বুয়াইয়াদের উৎপত্তি ও কার্যাবলি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইয়া শাসক গোষ্ঠির ইতিহাস কি ছিল? ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইয়া কারা? বুয়াইয়া আমিরদের ইতিহাস আলোচনা কর ।

বুয়াইয়াদের উৎপত্তি ও কার্যাবলি আলোচনা কর
বুয়াইয়াদের উৎপত্তি ও কার্যাবলি আলোচনা কর

বুয়াইয়াদের উৎপত্তি ও কার্যাবলি আলোচনা কর

  • অথবা, বুয়াইয়া শাসক গোষ্ঠির ইতিহাস কি ছিল? ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, বুয়াইয়া কারা? বুয়াইয়া আমিরদের ইতিহাস আলোচনা কর।
  • অথবা, বুয়াইয়াদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধর। 
  • অথবা, বুয়াইয়া রাজবংশের ইতিহাস আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে একাদশ শতাব্দীর মাঝ সময় পর্যন্ত প্রায় এক শতাব্দীকাল বুয়াইয়া বংশ বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফত পরিচালনা করেন। শিয়া মতাবলম্বী বুয়াইয়া আমিরদের উত্থান আব্বাসীয় খিলাফতের সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়। 

আব্বাসীয় খলিফাদের অধীন তুর্কী সেনাবাহিনীর ঔদ্ধত্য ও দৌরাত্ম্য বুয়াইয়াদের উত্থানের পথ পরিষ্কার করে দেন। শিয়া বুয়াইয়াগণ সুন্নি ইসলামের নেতা আমির উল মুমেনীন খলিফাদের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত করে। 

বুয়াইয়া বংশের অভ্যুত্থানের ফলে সাধারণভাবে আরব সুন্নির উপর পারস্যবাসী শিয়াদের প্রাধান্য সূচিত হয় । নিম্নে বুয়াইয়াদের ইতিহাস তুলে ধরা হলো :

→ বুয়াইয়াদের উৎপত্তির ইতিহাস : নিয়ে বুয়াইয়াদের উৎপত্তির ইতিহাস আলোচনা করা হলো :

১. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : আবু সুজা বুয়াইয়ার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র আহমদ, আলী ও হাসান দক্ষিণ দিকে অভিযান চালিয়ে ৯৩৪-৯৩৬- সালের মধ্যে সিরাজ, ইস্পাহান, খুজিস্থান, কিরমান ও আহওয়াজ প্রভৃতি স্থান সাসানীয়দের কাছ থেকে দখল করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন । অধিকৃত অঞ্চলের রাজধানী করা হয় সিরাজে ।

২. বুয়াইয়াদের বাগদাদে আসার আহ্বান : রাজধানী সিরাজ থেকে বুয়াইয়াগণ আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের উপর সবেগে ধাবিত হয়ে ইরাকের আলওয়াসিত দখল করেন। 

এ সময় তুর্কী বাহিনীর ঔদ্ধত্য ও দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ হয়ে বাগদাদে দুর্বল আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাকাফি (৯৪৪-৯৪৬) আবু সুজা বুয়াইয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আহমদকে স্বেচ্ছায় রাজধানীতে আহ্বান করেন ।

৩. বুয়াইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা : আহমদ খলিফার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বাগদাদ এ প্রবেশ করলে তুর্কী আমির উল উমারা আবু জাফর এবং তুর্কি বাহিনী পালিয়ে যায়। 

এর মধ্যে দিয়েই মূলত আহমদ বাগদাদে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা তার পিতার নামানুসারে বুয়াইয়া রাজবংশ নামকরণ করা হয়। খলিফা সন্তুষ্ট হয়ে আহমদকে তার আমির উল উমারা নিযুক্ত করেন এবং মুইজ উদ-দৌলা উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৪. মুইজ-উদ-দৌলা : তুর্কি বাহিনীর হাত থেকে আব্বাসীয় খলিফা মুসতাকফিও খিলাফতকে রক্ষা করে আহমদ বাগদাদে ত্রাণকর্তার মর্যাদা পান। আহমদকে মুইজ-উদ-দৌলা উপাধিতে ভূষিত করে খলিফা তাকে আমির উল উমারাহ নিযুক্ত করেন। 

খলিফার দুর্বলতার সুযোগে মুইজ খিলাফতের সর্বময় কর্তা হয়ে উঠেন। মুইজ উদ-দৌলা মুদ্রায় নিজ নাম অঙ্কন এবং খুৎবায় তার নাম পাঠের ব্যবস্থা করেন।

৫. ইজ-উদ-দৌলা : মুইজ উদ-দৌলার মৃত্যুর পর তার ছেলে বখতিয়ার আমির উল-উমারাহ্ পদে পিতার উত্তরাধিকারী হন । তিনি ইজ উদ-দৌলা উপাধি গ্রহণ করেন। আমির উল-উমারাহ নিযুক্ত হওয়ার অল্পদিনের মধ্যে তিনি ইরাকে একদল তুর্কি কর্তৃক আক্রান্ত হন। 

এ সময় তার চাচা রুকনু উদ-দৌলা তাকে উদ্ধার করে বন্দি করেন এবং পিতা রুকন উদ-দৌলার নিষেধ অগ্রাহ্য করে তাকে হত্যা করে ইরাক নিজের দখলে নিয়ে আসেন।

৬. আজাদ উদ-দৌলা : বুয়াইয়া আমিরদের মধ্যে আজাদ- উদ-দৌলা ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ । আজাদ-উদ-দৌলা ক্ষমতা গ্রহণ করলে আব্বাসীয় খলিফা আল মুতি বিল্লাহ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। 

এমতাবস্থায় আমির আজাদ-উদ-দৌলার নির্দেশ পুত্র আবু বকর আব্দুল করিমের আমলে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং আত- তাই বিল্লাহ ভূষিত করে আব্দুল করিমকে সিংহাসনে বসানো হয় ।

আজাদ-উদ-দৌলা বিচক্ষণ শাসক ছিলেন যার ফলে আব্বাসীয়দের সাথে বুয়াইয়াদের সম্পর্ক সুদৃঢ় করলো এবং আব্বাসীয় বন্ধন মজবুত করার জন্য নিজ কন্যাক খলিফার সাথে বিবাহ দেন এবং তিনি খলিফার এক কন্যাক বিবাহ করেন।

→ বুয়াইয়াদের কার্যাবলি নিয়ে বুয়াইয়াদের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :

১. উজির নিয়োগের নিয়ম প্রবর্তন : বুয়াইয়া আমির মুইজ নিয়োগের নিয়ম প্রবর্তন করেন। যদিও আব্বাসীয়রা যদিও তাদের স্বর্ণযুগে পারস্যের অনুকরণে উজির পদের প্রবর্তন করে তবুও আব্বাসীয়দের অনেক খলিফাই উজির ব্যতীত চলতো। আর এ কারণে এ পদের গুরুত্ব কখনো বৃদ্ধি পায় নি। অথচ বুয়াইয়া শাসনে উজির ছিল কেন্দ্র।

২. আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা : বুয়াইয়া শাসক আজাদ-উদ-দৌলা বাগদাদে আমির উল উমরা পদ দখলের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানকার রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হামদানীদের প্রতিহত করে সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখেন ।

৩. নতুন ইকরা ব্যবস্থা প্রবর্তন : আব্বাসীয় পরিবার ও তাদের স্বজনদের সকল ভূ-সম্পত্তি বুয়াইয়া সরকার অধিগ্রহণ করে। তারা নতুন ধরনের ইকতা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সেনাবাহিনীর বেতন বা প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে ভূমি মঞ্জুরি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। বুয়াইদের পতনের আগ পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।

৪. বাগদাদে শিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা : বুয়াইয়া মুইজ উদ- দৌলা শিয়াদের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্ভাবত শিয়া আধিপত্য ধ্বংস করার জন্য আব্বাসীয় খলিফা মুসতাকফি মুইজের বাগদাদে প্রবেশকালে একজন শিয়া নেতাকে কারারুদ্ধ করেন। 

মুইজের নির্দেশে তাকে মুক্ত করা হয়। শিয়াদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুইজ তাদের পছন্দসই আবুল হুসাইন আহমদ বিন আলী আল-কাউকাবিকে নকীব পদ নিয়োগ করুন। এছাড়া তাদের দাবি অনুযায়ী কারবালার হত্যাকাণ্ডের স্মরণে মহররম শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

৫. শিয়া-সুন্নি বিরোধ নিরসনে পদক্ষেপ : আজাদ-উদ-দৌলা শিয়া-সুন্নি বিরোধ নিরসনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । তার উদার ও নিরপেক্ষ নীতির ফলে শিয়া-সুন্নি বিরোধ নিরসন হয়।

৬. জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা : বুয়াইয়া শাসক আজাদ- উদ-দৌলা জ্ঞানবিজ্ঞানের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার উদার পৃষ্ঠপোষকতা বহুকবি সাহিত্যিক বিজ্ঞানী তার রাজদরবার অলঙ্কৃত করেন।

৭. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : আজাদ-উদ-দৌলা রাজত্বকালে বহু জনহিতকর কার্যাবলি শিল্প, শিক্ষাদীক্ষার সম্প্রসারণ এবং মুসলিম কৃষ্টির উৎকর্ষ সাধন করেন। তিনি জনসাধারণের চিকিৎসা সেবার জন্য বাগদাদে সর্বশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল আল বিমারিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। 

এটি নির্মাণ করতে ১ লক্ষ দিনার ব্যয় হয়েছিল। এই হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি জনসাধারণের সুবিধার জন্য বহু খাল খনন ও মসজিদ নির্মাণ করেন।

৮. শামস উদ দৌলাহ্ : বুয়াইয়া শাসক আজাদ-উদ- দৌলার মৃত্যুর পর তদীয়পুত্র ৯৮৩ সালে শামস উদ দৌলা উত্তরাধিকার সূত্রে আমির উল ওমারাহ মনোনীত হন, তিনি সামস উল মিল্লাত বা ধর্মের সূর্য উপাধি গ্রহণ করেন।

৯. শরাফ উদ দৌলাহ : ৯৮৩ সালে শরাফ তার ভ্রাতা সামস উদ দৌলাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে আমির উল উমারা পদ দখল করেন। তিনি জ্ঞানী ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন এবং ৯৮৯

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বুয়াইয়াদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বুয়াইয়া রাজবংশের ইতিহাস আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ