আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর
আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর

আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর

  • আইয়ুব খানের শাসনের বৈশিষ্ট্য লিখ। 
  • অথবা, আইয়ুব খানের শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
  • military rule in 1958 and basic democracy of ayub khan

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এই | সামরিক শাসনের সর্বাধিক নায়ক ছিলেন আইয়ুব খান। রাজনীতিবিদ ও সংসদীয় প্রক্রিয়াকে ঘৃণা করতে অভ্যস্ত আইয়ুব খান সিভিল সার্ভেন্ট | সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সরকার গঠন করেন। তার শাসনব্যবস্থা দায়দায়িত্বহীন এবং প্রচলিত আইনবিরোধী শাসনব্যবস্থা হিসেবে প্রকাশিত হয় ।

→ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য : আইয়ুব খানের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. বিরোধীদের কণ্ঠরোধ : আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী এবং ফিরোজ খান নূন এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনেন । তিনি ১৫০ জন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি এবং প্রায় ৬০০ জন সাবেক জাতীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনেন এবং তাদের কারারুদ্ধ করেন।

২. বাঙালি সামরিক সদস্য বৃদ্ধি : ১৯৫৬ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর অধিক সংখ্যক বাঙালিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৬০-এর দশকের অফিসার শ্রেণিতে বাঙালি নিয়োগের ব্যাপারে সরকারি আগ্রহের নিদর্শনস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে কয়েকটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং নিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারকার্যও করা হয় ।

৩. পেডো এবং এবডো : রাজনীতিবিদদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য পেডো এবং এবড়ো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে প্রায় ৭০০ ব্যক্তিকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অপসারণ করা হয়।

৪. পাকিস্তানি ভাষা তৈরির প্রচেষ্টা : আইয়ুব খান পাকিস্তানের জন্য অভিন্ন ভাষা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেন। এ লক্ষ্যে তিনি কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। তিনি বক্তৃতাতে বলেন যে, “ইসলামের ভিত্তিতে তাঁর দেশবাসী একটি মহান পাকিস্তানি ভাষা তৈরি করতে পারবে।”

৫. হেবিয়াস কার্পাস রিট : ১৯৫২ সালে রাজনৈতিক বন্দিদের নামে হেবিয়াস কর্পাস রিট মামলা দায়ের করা হয় এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয়।

৬. প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশ সংশোধন : সরকারবিরোধী সকল কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে কিছু সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয় ।

৭. পাকিস্তানি ভাষা তৈরির চেষ্টা : আইয়ুব খান বাংলা ভাষার প্রতি উদাসীন ছিলেন । তিনি এক্ষেত্রে জিন্নাহর পক্ষপাতিত্ব করেছেন। আইয়ুব খান বাংলা ভাষাকে রোমান অক্ষর বা আরবি অক্ষরে পরিবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা ছিল একরকম স্বৈরাচারিতা।

৮. শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আঘাত : আইয়ুব সরকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংকোচন করে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ হস্তক্ষেপ আইয়ুব বিরোধী মনোভাব ত্বরান্বিত করে।

৯. সামরিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ : পাক-ভারত যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানে অপর্যাস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে বর্ধিত ক্ষোভের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ গণচীনের সহায়তায় ঢাকার অদূরে একটি সমরাস্ত্র কারখানা নির্মাণ ছাড়াও দুটি ক্যান্টনম্যান্ট স্থাপন করে। আপাত দৃষ্টিতে এ সকল বিক্ষিপ্ত ব্যবস্থা ছিল লোকদেখানো। আসলে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীরা পূর্ব পাকিস্তানে একটি টেকসই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন না।

১০. মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন : আইয়ুব খান ১৯৫৯ সালের “দি বেসিক ডেমোক্রেসিস অর্ডার' মোতাবেক পাঁচ স্তরবিশিষ্ট একটি কাঠামো নির্মাণ করা হয়। এর নিম্নতম স্তর ইউনিয়ন কাউন্সিল ছিল ১০ জন প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্য দ্বারা গঠিত, যারা উচ্চতর ধাপের প্রতিষ্ঠান, থানা, জেলা এবং বিভাগীয় কাউন্সিল গঠনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে কাজ করতো। ১৯৬০ সালে কাউন্সিলগুলোকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই আইয়ুবকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে বলা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। মূলত আইয়ুবী শাসনব্যবস্থা ছিল মানবতা বহির্ভূত শাসনব্যবস্থা। তার শাসনব্যবস্থায় অনেক রাজনীতিবিদদের উপর মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদেরকে কলঙ্কিত করা হয়েছে এমনকি রাজনৈতিক দলসমূহকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর এগুলো গণতান্ত্রীকামী জনসাধারণের জন্য ছিল হুমকিস্বরূপ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ