বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা  টি।

বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা
বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা

বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা

ভূমিকা: মানবসভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, নিবিড বক্ষ-শােভিত অরণ্যের শ্যাম-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের পটভূমিতেই উন্মেষ ঘটেছিল মানুষের আদিম সভ্যতার । আদিম যুগে মানুষ ছিল সম্পূর্ণরুপে প্রকতি-নির্ভর। মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণের একমাত্র উৎস ছিল প্রকৃতির সুপরিসর অঙ্গন। আদিকাল থেকে মাটি ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক অতি নিবিড়। তাই প্রাচীন কাল থেকেই অরণ্যের বিভিন্ন গাছপালার সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকার একটা অবিচ্ছেদ্য সংযােগ গড়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশে বনের অবস্থা: যেকোনাে দেশের জন্যে মূল ভূখণ্ডের কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মােট আয়তনের মাত্র শতকরা ১৬ ভাগ। বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়ােজনের তুলনায় দু-তৃতীয়াংশ হলেও তা বৃদ্ধির জন্যে। উদ্যোগের অভাব প্রকট। অহরহ আমরা কারণে-অকারণে আমাদের আশপাশ থেকে নির্বিচারে বৃক্ষরাজি নিধন করে চলেছি। এতে করে আমরা ক্রমশ একটা অনিবার্য করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি। নির্বিচারে বনভূমি বা বৃক্ষরাজি নিধনের ফলে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ষড়ঋতুর লীলা-নিকেতন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রয়ােজনের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পক্ষান্তরে আকস্মিক বন্যা, জলােচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। জলবায়ু ক্রমশ এগিয়ে চলেছে চরমভাবাপন্ন পরিণতির দিকে। এভাবে বৃক্ষ নিধন চলতে থাকলে হয়তাে নিকট ভবিষ্যতেই একদিন বাংলাদেশ ঊষর মরুতে পরিণত হবে। 

বৃক্ষের প্রয়ােজনীয়তা: মানৱজীবনে বৃক্ষের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ মানুষ তথা প্রাণী মাত্রেরই খাদ্যের একমাত্র উৎস । বৃক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য। রক্ষা করে। বৃক্ষ পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়াকে প্রতিরােধ করে এবং তার অনিষ্টকর প্রভাব থেকে জীবজগতকে রক্ষা করে। মানবজীবনে বৃক্ষ এবং তার উপযােগিতার কথা অনস্বীকার্য। বৃক্ষের বিভিন্নমুখী অবদানকে বাদ দিয়ে মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তন বা উত্তরণের কথা কল্পনাই করা যায় না। বৃক্ষ খাদ্যের উৎস, শক্তির উৎস। বৃক্ষ মানুষকে অক্সিজেন দান করে মানুষের ত্যাগকৃত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে সমগ্র জীবকুলকে রক্ষা করে চলেছে। মহান স্রষ্টার সৃষ্ট গাছপালা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। তাই মানবজীবনে বৃক্ষের চাহিদা সর্বাধিক। বৃক্ষ মানুষের খাদ্য সরবরাহ করে, বস্ত্রের জন্যে প্রয়ােজনীয় উপাদানের যােগান দেয়। বাসস্থান তৈরির অন্যতম উপকরণও বৃক্ষ। রােগ নিবারণকারী এবং স্বাস্থ্য গঠন ও বন্ধাকারী মল উপাদান আসে বৃক্ষ থেকে। জীবনের জন্যে অন্যতম উপাদান অক্সিজেন তৈরি এবং সরবরাহ করে বৃক্ষ। কাজেই মানবজীবনে বক্ষের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

বৃক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে: বৃক্ষ পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। বৃক্ষকে আবহাওয়া ও জলবায়র নিয়ল বলা যায়। গাছপালা অধিক বৃষ্টিপাতে সহায়তা করে, নদীভাঙন থেকে ভূ-ভাগকে রক্ষা করে। অতএব আমাদের পরিবেশ, আবহাওয়া ও জাত রক্ষা এবং খাদ্য ঘাটতির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্যে বনাঞ্চল সৃষ্টি ও বন সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।

বৃক্ষরােপণ অভিযান: বৃক্ষ নিধনজনিত অনিবার্য মারাত্মক পরিণতির হাত থেকে রেহাই পেতে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে প্রতিবছর বৃক্ষরােপণ অভিযান সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। সাধারণত এ অভিযানে মেহগনি, সেগুন, ইউক্যালিপটাস, ইপিল-ইপিল, আম, জাম, পেয়ারা, জামরুল প্রভৃতি নানা জাতের বৃক্ষের চারা সরকারি নার্সারি থেকে রােপণের জন্যে সরবরাহ করা হয় । কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় অধিকাংশ চারাগাছ লাগাবার কিছুদিন পরই মারা যায়। আমাদের উচিত একটি বৃক্ষ নিধনের পূর্বেই তার বদলে কমপক্ষে চারটি করে চারা রােপণ করা এবং সযত্নে সেগুলােকে লালন করা। কেননা বৃক্ষ আছে বলেই বিশ্বের বুকে মানবসমাজ আজও টিকে আছে। 

গাছের চারা সংগ্রহ ও রােপণ: আমাদের দেশে বনাঞল কমে যাওয়ার কারণে বৃক্ষরােপণ সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করে তুলতে হবে। পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরােপণ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। বর্তমানে সরকারের বনবিভাগ এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বনবিভাগ চারা উৎপাদন করে জনগণের কাছে সহজে পৌছানাের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চারা বিতরণ কেন্দ্র ও বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে জনগণ তা রােপণ করতে পারে। এ ছাড়া এ অভিযানকে জনপ্রিয় করার জন্যে প্রতিবছর বৃক্ষমেলা আয়ােজন করা হয়ে থাকে। মেলা থেকে জনগণ বিভিন্ন গাছের সাথে পরিচিত হচ্ছে এবং চারা সংগ্রহ করতে পারছে। এ ছাড়া সরকার প্রচারমাধ্যমের সাহায্যে চারা রােপণের পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করতে পারে। 

বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি সফল করার উপায়: বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি সফল করার জন্যে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নতুন গাছের চারা রােপণ করতে হবে এবং পুরাতন গাছ কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। বৃক্ষের উপকারিতা সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে তাদেরকে বৃক্ষরােপণে উৎসাহী করতে হবে। যদি বিশেষ প্রয়ােজনে গাছ কাটতে হয়, তাহলে গাছ কাটার আগে অন্ততপক্ষে আরেকটি গাছ লাগিয়ে নিতে হবে। সরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্ন জাতের বীজ ও চারা সংগ্রহ করে তা জনগণের কাছে পৌছে দিতে হবে। এসব পদক্ষেপ বৃক্ষরােপণ অভিযান কর্মসূচির বাস্তবায়ন তরান্বিত করবে। 

বৃক্ষ সংরক্ষণ: গাছ লাগালেই গাছ হয় না। তার যত্ন, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাদি না থাকলে অকালমৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তা ছাড়া পুরােনাে অরণ্যরাজিরও যত্ন ও সংরক্ষণ প্রয়ােজন। এ উদ্দেশ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারিভাবে বনবিভাগ' নামে একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এ দপ্তরের সক্রিয় প্রচেষ্টায় অরণ্য সম্প্রসারণ ও অরণ্য সংরক্ষণের যাবতীয় কাজকর্মও চলছে। এ উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলােতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে ।।

বৃক্ষ সংরক্ষণে পালনীয় ব্যবস্থাদি: আর্থিক ব্যয় বরাদ্দ করলেই অরণ্য সম্প্রসারণ, অরণ্য সংরক্ষণের লক্ষ ও উদ্দেশ্য সার্থকভাবে রূপায়িত হতে পারে। এর জন্যে প্রয়ােজন সরকারি ও বেসরকারিভাবে আন্তরিক প্রয়াস ও প্রচেষ্টা। একদিকে যেমন দরকার বনভূমি সৃজনের, অপরদিকে তেমনি। কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়ােজন অরণ্য উচ্ছেদের অপপ্রয়াস। অরণ্য সম্পদ আমাদের জন্যে অপরিহার্য, নইলে বহু শিল্পের অপমৃত্যু অবধারিত। সুতরাং বনভূমি সংরক্ষণার্থে কয়েকটি পালনীয় ব্যবস্থার কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়। যেমন— 

ক. অরণ্যের অবাধ ও যথেচ্ছ উচ্ছেদ বন্ধ করা । 

খ, নতুন চারাগাছ লাগানাে এবং তার প্রয়ােজনীয় পরিচর্যা। 

গ, কেবল পরিণত বৃক্ষচ্ছেদন; অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন যাতে না হয় আইন করে তা নিষিদ্ধ করা। 

ঘ, নতুন বনভূমিতে পশুচারণ নিষিদ্ধ করা। 

ঙ. বৃক্ষকে কীট-পতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। 

চ, অরণ্য-গবেষণার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উপসংহারঃ বৃক্ষবাজি মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। কাজেই বৃক্ষরােপণের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সাজাতে হবে সবুজ-শ্যামলিমায় । মতন গগের পন্দনে মাতিয়ে তুলতে হবে প্রকৃতিকে। বৃক্ষ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু এবং রক্ষক । ঘরের আঙিনায়, আশপাশে, চলার পথের ধারে, পার্কে, হাটে বাজারের উপকণ্ঠে মানুষ যদি আদিম বন্ধু উদ্ভিদকে রােপণ করে, সস্নেহ পরিচর্যায় পত্রপুষ্পে সুশােভিত হতে দেয়, ঐ বন্ধুই কৃত্রিমতার অভিশাপকে মুছে দিয়ে আমাদেরকে তুলে নেবে শ্যামলতার গন্ধবাসিত কোমল ক্রোড়ে, দিবে সঞ্জীবনী প্রাণদ বায়, আর্থিক সমুদ্ধি।

বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা

ভূমিকা: পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়নের একটি বিরাট ভূমিকা আছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের ভূমিকা অভাবনীয়। একটি দেশে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে এ হার খুবই কম। বাংলাদেশে মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১৭ ভাগ বনাঞ্চল রয়েছে। ফলে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে । এমনিতেই বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে অনেক গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। এরপর যদি বনায়ন কর্মসূচি ঠিকভাবে ত্বরান্বিত না হয়, তাহলে তা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দেশের পরিবেশও হবে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। তাই পরিবেশকে বাঁচাতে আমাদের ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় এ কম বনাঞ্চল বাড়াতে না পারলে আমরা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হব। 

পরিবেশ সংরক্ষণ, বনায়ন ও গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া: বনায়ন ঠিকভাবে না হলে, কলকারখানার সংখ্যা বাড়লে, জনসংখ্যার চাপ বেশি হলে, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়া দেখা দিলে তা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। এ পরিবেশ বিপর্যয়কে বিজ্ঞানীরা গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া নামে অভিহিত করে থাকেন। এ প্রতিক্রিয়ার ফলে সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলো বিনা বাধায় পৃথিবীতে আসার সুযোগ পায়। কিন্তু তা আবার মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না। ফলে ভূমণ্ডল অধিকতর উষ্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের দেশেও গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর ফলে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, ভূমিধসের মতো মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে আমাদের দেশে। এ প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে ব্যাপক বনায়ন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে ।

বৃক্ষনিধন ও পরিবেশ বিপর্যয়: অধিক হারে বৃক্ষনিধন পরিবেশ বিপর্যয়ে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করতে পারলে এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, ‘ক্রমাগত বৃক্ষনিধনের ফলে ২০৩০ সালে এ দেশের ৮ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের গড় তাপমাত্রা ৩৫°-৩৬° সে. থেকে বেড়ে ৪৫° সে. 'এ দাঁড়াবে।' পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এ অভিমত আমাদের উদ্বিগ্ন করে। আজ আমাদের দেশে অধিক হারে গাছ কাটা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। দেশ আজ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মুখে । অথচ আয়তন মাত্র ১,৪৮,৩৯৩ বর্গ কিলোমিটার। আর বন এলাকার আয়তন দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। কিন্তু পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বন এলাকার প্রয়োজন ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বন এলাকা অত্যন্ত কম। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে ।

বনায়ন ও বাসযোগ্য পরিবেশ: বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে ব্যাপক বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। অথচ আমরা বন না বাড়িয়ে ক্রমাগত বৃক্ষনিধন করে চলেছি। ১৯৭৪ সালেও আমাদের দেশে শতকরা ২৪ ভাগ বনভূমি ছিল। আজ তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সমগ্র বাংলাদেশের মাত্র ১৭ ভাগ বনাঞ্চল । কিন্তু আগেই বলেছি, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বনাঞ্চলের প্রয়োজন ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ অত্যন্ত কম। অথচ বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মোকাবিলা করতে হলে আমাদের বনায়ন যত বাড়ানো যাবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল হবে। ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' রচনা করতে ব্যাপক বনায়নের কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষকে তাই এগিয়ে আসতে হবে।

বনায়ন ও সামাজিক সচেতনতা: বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করলে। পরিবেশ সংরক্ষণ অনেক সহজ হয়। আর বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হলে চাই সামাজিক সচেতনতা। বাস্তবতার নিরিখে ব্যাপক বনায়নের জন্য আমাদের দেশে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতার কথা তাদের বুঝিয়ে বনায়ন কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে হবে। দেশের সব কটি জেলায় এখন বনায়ন কর্মসূচি চালু আছে। এজন্য প্রত্যেক থানায় থানা বনায়ন ও নার্সারি উন্নয়ন প্রকল্প চালু আছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনবোধে এজন্য প্রণোদনামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে ।

সামাজিক বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বন উজাড় হওয়ার কারণে বর্তমানে বনজ সম্পদের বাড়তি চাহিদা ও সীমিত সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান অনেক। এ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে অব্যবহৃত প্রান্তিক ভূমি ও প্রায় অনুর্বর জমিগুলোতে বন সৃষ্টি বা গাছ লাগানোর ব্যাপারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। জনগণের স্থায়ী অংশগ্রহণেই কেবল বনজ সম্পদের বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। দেশি ও বিদেশি প্রায় ১০০ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের গ্রামোন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামাজিক বনায়নকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানো, গৃহস্থালি বনায়ন এবং স্থানীয় জনগণের কমিউনিটির ভিত্তিতে নেওয়া কৃষি জমিতে খামার বনায়ন। পরিবেশ সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে বনজ সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ হারের চেয়ে বেশি মাত্রায় গাছকাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। এজন্য সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি জোরদার করার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার: পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়নের রয়েছে অবিকল্প ভূমিকা। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই বনায়ন কর্মসূচিকে ব্যাপক ও বিস্তৃত করতে হবে। বৃক্ষনিধন রোধ করতে হবে। বনজ সম্পদ রক্ষায় সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে বনায়ন বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। দিনে দিনে আমাদের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম সম্প্রসারিত ও প্রখর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বনজ ও ফলদ উভয় বৃক্ষই রোপণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ‘একেকটি গাছ, একেকটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরি।' গাছের সঙ্গে রয়েছে আমাদের দমের সম্পর্ক, বেঁচে থাকার সম্পর্ক। বনায়ন জোরদার করার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের আলস্য, অবহেলা, অসচেতনতা, উদ্যমহীনতা পরিবেশের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়নের অবিকল্প ভূমিকার কথা মনে রেখেই আমাদের বনায়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই বৃক্ষরোপণ রচনা | বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ