৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন ।

৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন
৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন

৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন

  • অথবা, “বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল” আলোচনা কর। 
  • অথবা, অথবা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়বস্তু আলোচনা কর ।
  • অথবা, “বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঘোষণা।” বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর ভূমিকা : ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে বিভিন্ন কূটকৌশল অনুসরণ করেন। 

ফলে বাঙালি জাতি স্বায়ত্তশাসন থেকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সমাবেশে নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন যা বিশ্বের ইতিহাসে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে খ্যাত। 

বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ দেশের আপামর জনসাধারণকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার দীপ্ত আলোয় ভাস্কর করে তোলো। যে কারণে ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার ঘোষণা নিহিত ছিল বলে বলা হয়।

→ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা :

অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকাল ৩টায় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) শেখ মুজিব এক বিশাল জনসভায় যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তা ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণ নামে খ্যাত। নিম্নে “বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল” তা আলোচনা করা হলো :

→ ৭ মার্চের ভাষণের মূল বক্তব্য : রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেন তার সারকথা বাঙালি জনগণকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করে। 

শেখ মুজিবুর রহমান ষোঘণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' 

তিনি আরো বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ! তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।' 

ঐক্যবদ্ধ জনতা নেতার এ উদাত্ত আহ্বানকে স্বাগত জানায় এবং দেশের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারের প্রতিশ্রুতি দেয়।

→ ভাষণের নির্দেশনামা : ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের জন্য কিছু নির্দেশনামা জারি করেন যা জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে অগ্রসর করে। এগুলো নিম্নরূপ :

১. বাংলার মুক্তি না আসা পর্যন্ত সকল খাজনা, ট্যাক্স বন্ধ রাখতে হবে।

২. সেক্রেটারিয়েট, সরকারি-আধা-সরকারি অফিস, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট ও অন্যান্য আদালত বন্ধ থাকবে।

৩. যানবাহন ও বন্দরে কাজ চলবে। তবে স্বশস্ত্র বাহিনীর চলাচলের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা চলবে না।

৪. টেলিফোন, টেলিগ্রাম কেবল বাংলাদেশের ভিতরই চলবে। 

৫. স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।

৬. আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অবিলম্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে।

৭. মার্চ শেখ মুজিব যে ভাষণ দেন তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল ।

নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

(ক) স্বাধীনতার ডাক : বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে : বাঙালি জনগণের পক্ষে স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। 

অর্থাৎ তার বক্তব্যর মধ্যেই স্বাধীনতার ঘোষণা নিহিত রয়েছে। তিনি এ ভাষণের মাধ্যমেই জনগণকে স্বাধীনতার প্রতি উজ্জীবিত করেন। যার ফলশ্রুতিতে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

তাই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যদি নাও আসতো তবুও বাঙালি ৭ মার্চের ভাষণের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তো একথা অকল্পনীয় ছিল না। তাই ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার ষোঘণা নিহিত ছিল একথা যৌক্তিক।

(খ) মুক্তির বাণী প্রদান : ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জনগণের জন্য মুক্তির বাণী প্রদান করেন। তিনি বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। 

তার এই মুক্তির বাণী জনগণের মনে মুক্তির প্রতি আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। এ ভাষণের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়েই জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো। অর্থাৎ ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই বাঙালির মুক্তির বাণী নিহিত ছিল ।

(গ) প্রতিরোধের বাণী প্রচার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি জনগণকে প্রতিরোধের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেন। 

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো' তার এই বক্তব্য জনগণের মধ্যে প্রতিরোধের বাণী প্রচার করে। জনগণ এ ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ করার উজ্জীবনী শক্তি লাভ করে। 

অর্থাৎ এ বক্তব্যের মাধ্যমেই জনগণ প্রতিরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকে। অর্থাৎ ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ষোঘণা হিসেবে কাজ করেছিল।

(ঘ) মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু : ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ঐদিন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে। 

৭ মার্চ বিকালবেলা ছাত্র-ছাত্রীরা রাইফেল নিয়ে ঢাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ শুরু করে। ৮ই মার্চ দেশে প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায় এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউ. ও. টি. সি. এর ক্যাডেটরা এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। একইভাবে বাঙালি সৈন্যদের মধ্যেও আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। 

অর্থাৎ এ ভাষণের পর পরই দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয় এ থেকে বোঝা যায় এ ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার ঘোষণা নিহিত ছিল।

ঙ. জনমনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন : ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চ শেখ মুজিবের ভাষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 

তাঁর ভাষণ বাঙালি সৈন্য ও সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাছাড়া এ বক্তৃতায় বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়। 

ঐ দিন শেখ মুজিব পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে প্রস্তুত হতে আগাম নির্দেশ দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। 

মেজর জিয়াউর রহমান তার 'একটি জাতির জন্ম' প্রবন্ধে এ ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো” অর্থাৎ এই ভাষণ যে স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা ছিল তা জিয়াউর রহমানের মন্তব্য থেকেই স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় ।

(চ) প্রতিরোধ কমিটি গঠন : ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হতে শুরু করে। 

৭ মার্চের পর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন দলের সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, থানা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিরোধ প্রস্তুতি গড়ে উঠতে থাকে যা ২৬ মার্চের পর পরিপূর্ণতা লাভ করে। 

৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, “আমার অনুরোধ, প্রত্যেক মহল্লায়, ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন।” 

তাঁর এই বক্তব্য দেশবাসীকে প্রতিরোধ কমিটি গঠনে উদ্দীপ্ত করে। তাই ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনে মাইলফলক হিসেব বিবেচিত হয় ।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন তা তৎকালীন প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবেই বিবেচিত হয়। 

যদিও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিবস হিসেবে স্বীকৃত তথাপি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ তারিখের ঘোষণার পরপরই দেশে বাঙালি ও সরকার উভয়পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর থেকে বাংলাদেশে অসহযোগ ও প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। তাঁর ভাষণ বাঙালি সৈন্য ও সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। 

শুধু ছাত্র শ্রমিক নয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও ভাষণের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এক কথায় ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার বীজ উপ্ত হয়, সারা দেশব্যাপী সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। 

জনগণের মধ্যে মুক্তির মানসিকতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ বলা হয় কেন । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ