১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ।

১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

  • ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর
  • অথবা, ১৯৭২ এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য গুলো কী ছিল? 
  • অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান/মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
  • অথবা, বাংলাদেশের ৭২ সালের সংবিধানের (মূল সংবিধান) বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর । 
  • অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : সংবিধান একটি দেশের লিখিত দলিল এবং : সমস্ত প্রকার আইনের উৎস। ১৯৭১ সালের পূর্বে বাংলাদেশের নিজস্ব সংবিধান ছিল না বিধায় স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী একটি শাসনতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করা হয় । 

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি প্রথমে একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে। অতঃপর গণপরিষদ খসড়া সংবিধান চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করলে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকরী হয়। 

'৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনা ও শাসনতান্ত্রিক বিধিবিধান সংক্রান্ত বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে যা বাঙালির স্বাধিকার রক্ষায় সক্রিয়ভূমিকা পালন করে ।

→ '৭২-এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য : ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয় তাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়। নিচে '৭২-এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

২. লিখিত সংবিধান : '৭২ এর সংবিধানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এ সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এ সংবিধানে প্রতিটি বিষয় লিখিত। এ সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ ও ৪টি তফসিল লিখিত রয়েছে। 

এছাড়া ১৫৩টি অনুচ্ছেদের সমন্বয়ে গঠিত এ সংবিধান। এর প্রথম ভাগে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ, দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ, তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার, চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ, পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ ভাগে বিচার বিভাগ, সপ্তম ভাগে নির্বাচন, অষ্টম ভাগে মহাহিসাব নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক, নবম বিভাগে কর্মকমিশন, দশম ভাগে সংবিধান সংশোধন ও একাদশ ভাগে বিবিধ বিষয়াদি লিখিত আকারে আলোচিত হয়েছে।

২. ভাষা : সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত হয়েছে। তবে সংবিধানে বাংলা ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটির প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। 

১৯৭২-এর সংবিধানে দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ '৭২-এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য বাংলা ভাষার ব্যবহার ।

৩. দুষ্পরিবর্তনীয় : '৭২ এর সংবিধানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এ সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। 

তবে এ সংবিধানের কিছু কিছু ধারা ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। তাই '৭২ এর সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পড়লে কোনো বিষয়ই পরিবর্তনযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হয়।

৪. রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি : ১৯৭২ এর সংবিধানের প্রস্ত বিনায় রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪ আদর্শকে গ্রহণ করা হয়েছে। যথা- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। 

এর মূল লক্ষ্য ছিল এ এক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা। 

১৯৭২ এর সংবিধানের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি' সংযোজন করা যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

৫. সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন : '৭২-এর সংবিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন ১৯৭২ সালের সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সমস্ত প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত করে। 

উক্ত সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে উপাধিসর্বস্ব করা হয়। সংবিধানে একটি এক কক্ষ বিশিষ্ট এবং ৩০০ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত ১৫ জন মহিলা সদস্যদের সমন্বয়ে আইনসভা গঠনের বিধান করা হয়।

৬. মৌলিক অধিকারের উল্লেখ্য : '৭২-এর সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মানুষের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ করা। সংবিধানের ২৭-৪৪ এর অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত করা হয়। 

সংবিধানের ৪৪ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা সুপ্রিম কোর্টকে সকল ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার রক্ষাকবচ করা হয়েছে। 

অর্থাৎ সংবিধানের দ্বারা মানুষের চলাফেরা, বাক স্বাধীনতা, সংগঠন, সমানাধিকার প্রভৃতি মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে মানুষের মৌলিক অধিকার আইনের দ্বারা বিধিবদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

৭. সংসদ সদস্যদের শৃঙ্খলা : কোনো সংসদ সদস্য নিজ দল ত্যাগ করলে বা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তিনি তাঁর সংসদ সদস্যপদ হারাবেন (বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০)। সরকারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ বিধান করা হয় ।

৮. ন্যায়পালের বিধান : বাংলাদেশ সংবিধানের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি । সংসদ আইনের দ্বারা এ পদ সৃষ্টি করতে পারবে। 

ন্যায়পাল যেকোনো মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজন তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন । তিনি একমাত্র সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন।

৯. সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা : সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংবিধানের আওতায় প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। সংবিধানের এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

১০. প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল : বাংলাদেশ সংবিধানে সাধারণ বিচার ব্যবস্থার অতিরিক্ত সংসদ কর্তৃক আইনের দ্বারা এক বা একাধিক প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার বিধান করা হয়েছে। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়াদি এর এখতিয়ারভুক্ত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ এর সংবিধান ছিল একটি লিখিত, দুষ্পরিবর্তনীয় শাসনতান্ত্রিক দলিল। 

এটি ছিল একটি ব্যাপক সুলিখিত দলিল এবং এ উপমহাদেশের অন্যান্য সংবিধানের তুলনায় উন্নত মানের। 

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব এবং দুর্বলতা থাকলেও এ সংবিধান জনগণের তৎকালীন আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত করেছিল। 

এ সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেমনি আইনের মূল উৎস হিসেবেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। তাই '৭২-এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য সাংবিধানিক ভিত্তির ওপরই প্রতিষ্ঠিত একথা বলা যায় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ