ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস ব্যাখ্যা কর।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস আলোচনা কর
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস আলোচনা কর

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয়দের তৃতীয় খলিফা মাহদী কর্তৃক আফ্রিকার দখলকৃত সমস্ত অঞ্চলে আব্বাসীয়দের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। আব্দুল্লাহ ছিলেন ইমাম হাসানের পৌত্র খলিফা আলীর প্রপৌত্র মুহাম্মদ, ইব্রাহীম, ইদ্রিস নামে তিন পুত্র ছিল। 

খলিফা আলীর প্রপৌত্র মুহাম্মদ ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় আব্বাসীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাকে হত্যা করা হয়। অনুরূপভাবে ইব্রাহিম বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাকেও কুফার নিকট হত্যা করা হয়। 

অপর দিকে ইদ্রিস রশিদ নামক একজনকে সাথে নিয়ে মিশরে পলায়ন করেন এবং সেখান থেকে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে গিয়ে | বার্বারদের সহায়তায় একটি ক্ষুদ্র রাজবংশ প্রতিষ্ঠান করেন যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ নামে পরিচিত

প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয়দের পরিচয় : আব্বাসীয় খলিফা হাদীর আমলে (৭৮৫-৭৮৬) খ্রি. মদিনার গর্ভনর মদ্যপানের মিথ্যা অভিযোগে বনু হাসানের কিছু লোকের প্রতি দুর্ব্যবহার করেছিলেন। 

এর ফলে প্রথম হাসানের প্রপৌত্র বা হজরত আলী (রা.) পঞ্চম অধস্তন পুরুষ হোসাইনের নেতৃত্ব এক বিদ্রোহ সংগঠিত হয় যাতে এই পরিবার এবং অন্যান্য পরিবারের বহুলোক অত্যাচারের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। 

এর ফলে আলী বংশীয়দের মদিনায় তথা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই তারা মরক্কো পলায়ন করেন এবং সেখানে এসে বিখ্যাত শিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন এর নামানুসারে ইদ্রিসীয় -বংশ নামকরণ করা হয় ।

ইদ্রিসীয়দের রাজধানী : মরক্কোর ফাস বা ফেজ নগরে ইদ্রিসীয় বংশের রাজধানী স্থাপন করা হয়। এখান থেকে তারা মৌরিতানিয়া, পশ্চিম সাহারা, আলজেরিয়ার কিছু অংশ এবং সেই সাথে আটলান্টিক মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপ তারা শাসন করেন।

বার্বারদের সমর্থন লাভ : উত্তর আফ্রিকার দুর্ধর্ষ ও রণকৌশলী জাতি হচ্ছে বার্বার। এই বার্বারদের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয় ইদ্রিসীয় রাজবংশ ।

ইদ্রিসীয় রাজবংশের শাসন কাল : ইদ্রিসীয় রাজবংশ মরক্কোতে ৭৮৮ থেকে ৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুইশত বছর শাসন করেন কৃতিত্বের সাথে ।

ইদ্রিসীয়দের রাজ্য বিস্তার : ইদ্রিসীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পর তারা সাম্রাজ্য বিস্তারে দিকে মনোনিবেশ করেন। তারা আলজেরিয়ার টলিমসন আক্রমণ করেন, যার প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন খাজার। এরপর উত্তর মরক্কো এবং আলজেরিয়ার কিছু অংশসহ বেশ কিছু অঞ্চল তারা জয় করেন।

→ প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস : নিম্নে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় রাজবংশের ইতিহাস আলোচনা করা হলো :

১. ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ : ইদ্রিসীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ (প্রথম ইদ্রিস)। আব্বাসীয় খলিফার হতে তাঁর দুই ভ্রাতা নিহত হওয়ার পর মৌরিতানিয়ায় পলায়ন করেন এবং সেখানকার বার্বার গোত্রের লোকেরা তাকে সর্দার বা ইমাম বলে গ্রহণ করেন। 

তাই তিনি এই সুযোগ গ্রহণ করে উত্তর আফ্রিকায় একটি রাজবংশ স্থাপন করেন যা প্রায় দুইশত বছর টিকে ছিল। তার রাজধানী ছিল ফেজ নগরী। সেই সাথে তিনি এই নগরীকে সংস্কৃতি ও শিক্ষাদীক্ষায় অন্যতম নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ।

২. ইদ্রিস বিন ইদ্রিস : ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর ৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ইদ্রিস বিন ইদ্রিস তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন । প্রথম ইদ্রিসের বিশ্বস্ত সাথী রশিদ রাজ প্রতিনিধি হিসেবে সাম্রাজ্যের সকল বিষয় দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতেন। 

ইসহাক ও রশিদের মধ্যে ইদ্রিসী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে ইসহাক রশিদকে হত্যা করেন। ইদ্রিসীয় বংশের রাজ প্রতিনিধি দায়িত্ব গ্রহণ করেন । অপর দিকে ৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। 

ক্ষমতায় এসেই তিনি (ইদ্রিস) ইসহাককে হত্যা করেন এই সময় আঘলাবীয় রাজবংশে টেলিমসন দখল করেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস (৭৯১-৮২৮) | খ্রিস্টাব্দে মোট ৩৭ বছর শাসন করেন।

৩. মুহাম্মদ : দ্বিতীয় ইদ্রিসের ৮২৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হলে ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ২১৩ হিজরিতে তার সুযোগ্য পুত্র মুহাম্মদ শাসন ভার গ্রহণ করেন। তিনি শাসন ভার গ্রহণ করেই প্রাদেশিক শাসনকার্যের সকল ভার তার পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে দেন। 

যার ফলে তার সকল ভ্রাতা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন একজন ব্যতীত এবং শেষ পর্যন্ত তারা সকলেই তার আনুগত্য স্বীকার করেন।

৪. আলী (৮৩৩-৫৬) : ২২১ হিজরিতে মুহাম্মদ-এর মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র আলী মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আলী উত্তরাধিকারী সকলে আনুগত্য প্রকাশ করেন তার প্রতি । যার জন্য ঐতিহাসিকগণ তাঁর শাসনকালকে সমৃদ্ধশালী শাসনকাল বলে মন্তব্য করেছিলেন।

৫. ইয়াহিয়া : ৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলীর মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা ইয়াহিয়া বিন মুহাম্মদ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর সময় সাম্রাজ্য বিস্তার সহ রাজ্যের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তিনি ফেজ নগরী অর্থাৎ তাঁর রাজধানীকে তিনি সম্প্রসারিত ও সুশোভিত করেন যার জন্য চতুর্দিক থেকে লোকজন এসে সেখানে বসবাস শুরু করেন।

৬. দ্বিতীয় ইয়াহিয়া : প্রথম ইয়াহিয়ার মৃত্যুর পর ২৬৪ হিজরিতে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ইয়াহিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তাঁর এই অত্যাচারের ফলে রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি রাজ্য হতে বিতাড়িত হয়ে স্পেনে পালিয়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয় ।

৭. তৃতীয় ইয়াহিয়া : ইয়াহিয়ার পলায়নের পর ফেজের জনসাধারণ ইয়াহিয়া বিন কাশিমকে তাদের ইমাম ও খলিফা বলে ঘোষণা করেন। তৃতীয় ইয়াহিয়া ছিলেন একাধারে পণ্ডিত, আইনজ্ঞ এবং হাদিস বিশারদ। 

কিছুকাল পর্যন্ত তিনি পূর্ববর্তী  ইদ্রিসি রাজ্যের সমগ্র অঞ্চল নিজের কর্তৃত্বাধীনে রাখতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে তাঁর পতনের পর ইদ্রিসী রাজ্যের পতন হয় বা শিয়া রাজবংশের পতন হয় ।

অবদান : তাদের যে সকল ক্ষেত্রে অবদান ছিল তা হলো : 

১. জ্ঞানবিজ্ঞান ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট অবদান রেখেছেন । 

২. তাদের রাজ্যে বিভিন্ন রাজ্যের রাষ্ট্রদূতের আগমন ঘটতো। 

৩. স্থাপত্য ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল, ফেজ নগরীতে তারা সুন্দর সুন্দর দালান-কোঠা নির্মাণ করেন।

৪. সাম্রাজ্যকে তারা সুখী ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উত্তর আফ্রিকায় আলী বংশীয় ইদ্রিসীয় বংশ এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শিয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ নামে পরিচিত। এই রাজবংশ প্রায় দুইশত বছর শাসনের পর নিজেদের মধ্যে অন্তকলহ মিশরের ফাতেমীয়দের ও স্পেনের উমাইয়াদের চাপে পতন হয় সেই সাথে প্রথম শিয়া রাজবংশের পতন ঘটে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস ব্যাখ্যা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শিয়া রাজবংশ হিসেবে ইদ্রিসীয় বংশের ইতিহাস ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ