আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণ মূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

আহমেদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খিলাফতের পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে ওঠে। যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে আহমদ ইবনে তুলুনের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ তুলুনীয় রাজবংশ। 

তিনি এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠাই শুধু করেননি, বরং এর স্থায়িত্ব রক্ষা করার জন্য তার মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি পরিচালনা করেছেন। যার জন্য তিনি ইতিহাসে অধিক প্রশংসনীয় হয়ে রয়েছেন।

→ আহমদ ইবনে তুলুনের জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : আহমদ ইবনে তুলুন শুধু একজন রাজ্যবিজেতা বা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, তিনি অনেক জনহিতকর কার্যাবলি পরিচলনা করেছেন। নিম্নে তার জনহিতকর কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সেনাবাহিনী গঠন : আহমদ ইবনে তুলুন একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেন। তার বাহিনীতে তুর্কি ও নিগ্রো দেহরক্ষীদের নেয়া হয়নি। এই শক্তিশালী সেনাবাহিনী দ্বারা তিনি বিভিন্ন রাজ্য জয় করতে সক্ষম হন। তিনি তার সাম্রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।

২. অর্থনৈতিক সম্পদ : আহমদ ইবনে তুলুন তার প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধি করেন। যার জন্য তিনি নিজে রাজস্ব খাত তদারকি করেন। 

কেন্দ্রীয় কর কমিয়ে দিয়ে রাজকোষকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যখন সিরিয়া জয় করেন তার ফলে ব্যবসা খাত আরো সমৃদ্ধি অর্জন করে এবং অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গঠিত হয়।

৩. প্রাসাদ নির্মাণ : আহমদ ইবনে তুলুন দুটি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রথম যে প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তার চারপাশে প্রচুর খোলা জায়গা ছিল, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল বিশাল বাগান। পাশাপাশি ছিল ঘোড়ার আস্তাবল ও ঘোড়দৌড়ের জায়গাও । 

প্রাসাদের সাথে বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রসাদটির সব কিছু প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য সবসময় খোলা ছিল ।তিনি রাজকার্য পরিচালনার জন্য আরেকটি প্রাসাদ তৈরি করেন। এ প্রসাদে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই প্রাসাদ সুন্দরী মহিলাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতো ।

৪. নিলোমিটার স্থাপন : আহমদ ইবনে তুলুন মিশরের কায়রোর কাছাকাছি রাওজা নামক একটি দ্বীপে নিলোমিটার বসিয়ে এর মান উন্নয়ন করেন। এছাড়া তিনি মুকাত্তাম পাহাড়ের উপরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন।

৫. উকতাই নগর : আহমদ ইবনে তুলুন উকতাই নগরী নির্মাণ করে ফুসতাতের উত্তর-পূর্বে ৫ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেন। এই নগরী চারিদিকে প্রহরার জন্য তিনি সেনাবাহিনীর নিয়োগ দেন। 

এই সেনাবাহিনী বিভিন্ন গোত্র হতে নিয়োগ দান করা হয়েছিল। বিভিন্ন গোত্রের বাহিনী নিয়োগ দান করেছেন বলে  যাতে তাদের মধ্যে কোনো কলহ দ্বন্দ্ব না লাগে তার জন্য তিনি তাদের আলাদা আবাস করে দেন।

৬. মসজিদ নির্মাণ : আহমদ ইবনে তুলুন তার নগরীর পাশে মিশরীয় আর্কিটেক্ট দ্বারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন যার নামকরণ করা হয় তার নামে। ইবনে তুলুন জামে মসজিদ । এই মসজিদটি নির্মিত হয় পাথর দ্বারা। এই পাথরগুলো ছিল বিশেষ ধরনের পাথর। 

যা ইংল্যান্ড হতে আমদানি করা হয়েছিল। জানালার কাচগুলো ছিল অত্যন্ত সুন্দর। মসজিদের বাইরে দেয়ালের পাশে দোকান দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই মসজিদটি এখনও টিকে আছে। জনসাধারণ তাদের নামাজ পড়ার জন্য এখনো এখানে গমন করে ।

৭. ন্যায়বিচারক : আহমদ ইবনে তুলুন ছিলেন একজন ন্যায়বিচারক। তিনি ন্যায়বিচার করতে পছন্দ করতেন। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হতো।

৮. দানবীর : ইবনে তুলুন ছিলেন দানবীর, তিনি জনসাধারণকে অকাতরে দান করতেন।

৯. কৃষির উন্নতি : আহমদ ইবনে তুলুন কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল সেচ ব্যবস্থা। তিনি নীলনদ থেকে কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সেচ দেওয়ার জন্য একটি কৃত্রিম নালা তৈরি করেছিলেন। যার ফলে তার সময়ে কৃষি অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিল।

১০. রাজ্যকোষের সমৃদ্ধি সাধন : আহমদ ইবনে তুলুন যখন মারা যান তখন তাঁর রাজকোষে ১০ মিলিয়ন দীনার, ১৫০টি জাহাজ, ৩৫০টি ঘোড়া এবং ১,০০০টি উট রেখে যান। কিন্তু তার পরবর্তী শাসকগণ তা রক্ষা করতে পারেনি।

১১. রাজধানী কেন্দ্রিক উন্নয়ন : ইবনে তুলুন যে সকল উন্নয়ন করেছেন তার সাম্রাজ্যের প্রায় সবগুলো ছিল তার রাজধানী ফুসতাতের অংশ বিশেষ আল-কাতাই কেন্দ্রীক। তাই তার সকল জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড রাজধানীতে দেখা যায় ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে তুলুন পশ্চিমাঞ্চলে যে তুলুনীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল তা ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজবংশ। এই রাজবংশ অন্য সকল রাজবংশের ন্যায় নিজেদের যোগ্যতাবলে উন্নতি শিখরে আরোহণ করেছিল। 

কিন্তু পরবর্তীতে আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে মনোমালিন্য ও তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে তুলুনীয় রাজবংশেরও পতন ঘটে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  আহমদ ইবনে তুলুনের জনহিতকর কার্যাবলি পর্যালোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আহমদ ইবনে তুলুনের জনহিতকর কার্যাবলি পর্যালোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ