সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা  টি।

সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা
সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা

সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা

আমার নানা বাড়ি চট্টগ্রামে। সে এক ভারি মজার বাড়ি। দুই মামার বিশাল একান্নবর্তী পরিবার। সারা বছর সেখানে ভাইবোনদের হৈ-হুল্লোড় লেগেই আছে। ঢাকা শহরের চার দেয়ালের বাড়িতে তাই সারা বছর আমরা দুই ভাইবোন দিন গুনি ইদের ছুটির। প্রতি ইদে সব ভাইবোনেরা চট্টগ্রাম যায় তাদের মায়ের সঙ্গে ইদ করতে, সঙ্গে যাই আমরা ছেলেমেয়ের দল। সেখানে কটা দিন কেটে যায় যা ইচ্ছে তাই করতে পারার আনন্দে। সেই সঙ্গে চলে রাত জেগে আড্ডা, গান আর নানারকম গল্প । প্রতিবছরের ইদের এ ধরনের আনন্দ-উৎসবকে গত বছর কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটি, যার নাম কক্সবাজার ।

আমার দুই মামিই খুব মিশুক। তারা মোটেই লোকছড়ার সেই ‘মামি এলো লাঠি নিয়ে পালাই পালাই' টাইপের না। বড় মামিই প্রস্তাব দিলেন ইদের তৃতীয় দিন কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার। বড়রা একটু গররাজি ছিল । আমরা ছেলেমেয়ের দল হই হই করে জানিয়ে দিলাম কক্সবাজার যেতেই হবে। ঠিক হলো ভোরে রওনা হব, রাতে ফিরে আসব। বড় মামার এক বন্ধু থাকেন কক্সবাজারে। মামা তাঁকে ফোনে জানাতেই সেদিন দুপুরে তিনি আমাদের দাওয়াত করে বসলেন। ঠিক হলো দুপুরে তাঁর বাসায় খাব । সারা বছর যে ইদের দিনের অপেক্ষা করি, সেই ইদের দিনটাই এবার খুব লম্বা মনে হচ্ছিল, সবাই শুধু প্ল্যান করছি ব্যাগে কী কী জিনিস নেব, কক্সবাজারে কেমন মজা হবে ইত্যাদি। অবশেষে এলো সে কাঙ্ক্ষিত দিন। সকাল ১০টায়ও যাদের ঘুম ভাঙে না সেই আমরাই সকাল ছটায় ঘুম থেকে উঠে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম । সকাল সাতটায় বাস ছাড়ল। আমরা বিভিন্ন বয়সের ছয় ভাইবোন সামনে-পেছনে করে একসঙ্গে বসলাম। তবে সবার ছোট ভাইবোন' দুটি বসল তাদের মায়েদের সঙ্গে। দুই মামা-মামি, আমার বাবা-মা, আরও দুই খালা- খালুসহ বিশাল বাহিনী। সারাটা পথ পুরো বাস মাতিয়ে রাখলাম গানে গানে, সেই সঙ্গে চলল গল্প আর হাসির ফোয়ারা। এরই মধ্যে খালাতো ভাই বমি করে বসল পাশে বসা তার বোনের গায়ে। বাসের মধ্যেই দুই ভাইবোনের এক চোট ঝগড়া হয়ে গেল। আমরা বাকিরা ভারি মজা পেলাম। বড়রাও সারাটা পথ গল্পে মশগুল হয়ে থাকলেন। সারা বছর এত কাজের ভিড়ে তারাও তো মজা করার সময় পান না। বাড়তি আনন্দ এনে দিলো রাস্তার দু ধারের গভীর জঙ্গল আর পাহাড়ের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তবে সবচেয়ে মনকাড়া দৃশ্য ছিল বাসস্টেশনে ঢোকার একটু আগে হঠাৎ করে অনেক দূরে এক ঝলক দেখা সমুদ্রের সুবিশাল নীল জলরাশি। সমুদ্র যেন তার অপরূপ সৌন্দর্য এক পলক দেখিয়েই তাকে কাছ থেকে দেখার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলো। আমি আগে কখনো সমুদ্র দেখিনি। এক ঝলকে প্রথম দেখা সেই রোদে ঝিকমিক জলরাশি আজও আমার চোখে লেগে আছে।

বাস থেকে নেমে আমরা একটা টেম্পো ভাড়া করে পুরো পরিবার উঠে পড়লাম। পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে আমাদের টেম্পো মূল শহরে ঢুকতে না ঢুকতেই আবার দেখলাম আকাশের নীলে, দুপুরের রোদে উচ্ছল সমুদ্রকে । টিভিতে অসংখ্যবার সাগর দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে প্রথম সমুদ্র দর্শনের অভিজ্ঞতার কোনো তুলনাই হয় না। আমরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম । ইচ্ছে হচ্ছিল দৌড়ে পানিতে নামি। কিন্তু সে উপায় নেই। বড়দের কড়া নির্দেশ: আগে বাসায় গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে খাওয়া সারতে হবে। বড় মামার বন্ধুর বাসায় পৌছে দেখি পরিবারটি একটি চাকমা পরিবার। তারা তিন ভাইবোন, আমাদের মতো বয়স। মুহর্তেই হাসিখুশি পরিবারটির সঙ্গে আমাদের সবার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। খুব খুশি হলাম আদিবাসী বন্ধু পেয়ে। তাড়াহুড়া করে খাওয়াদাওয়া সারলাম। বড়রাও সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার জন্য আকুল হয়েছিল। বাসা থেকে খুব কাছে, তাই হেঁটেই রওনা হলাম সবাই। রাস্তায় অসংখ্য পর্যটক। কেউ সমুদ্র-সৈকতে যাচ্ছেন, কেউ গোসল করে ফিরছেন । সবার মনে ফুর্তি, তারা গান গাইছেন, গল্প করছেন। হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজানো দোকান আর তপ্ত বালিয়াড়ির সৈকত পেরোতেই আদিগন্ত সমুদ্র। অসীম নীল আকাশকে ছুঁয়েছে তার নীল জলরাশি। সগর্জন সমুদ্রের সে রূপ লিখে বর্ণনা করার মতো নয়। যে সামনাসামনি দেখেছে, কেবল সেই জানে কেমন তার রূপ, কী তার আকর্ষণ। আমরা একমুহুর্তও নষ্ট না করে সমুদ্রের পানিতে নেমে পড়লাম । সে এক মজার অভিজ্ঞতা। গায়ের ওপর দিয়ে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ফিরতি স্রোত আমাদের টেনে নিতে চাচ্ছে গভীর সমুদ্রের দিকে আর পরক্ষণেই জোয়ারের স্রোত আমাদের ঠেলে দিচ্ছে তীরে।

ইদের ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ কক্সবাজার এসেছে। সমুদ্রসৈকত জুড়ে গিজগিজ করছে নানা বয়সি, নানা পোশাকের অজস্র পর্যটক। গোটা সৈকত তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উচ্ছল। পানিতে ঢেউয়ের টানে কে কার গায়ে পড়ছে কোনো ঠিকঠিকানা নেই। তাতে কেউই তেমন কিছু মনে করছে না। তবে বেপরোয়া কেউ কেউ সমুদ্রের গভীরে বিপজ্জনক জায়গায় চলে গিয়েছিল । আমরা অবশ্য বড়দের আগেই কথা দিয়েছিলাম যে বেশি গভীরে যাব না। তারপরও মাঝে মাঝে ঢেউয়ের মাতামাতি সব ভুলিয়ে দিতে চাইছিল । আনন্দে দিশেহারা হয়েই হয়তো সীমা লঙ্ঘন করল আমার ছোট ভাই। সে একটু দূরেই চলে গেল। তা চোখে পড়তেই শাস্তিস্বরূপ আমাদের সবাইকেই তখনই সমুদ্র থেকে উঠে আসতে বাধ্য করা হলো। অবশ্য ততক্ষণে কখন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। প্রচণ্ড খিদে নিয়ে ভেজা গায়ে হাঁটতে হাঁটতে মামার বন্ধুর বাড়িতে ফিরলাম। সেখানে ফিরেই আরেক মজার ঘটনা শুরু হলো। বাথরুম মাত্র দুটো। সমুদ্রে গোসল করেছি প্রায় ১৫ জন। আমরা নতুন পরিচয় হওয়া পরিবারটিকেও আমাদের সঙ্গে সমুদ্রে নামতে বাধ্য করেছিলাম। ঠিক হলো দুটো বাথরুমের একটা বড়দের, অন্যটা ছোটদের। আমার দুষ্টু ছোট ভাইটা যার জন্য আমাদের সমুদ্র স্নান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং বকা খেতে হয়েছিল, সে এক দৌড়ে একটা বাথরুমে ঢুকে গেল। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে ভাইবোনেরা শীতে কাঁপছিলাম আর ওকে বকা দিচ্ছিলাম।

দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে গেল। ততক্ষণে সারা বাড়ি আমাদের গায়ে লেগে থাকা সমুদ্রের বালিতে কাদাময় হয়ে গেছে। আতিথ্যদাত্রী মামি হাসিমুখে সব সহ্য করলেন। বরং আমাদের বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটা করতে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা সমুদ্রে সূর্য ডোবা দেখার। পানিতে আর নামব না এ শর্তে বড় মামা আর তার বন্ধুর তত্ত্বাবধানে ছেলেমেয়েরা ফের গেলাম সমুদ্র দর্শনে । দেখলাম সমুদ্রের নতুন রূপ, দুপুরে দেখা সমুদ্রের সাথে এর কোনো মিলই নেই। পানি এখন আরও গভীর নীল, ঢেউগুলো প্রচণ্ড গর্জনে তীরে আছড়ে পড়ছে। আকাশে নানা রঙের মেঘ ভাসছে। আমরা তীর ঘেঁষে হাঁটতে শুরু করলাম। অনেক ছবি তুললাম। সমুদ্রের মুক্ত হাওয়া সারা বছরের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিলো। সন্ধ্যা যত কাছে আসছে সমুদ্র যেন ততই সুন্দর হচ্ছে, - আকাশে তখন হাজার রঙের ছটা, সমুদ্রের পানিতে অস্তায়মান সূর্যের কমলা রঙের আভাস। ঠিক সূর্য ডোবার সময়কার সাগরের বর্ণনা দেওয়ার সাধ্য আমার নেই, সম্ভবত কেউই তা পারবে না। আমরা সব ভাইবোন হাত ধরাধরি করে সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়ালাম। সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ভুলে ছবি তোলা হলো না ।

শুনেছি সমুদ্রে সূর্য ডোবার মুহূর্তে মনে মনে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায় । খোলা গলায় তাই সবাই গান ধরলাম:

শুনেছি সমুদ্রে সূর্য ডোবার মুহূর্তে মনে মনে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায় । খোলা গলায় তাই সবাই গান ধরলাম:

‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা ।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা ॥’

রাত ৮টায় বাস। চট্টগ্রাম যেন ফিরতেই ইচ্ছে করছিল না। এবার আর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে হলো না। শহরের মধ্য থেকেই বাস ছাড়ল । বাস ধীরগতিতে সামনে এগোতেই জানালা দিয়ে দেখলাম দুপুরের সে ঝিলমিল সোনালি রং আর নেই, চাঁদের আলোয় রুপালি হয়ে গেছে সাগর। সে যেন ডাক দিয়ে আমায় বলল যাস নে, ফিরে আয় । আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম। বাস কক্সবাজার শহর ছেড়ে দুই পাশের সারি সারি পাহাড়ের পথ বেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। চোখ বন্ধ করে তখনো আমি দেখছিলাম সমুদ্রকে, শুনছিলাম তার গর্জন। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ফিরে এলাম চট্টগ্রামে। সঙ্গে রইল সাগর সৈকত থেকে নিয়ে আসা আনন্দ-স্মৃতি ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা  টি। যদি তোমাদের আজকের এই সমুদ্র সৈকতে একদিন রচনা  টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ