আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি উক্তিটি বিশ্লেষণ কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর ।

আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর
আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর

আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের রাজনৈতিক তথা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে কয়টি আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি অন্যতম। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানে তাদের একটি মনগড়া ঔপনিবেশে পরিণত করে এ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দিক থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানকে এ সকল দৈন্যদশা হতে মুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে এক কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। ইতিহাসে তা ছয় দফা কর্মসূচি নামে পরিচিত।

→ আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি।”—উক্তিটির বিশ্লেষণ : পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানিদের কোনো অধিকারই ছিল না বলা চলে। যদিও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো তা ছিল মূলত কয়েকটি ধন মুষ্টিমেয় পরিবারের জন্য। বিশেষ করে এসময় পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল চরমভাবে উপেক্ষিত। ঠিক এই সময়েই ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করে ছয় দফা কর্মসূচি যাতে মূলত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের দাবির প্রতিফলন ঘটে। নিম্নে “আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সামাজের দাবি” —উক্তিটি বিশ্লেষণ করা হলো :

→ শ্রেণি : Marx এর মতে, শ্রেণি হলো ব্যক্তিসমষ্টি, যারা উৎপাদনের ব্যবহার, একইরকম কার্য করে ও অন্যান্য গ্রুপের সাথে সংঘাতময় চাপের মুখে পিষ্ট হয়। স্বতন্ত্রব্যক্তিরা এক একটি শ্রেণি তখনই গঠন করে যখন তাদের একটি শ্রেণির বিরুদ্ধে সাধারণ সংগ্রাম চালাতে হয়। একটি শ্রেণি এভাবে ব্যক্তিসত্তার ঊর্ধ্বে উঠে স্বতন্ত্রসত্তার অধিকারী হয়। আর ব্যক্তির অধিকার তার জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা ও ব্যক্তিগত উন্নতি তার শ্রেণি দ্বারা নির্ধারিত হয় ।

অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ তাঁদের 'Society' নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, “শ্রেণি বলতে সমাজের এমন একটি বিশেষ অংশকে বুঝায়, যে অংশ সমাজের অবশিষ্ট অংশ থেকে স্বতন্ত্র।”

মাক্স ও এঙ্গেলসের মতে, প্রধান শ্রেণি দু'টি হচ্ছে- 

১. শিল্পপতি বা (Bourgeoisie)

২. সর্বহারা বা (Proletariat)

তবে তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তিনটি শ্রেণি লক্ষণীয়। যথা-

১. উচ্চবিত্ত শ্রেণি (Upper class )

২. মধ্যবিত্ত শ্রেণি (Middle class ) 

৩. নিম্নবিত্ত শ্রেণি (Lower class)

এরা সমাজব্যবস্থা পিরামিডের মতো বিস্তৃত। পিরামিডের ভূমিতে রয়েছে নিম্নবিত্ত শ্রেণি, তার উপরে মধ্যবিত্ত এবং শীর্ষে রয়েছে উচ্চবিত্ত শ্রেণি ।

উপর্যুক্ত শ্রেণি বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ২২টি পরিবার ছিল উচ্চবিত্ত শ্রেণির। এছাড়া প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, উচ্চ শিক্ষিত সরকারি আমলা, ডাক্তার, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্কুল ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, ভু-স্বামী ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক প্রভৃতি মধ্যবিত্ত শ্রেণির আওতাভুক্ত। আর যারা জীবিকানির্বাহের জন্য মোটামুটি কষ্টসাধ্য করে থাকে তাদেরকে নিম্ন শ্রেণি বলা হয়

→ আওয়ামী লীগের ছয় দফা কিভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দাবি ছিল। তা ছয়টি দফায় বিশ্লেষণ আকারে দেখানো হলো :

১. প্রথম দফায় বিশ্লেষণ : ছয় দফার প্রথম দফায় বলা হয় যে, ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে সত্যিকার অর্থে শাসনতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হবে পার্লামেন্ট পদ্ধতির ও প্রদেশসমহ থাকবে স্বায়ত্তশাসিত। কেন্দ্রীয় ও প্রদেশসমূহের আইন পরিষদগুলো গঠিত হবে সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের মাধ্যমে। তাই এতে দেখা যায়, প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির | লোকেরাই। কেননা আইনসভাসমূহে নিম্নবিত্তের তুলনায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপস্থিতি বেশি। তাছাড়া এই দফায় আওয়ামী লীগের মধ্যবিত্ত শ্রেণিরাই বেশি সুবিধাভোগ করবে ।

২. দ্বিতীয় দফায় বিশ্লেষণ : দ্বিতীয় দফায় বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেবল দেশরক্ষা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে তাছাড়া বাকি সকল ক্ষমতা প্রদেশসমূহ ভোগ করবে। এতে দেখা যায় যে, প্রদেশসমূহের হাতে বাকি সকল ক্ষমতা বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা ভোগ করতো। কেননা নিম্নবিত্তের তুলনায় মধ্যবিত্তরা বেশি শিক্ষিত ছিল। তাই দ্বিতীয় দফাও মধ্যবিত্তের অনুকূলে ।

৩. তৃতীয় দফায় বিশ্লেষণ : তৃতীয় দফায় বলা হয় যে, দুই অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে। রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক একটিই থাকবে তবে এক অঞ্চলের মুদ্রা যেন অন্য অঞ্চলে পাচার না হয় সে জন্য সংবিধানে বিধান থাকবে। এই দফা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দফাটি বাস্তবায়িত হলে পূর্ব-পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হবে না। এতে করে বিশেষভাবে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। যেহেতু ব্যবসায়ীরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির আওতায় তাই এই দফাটিও মধ্যবিত্ত শ্রেণিরই দাবি।

৪. চতুর্থ দফায় বিশ্লেষণ : চতুর্থ দফায় বলা হয় যে, সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ইত্যাদি ধার্য করার ক্ষমতা ও তা আদায়ের ক্ষমতা পুরোপুরি প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এতে কর্তৃত্ব থাকরে না, তবে কেন্দ্রীয় সরকার এর নির্ধারিত একটি অংশ পাবেন। এই দফাটি বিশ্লেষণ করলেও সেটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের অনুকূলে যায়। কেননা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি সরকারকে যে বিপুল পরিমাণ কর দিত তার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার জন্য এবং এতে নিজস্ব কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই এই দাবিটির পিছনে ইন্ধন জোগায় ।

৫. পঞ্চম দফায় বিশ্লেষণ : পঞ্চম দফায় বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজস্ব ক্ষমতা লাভ করবে। এক কথায় বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলো নিজস্ব অধিকার লাভ করবে। তবে এতে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নীতিমালা থাকবে। এই দফার বিশ্লেষণ করলেও তা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির দাবি হিসেবেই চিহ্নিত হবে। কেননা বাংলার মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ঠিকাদার প্রভৃতির লোকেরা কোনোভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে পারতো না। কারণ এক্ষেত্রে সকল সুযোগ পশ্চিম পাকিস্তানিরা এককভাবে ভোগ করতো। পঞ্চম দফায় বাস্ত বায়ন হলে তাদের মধ্যকার বৈষম্য দূর হবে।

৬. ষষ্ঠ দফায় বিশ্লেষণ : ষষ্ঠ দফায় বলা হয় যে, প্রাদেশিক সরকারগুলো নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য নিজ নিজ আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে পারবে এবং সকল অঙ্গরাজ্য থেকে সমান জনসংখ্যার ভিত্তিতে সামরিক বাহিনীর চাকরির ক্ষেত্রে লোক নিয়োগ দিতে হবে। এই দফার পিছনেও মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির দাবিই প্রতিধ্বনি হয়েছে। কেননা পূর্ব পাকিস্তানে আধাসামরিক বাহিনী গঠিত হলে মধ্যবিত্ত বাঙালিরাই তাতে চাকরি পাবে। তাছাড়া অঞ্চল অনুসারে লোক নেওয়া হলে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক চাকরি পাবে। আর যারা চাকরিতে বহাল রয়েছে তাদের পদোন্নতি হবে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত ছয় দফার বিশ্লেষণ থেকে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ছয় দফা দাবি ছিল মূলত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি। শেখ মুজিব যদিও বলেছিলেন যে, ছয় দফা সকল শ্রেণি পেশার লোকের স্বার্থের দাবি কিন্তু এটি ছিল মূলত মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি। কেননা এতে নিম্নবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের তুলনায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। সত্তরের নির্বাচনে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজেরই দাবি  উক্তিটি বিশ্লেষণ কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ