আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর
আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর

আব্বাসীয় কারা ব্যাখ্যা কর। আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, আব্বাসীয় কারা? আব্বাসীয় আন্দোলনের পটভূমি বর্ণনা কর।
  •  অথবা, সংক্ষেপে আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় আন্দোলন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ আন্দোলনের জন্যই উমাইয়া বংশের পতন এবং আব্বাসীয় বংশের উত্থান ঘটে। যে সময় উমাইয়া শাসকদের অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা ও চারিত্রিক অধঃপতনের কারণেই আব্বাসীয় বংশের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। মুসলিম জাহানের খিলাফতের প্রশ্নে আব্বাসীয় শাসকদের আন্দোলন অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। এ আন্দোলনের ফলে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। আর এ উমাইয়া বংশের ধ্বংস্তূপের ওপর আবুল আব্বাস আস সাফফাহ আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। সেজন্য তাঁকে আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তিনি খিলাফত গ্রহণের পর আব্বাসীয় শাসননীতির মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আব্বাসীয় আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

→ আব্বাসীয়দের পরিচয় : হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর চাচা ছিলেন আল আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম। তাঁর চাচার নাম অনুসারেই এ বংশের নামকরণ করা হয়। আল আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিমের ৪ জন পুত্র ছিল। আব্দুল্লাহ, ফজল, উবায়দুল্লাহ এবং কায়সান। তাঁরা প্রত্যেকেই সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তাঁরা হযরত আলীর সমর্থকও ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠপুত্র আব্দুল্লাহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এবং ইতিহাসের পাতায় ইবনে আব্বাস নামে পরিচিত। ইবনে আব্বাসের পুত্র ছিলেন আলী । ইবনে আব্বাসের মৃত্যুর পর পুত্র আলীই যাবতীয় কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আলী ৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মদ পিতার স্থান দখল করে। মুহাম্মদই আব্বাসীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। অতএব ইবনে আব্বাসের পরবর্তী বংশধরের সকলেই আব্বাসীয় নামে পরিচিত।

→ আব্বাসীয় আন্দোলনের উৎপত্তি/পটভূমি/ইতিহাস : ইবনে আব্বাসের পৌত্র মুহাম্মদ ছিলেন আব্বাসীয় আন্দোলনের নেতা। অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং উচ্চাভিলাষী মুহাম্মদই আব্বাসীয়দের জন্য খিলাফত দখলের নকশা প্রণয়ন করেন। নিম্নে আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো-

১. আব্বাসীয় আন্দোলনের যাত্রা : ইবনে আব্বাসের পৌত্র মুহাম্মদ আব্বাসীয় আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেন। তিনি উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন তথা আব্বাসীয় খিলাফতের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য একটি মতবাদ প্রচার করেন। এ মতবাদ অনুযায়ী ইমাম হুসাইনের মৃত্যুর পর ইসলাম আল- হানিফার ওপর ধর্মীয় তথা ইমামতির দায়িত্ব অর্পিত হওয়া উচিত। কারণ ইমাম হুসাইনের পুত্র জয়নুল ছিলেন নাবালেগ অর্থাৎ ইমামতির দায়িত্ব পালনের অনুপযুক্ত। তাই পূর্ণবয়স্ক আল-হানিফার ওপর দায়িত্ব অর্পিত হওয়া উচিত। ইতিহাসে এ মতবাদ আব্বাসীয় মতবাদ নামে পরিচিতি লাভ করে।

২. আব্বাসীয় আন্দোলনের কারণ : আব্বাসীয়গণ কর্তৃক উমাইয়াবিরোধী আন্দোলনের বিবিধ কারণ ছিল। উমাইয়া শাসকদের অত্যাচার, নৃশংসতা, হত্যাকাণ্ড, বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতির জন্য আব্বাসীয়রা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তাছাড়া কারবালার প্রান্তরে ইমাম হাসানের প্রতি মুয়াবিয়ার বিশ্বাস ঘাতকতা, মুয়াবিয়া ও আলীর দ্বন্দ্ব, আলীর বংশধরদের হত্যা, আরব ও অনারব মুসলমানদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ, বিজিত জাতির সদস্যদেরকে বিশেষ করে পারসিকগণকে সরকারি চাকরির বড় বড় পদে ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি থেকে অপসারণ করা, উমাইয়াদের স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় শাসনকার্যে উমাইয়া শাসকদের অবহেলা প্রভৃতি কারণে আব্বাসীয়রা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন।

৩. আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রসার/আব্বাসীয় মতবাদ প্রচার : আব্বাসীয়গণ খিলাফতের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্যই বিভিন্ন স্থানে তাঁদের এ মতবাদ প্রচার শুরু করেন। অনেক আগেই দ্বিতীয় ইয়াজিদের শাসনকালে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও খলিফা হিশামের আমলে এটা একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সুসংগঠিত আন্দোলনের রূপ লাভ করে। তাঁদের এ আন্দোলনের সদর দপ্তর এবং প্রচার ঘাঁটি হিসাবে তাঁরা ‘আল হুমাইমা' নামে ডেড-সীর তীরে একটি ছোট গ্রামকে বেছে নেয় । গ্রামটির কেউ তাদের শত্রু ছিল না এবং গ্রামটি বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। এ গ্রাম থেকেই সবচেয়ে কৌশল প্রচার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। তাদের এ আন্দোলনের প্রচারণা শুরু করলে খোরাসান ও কুফায় তীব্র আকার ধারণ করে। আব্বাসীয় প্রচারক দল "Dia বা দা বণিকের ছদ্মবেশে বিভিন্ন স্থানে গমন করে উমাইয়াবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতো। তাঁদের এ আন্দোলন অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে পরিচালনা করা হতো। আর এ আন্দোলনই | আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

৪. খারেজি, শিয়া, খোরাসানি ও মাওয়ালি গোষ্ঠীর সমর্থন লাভ : আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী কর্তৃক আব্বাসীয় মতবাদে সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এসব জাতিগোষ্ঠীর সমর্থনের জন্য মুহাম্মদ বিন আলীকে সুকৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিল। তিনি কৌশলে ঘোষণা করেন যে, মহানবি (সা.) তথা ফাতেমি বংশের দাবি প্রতিষ্ঠা করাই আব্বাসীয় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। ফলে উমাইয়াদের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন খারেজি, শিয়া, খোরাসানি ও মাওয়ালিসহ প্রভৃতি গোষ্ঠী এ আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করে এবং উমাইয়া বিরোধী শক্তিশালী জোট গঠন করে।

৫. সিনেট (Senate) পরিষদ গঠন : মুহাম্মদ বিন আলী কর্তৃক সিনেট পরিষদ গঠন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মূলত, আব্বাসীয় আন্দোলনকে সুসংগঠিত ও সুসংহত করার জন্য একটি সিনেট পরিষদ গঠন করা হয়। সত্তরজন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠন করা হয়। প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করাই ছিল এ পরিষদের প্রধান কাজ। সিনেট পরিষদ ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল পরিচালনা করতো। মুহাম্মদ বিন আলীই ছিলেন সিনেট পরিষদের প্রধান ।

৬. আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ : মুহাম্মদ বিন আলীর পুত্র ইব্রাহিমের হাতেই উমাইয়াবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। মুহাম্মদ ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে ইব্রাহিম পিতার মনোনয়নক্রমে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ফলে অনেক সুযোগ্য নেতা তার আন্দোলনের পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। উমাইয়া শাসক দ্বিতীয় মারওয়ান আব্বাসীয় নেতা ইব্রাহিম নিহত হলে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন আরো বেশি গতিশীল হয় এবং চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।

৭. আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় আবু মুসলিমের অবদান : আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু মুসলিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিই বিপদকালে এ খিলাফতকে রক্ষা করেছিলেন। ইব্রাহিমকে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলনে তিনি সহযোগিতা করেন। আবু মুসলিম ছিল অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকার ছিলেন। তার নেতৃত্বে খোরাসান এবং অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিনি অত্যন্ত কৌশল সমস্ত বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক আমির আলী বলেছেন- “যে অহমিকা এবং তিক্ত সম্পর্ক মুদারীয় এবং হিমারীয়গণকে উত্তেজিত করেছিল তিনি সুকৌশলে আপন কাজে লাগানোর জন্য ম্যাকিয়াভেলির মতো দূরদর্শিতা আবু মুসলিমের ছিল। তাই উমাইয়া বংশের পতন ঘটিয়ে আব্বাসীয়দের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে তিনি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন ।"

৮. ইরাক দখল : আব্বাসীয়দের আন্দোলনের ফলে ইরাকের রাজধানী কুফা তাদের হস্তগত হয়। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন আবু মুসলিম। তার অসাধারণ নেতৃত্বে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে সংগঠিত যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেন। ফলে ইরাকের রাজধানী কুফা আব্বাসীয়দের দখলে আসে। ইরাকের রাজধানী কুফা দখলের মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠে

৯. উমাইয়াদের পতন : আব্বাসীয় আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল হিসাবে উমাইয়া শাসনের পতন হয় এবং আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জাবের যুদ্ধের মাধ্যমে উমাইয়াদের পতন ঘটে। আর উমাইয়া বংশের শেষ শাসক ছিলেন দ্বিতীয় মারওয়ান । | ইরাক, পারস্য। খোরাসান আব্বাসীয়দের দখলে গেলে মারওয়ান ভীতসন্ত্রস্ত হন। এদিকে তার পুত্র আব্দুল্লাহ পরাজয়বরণ করে পুত্রের গ্লানি মোচনের জন্য মারওয়ান ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে টাইগ্রিস নদীর অববাহিকা অঞ্চল জাব নদীর তীরে তিনি ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে হারবান থেকে অগ্রসর হন। এ দিকে আবুল আব্বাস তার সেনাপতি আয়ুনের সাহায্যে একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। খলিফা এ সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব তার পিতৃব্য আব্দুল্লাহর ওপর অর্পণ করেন। মারওয়ান জাব নদীর পশ্চিম তীরে অন্যদিকে পিতৃব্য আব্দুল্লাহ পূর্ব তীরে শিবির স্থাপন করে। ফলে উভয় শক্তির মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মারওয়ান শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন । এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে।

১০. মারওয়ানের মৃত্যু : মারওয়ানের মৃত্যু মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় আন্দোলনের সমাপ্তির ঘটে এবং আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। মারওয়ানের পুত্র আব্দুল্লাহ ৭৪৯ খ্রি. সেনাপতি আবু আয়ানের নিকট চরমভাবে পরাজিত হন। পুত্রের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের জন্য স্বয়ং যুদ্ধে ক্ষেত্রে গমন করেন। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মিশরের দিকে পালায়ন করতে গিয়ে আব্বাসীয় সৈন্যদের হাতে নিহত হন।

১১. আব্বাসীয়দের খিলাফত প্রতিষ্ঠা : ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয়দের খিলাফত প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আব্বাসীয় আন্দোলনের সক্রিয়তার জন্যই এ খিলাফত প্রতিষ্ঠা সদ্ভাব হয়েছিল। ঐতিহাসিক জাবের যুদ্ধের ফলে উমাইয়া বংশের শেষ খলিফা মারওয়ানের পরাজিত ও নিহিত হন। এর মধ্য দিয়ে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। আর এ উমাইয়া বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় ।

১২. খলিফা ঘোষণা : আব্বাসীয় খিলাফত চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই খলিফা নির্বাচন করা হয়। ইমাম ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর তাঁরই পূর্ব মনোনয়নক্রমে আবু মুসলিম ৭৪৯ কুফা মসজিদে আবুল আব্বাসকে খলিফা বলে ঘোষণা করে। তিনিই ছিলেন আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হয়েই উমাইয়াদের নৃংশভাবে হত্যা করেন বলে তাঁকে আস-সাফফাহ বা রক্তপিপাসু বলা হয়।

১৩. প্রত্যক্ষ আন্দোলন : আব্বাসীয় বংশের নেতা ছিলেন ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মদ বিন আলী। তখন উমাইয়া সাম্রাজ্যে সর্বত্র কলহ, বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য, গৃহযুদ্ধ ও অসন্তোষের দাবানল জ্বলে উঠেছিল। এ সুযোগে আবু মুসলিমকে তার প্রতিনিধি ও প্রচারক নিযুক্ত করলে তিনি মাওয়ালি, খারেজি, আলী, ফাতেমী, সুন্নি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোককে স্বীয় পতাকা তলে আনয়ন করেন। অতঃপর আবু মুসলিম খোরাসান দখল করে নেন। দ্বিতীয় মারওয়ান কর্তৃক আব্বাসীয় নেতা ইব্রাহিম নিহত হলে উমাইয়াবিরোধী আন্দোলন আরো বেশি তীব্র ও গতিশীল হয়ে উঠে। ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আব্বাসীয়দের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আবু মুসলিম। পরবর্তীতে আবু মুসলিম ইরাক অধিকার করে নেন। কিন্তু ইব্রাহিম মৃত্যুর পূর্বে ভ্রাতা আবুল আব্বাসকে উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করে যান। ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে আবুল আব্বাস কুফার মসজিদে গমন করলে সেখানে তাঁকে খলিফা বলে ঘোষণা করা হয়। আবুল আব্বাসকে খলিফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠার পেছনে আব্বাসীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। উমাইয়া শাসকদের অত্যাচার, অবিচার, বিদ্রোহ, কলহ, গৃহযুদ্ধ প্রভৃতি জনসাধারণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এ ক্ষোভের সুযোগ গ্রহণে আব্বাসীয়গণ উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে এবং সর্বত্র প্রচার করতে থাকে। ফলে আব্বাসীয়গণ তাঁদের আন্দোলনের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন। এ আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল হিসাবে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে এবং ইতিহাসের পাতায় এক নতুন রাজবংশ আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় এ আন্দোলনের অবদান অনেক।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় কারা? আব্বাসীয় আন্দোলনের পটভূমি বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সংক্ষেপে আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ