গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর।

গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর
বলি আলোচগুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যানা কর

গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর ইতিহাসে আব্বাসীয় শাসনামল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনার সৃষ্টিকারী। যে সকল সম্প্রদায় ইসলামের ইতিহাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম গ্রপ্তঘাতক সম্প্রদায়। 

ইতিহাসে নাস্তিকবাদী গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উত্থান একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করে। সেলজুক সুলতান মালিকশাহের শাসনামলে এ ত্রাস সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। 

এই হত্যাকারী গোষ্ঠী নিজামুলমূলকের সহপাঠী হাসান সাবাহ-এর দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তার সংগঠন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রভূত বিস্তারলাভ করতে সক্ষম হয়। 

হাসান বিন সাবাহ রাজ্যজয় করতে না পেরে সে ধ্বংসাত্মক কার্যাবলি পরিচালনা করেছিলেন এতে সুন্নি সম্প্রদায় তাকে জঘন্য (রাফিয়া) বলে আখ্যায়িত করে।

গুপ্তঘাতকদের পরিচয় : হাসান বিন সাবাহের নেতৃত্বে ইসলামি শিয়াদের যে দল ইরান ও সিরিয়াতে গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের সংঘটিত করতো তারাই ইসলামের ইতিহাসে গুপ্তঘাতক নামে পরিচিত। 

১০৯০-৯১ খ্রিস্টাব্দে তারা পারস্যের অন্তর্গত মাজেন্দ্রান গিরিসঙ্কটে অবস্থিত আলামুত দুর্গ অধিকারের মাধ্যমে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। গুপ্তঘাতকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেলজুক সুলতানদের · গুপ্তহত্যার দ্বারা ধ্বংস করা। নিম্নে ও ঘাতক সম্প্রদায়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :

১. হাসান বিন সাবাহের জন্ম ও পাণ্ডিত্য : হাসান-বিন- সাবাহের পুরো নাম ছিল আল হাসান বিন আলী মুহাম্মদ বিন আল হুসারয়ন বিন সাবাহ আল হিমায়বী। কুম অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী সাবাহ খুবই মেধাবী ছিলেন। 

সাত বছর বয়সে বিদ্যা শিক্ষা আরম্ভ করে সতের বছর বয়স পর্যন্ত মাত্র দশ বৎসরে তিনি অঙ্ক, পাটীগণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সাদুবিদ্যায় অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেন।

২. হাসান বিন সাবাহর ইসমাঈলী মতবাদ প্রচার : প্রতিশোধ গ্রহণের সহজপথ হিসেবে ইবনে সাবাহ মুমিন নামক একজন ফাতেমী প্রচারকের নিকট ইসমাঈলী বা ফাতেমী মতবাদ গ্রহণ করেন। 

মুমিন সাবাহর আজার বাইজানের প্রধান ফাতেমী প্রচারক শায়খ আহমদ বিন আব্দুল বিন আততাশের নিকট উপস্থিত করে তার সাথে পরিচয় করেছেন। বিন আততাশের পরামর্শে ইসমাঈলী মতবাদ প্রচার করেন।

৩. নিজামুলমূলক ও সাবাহের মাঝে দ্বন্দ্ব : ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যেন চির ইতিহাস থেকে বয়ে আসছে। তারই ধারাব, কেতায় হাসান বিন সাবাহ এবং নিজামুলমূলকের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আতা মালিক, রশীদ 'আলাদীন, আল দাওয়াবী প্রমুখ উল্লেখ করেন যে, 

প্রথম জীবনে নিজামুল মূলক শেখ সাদী, ইবনে সাবাহ তিনজন সহপাঠী ছিলেন এবং তাদের মাঝে প্রতিশ্রুতি ছিল এই যে, তিনি জীবনে বেশি ভাগ্যবান হবেন তিনি অপর দুইজনকে প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবেন। 

পরবর্তীতে নিজামুলমূলক সেলজুক সুলতান মালিক শাহের প্রধান উজির হয়ে দুই বন্ধুকে প্রাদেশিক প্রশাসক পদ প্রদান করেন। শেখ সাদী দায়িত্বমুক্ত হিসেবে ভাতা প্রাপ্তি সন্তুষ্ট হলেও ইবনে সাবাহ মন্ত্রীত্ব দাবি করার নিজামুলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। 

নিজাম সাবাহকে দরবারে অপমান করলে উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্বের বীজ রোপিত হয়।

৪. ইবনে সাবাহ কর্তৃক গুপ্তঘাতক দল গঠন : ইবনে সাবাহ প্রত্যাবর্তন করে ফাতেমী প্রচারক হিসেবেই প্রমত কার্য শুরু করেন। কিন্তু তিনি নীতি ও পদ্ধতিগত বিষয়ে নতুন কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি আব্বাসীয় খিলাফত ও সেলজুক সুলতানদের ধ্বংস সাধনের জন্য গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় তথা গুপ্তহত্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন । এই উদ্দেশ্য তিনি একটি গুপ্তঘাতক দল নিযুক্ত করেন।

৫. ফিদারীয়দের গঠন প্রণালি : হাসান বিন সাবাহ সৈনিক পেশায় উৎসাহী বার থেকে বিশ বৎসর বয়স্ক যুবকদের ফিদায়ী বাহিনীতে ভর্তি করেন । অতঃপর তাদেরকে সর্বোচ্চ কষ্টসহিষ্ণু করে তোলা হতো। 

তাদের ধর্মমতের গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে তারা কিছু না জানলেও সকল প্রকার অস্ত্রচালনা, ছদ্মবেশ ধারণ, সকল শ্রেণির লোকদের সাথে উঠা বসার যোগ্যতা, প্রাচ্য ও প্রতীচ্য ভাষার জ্ঞান দান, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টানদের ও ধর্ম যাজকদের আচার অনুষ্ঠানে | অভিজ্ঞতা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী করে তোলা হয় ।

৬. হাসান বিন সাবাহর প্রচারকদের শ্রেণিবিভাগ : গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় পরিচালনার ক্ষেত্রে হাসান খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। | মর্যাদা ও দায়িত্বের ভিত্তিতে ইবনে সাবাহ তার প্রচারক দলকে পৃথক ছয়টি ভাগে ভাগ করেন। যথা-

(i) দায়ী আল দোয়াত,

(ii) শায়খ আল জাবাল এর জেলা  প্রতিনিধিদায়ী আল কবীর বা শ্রেষ্ঠ প্রচারক, 

(iii) দায়ী আল কবীরের অধীনস্ত কতকগুলো দায়ী বা সাধারণ প্রচারক,(রা.) দায়ীদের সহযোগিতার জন্য কিছু সংখ্যক রফিক এবং 

(iv) রফিকদের সাথে কিছু সংখ্যক অনুসারী বা লামীক (রা.) শেষে ছিল আত্মউৎসর্গকারী ফেরেস্তা দল । মূলত ফিদারীরাই ছিল প্রকৃত গুপ্তঘাতক দল ।

৭. ইবনে সাবাহর রাজ্য বিজয় : রাজ্য বিজয় এবং বিস্তার ইবনে সাবাহ ছিল অধিক মনোযোগী। আলমুত দুর্গ দখল করে দৃঢ়তার সাথে ইয়াদদ, কিরমান, তাবারিস্তান, দামগান প্রভৃতি অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি এর সাথে সাথে দখল করেন শাহজীদ গীরদ ই-কহ, কিনায়াতুল নাদীর এবং বুর খালাত খান প্রভৃতি দুর্গ।

৮. গুপ্তঘাতকদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড : হাসান বিন সাবাহ ও অন্যান্য শাসক আল জাকরগণ ফিচায়ীদের দ্বারা হত্যা করেছিলেন | পশ্চিম এশিয়ার বহু গণ্যমান রাজপুরুষ মন্ত্রী, পণ্ডিত ও রাজকুমারকে এমনকি কয়েকজন ক্রুসেড রাজাও তাদের হাতে নিহত হয়। 

এভাবে তাদের হাতে নিহত হন সে যুগের শ্রেষ্ঠতম পণ্ডিত মুলি মন্ত্ৰী নিজামুলমূলক। সুলতান বায়কিয়ারুকের মাতার মন্ত্রী আশ্র রহমান আল সুমায়ারী। 

জালাল উদ্দৌলাহ, উলরু বুলকা, নিশাত্রের কাজী আবুল আলা সায়ীদ, নিজামুলমূলকের ফাখরুল মূলক, মাউদুদ, বাগদাদের আহ্বান বিন ওয়াহসুদান ফাতেমী খলিফা আর আমির বি আমাবিলাহ, আব্বাসীয় খালিফা মুআতারিশা এবং সুলতান সমজারের অভিপ্রিয় সভসদ জাওহার ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলতে পারি, হাসান বিন সাবাহর সৃষ্ট ফিদায়াদের লুটতরাজ, লুণ্ঠন ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নজির পৃথিবীতে কমই আছে। বৈশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ কার্যাবলি পরবর্তীকালে মারাত্মক প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছিল। 

যা হোক তারাও রেহায় পায়নি। হালাকু খানের চাবুক তাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে নিদারুনভাবে। মূলত হাসান বিন সাবাহর কর্তৃক গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় ইসলামের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম অধ্যায় সৃষ্টিকারী। যার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে এই সম্প্রদায়ের আঘাতে মৃত্যুর কোলে ধাবিত হতে হয়েছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় কারা । সেলজুক সুলতান মালিকের গুপ্তঘাতকদের কার্যাবলি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ