বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10 জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10 টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10  টি।

বাংলার বর্ষা রচনা  বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা  বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10
বাংলার বর্ষা রচনা  বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা  বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

 বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকা: ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ । বিভিন্ন ঋতর আগমনে এখানে অতুলনীয় প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যের সমারােহ ঘটে। কদম্ব, কেতকী, যুথিকা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার গন্ধবাহার বর্ষা প্রকৃতির অনির্বচনীয় প্রকাশ । তাই বসন্তকে ঋতুরাজ বললেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে বর্ষাই বাংলার প্রিয় ঋতু।

বর্ষার সময়: আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু মাস বর্ষাকাল । কিন্ত আমাদের দেশে বর্ষার আগমন আগেই ঘটে যায় এবং বর্ষা শেষও হয় দেরিতে। এদেশে সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসে বর্ষা আরম্ভ হয়ে আশ্বিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। 

বর্ষার আগমন: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পর ‘অতি ভৈরব হরষে' সজল গুরুগম্ভীর বর্ষার নব আবির্ভাব। বর্ষা বাংলাদেশের আকাশে ও মাটিতে আনে রং ও রসের অফুরন্ত উপহার । সে রূপকথার রাজপুত্রের মতাে ছুটে আসে। তার রথের মর্মর ধ্বনি শােনা যায়, তার বাঁকা তলােয়ার ঝলসে ওঠে। এসময়ে মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর, নদী-নালা, খাল-বিল, জলপূর্ণ হয়ে ওঠে। পৃথিবীর খরতপ্ত দিনের হয় অবসান, মাটির কঠিন বাধা ছিন্ন করে শস্য শিশুর দল আবির্ভূত হয়। তাদের হাতে থাকে নব-অঙ্কুরের জয় পতাকা। আসে পুষ্প বিকাশের লগ্ন। রূপ-রস-বর্ণ-শব্দ-গন্ধ গীতে বর্ষার সমারােহউৎসবে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ভরে ওঠে। কবি রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন

‘ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে।

জলসিতি ক্ষিতি সৌরভ রভসে 

ঘন গৌরবে নব যৌবনা বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা।'.

বর্ষার রূপ: দূরে শ্যামল গ্রাম, আদিগন্ত জল বিস্তারে শস্য-শিশুর নৃত্য, আকাশে কৃষ্ণ ধূসর মেঘবিন্যাস, দিগন্ত বিলাসী বক-পক্ষীর নিরুদ্দেশ যাত্রা। শস্য-বিচিত্রা পৃথিবীর বিস্তৃত প্রান্তরে কৃষকদের সংগীত মুখরতা। আকাশের বুক ফেটে বৃষ্টি নেমে আসে। এমন দিনে ঘরে বসে থাকা ছাড়া কোনাে উপায় নেই। তাই কবি গেয়েছেন—

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে।

তিল ঠাই আর নাহি রে

ওগাে, আজ তােরা যাস নে ঘরের বাহিরে।' 

বর্ষাকালে নৌকা, ডিঙি, ভেলা প্রভৃতি চলাফেরা করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। কৃষকেরা বৃষ্টিতে ভিজে ফসল তােলার কাজে ব্যস্ত থাকে। কারণ বর্ষাকাল পাট কাটার ও ধান চাষের উপযুক্ত সময়। 

বর্ষার বৈশিষ্ট্য: বর্ষার আকাশ সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন থাকে, সূর্যের দেখা মেলে না। নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠঘাট সব পানিতে টইটম্বুর থাকে। সারাদিনই অঝাের ধারায় বৃষ্টি পড়ে । কবির ভাষায়

বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর

আউশের ক্ষেত জলে ভরভর

কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার

ঘনিয়েছে দেখু চাহি রে। 

গ্রীষ্মকালের শুষ্ক নদী নিমেষেই ভরে যায়। দু কূল ছাপিয়ে ছলছল করে বয়ে চলে পানি। নদনদী সব নবযৌবনের রূপ ধারণ করে । 

বর্ষায় পল্লির অবস্থা: গ্রামের নদী-নালা, ডােবা, পুকুর, খাল-বিল সব পানিতে থৈ থৈ করে। নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যেই কৃষকেরা মাঠে যায়, গৃহিণীরা গৃহের কাজকর্ম করে । নদীতে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। খাল-বিলে শাপলা ফুলের সমারােহ দেখা যায় । 

শহরে বর্ষার অবস্থা: বর্ষায় শহরের নিম্নাঞ্চলগুলাে ডুবে যায়। উন্নত পয়ঃপ্রণালীর অভাবে বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে যায়। বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবুও প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষকে বাইরে যেতে হয়। এ সুযােগে রিক্সা, স্কুটার চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় । বিশেষ করে কাঁচা তরকারির দাম বাড়ে। ফলে মধ্যবিত্ত ও বস্তিবাসীদের কষ্ট বেড়ে যায়।

বর্ষার উপকারিতা: বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে সমস্ত ময়লা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এ সময়ে তরুলতা, গাছ-পালা খুব সতেজ হয়ে ওঠে। প্রকৃতিতে দেখা যায় রকমারি ফলের আয়ােজন, বিচিত্র ফুলের সম্ভার । নদীপথের যাতায়াত এবং পরিবহন হয় সহজ, সরল ও প্রশস্ত। 

বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা: বাংলার কৃষক এ ঋতুতে বীজ বােনে, চারাগাছ তােলে এবং রােপণ করে। বর্ষাই বাংলাকে করেছে শস্য-শ্যামল । বাংলার অন্নবস্তু, তার সমস্ত ঐশ্বর্য বর্ষার দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল । বর্ষা বাঙালির মনােভূমিকেও করেছে সরস ও কাব্যময়। অর্থনৈতিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করে সে তার সাংস্কৃতিক জীবনও গঠন করে দিয়েছে। রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষরােপণ বর্ষার অবদান। 

বর্ষার অপকারিতা: বর্ষার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি বর্ষার অপকারিতাও কম নয়। বৃষ্টির পানিতে পল্লির রাস্তাঘাট কাদায় ভরে ওঠে এবং কোনাে কোনাে জায়গা পানিতে ডুবে যায়, চলাচলের অসুবিধা হয়। দিনমজুরেরা হয় ঘরে আবদ্ধ; তাদের দুঃখের সীমা থাকে না । গরিবের ভাঙা চালা দিয়ে পানি পড়ে ঘর ভেসে যায় । মরুবিজয়ের কেতন উড়িয়ে মেঘের গুরু-গুরু মাদল বাজিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে ঝরে পড়ে বর্ষা। উত্তর দিক থেকে নেমে আসে মরণঢালা ভয়ংকরী বন্যা। এসময় দূষিত পানি পানের ফলে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রােগ মহামারি আকার ধারণ করে। 

মানমনে বর্ষার প্রভাব: বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ছায়ায় বনভূমি শ্যামল হয়ে ওঠে। বর্ষা মনকে সহজ-সরল ও সৃষ্টিশীল করে তােলে । মন হয় উদাস । এমন দিনে মন যেন কারও নিবিড় সান্নিধ্য লাভ করতে চায়। তাই কবি জসীমউদ্দীন বলেছেন

‘আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল জলধারে

বেনুৰনে বায়ু নাড়ে এলােকেশ, মন যেন চায় কারে।' 

উপসংহার: অপূর্ব রূপশ্রী নিয়ে বর্ষা এদেশে আগমন করে। বর্ষার অপকারের চেয়েও, উপকার অনেক বেশি। বর্ষা না হলে আমাদের দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতাে। শুধু বর্ষার কারণেই এদেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা অনিন্দ্যসুন্দর হয়েছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10  টি। যদি তোমাদের আজকের এই বাংলার বর্ষা রচনা | বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা | বর্ষাকাল রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ