হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন  টি।

হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন
হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন

হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন

 উত্তর : ভূমিকা : হজরত আবু বকর (রা.) কে ইসলামের প্রথম খলিফা বলা হয়। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মহানবির অসুস্থতার কারণে তিনি ইমামতি করেন। নবি করীমের ওফাতের পর ইসলাম জগতে এক ভয়াবহ এবং সংশয়পূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে হজরত আবু বকর (রা.) নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। ইসলামের জন্ম থেকে প্রচার, প্রসার ও রক্ষাকারী হিসেবে আবু বকর (রা.) যে কৃতিত্বের দাবিদার, সেদিক বিবেচনা করে তাকে ‘ইসলামের ত্রাণকর্তা' বলা হয়।

হজরত আবু বকর (রা.) কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলার কারণ : যেসব কারণে হজরত আবু বকর (রা.) কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

১. ইসলামের সেবক : ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মহনবী (সা.)-এর সহচর হিসেবে এবং মহানবি (সা.)-এর ওফাতের পর প্রথম খলিফা হিসেবে হজরত আবু বকর (রা.)-এর দান ছিল অপরিসীম। ইসলামের জন্য অনেক লাঞ্ছনা, অনেক তিক্ততা সহ্য করেছেন, কিন্তু কোনো অবস্থাই মহানবি (সা.) ও ইসলামকে পরিত্যাগ করেননি। আব্দুলাহ বিন মাসউদ বলেন, “এরূপ সংকটের দিনে হজরত আবু বকর (রা.)-এর মতো খলিফা না থাকলে ইসলাম ধর্ম এবং ইস্লামি রাষ্ট্র কোনোটিই রক্ষা পেত না।”

২. সিদ্দিক উপাধি লাভ : নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম সহচর, বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে হজরত আবু বকর (রা.) খেলাফত লাভের আগেই ইসলামের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি সর্বপ্রথম মিরাজ শরীফে বিশ্বাস করে ‘সিদ্দিক উপাধি’ লাভ করেন। হজরত ওমর (রা.) বলেন, “হজরত আবু বকর (রা.) কে ইসলামের খেদমতের ব্যাপারে কেউই অতিক্রম করতে পারেনি।”

৩. কুরআনের বাণী সংগ্রহ : হজরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে ভণ্ড নবি মুসায়লামাকে দমনের সময় ‘ইয়ামামার যুদ্ধে’ ৩০০ জন হাফিজে কুরআন শহিদ হন। ফলে হজরত আবু বকর (রা.) ওমরের পরামর্শে জায়েদ বিন সাবিতকে কুরআনের বাণীগুলো সংগ্রহ করে পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন ।

৪. ইসলাম ধর্মের ধারক ও বাহক : ইসলাম ধর্মের ধারক ও বাহক হিসেবে হজরত আবু বকর (রা.) ধর্মীয় অনুশাসনগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। মাওলানা মুহাম্মদ আলী বলেন, “প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামের তরীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবার কৃতিত্ব একমাত্র তারই প্রাপ্য।”

৫. মহনবী (সা.)-এর দাফন : মহনবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মুসলমানদের মধ্যে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। এ অবস্থায় তার দাফন কার্য নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। হজরত আবু বকর (রা.) স্বীয় বিচার ও বুদ্ধি দিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মহানবি (স.) কে মদিনায় দাফন করেন।

৬. যাকাত ব্যবস্থা কার্যকর রাখা : হজরত আবু বক্র (রা.) খলিফা নির্বাচিত হবার পর ধর্মীয় অনুশাসনগুলো বলবৎ রাখেন । এসময় একদল লোক যাকাত বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে কোনো কোনো প্রভাবশালী লোক যাকাত প্রথার উচ্ছেদেরও সুপারিশ করেন। কিন্তু দূরদর্শী হজরত আবু বকর (রা.) শরীয়তের সিদ্ধান্তে অটল থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাকাত প্রদানে বাধ্য করেন।

৭. স্বধর্ম ত্যাগীদের আন্দোলন দমন : হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর স্বধর্ম ত্যাগের আন্দোলন ছিল নব প্রতিষ্ঠিত মদিনা প্রজাতন্ত্রের এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি একটি বিরাট হুমকি স্বরূপ। হজরত আবু বকর (রা.) কঠোর নীতি অবলম্বন করে স্বধর্মত্যাগীদের আন্দোলন দমন করেন এবং তাদেরকে ইসলাম ধর্মে ফিরিয়ে আনেন ।

৮. ভণ্ডনবিদের দমন : মহানবি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর কিছু সংখ্যক ভণ্ডনবির আবির্ভাব হয়েছিল। এরা হচ্ছে আসওয়াদ আনসি, মুসায়লামা, তোলায়হা ও সাক্তাহ। হজরত আবু বকর (রা.) ভণ্ডনবিদেরকে কয়েক মাসের মধ্যে পরাজিত করে সমগ্র আরব উপদ্বীপে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন ।

৯. ইসলাম প্রচার : ইসলাম প্রচারের তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাঁর প্রভাবেই হজরত ওসমান, যুবাইর, আব্দুর রহমান এবং সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করেন ।

১০. বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ : অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দমনের সাথে সাথে হজরত আবু বকর (রা.) ইসলামি রাষ্ট্রকে বহিরাক্রমণ ও বৈদেশিক চক্রান্তের হাত থেকেও রক্ষা করেন। তিনি মুসান্না ও খালিদদের নেতৃত্বে পারস্য ও বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যকে পর্যুদস্ত করে ইসলামকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন ।

১১. ইসলামের জন্য অর্থ ব্যয় : ইসলামের সেবায় হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর অর্জিত অর্থ সম্পদ অকাতরে ব্যয় করেন। তিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশেষ করে মদিনায় মসজিদ নির্মাণ করেন এবং তাবুক অভিযানের সময় তার সর্বস্ব ইসলামের খেদমতে দান করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হযরত আবু বকর (রা.) খলিফা হওয়ার পূর্বে এর পরে ইসলামের খেদমতের জন্য সব কিছু করে গেছেন। এজন্য তাকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয়। কারণ ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের একনিষ্ঠ সেবা এবং আত্মোৎস্বর্গ করার জন্যই তিনি এ কৃতিত্বের অধিকারী। অধ্যাপক হিট্টির মতে, “হজরত আবু বকর (রা.)-এর মতো লোক না হলে ইসলাম বেদুঈন জাতির মধ্যে বিলীন হয়ে যেতো অথবা খুব সম্ভবত অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত।”

আর্টিকেলের শেষকথাঃ হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হযরত আবু বকর রা কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় কেন  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ