পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর ।

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর

  • পূর্ব বাংলার জনগণের পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসমূহ আলোচনা কর
  • অথবা, পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্য আলোচনা কর । 
  • অথবা, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান কি ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছিল? আলোচনা কর । 
  • অথবা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর ৷

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ ও শোষণ শুরু হয় । পশ্চিম পাকিস্তানিরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নির্যাতন বা বৈষম্য চালাতে থাকে। তাদের এ বৈষম্যমূলকনীতির পক্ষে পূর্ব বাংলার জনগণ অবস্থান নেয়নি, বরং তারা শক্ত অবস্থান করে দৃঢ় আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পশ্চিম পাকিস্তানিরা ভেবেছিল এসব বৈষম্যমূলক নীতি দ্বারা তাদের উপর কর্তৃত্ব করা যাবে কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। বাঙালির অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনে তাদের সে স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়

→ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পর্যায়ে আন্দোলন দেখা দেয়। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

১. ভাষা আন্দোলন : পাকিস্তানি শাসকদের শাসন, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলায় প্রথম প্রতিবাদ গড়ে ওঠে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেন্দ্র করে। দেশ বিভাগ ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পরপরই এ দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে তুমূল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৮ সালের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রায় ৫৫% লোকের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ প্রতিবাদ ক্রমশ প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ লাভ করে এবং অবশেষে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। ভাষা আন্দোলন ছিল পশ্চিম পাকিস্তান শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম বিজয় ।

২. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনি আন্দোলন : পাকিস্তানের শাসন শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালিদের দ্বিতীয় প্রতিবাদ ছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, মুসলিম লীগকে এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে।

৩. আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন : ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারির বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তবে এ সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ও দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করার ফলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে। পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার পরবর্তীতে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে ওঠে ১৯৬২ সালে। আইয়ুব খান পূর্ব বাংলার কোনো প্রতিনিধির অংশীদারিত্ব ছাড়া নিজের মনগড়া সংবিধান বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে চাইলে আন্দোলনে নতুন গতি লাভ করে। ১৯৬২ সালে তৃতীয় উত্তেজনার ঘটনা ছিল শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট। আইয়ুব খান আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এস এম শরীফকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় কতগুলো হঠকারী নীতি সুপারিশ করা হয়। যেমন অবৈতনিক শিক্ষা বাতিল, আরবি হরফে বাংলা চালু ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধের আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে সরকার কমিশনের সুপারিশ স্থগিত করে।

৪. ছয়-দফা আন্দোলন : পাকিস্তান সরকার কর্তৃক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো কঠোর প্রতিবাদ হচ্ছে ১৯৬৬ সালে ছয়-দফা দাবি উত্থাপন। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বায়ত্তশাসন ও ন্যায্য অধিকার সংবলিত ছয়-দফাভিত্তিক দাবি উত্থাপন করেন আর সেগুলো হলো:

  • পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ।
  • কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি 
  • পূর্ব বাংলা থেকে মূলধন পাচার রোধকল্পে পৃথক মুদ্রা প্রচলন ।
  • কর, ট্যাক্স, খাজনা ধার্য ও আদায়ে আঞ্চলিক সরকারকে ক্ষমতা প্রদান ।
  • অর্জিত মুদ্রার পৃথক হিসাব রাখা ।
  • পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের অধিকার প্রদান ।

এ ছয়-দফাভিত্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

৫. আগরতলা মামলা বিরোধী আন্দোলন : ছয়-দফাভিত্তিক আন্দোলন নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সরকার দাবির উত্থাপক শেখ মুজিবুর রহমানসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে ১৯৬৮ সালে “আগরতলা মামলা” নামক মিথ্যা মামলা দায়ের করে । ইতিপূর্বে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নববর্ষ পালন নিষিদ্ধ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলায় শিক্ষিত সমাজের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ মামলার প্রতিবাদে বাংলার ছাত্র সমাজ ১১ দফাভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন চলাকালীন ১৯৬৯ সালে ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলে আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন প্রচণ্ড গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত আইয়ুব খান উক্ত মামলা প্রত্যাহার ও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ।

৬. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন সত্ত্বেও পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। এরূপ হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের রূপরেখা প্রদান করেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান করেন। ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের অতর্কিত হামলা ও নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। অবশেষে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পশ্চিমা শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনকারী সরকারকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যান।

উপসংহার : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বাংলার প্রতি বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে । বাংলার জনগণ তার প্রতিটি বৈষম্যের বদলা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। যেহেতু পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে ওঠার সূচনালগ্ন থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের মানুষকে রাজনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, শিক্ষা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কৌশল অনুসরণ করতে থাকে বাঙালিরা তাদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নকে কখনো সহজে মেনে নেয়নি। অবশেষে চরম ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে পাকিস্তানের শোষণ ও নির্যাতনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ