জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর ।

জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

জ্ঞান বিজ্ঞানে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর

  • অথবা, শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আল মামুনের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
  • অথবা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে খলিফা আল মামুনের মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খিলাফতে প্রকৃত অর্থে ইসলামি সভ্যতার উন্মেষ এবং ক্রমবিকাশ হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন ইসলাম তথা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষো উজ্জ্বল ও গৌরবময় যুগ। 

তৎকালীন বিশ্বে আল মামুন ছিলেন মনীষী সম্রাট যার দ্বিধা এবং সংকোচহীন পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম সভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয় এবং এর প্রভাব তদানীন্তন বিশ্বে পরিলক্ষিত হয়।

→ শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আল মামুনের কৃতিত্ব : আব্বাসীয় যুগ ছিল জ্ঞানচর্চার বিকাশ এবং ইসলামকে আন্তর্জাতিকীকরণের যুগ। এই প্রক্রিয়ার অগ্রনায়ক ছিলেন খলিফা আল মামুন। শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে খলিফা আল মামুনের কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :

১. জ্ঞানবিজ্ঞানে মামুনের পৃষ্ঠপোষকতা : তৎকালীন বিশ্বে আল মামুন ছিলেন মনীষী সম্রাট। যার পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম সভ্যতার চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। এর প্রভাব তদানীন্তন বিশ্বে পরিলক্ষিত হয়। 

আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর জ্ঞানচর্চা, বুদ্ধিবৃত্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার যে বীজ বপন করেন তা তার উত্তরসূরি হারুণের প্রযত্নে অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধি পায় এবং পরিশেষে মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় তা সুবৃহৎ মহীরুহে পূর্ণতা লাভ করে। খলিফা আল মামুন নিজে ধর্ম, দর্শন ও আইন শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। 

তাঁর উদার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, আইনবিদ, হাদিস সংগ্রাহক প্রভৃতি মনীষীগণ তাঁর দরবার অলংকৃত করেছিলেন। ইউরোপের নবজাগরণ এবং বর্তমান সভ্যতা তারই সুচিন্তিত ভাবধারা ও দূরদর্শিতার ফল ।

২. সভ্যতার স্বর্ণযুগ : আব্বাসীয় রাজত্বকালকে মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ বলা হয়। আব্বাসীয় খলিফাগণ জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতার চরম উৎকর্ষ সাধিত করে কেবল স্বর্ণযুগের সূচনাই করেননি বরং অবলুপ্ত প্রাচীনমানব সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে তারা বিশ্ব সভ্যতায় অবদান রাখতে সক্ষম হন। 

একারণে হিট্টি তাদের প্রাচীন সভ্যজাতির সংস্কৃতির বাহক এবং উত্তরাধিকারী বলে অভিহিত করেন। আল মামুন বুঝতে পেরেছিলেন যে, চিন্তার বিকাশ ও সাহিত্যের উন্নতিতেই জাতির প্রকৃত সুখি-শান্তি নিহিত। এ ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ও বিস্তারের দিকে গভীরভাবে মন দেন।

৩. জ্ঞান চর্চার দুটি ধারা সৃষ্টি : ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, “আরবদের জ্ঞানচর্চা প্রধানত দুটি ধারায় অনুসৃত হয়। যথা : 

ক) আরব জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত কার্যাবলি। যেমন- ধর্মতত্ত্ব, ব্যবহারিক আইন, ভাষাতত্ত্ব ইতিহাস জ্ঞানাহরণের স্পৃহা প্রভৃতি এবং (খ) অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত কার্যাবলি। যেমন- দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ফলিত জ্যোতিষশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি।

”৪. বায়ুতুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা : বায়তুল, আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ঘর, গৃহ, আলয়, নিকেতন ইত্যাদি। ‘হিকমাহ’ শব্দটিও আরবি। এর অর্থ হলো প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বিদ্যা, গবেষণা ইত্যাদি। অর্থাৎ ‘বায়তুল হিকমাহ' এর অর্থ হলো জ্ঞানাগার, বিদ্যালয়, বিদ্যা নিকেতন, গবেষণাগার ইত্যাদি। মূলত এটা হলো অনুবাদকেন্দ্র । 

জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে খলিফা আল মামুনের সর্বশ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ হলো ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে ‘বায়তুল হিকমাহ’ প্রতিষ্ঠা। এই জগৎ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটিতে তিনটি বিভাগ ছিল . : গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন এবং অনুবাদ ব্যুরো। 

প্রখ্যাত মনীষী হুনাইন- ইবনে-ইসহাক এই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। এখানে পারসিক, হিন্দু, গ্রিক, খ্রিস্টান, আরবীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মনীষী ও পণ্ডিতগণ শিক্ষামূলক গবেষণা, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা, অনুশীলন ও অনুবাদকার্যে নিয়োজিত থাকতেন।

 বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশি রাজ্য থেকে দূত ও প্রতিনিধি মারফত নানা দেশের জ্ঞানভান্ডার সঞ্চিত পুস্তকের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলো অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়। খলিফা অনুবাদ কার্যের উপযুক্ত পারিশ্রামিক দিতেন এবং এ অনুবাদ সাহিত্য মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সংযোজন করে ৷

৫. বিভিন্ন গ্রন্থের অনুবাদ : খলিফা মামুন এথেন্স, আলেকজান্দ্রিয়, সিরিয়া, এশিয়া মাইনর প্রভৃতি স্থান থেকে বহু মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে তা আরবিতে অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার প্রচেষ্টায় গ্যালেন ইউক্লিড টলেমী প্রমুখ মনীষীর বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি এবং প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এরিস্টটল ও প্লেটোর পুস্ত কগুলো আরবিতে অনূদিত হয়। 

খলিফা মামুন লিউকের পুত্র কোসটার গ্রিক, সিরীয় ও ফ্যালডীয় ভাষায় গ্রন্থাবলি; মানকাহ ও দুবান নামক মনীষীদের উপর সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার পুস্তকাবলি এবং ঈশা-বিন-ইয়াহিয়া, মুসা- বিন-খালিদ প্রমুখ পণ্ডিতের উপর পারস্য ভাষায় লিখিত গ্রন্থরাজি আরবিতে অনুবাদের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন ।

৬. মৌলিক গবেষণা : অনুবাদ সাহিত্য ব্যতীত মামুনের রাজত্বকালে মৌলিক গবেষণা দ্বারা মুসলিম মনীষীগণ জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে যেতে সক্ষম হন। 

গ্রিক, পারস্য ও ভারতীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্মীয় অনুভূতির পরিবর্তে | বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি-তর্ক, প্রগাঢ় অনুশীলন দ্বারা মুসলমানগণ অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ফলিত জ্যোতিষশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা, দৰ্শন, ভূগোলশাস্ত্র, রসায়নবিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেন।

৭. শিক্ষার সম্প্রসারণ : খলিফা মামুন একজন প্রখ্যাত কবি এবং উচ্চশিক্ষিত লোক ছিলেন। শিক্ষার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ও আকর্ষণ ছিল। শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তা পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থ ও সম্পত্তি দান করেন। 

তিনি শিক্ষার প্রসারতাকে মানবতার | শান্তির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিশেষ বিশেষ শাখায় উন্নতি ও অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত অধ্যাপকের অধীনে বিশেষ বিশেষ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃত্তির মাধ্যমে গ্রন্থ প্রণয়নকে উৎসাহিত করা হতো।

৮. সাহিত্য ইতিহাস দর্শন : খলিফা মামুনের রাজত্বকালে সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। মৃতপ্রায় ফারসি সাহিত্যও মামুনের উৎসাহ এবং প্রেরণায় নবজীবন লাভ করে। আধুনিক ফারসি কবিতার স্রষ্টা | মার্ভবাসী কবি আব্বাস তাঁর সভাকে অলঙ্কৃত করেন। 

মামুনের সময়ে সাহিত্যচর্চা সীমিত হয়নি; বরং তার দরবারে সাহিত্যিক ও | কবিদের যথেষ্ট সমাদর ছিল। ধর্মভীরু এবং নিবেদিত প্রাণ | সাহিত্যিক আবু-আল আতাহিয়া ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় কবিতা রচনা করেন। ঐতিহাসিক ওয়াকিদী ইসলামের বিজয়কে কেন্দ্র করে একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন ।

৯. ধর্মতত্ত্ব : খলিফা মামুনের রাজত্বকালে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস শাস্ত্র, আইনশাস্ত্র এবং ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতির চর্চা অবিরাম গতিতে চলতে থাকে। কুরআন শরীফের ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা হতেই ব্যাপক ভাষাতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় গবেষণার সূচনা হয়। 

খলিফা নিজেও হাফেজ ছিলেন এবং কুরআনের তাফসীরে তিনি অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেন। একদিকে স্বাধীন চিন্তার পথিকৃৎ হিসেবে তিনি মুতাজিলাকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা দেন। অপরদিকে কুরআন ও হাদিসে তাঁর প্রগাঢ়ভক্তি ও শ্রদ্ধ ছিল।

১০. হাদিস সংগ্রহ ও বুখারী শরীফ : ধর্মতত্ত্ব, ব্যবহারিক আইন, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখে গিয়েছেন। তারা কুরআন এবং হাদিস দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। হাদিস ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়তাই করতো না; বরং তা মুসলিম চিন্তাধারায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

যে ছয়টি গ্রন্থে বহু হাদিস সংগৃহীত হয়ে আছে তার মধ্যে মুহম্মদ-বিন-ইসমাইল আল বুখারীর গ্রন্থই সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য। ইমাম বুখারী (রহ.) এ সময়েই নির্ভুল হাদিসগুলো গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন।

১১. জ্যোতির্বিদ্যা অঙ্কশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র : জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার জন্য খলিফা মামুন একটি মানমন্দির নির্মাণ করেন। আল খাওয়ারিজমী একজন বিখ্যাত অঙ্কশাস্ত্রবিদ ছিলেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। “হিসাবুল-জবর-ওয়াল মুকাবিলা' তার বিখ্যাত গ্রন্থ। মামুনের রজত্বকালে ইউহান্না দাখল-উল-আইন নামক আরবি ভাষায় প্রথম চিকিৎসা শাস্ত্র রচনা করেন ।

১২. ভূগোল, রসায়ন, সংগীতশাস্ত্র : তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ আল-খাওয়ারিজমী ‘যুবাত-আল-আরদ' নামক পৃথিবীর একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন। মামুনের শাসনামলে রাসায়নশাস্ত্রের উপর বহু গ্রন্থ রচিত হয়। তৎকালীন সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীত শাস্ত্রবিশারদ ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম আল-মাউশিলী মামুনের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন ।

১৩. কাগজের কারখানা প্রতিষ্ঠা : শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রধান সহায়ক ছিল কাগজ। চীনাদের অনুকরণে মুসলমানগণ প্রথম চীনাদের সাহায্যে সমরকন্দে কারখানা নির্মাণ করে। খলিফা মামুনের শাসনামলে প্রচুর কাগজ উৎপাদনের ফলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে ।

১৪. কৃষি ও শিল্পের উন্নতি : খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে শিল্প ও কৃষিকার্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কারু ও 'চারু শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। জমি জরিপ, খাল খনন ও পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধিত হয়। 

হিট্টি বলেন, “মহান পিতা এবং পুত্রের রাজত্বকালে পাঁচ শতাব্দীব্যাপী আব্বাসীয় খিলাফতেই নয় বরং সমগ্র আরব খিলাফতের স্বর্ণযুগ বলে অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। আল মামুনের রাজধানী সম্ভবত বাণিজ্য, শিল্পোন্নয়ন এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে গৌরব অর্জন করে যা উর এবং ব্যবিলন থেকে টেসিফোন পর্যন্ত সমৃদ্ধশালী রাজধানীগুলোর যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিল।

” বাগদাদের বিপণীগুলোতে মিসরের লিনেনকাপড়, সিরিয়ার ধাতু নির্মিত তৈজসপত্র, লেবাননের কাচের দ্রব্যাদি বাহরাইনের মুক্তা ইয়েমেনের সুগন্ধী দ্রব্য, পারস্যের কার্পেট, ব্রকেড ও এমব্রয়ডারী করা বস্ত্রাদি খোরাসানের সোনা ও রূপার অলঙ্কারাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত। 

উপরন্তু, বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় রং, ধাতব দ্রব্যাদি, মধ্য এশিয়ার রুবী, ক্রীতদাস-দাসী, বস্ত্রাদি, চীনের মৃৎপাত্রাদি, সিল্ক, মৃগনাভী রাশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধু, ফার, পূর্ব আফ্রিকা থেকে কালো ক্রীতদাস এবং সোনার পাত্র আমদানি করা হতো। এগুলো সাম্রাজ্যের আন্তঃবাণিজ্য এবং বহির্বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতির স্বাক্ষর বহন করে। 

১৫. শিক্ষামূলক আলোচনার বৈঠক : খলিফা মামুনের রাজদরবারে সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে শিক্ষামূলক আলোচনার এক বৈঠক বসতো। এতে বিভিন্ন সাহিত্যিক, দার্শনিক 9 বৈজ্ঞানিক যোগদান করতেন। সবার উপস্থিতিতে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা ও আলোচনা হতো ।

১৬. হারানো ঐতিহ্যের সন্ধান দান : মুসলিম পণ্ডিতগণ শুধু অনুবাদকার্য করেই ক্ষান্ত হননি। তারা তাদের নিজস্ব অবদান সিরিয়া, স্পেন ও সিসিলি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছে দেন। ফলে মধ্যযুগীর অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপীয় জাতিসমূহ তাদের নিজস্ব হারানো ঐশ্বর্য প্রচীন গ্রিসের জ্ঞানবিজ্ঞানের সন্ধান লাভ করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল মামুনের বিশ বছরের রাজত্বকাল মুসলিম বিশ্ব তথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। তাঁর রাজত্বকালেই আব্বাসীয়গণ সভ্যতার চরম শিখরে আরোহণ করে। তাই ঐতিহাসিক আমির আলী বলেন, 

“মামুনের খিলাফত আরব ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ এবং যথার্থভাবেই তাকে বলা হয়েছে ইসলামের অগাস্টান যুগ।" (আরব জাতির ইতিহাস পৃ-১৯৭] এজন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে খলিফা আল মামুনের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আল মামুনের কৃতিত্ব আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে খলিফা আল মামুনের মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ