-বছর ঋতুচক্র সর্বত্রই একই নিয়মের রাজত্ব। নিয়মের কক্ষপথেই প্রতিদিনের সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, দিনরাত্রির খেলা। প্রকৃতির এ নিয়মের সামান্যতম ব্যতিক্রমের অর্থই হলাে অনিবার্য মহাপ্রলয়, সৃষ্টির অন্তিম প্রহর ঘােষণা। মানবজীবনও এ নিয়মের সুতােয় গাঁথা।

শৃঙ্খলার স্বরূপ: পৃথিবী শৃঙ্খলার একমাত্র স্থান। এ পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই প্রয়ােজন ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সদঢ় নিগড়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষগুলাে শখলার স্বরপ বােঝে না। তারা শঙ্খলাকে শখল মনে করে ভুল করে। তাই আমাদের সমাজ আজ বিশৃঙ্খলার দিকেই অগ্রসরমান। আমাদের শিক্ষাঙ্গন, পরিবার, সমাজ, রাজনীতি কোথাও আজ শৃঙ্খলা নেই। শৃঙ্খলাবিহীন সমাজে কোনাে উন্নতি হয় না, সেখানে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আনন্দ ও শান্তি শৃঙ্খলা-সংযমের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে বাধা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম। মেনে চলাই এ শৃঙ্খলা।। 
শৃঙ্খলা অনুশীলনের প্রস্তুতিকাল: নিয়মের অর্থই সুষমা ও শৃঙ্খলা । একে স্বীকার করে অনুশীলনের মাধ্যমে জীবন সুন্দর ও সার্থক করা যায়। শৃঙ্খলা মানবজীবনের এক সফলতার প্রতিশ্রুতি। শৃঙ্খলার জাদুকরী প্রভাবেই মানুষ একটি সুস্থ আচরণবিধি মেনে চলতে পারে। মানুষের শৈশবই হলাে শৃঙ্খলা অনুশীলনের সঠিক সময়। এরই ওপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সফল প্রতিষ্ঠা। জীবন শুরুর এ প্রস্তুতিপর্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । 
মানবজীবনে শৃঙ্খলা: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য এ যে, সে বুদ্ধিমান ও নিয়মের পূজারি। শৃঙ্খলাবােধ বা নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। শৃঙ্খলাই জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তােলে। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ম বা শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত। শৃঙ্খলা জীবনে উন্নতি বয়ে আনে। 
সমাজজীবনে শৃঙ্খলা বা নিয়ম: নিয়ম বা শৃঙ্খলা ছাড়া সমাজজীবন চলতে পারে না। বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ, শ্রম-বিশ্রাম। ইত্যাদি সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী হয়ে থাকে। নিয়ম-শৃঙ্খলা না থাকলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। নিয়ম-শৃঙ্খলা সমাজজীবনের জন্যে এক অপরিহার্য অঙ্গ। শৃঙ্খলাই সমাজকে সুন্দর ও সার্থক করে তােলে। 
ছাত্রজীবন ও শৃঙ্খলা: ছাত্রজীবন শৃঙ্খলা অনুশীলনের এক উপযুক্ত সময়। তখন মানুষের মন থাকে নরম, কোমল। এ সময় নিয়ম-শৃঙ্খলার বীজ বপন করতে হয়। এ শৃঙ্খলাবােধই পরবর্তীকালে তাকে দেয় অনমনীয় মানসিকতা, দুঃখ জয়ের মহান দীক্ষা। ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের এক বিশেষ অধ্যায়। পরবর্তী জীবনে ছাত্ররাই হয় দায়িত্বশীল নাগরিক। তাই শৃঙ্খলা অনুশীলন করা ছাত্রসমাজের এক মহান কর্তব্য। 
শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়ােজনীয়তা: জীবনের সর্বস্তরে তথা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, খেলার মাঠে, কলকারখানায়, হাসপাতালে, এমন কোনাে জায়গা নেই যেখানে শৃঙ্খলা নেই। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই শৃঙ্খলার প্রয়ােজন অপরিহার্য। শৃঙ্খলার অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান, মানুষ, পরিবার ধ্বংসের পথে এগিয়ে গেছে। শৃঙ্খলা মেনে না চললে জীবনের সবক্ষেত্রেই পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। অতএব নিয়মানুবতির্তা বা শৃঙ্খলাবােধের প্রয়ােজন অপরিসীম।
নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্তরায় নয়: অনেকে নিয়মানুবর্তিতাকে শৃঙ্খল বলে ভুল করে । তারা আরও মনে করে, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী, এতে মানুষের অধিকার খর্ব হয়। কিন্তু এ কথা মােটেও ঠিক নয়। নিয়ম মানার মাধ্যমেই মানুষের জীবনে
উন্নতি আসে, সকলের অধিকার রক্ষিত হয় ও ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশের পথ সুগম হয়, কিন্তু বিশৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের সৃষ্টি করে । | তাই মনে রাখা উচিত যে, স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিস নয়, কিংবা শৃঙ্খলা ও শৃঙ্খল এক নয়। 
বর্তমান উছশৃঙ্খলা: বর্তমানে শৃঙ্খলার পরিবর্তে অরাজকতার উন্মাদনাই বেশি করে চোখে পড়ে। কল-কারখানায়, অফিস-আদালতে, স্কুলকলেজে, খেলার মাঠে, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই শৃঙ্খলার অভাব প্রকট। তার ফলও হয়েছে ভয়াবহ শিক্ষার ক্ষেত্রে, সমাজজীবনের অলিগলিতে আজ উদ্ধৃঙ্খলতা বিরাজমান। শৃঙ্খলার অভাবে সামান্য কারণেই আগুন জ্বলে ওঠে। জাতীয় সম্পত্তির বিনাশ ঘটে। এতে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি ঝিমিয়ে পড়ে, উৎপাদন হয় বাধাগ্রস্ত। আজ বিশ্বের দিকে দিকে উৎকর্ষ সাধনের প্রতিযােগিতা। এক্ষেত্রে আমাদেরও গ্রহণ করতে হবে নিয়মানুবর্তী | হওয়ার প্রতিজ্ঞা। নতুবা আমাদের সকল প্রচেষ্টাই একদিন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। 
উচ্ছলতার কারণ: আমাদের আজ নতুন করে ভাবতে হবে, কেন জাতীয় জীবনে এ রকম বিশৃঙ্খল মানসিকতার সৃষ্টি হলাে। শুধু কারণ সন্ধানই নয়, সংস্কারমুক্ত হয়ে আমাদের এ রাহুমুক্তির উপায় উদ্ভাবনে অগ্রসর হতে হবে। স্বাধীনতার পূর্বে যে জাতীয়তাবােধ সমগ্র জাতিকে একটা দৃঢ় ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল, স্বাধীনতা উত্তর যুগে আমরা তা ধরে রাখতে পারলাম না। এখানে বৃহত্তর কল্যাণচেতনার একান্ত অভাব ছিল। দেশাত্মবােধেও ফাটল ধরতে দেখা গেল । দিনে দিনে স্বেচ্ছাচারিতা প্রকট হলাে। নেতৃত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা, যথার্থ দেশপ্রেমের অভাব ইত্যাদির ফলে। মানুষের মধ্যে নিয়মের প্রতি আস্থা ক্রমেই গৌণ হয়ে এল। শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশ, বই পড়ায় অনীহা, বেকার সমস্যা, নীতি ও মূল্যবােধের ক্রমাবনতি, সমাজবিরােধীর ক্রমবর্ধমান সাফল্য ‘শৃঙ্খলার মূলে কুঠারাঘাত করে চলছে।
উদ্ধৃঙ্খলতা ও ছাত্রসমাজ: ছাত্রসমাজের উচ্ছঙ্খলতা আরও বেদনাদায়ক। তাদের ওপরই নির্ভর করে দেশ ও জাতির গৌরব। ছাত্রসমাজ অগ্রগতির বাহক। কিন্তু তাদের এ অগ্রযাত্রা আজ নানা কারণে রুদ্ধ। হতাশা আর নৈরাশ্য এ যুবশক্তিকে সর্বনাশা অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে। ছাত্রসমাজ আজ বিভিন্ন দলে বিভক্ত। নৈরাশ্য, তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, চরম দারিদ্র্য, মূল্যবােধের অবনতি ইত্যাদি ছাত্রসমাজকে বিশৃঙ্খলার দিকে টেনে নিয়ে যায়। তবে ছাত্রসমাজের সংহত শক্তির মধ্যেই নিহিত রয়েছে এ বিশৃঙ্খলতা রােধের প্রতিষেধক। 
উপসংহার: জাতির জীবনে এ নৈরাশ্যবােধ কখনও চিরস্থায়ী হতে পারে না। তিমির রাত্রির অন্ধকার একদিন কেটে যাবে। সূচনা হবে আবার নতুন প্রভাতের। নতুন আশা ও আদর্শের অরুণােদয় ঘটবেই। নৈরাশ্য, উদ্ধৃঙ্খলতা ও কুসংস্কার কখনও একটা জাতিকে চিরকাল আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে না। আমাদের অচলাবস্থা কাটাতে আবার নতুন করে নিতে হবে শৃঙ্খলাবােধের দীক্ষা। এ শৃঙ্খলাবােধই আমাদেরকে অগ্রগতি, উন্নতি ও সমৃদ্ধির দুয়ারে পৌঁছে দেবে। [বি. দ্র. শৃঙ্খলা’ অনুসরণে ‘নিয়মানুবর্তিতা’ রচনাটি লেখা যায়। শুধু রচনাটির যেসব স্থানে শৃঙ্খলা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেসব স্থানে নিয়মানুবর্তিতা লিখলেই চলবে।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 20 November

    Thank you for this paragraph ☺️

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ