আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর ।

আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর
আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর

আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে যে সকল ব্যক্তি নিজ কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা দ্বারা শাসনব্যবস্থা, পরিচালনা করতেন তাদের মধ্যে অন্যতম বুয়াইয়া শাসক আজাদ-উদ-দৌলা। 

আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতিকারী এবং অর্থনৈতিক সংস্কার করে ইতিহাস অমর হয়ে আছেন খলিফা হারুন-অর- রশীদ আর তার সাথে তুলনা করা হয় বুয়াইয়া আমির আজাদ-উদ-দৌলা বা ফানা খসরুকে। অর্থনৈতিক সংস্কার এর মাধ্যমে প্রশাসনিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন।

→ আজাদ-উদ-দৌলার পরিচয় : আজাদ-উদ-দৌলা ছিলেন বুয়াইয়া সুলতান রুকনদৌলার জ্যেষ্ঠপুত্র। বুয়াইয়া সুলতানদের ৯ জন শাসক ছিলেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন আজাদ-উদ-দৌলা । 

আজাদ-উদ-দৌলা শাসনামলে বুয়াইয়া সাম্রাজ্য অর্থনীতি, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে সচেষ্ট হয়। আজাদ-উদ-দৌলা ছিলেন ফারসর শাসনকর্তা আজাদ-উদ-দৌলা ৯৬৭ সালে বিশেষ উপাধি প্রজাদের মধ্যে দিয়ে বুয়াইয়াদের ক্ষমতায় আনা হয় ।

→ আজাদ-উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কার : নিম্নে আজাদ- -উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কার দিকগুলো আলোচনা করা হলো :

১. রাজস্ব সংস্কার : আজাদ-উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কারছিল ভিন্নধর্মী। অধ্যাপক শাবান সুলতানের ৫ বছরের কর্মময় জীবনে বাগাদদের রাজস্ব সংস্কার চিত্তাকর্ষক বলে চিহ্নিত করেছেন। রাজস্ব সংস্কার নীতি মূলত গ্রহণ করেছিলেন তার পিতৃব্য মুইজ- উদ-দৌলার কাছ থেকে ।

২. ইকতা প্রথার প্রবর্তন : আজাদ-উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম হলো ইকতা প্রথার প্রবর্তন। বুয়াইয়া আমির মুইজদৌলা ইকতার ব্যাপক সম্প্রসারণ নীতিকে কর্মচারীদের বেতনের জন্য সীমিত করেন এবং দাইলামি নেতাদের প্রতি কড়া নজর রাখতেন। ইকতা প্রথা প্রবর্তনের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের খাজাঞ্চি খানা থেকে বেতন প্রদান করা হতো ।

৩. কর ব্যবস্থার পরিবর্তন : আজাদ-উদ-দৌলা কর বেতন বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন না। অবশ্য সামরিক বিজয়কে পুরস্কৃত করতেন। আজাদ-উদ-দৌলা পূর্ববর্তী আমির এর মতো কর ইজারদারি জারি রাখেন। তবে ব্যবস্থাপনার উপর ব্যাপক নজরদারি রাখতেন। ফরাসি অঞ্চলে কর্মচারীদের বিপ্লবাত্মক কর আরোপের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন ।

৪. বিভিন্ন বস্তু/বিষয়ের উপর করারোপ : আজাদ-উদ- দৌলা শাসন পরিচালনা করতে গিয়ে প্রাচীন ইরানি কর ব্যবস্থা চালু করেন এবং তা যথাযথ বাস্তবায়িত হয়েছিল। আজাদ-উদ- দৌলা বেশ্যাবৃত্তির উপর এবং জলকর আরোপ করেন। যদিও এগুলো ধর্মসম্মত ছিল না। 

কর আদায়কারী কর্মচারীর থাবা ছিল দৃঢ়। শহরের প্রবেশ পথে কর আদায়কারীরা থাকতো এবং পণ্য বোঝাই গাড়ির ত্রিশ দিরহাম কর আদায় করা হতো ।

৫. কর আদায়ের বিভিন্ন পথ : আজাদ-উদ-দৌলার শাসনামলে শহরের মধ্যে সরকারিভাবে বাজার বসানা হতো এবং সেখানে পাইকারি বেচাকেনা হতো। পণ্যাগার এবং বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হতো। 

ব্যবসায়ী শ্রেণিদের জন্য বৃহৎ গৃহ নির্মাণ করা হতো সেখানে তারা ব্যবসা পরিচালনা করতো এবং বড় বড় আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হতো।

৬. আমদানি বস্তুর উপর করারোপ : বুয়াইয়া আমির ফানা খসরুর শাসনামলে আমদানিকৃত বস্তুর উপর করারোপ করা হয়। আমদানি দ্রব্যগুলোর মধ্যে ছিল গমের আটা, যব, তৈল পদার্থসহ অন্যান্য সুগন্ধ দ্রব্যাদি ।

৭. গ্রামেও কর এর ব্যবস্থা : গ্রাম সমাজ থেকেও কর সংগহের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বেদুইনদের উপর পশুর কর। আর সাম্রাজ্যের প্রায় দুই লক্ষ বেদুইনকে উত কর ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছিল।

৮. ভূমি করের ব্যবস্থা : আজাদ-উদ-দৌলার শাসনামলে ভূমি করের জন্য তিন স্তর বিশিষ্ট জটিল কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। কর গ্রহণের জন্য সরকারি কোন দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি যথাযথ কর আদায়ে কোন দ্বিধা করতেন না।

৯. কৃষিকাজের উপকর করারোপ : দেশের পুরানো সেচ্ ব্যবস্থার রক্ষা করে তা আরো উন্নত করার ব্যবস্থা করা হয়। সেচ প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ তদারকির জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়। এমনকি বেড়িবাঁধ এবং সেচপ্রকল্পের উপরই করারোপ করা হয়।

১০; যাদের উপর করারোপ করা হয়েছিল : আজাদ-উদ- দৌলার শাসনামলে অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম বিষয়টি হলো সিরাজ নগরীতে ব্যবসায়ী এবং অভিজাত শ্রেণির উপর করারোপ করা হয়েছিল। 

অপরদিকে গ্রামের দিনমজুর থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমিক সাধারণ জনতার উপরও করারোপ করতে আজাদ-উদ-দৌলা দ্বিধাবোধ করেননি।

১১. অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণ : বুয়াইয়া আমির আজাদ- | উদ-দৌলা মনের দিক দিয়ে একজন স্বৈরাচারী প্রকৃতির নামক ছিলেন। সিরাজ নগরীর সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধকরণ এবং 

সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং অপরদিকে সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের দমানোর জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে অত্যাচার চালান। কেননা তিনি উপলব্ধি করতেন যার হাতে অনেক অর্থের যোগান ঘটবে সে বিদ্রোহী হতে পারে।

১২. ফানা খসরু আজাদ-উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলাফল : চিন্তাশীল, বিবেকবান এবং প্রজাহিতৈষীর সাথে তার চারিত্রিক দিক ছিল স্বৈরাতান্ত্রিক। আজাদ-উদ-দৌলার অর্থনৈতিক সংস্কার আংশিক সফল হয়েছিল তা অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আজাদ-উদ-দৌলার রাজস্ব সংস্কার নীতি নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে সাম্রাজ্যের অনেক মানুষের ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। 

এমন কি আজাদ-উদ-দৌলার শাসনামলে আব্বাসীয়দের ও বুয়াইয়া আমিরদের থেকে অর্থ নিতে হয়েছিল। এর কারণ ছিল খলিফাদের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত করা। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন আজাদ-উদ-দৌলা অর্থনৈতিক সংস্কারক ছিলেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আজাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ কী ছিল তা বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ