কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর ।

কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর
কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর

কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর

  • অথবা, 'কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতিগুলো সংবিধান অনুযায়ী ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয়ভাবে সেখান থেকে যদি আইন, বিচার ও শাসন কাজ সমভাবে বাস্তবায়িত হতো তাহলে পাকিস্তান একটি আদর্শ রাষ্ট্রের হতো। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কতিপয় মৌলিক মূলনীতি বাস্তবায়িত হয়। যা কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থাকে অনেকাংশে বাস্তবায়িত করে । → কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি:

১. গণপরিষদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা : গণপরিষদের কার্যক্রমে উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। কেন্দ্রীয় পরিষদের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রথম গণপরিষদের সাত বছরব্যাপী মেয়াদকালে ১৬টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গণপরিষদের পাকিস্তান ছিল 'পাকিস্তান ছিল গণপরিষদভিত্তিক রাষ্ট্র। তবে একচ্ছত্র আধিপত্য মুসলিম লীগের থাকায় যেকোনো সিদ্ধান্ত তারা আলাপ-আলোচনা ছাড়াই পাস করতে পারত।

২. রাষ্ট্রপতি : পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতেন। তবে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য থাকতে পারতেন না। আর নিয়ম ছিল পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কার্যকাল দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পাঁচ বছর। রাষ্ট্রদ্রোহিতা কিংবা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার আইন ছিল।

৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা : আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করবেন কিন্তু গভর্নর জেনারেল কারো পরামর্শ না নিয়েই তার সহকারী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতেন। রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকবৃন্দ মহা হিসাবরক্ষক প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রমুখকে নিয়োগ দিবেন। তিনি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পরিচয় পত্র গ্রহণ করতেন।

৪. কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট : পাকিস্তানে একটি এক-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। পার্লামেন্টের অধিবেশন পর্যায়ক্রমে ফেডারেল রাজধানী এবং পূর্বাঞ্চলের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে। পার্লামেন্টের মেয়াদ হবে চার বছর। এর সদস্যরা লাভজনক কোনো পদে আসীন হতে পারতেন না। দুই অধিবেশনের মাঝে ছয় মাসের অধিক ব্যবধান হওয়া চলবে না। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের তিন মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের অধিবেশনে বসবে। আর রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট আহ্বান করবেন।

৫. মন্ত্রিসভা : কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মন্ত্রীগণ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামষ্টিগতভাবে তাদের কাজের জন্য পার্লামেন্টের নিকট দায়ী থাকবেন। পার্লামেন্টের সকল সদস্য মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য হবেন। পার্লামেন্টের সদস্য নন এমন কাউকে মন্ত্রী নিয়োগ করা হলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে সংসদ সদস্য হতে হবে অন্যথায় তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন ।

৬. আইন সংশোধন : আইনের যেকোনো সংশোধন পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংশোধন করা যাবে। কিন্তু কেন্দ্র বা প্রদেশের মধ্যে সম্পর্কসংক্রান্ত বিষয়াদি সংশোধন করতে হলে তা প্রথমে সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হতে হবে। তারপর কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হতে হবে। মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে; যেমন-

  • আইনের চোখে সকলে সমান ।
  • আইনে আদালতে বিচার ব্যতীত কাউকে আটক রাখা যাবে না । O ভোটাধিকার প্রাপ্তির ন্যূনতম বয়স হবে ১৮ এবং আইন পরিষদের সদস্য হওয়ার বয়স হবে ন্যূনতম ২১ বছর।
  • হেবিয়াস কর্পাস রদ করার কোনো বিধান থাকবে না ।

৮. ফেডারেল আইনসভা : ফেডারেল আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে, উচ্চকক্ষের নাম ‘হাউস অব ইউনিটস' এবং নিম্ন কক্ষের নাম ‘হাউস অব পিপলস’। উচ্চকক্ষ পাকিস্তানের দুই অংশের সমান প্রতিনিধি থাকবে। নিম্নকক্ষের সদস্যবর্গ জনগণের ভোটে সংসদীয় এলাকা ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের ভোট প্রদেশভিত্তিক উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচিত হবেন ।

৯. দুই কক্ষের ক্ষমতা ও সম্পর্ক : মূলনীতি কমিটির রিপোর্টে ন “হাউস অব পিপলস” অর্থাৎ নিম্নকক্ষকেই সকল ক্ষমতা প্রদান করা পার হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ যৌথভাবে নিম্নকক্ষের নিকট দায়ী থাকবেন। সকল অর্থবিল নিম্নকক্ষেই উত্থাপিত হবে। কোনো ইস্যুতে দুইকক্ষের মধ্যে মতভেদ ঘটলে উভয় কক্ষের অধিবেশন বসবে এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ।

১০. ফেডারেল এবং ইউনিটের সম্পর্ক : আইন প্রণয়নের জন্য সকল বিষয়কে তিনটি তালিকায় বিভক্ত করা হয়। যেমন— ফেডারেল আইন সভার জন্য নির্দিষ্ট তালিকা;

(খ) ইউনিট আইন সভার জন্য নির্দিষ্ট তালিকা;

(গ) আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে এমন বিষয়ের তালিকা উল্লিখিত তিন তালিকা বহির্ভূত বিষয়াদি ফেডারেল আইনসভার = এখতিয়ারভুক্ত হবে। ফেডারেল তালিকায় ৭৩টি বিষয়, ইউনিটের তালিকায় ৪২টি এবং যৌথ তালিকায় ৩৯টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১১. ইউনিট প্রধান : প্রত্যেক ইউনিটে একজন ইউনিট প্রধান থাকবেন। তিনি রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং রাষ্ট্রপ্রধানের ইচ্ছেমতো সময় পর্যন্ত ইউনিট প্রধান পদে বহাল থাকবেন। তবে ইউনিট প্রধানের কার্যকালের মেয়াদ একাধিকক্রমে পাঁচ বছরের বেশি হবে না। ইউনিট প্রধান ইউনিট আইন পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। ইউনিটের আইন পরিষদের সদস্য নহেন এমন কেউ মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হলে তিনি ছয় মাসের মধ্যে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হবেন। অন্যথায় মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তার নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে ইউনিট প্রধান অন্যান্য মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ করবেন তাদেরকেও ইউনিট আইন পরিষদের সদস্য হতে হবে কিংবা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রমুখকে নিয়োগ কিংবা বরখাস্তবিষয়ক ইউনিট প্রধানের সিদ্ধান্ত কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।

১২. ইউনিট আইনসভা : প্রত্যেক ইউনিটে একটি আইনসভা থাকবে। আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৭৫ এর কম কিংবা ৩৫০ এর অধিক হবে না। জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আসন বণ্টন করা হবে। ২৫ বৎসরের অধিক বয়স এবং লিখতে পড়তে জানেন এমন ব্যক্তি আইনসভার সদস্য হতে পারবে। ভোটারের বয়স হবে ২১ বছর এবং ইউনিট আইনসভার কার্যকাল পাঁচ বছর। ইউনিট প্রধান আইনসভার সভা আহ্বান করবেন। বৎসরে কমপক্ষে দুটি অধিবেশন বসবে এবং দুই অধিবেশনের মাঝে ৬ মাসের অধিক দূরত্ব থাকবে না। ইউনিট প্রধান আইনসভা ভেঙে দিতে পারবেন ।

১৩. বিচার বিভাগ : এ সংবিধানে পাকিস্তানের জন্য একটি সুপ্রিমকোর্ট এবং প্রত্যেক প্রদেশের জন্য হাইকোর্টের বিধান করা হয়। বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও ব্যাখ্যা প্রদানের ■ ক্ষমতা দেওয়া হয়। সংবিধানের পরিপন্থি আইন নাকচ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টকে প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে - প্রদেশগুলোর মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার খতিয়ান সুপ্রিম কোর্টের উপর অর্পিত হয়। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হতেন ।

১৪. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন : শাসনতন্ত্রে নির্বাচনের নীতি গ্রহণ করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় পাকিস্তানের জনসাধারণকে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচন করার বিধান করা হয়। সুতরাং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন। সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শাসনতন্ত্রে একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এই কমিশনের প্রধান কর্মকর্তা হতেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশন ছিল স্বাধীন। জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন । কাঠানোর মূলনীতিতে প্রতি বছর এসব তালিকা সংশোধন ও আইন সভাসমূহের নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের মূল কর্তব্য ও দায়িত্ব।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতিতে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এবং শাসনতান্ত্রিক কাঠামো সময় উপযোগী বা উন্নতমানের হলেও তার প্রয়োগ না থাকায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে কেন্দ্রীয় শাসনে সবসময় বৈষম্য লেগেই ছিল। আবার কেন্দ্রীয় সরকার ছিল প্রচুর স্বেচ্ছাচারী সে নিজের ইচ্ছামতো রাষ্ট্রের সব ধরনের সিদ্ধান্ত দিতেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতির প্রতি শাসকগোষ্ঠী কোনো তোয়াক্কা করতো না । এজন্য আগ্রহে নির্ভর ছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামোর মূলনীতি গুলো আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ