আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর ।

আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর
আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর

আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : মুসলিম রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা শাসকের ধর্মীয় কর্তব্য। আব্বাসীয় শাসনামলের বিচার বিভাগ গঠন ও উন্নতির মধ্যে হজরত ওমর (রা.) এর মেধার প্রতিফলন ঘটে। উমাইয়া আমলে খোলাফায়ে রাশিদীনের বিচার ব্যবস্থার বিলোপ- সাধন হলেও আব্বাসীয়দের সময় খলিফাগণ খোলাফায়ে রাশিদীনের ইসলামি রীতিকে হুবহু অনুসরণ করে তার বিকাশ সাধন করে। 

সে যুগে সৎ, ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিকে খলিফা মনোনীত করা হতো। আব্বাসীয় বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে Bengerd louis বলেন উমাইয়া রাজত্ব হলো আরব রাজত্ব আর আব্বাসীয় খিলাফত হলো ইসলামি সাম্রাজ্যে ।

→ আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থা : সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে বিচারব্যবস্থা আব্বাসীয়দের সময় প্রচলিত ছিল তা নিম্নরূপ :

১. প্রধান বিচারপতি : আব্বাসীয় শাসনামলে বিচার বিভাগীয় | প্রধান কর্মকর্তা কাজি উল কুজ্জাত হলেও প্রধান বিচারক ছিলেন খলিফা স্বয়ং। তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিচার কার্যগুলো পরিচালনা করতেন। কখনো কোনো কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিচার সম্পন্ন না করতে পারতেন সেগুলো খলিফার নিকট পেশ করা হতো। 

যেহেতু আব্বাসীয় শাসন ইসলামি অনুশাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তাই খলিফার বিচার ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

২. বিচারক হিসেবে উজির : আব্বাসীয় শাসনামলে অনেক সময় বিচারক হিসেবে উজিরকে দায়িত্ব পালন করতে হতো। খলিফার অনুপস্থিতে উজির খলিফার দায়িত্ব পালন করতো। কেননা খলিফার পর উজিরের স্থান ছিল। 

এ সম্পর্কে পি.কে হিটি বলেন, “খলিফার মতো উজিরও অনেক সময় বিচারালয়ের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করতেন এবং আপিল কোর্টের সভাপতি নির্বাচিত হতেন। এজন্যই আব্বাসীয় শাসনামলে সৎ, যোগ্য ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে উজির নিযুক্ত করা হতো।”

৩. কাজি উল কুজ্জাত নিয়োগ ও তাদের কার্যাবলি : আব্বাসীয় যুগের প্রধান বিচারপতিকে কাজি উল কুজ্জাত বলা হতো। কাজিদের কর্তব্য ছিল সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারকার্য পরিচালনা করা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তত্ত্বাবধান করা। গোলযোগপূর্ণ স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। 

ন্যায়বিচারের জন্য খলিফা নিষ্ঠাবান ও নিষ্কলুষ লোকদের কাজি নিযুক্ত করতেন। তবে আব্বাসীয় খেলাফতের শেষ দিকে প্রভাবশালী উজির দ্বারা কাজি উল কুজ্জাত নিযুক্ত করতেন।

৪. প্রাদেশিক কাজি : প্রাদেশিক কাজিগণ আব্বাসীয় আমলে বড় বড় শহরে বিচার কার্যপরিচালনা করতেন। তিনি প্রদেশের বিচার হিসেবে সকল বিচার কার্য সম্পাদন করতেন । প্রধান কাজী তাকে নিয়োগ করতেন। তিনিও খলিফার মতো বিভিন্ন নিয়ম- কানুন অবলম্বন করেই কাজি নিযুক্ত করতেন ।

৫. ক্ষমতাসম্পন্ন কাজী : অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন কাজীদেরকে আশা মতাসাক বলা হতো। তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো বিচার কার্য নিষ্পত্তি করা, এতিম অনাথ নাবালেক ও মস্তিষ্ক বিকৃতদের তরফ হতে সুবিচার করা। ধর্মীয় বা ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা বা পরিচালনা করা। শরীর বিরোধী কার্যকলাপের জন্য শাস্তি প্রদান করা, উপ বিচারক বা নায়েব নিয়োগ করা।

৬. বিচারকের বেতন : ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারকদের মত সন্তুষ্ট রাখাই ছিল আব্বাসীয় খলিফাদের কর্তব্য। কাজিউল কুজ্জাতকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য খলিফা হারুন-উর-রশিদের সময় ৬০০ দিরহাম মাসিক প্রদান করা হতো। মিসরের প্রাদেশিক কাজীকে মাসিক ৪০০ দিরহাম প্রদান করা হতো।

৭. মুহতাসিব : আব্বাসীয় আমলে মুহতাসিব নামে পরিচিত এক ধরনের বিচারক ছিলেন মুহতাসিব পুলিশ ও বিচার বিভাগের মাঝামাঝি অবস্থান করতেন। মুহতাসিব রাতে শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন। রাস্তার কোনো অপরাধমূলক কাজ দেখলে তিনি তাৎক্ষণিভাবে তার বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।

৮. বিচারকের স্বাধীনতা : আব্বাসীয় আমলে বিচারকগণ .বিচার কার্যে সকল প্রকার স্বাধীনতা ভোগ করতেন। বিচারকের সিদ্ধান্তে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য ছিল না। সর্বাধিক ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে তিনি সবকিছুর রায় দিতেন। 

উদাহরণ কতিপয় সামান্য উটের মালিকের অভিযোগক্রমে মদিনারবাসীর নির্দেশ খলিফা আল মনসুর তার হাজীবকে দোষী সব্যস্ত করেন এবং বিবাদীর পক্ষে রায় দেন।

৯. অপরাধীর শাস্তি : আব্বাসীয় আমলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীকে তার সমপরিমাণ শাস্তি প্রদান করা হতো। তবে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামি বিধি-বিধান মেনে চলা হতো। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেমন-

(ক) শরীয়ত বিরোধী অপরাধের শাস্তি : আব্বাসীয় আমলে ইসলামি শরীয়াহ বিরোধী অপরাধের শাস্তি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও ভয়াবহ যেমন মুরতাদ তথা ইসলাম জাগীদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড চুরির শাস্তি ছিল ডান হাত কর্তন। 

যিনা বা ধর্ষণের শাস্তি অবিবাহিতদের জন্য ১০০টা দুররা, বিবাহিতদের জন্য পাথর মেরে মৃত্যু ঘটানো; মদ্যপানের জন্য ৮০টি দুররার বিধান ছিল।

(খ) রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি : আব্বাসীয় শাসনামলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তি অপরাধের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হতো। যেমন- অপরাধের অনেক গুরুত্ব হলে মৃত্যুদণ্ড, বেত্রাঘাত, হাত-পা কেটে দেয়া, বয়কট করা, স্থায়ী, অস্থায়ী কারাদণ্ড দেওয়া ইত্যাদি শাস্তি প্রচলিত ছিল। এ সব শাস্তি কার্যকর করতে সীমা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি ৷

(গ) অন্যান্য শাস্তি : আব্বাসীয় শাসনামলে উল্লিখিত শাস্তি ছাড়াও আরো অনেক শাস্তি প্রচলিত ছিল। যেমন- হত্যার পরিবর্তে হত্যা, কিয়াস বা দিয়ত নামে পরিচিত। আর মানহানি নিন্দাসুচক অপরাধের জন্য মাথা মুড়িয়ে দেয়া, জুতা মারা প্রভৃতি বিধান ছিল ।

১০. অমুসলমানদের বিচার : আব্বাসীয় আমলে অমুসলিমদের | বিচার কার্য সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা করা হতো। তারা অমুসলমানদের বিচারের জন্য অমুসলিম শালিস বোর্ড বা বিচারক নিয়োগ করতেন। তবে ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মুসলমান, অমুসলমান সকলের সাধারণ আইনে বিচার করা হতো ।

১১. মুফতি : আব্বাসীয় শাসনামলে বিচারব্যবস্থায় মুফতি বা ফতোয়াদানকারী নিযুক্ত করা হতো। সরকারিভাবে নিযুক্ত মুফতি কোনো ধরনের ফি ছাড়াই লোকজনকে বিভিন্ন আইন ও মাসায়েল সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। এক কথায় তৎকালীন সমাজে ন্যায়বিচার পরিচালনায় মুফতির মর্যাদা ছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় যুগে সাম্রাজ্যের সার্বিক সুখ, শান্তি ও অগ্রগতি ছিল ন্যায়বিচারের ওপর নির্ভরশীল। ন্যায়বিচার ইসলামি শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিধি হওয়ায় আব্বাসীয় খলিফাগণ বিচারকার্য ফকীহ বা ধর্মবিদদের ওপর ন্যস্ত করতেন। 

সুষ্ঠু স্থিতিশীল বিচারব্যবস্থা না থাকলে সাম্রাজ্যে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আর সে কারণেই | আব্বাসীয় বিচারব্যবস্থাকে একটি সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থায় পরিণত করেন। আব্বাসীয় আমলের বিচার ব্যবস্থাকেই পরবর্তীতে অনেকাংশে অনুসরণ করা হতো।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলের বিচারব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ