একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা ১২০০ শব্দের

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা ১২০০ শব্দের জেনে নিবো। তোমরা যদি একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের  একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন  টি।

একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা ১২০০ শব্দের
একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা ১২০০ শব্দের

একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা

সূচনা: একুশ বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে এক বিরল মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। একুশের মধ্য দিয়েই জেগে উঠেছে বাঙালির আপন সত্তা আর সংস্কৃতির মূর্ত চেতনাবোধ। আর সে চেতনাবলেই বাঙালি জাতি স্বকীয় ভাষায় ভাবের উপলব্ধি আর অনুভূতি প্রকাশের প্রতিজ্ঞাকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র সম্মানে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পেয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি । আজ তাই বাঙালির গর্ব আর অহংবোধের উদ্দীপ্ত ধারায় স্নাত একুশ ।

যেভাবে এই একুশের সৃষ্টি: ভাবের আদান-প্রদান বা সার্বক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশের নিমিত্তে ভাষার দরকার হয়। এই ভাষা জন্মসূত্রে বা মাতৃমুখ থেকে প্রাপ্ত প্রকাশ কলা। তাই প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী বা ভূখণ্ডের নাগরিকদের কাছে তাদের মাতৃভাষা মধুময়। বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা এবং এ ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতির ভাণ্ডারও সমৃদ্ধ। তাইতো কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর রূপ- রস আস্বাদন করে লিখেছেন, 'হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।'

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ও বাঙালির এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে প্রত্যক্ষ করে বুঝেছিল যে, বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তারা এটিও বুঝেছিল যে, কোনো একটি জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন বা আধিপত্য বিস্তারকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আগে তার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হবে। তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের বৈঠকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবের বিপরীতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে ইংরেজি ও উর্দুর সাথে সংযুক্তির দাবি জানান। পরবর্তীকালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।' এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাগে, ক্ষোভে গর্জে ওঠে বাঙালি এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে 'সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। এ সময় সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে পূর্ববঙ্গ বাজেট অধিবেশনকে ঘেরাও করা হবে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পাশ করানো হবে। পাকিস্তান সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' এই স্লোগান নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের নির্দেশে পুলিশ শান্তিপূর্ণ ঐ মিছিলে গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, বরকতসহ আরও অনেকে শহিদ হন। পরবর্তী সময়ে চাপে পড়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এভাবে বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের এ পুণ্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

একুশ যেভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেল: মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু বাংলাদেশি বা বাঙালিরই নয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে দিনটি সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রথম উদ্যোগী ভূমিকা নেন । তাঁরা ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে কফি আনান তাঁদের ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর মহাসচিব কইচিরো মাতসুরার উপস্থিতিতে প্যারিসের সদর দপ্তরে ১৯১টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

তাৎপর্যমণ্ডিত একুশের গুরুত্ব: একুশ শুধু বাঙালিকে নয়, পৃথিবীর সকল জাতিসত্তাকে শিখিয়েছে যে, ভাষার অবদমন বা কোনো ভাষাকে ঘৃণা করার অধিকার কারোরই নেই। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে এ দেশের বাঙালির ওপর যে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছিল তার যবনিকাপাতের মূল পথ তৈরি করেছিল ৫২'র ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিস্মৃত বাঙালিরা জাতি হিসেবে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে আবিষ্কার করেছিল। পরবর্তী সকল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে একুশের চেতনা প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে কাজ করেছে। সর্বোপরি একুশ গোটা পৃথিবীকে নিজের ভাষা- সংস্কৃতি আর সমাজের প্রতি ভালোবাসার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার স্মারক হিসেবে একুশের তাৎপর্য তাই অনস্বীকার্য।

উপসংহার: বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। হাজার বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ ভাষা আজকের রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এ দেশের সংস্কৃতির উদার মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। এ দেশের সাহিত্য, কাব্য ও সংগীতে বাঙালির যে আবেগ ও অনুভূতিকে প্রত্যক্ষ করা যায়, বাংলা ভাষাতেই তা প্রাণ পায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ভাষা ব্যবহার করেই আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, স্বপ্ন সাজাই। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার পুনরুত্থান ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতায় অর্জিত হয়েছে প্রিয় স্বাধীনতা । বাঙালি হিসেবে একুশ আমাদের অহংকার । তাই বাঙালির হৃদয়ে একটি সুর চির অম্লান থাকবে— 

“একুশ তুমি শহিদ বাঙালির অমিয় ধারা

শুধু কি আরক্তিম পাগলপারা! পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়া ! 

বাঙালির রক্তসূর্য বক্ষে ধারণে, ধন্য আজিকে বসুন্ধরা।”

আর্টিকেলের শেষকথাঃ একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম একুশের চেতনা ও সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন রচনা ১২০০ শব্দের  টি। যদি তোমাদের আজকের এই একুশের চেতনা রচনা hsc  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ