হযরত ওমর রাঃ এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর  টি।

খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর
খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর


খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামি রাষ্ট্রের বিশালতা এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হজরত ওমর (রা.) রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। সুষ্ঠু কর প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূরীভূত করে স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের জন্য তিনি প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর কর বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রের আয়ের উৎসকে সচল রাখেন।

→ রাষ্ট্রের আয়ের খাত : হজরত ওমর (রা.)-এর আমলে যেসব খাত থেকে রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি হতো সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১. খারাজ বা অমুসলমানদের ভূমি কর : হজরত ওমর (রা.)-এর রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের অন্যতম একটি খাত হলো আল খারাজ বা অমুসলমানদের ভূমি কর। জমির গুণগতমান, উৎপাদনের পরিমাণ, সেচের সুযোগ-সুবিধা প্রভৃতির উপর নির্ভর করে এ খারাজ কর নির্ধারণ করা হতো। অমুসলমান কৃষকদের নিকট হতে জমির উৎপন্ন শস্যের এক-দ্বিতীয়াংশ থেকে এক-পঞ্চমাংশ খারাজ কর এবং মুসলমানদের নিকট হতে এক-দশমাংশ উত্তর কর সংগ্রহ করা হতো।

২. যাকাত বা দরিদ্রকর : মহানবি স্বয়ং ইসলামের রাজস্বব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে জমিতে উৎপাদিত শস্য, সোনা, রূপা, উট, মেষ ও ছাগলের উপর যাকাত নির্ধারিত হয়েছিল। ঘোড়ার উপর যাকাত ধার্য করা হয় হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনকালে। করণ এ সময় অশ্বের ব্যবসা ছিল খুবই লাভজনক। যাকাত শুধু মুসলমানদের নিকট আদায় করা হতো।

৩. জিজিয়া : জিজিয়াকে নিরাপত্তামূলক কর বলা হয়। ইসলামি রাষ্ট্র কর্তৃক অমুসলিমদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান না করার কারণে এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তাদের নিকট থেকে জিজিয়া কর আদায় করা হতো। অমুসলিম পারসিক ও রোমান সম্প্রদায়ের আর্থিক সচ্ছলতা বিবেচনা করে হজরত ওমর (রা.) মাথাপিছু এ কর সামান্য বৃদ্ধি করেন। মাথাপিছু এ করের পরিমাণ ছিল বার্ষিক ধনীদের জন্য ৪ দিনার, ধর্মযাজকদের জন্য ২ দিনার, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য ১ | দিনার। আমর ইবনে আল আস মিশরে প্রত্যেক ও অমুসলমান বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর ২ দিনার কর ধার্য করেন।

৪. গণিমাত : যুদ্ধলব্ধ সম্পদকে গণিমাত বলা হয়। যুদ্ধে প্রাপ্ত দ্রব্যাদির এক-পঞ্চমাংশ রাজকোষে প্রদান এবং বাকি চার ভাগ সৈন্যদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা ছিল। হজরত ওমর (রা.)-এর সময় মুসলিম রাষ্ট্র সম্প্রসারিত হলে এক-পঞ্চমাংশ যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি বা গণিমাত রাজস্ব আয়ের একটি অন্যতম প্রধান উৎস ছিল। এ অংশটি নবি করীমের আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সাজ-সরঞ্জামের জন্য নির্দিষ্ট ছিল।

৫. আল-ফে : রাজস্ব আয়ের অপর একটি উৎস ছিল খাস জমি থেকে প্রাপ্ত ভূমি কর বা আল ফে। জমি কখনোই পতিত অবস্থায় রাখা যেতো না। জমি কৃষকদের দ্বারা আবাদ করা হতো। পরিত্যক্ত ও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পলাতক শত্রু, বিদ্রোহী মালিকবিহীন ভূমি, অগ্নি উপাসকদের সম্পত্তি থেকে লব্ধ আয়কেও আল ফে বলা হয়। এই আয় রাষ্ট্রের পশুচারণযোগ্য ভূমি থেকে সংগৃহীত হতো।

৬. উশর : হজরত ওমর (রা.)-এর অন্যতম প্রধান উৎস ছিল উশর বা বাণিজ্য শুল্ক। মহানবির প্রবর্তিত এই শুল্কের পরিবর্তন করে মুসলিম ব্যবসায়ীদের পণ্যদ্রব্যের উপর মুসলমান বণিকদের উপর আড়াই শতাংশ, অমুসলমান বণিকদের উপর ৫% এবং বিদেশিদের উপর ১০% বাণিজ্য শুল্ক বা উশর ধার্য করা হয়। ভূমি রাজস্ব খারাজ ব্যতীত অপর একটি কর জমির উৎপন্ন শস্যের উপর ধার্য করা হয়েছিল।

৭. বায়তুল মাল : নবি করীমের সময় প্রাপ্ত অর্থ সঙ্গে সঙ্গে বণ্টন করা হতো বলে সরকারি কোষাগার বা বায়তুল মালের কোনো প্রয়োজন ছিল না। ইসলামের সম্প্রসারণে রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে ওয়ালিদ বিন হিশামের পরামর্শে হজরত ওমর (রা.) সর্বপ্রথম একটি বায়তুল মাল' বা কোষাগার স্থাপন করেন।

৮. আল হিমা : খলিফা হজরত ওমর (রা.) পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে বিশাল এলাকা নির্দিষ্ট করে রাখেন। তার আমলে উক্ত পশুচারণ ক্ষেত্রে সরকারি পশুর পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার এবং এখান থেকেও প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আদায় হতো ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত ওমর (রা.) কর্তৃক প্রবর্তিত রাজস্বব্যবস্থা ছিল মুসলিম শাসনের ইতিহাসে এক মাইলফলক। তার দিওয়ান বা বণ্টন ব্যবস্থা এমন একটি নীতিতে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল যা প্রতিটি গোত্র বা সম্প্রদায়ের উপর সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এর ফলে সামাজিক বৈষম্য দূরীভূত হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর আয়ের খাতগুলো আলোচনা কর  টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ