হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো  হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের  হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর  টি।

হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর
 হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর

হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর

উত্তর : ভূমিকা : হজরত ওসমান (রা.) মোট ১২ বছর খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। খিলাফতের প্রথম ৬টি বছর তিনি খুব সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যারা এতোদিন খলিফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল তারাই পরের ৬টি বছর নিরপরাধ খলিফার বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযোগ ও অপবাদ আনয়ন করে। রাজ্যময় খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তোলে এবং তাকে হত্যা করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে হত্যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

→ হজরত ওসমান (রা.) হত্যার ফলাফল : নিম্নে হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলাফল আলোচনা করা হলো-

১. খিলাফতের পবিত্রতা নষ্ট : হজরত ওসমান (রা.)-এর শাহাদতের ফলে খলিফা ও খিলাফতের প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভক্তি ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক খোদাবক্স হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যাকে একটি অভাবনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করেন এবং বলেন, “এটি সর্বকালের জন্য খলিফার ব্যক্তিগত পবিত্রতা বিনষ্ট করে।” *

২. ঐক্য বিনষ্ট : হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়। মুসলমানরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার খবর সমগ্র বিশ্বে পৌছলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মাঝে বিষাদের ছায়া নেমে আসে এবং ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়।

৩. মদিনার প্রাধান্য বিলুপ্ত : ইসলামি প্রজাতন্ত্রের রাজধানী মদিনার প্রাধান্য ও গৌরব খলিফার হত্যার পর লোপ পেতে থাকে ৷ নব প্রতিষ্ঠিত শহরগুলো যেমন- কুফা, দামেস্ক, ফুসতাত, বসরা ইসলামের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। উল্লেখযোগ্য যে, হজরত আলী (রা.) সাময়িকভাবে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেন এবং ময়াবিয়া দামেস্ক উমাইয়া সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিণত করেন।

৪. গণতন্ত্রের অবসান : হজরত ওসমান (রা.) হত্যার অন্যতম ফলাফল ছিল গণতন্ত্রের অবসান। হজরত ওমর (রা.) যে গণতন্ত্রের সূচনা করে গিয়েছিলেন তার স্থায়ীত্ব দান করেছিলেন হজরত ওসমান (রা.)। কিন্তু তার শাহাদতের পরপরই গণতন্ত্রের সমাধির পথ সুপ্রশস্ত হয়। মুয়াবিয়া উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করে রাজতন্ত্রের প্রবর্তন করেন।

৫. উমাইয়া বিরোধী শত্রুতা : উমাইয়া খিলাফতে বানু হাশিম গোত্রকে যেভাবে বিকৃতরূপে চিত্রিত করা হয়। পরবর্তীকালে আব্বাসীয় খলিফাগণও ইর্ষা ও বিদ্বেষবশত উমাইয়াদের সেভাবে বিকৃতরূপে চিত্রিত করে। এ প্রসঙ্গে মুইর বলেন, “অধিকাংশ প্রচলিত কাহিনীতে ফরমান লেখার ও মোহরযুক্ত করার দায়িত্ব খলিফার সম্পর্কিত ভ্রাতা মারওয়ানের উপর ন্যাস্ত ছিল। এসব কার্যাবলি হজরত ওসমান (রা.)-এর যাবতীয় দুর্ভোগের কারণ বলে তাঁকে দোষারোপ করা হয়েছে।

৬. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব : হজরত ওসমান (রা.)-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে বিভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। নিকলসন ও ওয়েলতাইসেনের মতে, শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় ইবনে সাবার প্রচারণা থেকে। হজরত আলীর সমর্থন না পেলেও ইহুদি মাতার সন্তান সাবা স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে।

৭. সাম্রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা : মহানবি (সা.) আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর সময় মুসলিম সাম্রাজ্য একসূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু ওসমান হত্যার পর আরব সাম্রাজ্য বিশাল শতধা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাম্রাজ্য বিভাজনের প্রভাব পরবর্তীতে ব্যাপক আকার ধারণ করে।

৮. গৃহযুদ্ধের সূচনা : ওসমান (রা.) কে হত্যার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, “হজরত ওসমান (রা.) হত্যা ছিল গৃহযুদ্ধের বিপদসংকেত স্বরূপ।” মুসলিম ঐক্যবিনষ্ট হয়ে রাসূলে করীমের মহান আদর্শগুলো ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। মুসলমান কর্তৃক মুসলমানের রক্তপাত হজরত ওসমানের মতো নিরীহ, সরল প্রকৃতির অশীতিপর বৃদ্ধের হত্যা থেকে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসের প্রতি সংঘাতপূর্ণ অধ্যায়ে এটি ছড়িয়ে পড়ে। ওয়েল হাউসেন বলেন, “এর ফলে গৃহযুদ্ধের যে কপাট খুলে যায় তা আর কখনও বন্ধ হয়নি।

৯. কেন্দ্রীয় শাসন উপেক্ষা : মুয়াবিয়া (রা) কেন্দ্রীয় শাসনকে উপেক্ষা করে ওসমান হত্যার প্রতিশোধ দাবি করলেন। হজরত ওসমান (রা.) কে হত্যার পরে মুয়াবিয়া যখন ক্ষমতায় বসলেন তখন কেন্দ্রীয় শাসনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ড ইসলামের ইতিহাসে একটি করুণ ও যুগান্তকারী ঘটনা। এ হত্যার ফলেই মুসলমানদের ঐক্যে প্রথম ফাটল দেখা দিল। সে ফাটল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে আজও বিদ্যমান। এ জন্যই মুসলিম বিশ্ব আজ প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার। তাই বলা যায়, হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম  হযরত ওসমান রা: হত্যার ফলাফল বর্ণনা কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ