আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।

আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর
আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর

আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে পশ্চিমাঞ্চলে যে কয়টি ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব হয় তার মধ্যে আঘলাবী রাজবংশ ছিল অন্যতম। উত্তর আফ্রিকায় ইদ্রিসীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে আব্বাসীয় আধিপত্য খর্ব হয় এবং আফ্রিকায় গোলযোগ বেড়ে যায়। 

এ পরিস্থিতি নিবারণ করার জন্য আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশীদ প্রখ্যাত সেনাধ্যক্ষ হারসামাকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন আফ্রিকায় প্রেরণ করেন। হারসামা দক্ষতার সাথে তিন বছর আফ্রিকা শাসন করেন। 

কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ অপচয় নিবারণের উদ্দেশ্যে ইব্রাহীম আঘলাবী বার্ষিক ৪০০০০ দীনার প্রদানের অঙ্গীকারে হারুনের নিকট বংশানুক্রমে আফ্রিকার শাসনকর্তার পদ প্রার্থনা করে। হারসামার পরামর্শে হারুন ইব্রাহীমের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। তখন থেকে আফ্রিকা একটি স্বাধীন প্রদেশে পরিণত হয় এবং আঘলাবীগণ এখানে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন ।

আঘলাবীয়দের পরিচয় : আঘলাবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহিম বিন আঘলাবী। তাঁর পিতার নাম আল আঘলাবী বিন সেলিম। তিনি ছিলেন আব্বাসীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। পরবর্তীতে ৭৬৫-৭৬৮ সাল পর্যন্ত কায়রোয়ানের গভর্নর ছিলেন। 

একটি বিচ্ছিন্ন সেনা গ্রুপের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি মারা যান। তাঁর উত্তরসূরি দক্ষিণ আলজেরিয়ার জাব অঞ্চলের শাসনকর্তা ইব্রাহিম বিন আঘলাব ৮০০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর- রশীদের নিকট থেকে উত্তর আফ্রিকার স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের মাধ্যমে আঘলাবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।

→ আঘলাবী বংশের উত্থান : নিয়ে আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. ইব্রাহিম বিন আঘলাবী : আরব গোত্রের সদস্য ছিলেন ইব্রাহিম বিন আঘলাবী। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আলজেরিয়ার জাব অঞ্চলের শাসনকর্তা। জাব অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করে হারুন অর-রশীদ এর প্রতিভাজন হন। আঘলাবী ছিল তার পারিবারিক পদবি যার জন্য তাঁর উত্তরসুরীগণ আঘলাবী নামে পরিচিত।

এই সময়ে মরক্কোয় স্বাধীন ইদ্রিসীয় বংশ আব্বাসীয় বংশের সার্বভৌমত্বের হুমকিস্বরূপ টিকে ছিল। যার ফলে উত্তর আফ্রিকা একটি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়। তাই এই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন পড়ে। 

তাই মরক্কোর ইদ্রিসীয় বংশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও লড়াইয়ের স্বার্থে আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশীদ ৭৯৭ সালে ইব্রাহীমকে স্বাধীনতা প্রদানপূর্বক ইফ্রিকিয়ার অধীন গভর্নর নিযুক্ত করেন। ৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে কায়রোয়ানের বিদ্রোহ দমন করেন। এর পর থেকে তিনি আঘলাবী শাসক হিসেবে স্থায়ীভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন ।

২. আব্দুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম : ইব্রাহীম বিন আঘলাবীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম আঘলাবী বংশের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হন। উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়ে তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং অধিকৃত অঞ্চল পুনরায় নিজ দখলে আনতে সক্ষম হন। 

তাঁর শাসনকালে সর্বত্র সুখ-শান্তি বিরাজমান ছিল। তাঁর পাঁচ বছরের রাজত্বকালে কোনো প্রকার বিদ্রোহ, গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা ছিল না। শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তিনি জনগণের কাছ থেকে অর্থের মাধ্যমে কর নিতেন।

৩. জিয়াদাতুল্লাহ : ইব্রাহীম বিন আঘলাবীর আর এক পুত্র ছিল জিয়াদাতুল্লাহ। তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহর ভ্রাতা। জিয়াদাতুল- াহ যথেষ্ট প্রতিভাবান হলেও রুক্ষ, বেপরোয়া ও বদমেজাজী স্বভাবের জন্য শাহী বাহিনীর নিকট অপ্রিয় ছিলেন। 

যার জন্য তার শাসনামল বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ ছিল। ৮২৩ সালে জিয়াদ বিন সোহেলের নেতৃত্বে বিদ্রোহী সৈন্যরা বাযা দখল করে কিন্তু আঘলাবীয়দের সাথে যুদ্ধে তারা পরাজিত হন এবং জিয়াদ নিহত হন। ৮২৪ সালে মনসুর তিরমিযির নেতৃত্বে অপর একটি বিদ্রোহ দেখা দেয়। 

তারা আঘলাবী প্রতিনিধিকে হত্যা করে তিউনিস দখল করে। আঘলাবীয় সৈন্যদের পরাজিত করে তারা আল কায়রোয়ান নিজেদের অধিকার নিয়ে আসেন। চল্লিশ দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর জিয়াদাতুল্লাহ তাদেরকে কায়রোয়ান থেকে বিতাড়িত করেন। 

ইতোমধ্যে আমির বিন নাফের আর্জাকের নেতৃত্বে একদল বিদ্রোহী আঘলাবীয়দেরকে পরাজিত করে এবং পরে মনসুরকে হত্যা করে তিউনিস দখল করে । তাদের সাথে পরাজয়ের ফলে আঘলাবীয়রা কায়রোয়ান ও আব্বাসিয়াতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। 

সৌভাগ্যক্রমে কিছুদিন পর | আমিরের মৃত্যু ঘটলে জিয়াদাতুল্লাহ বিদ্রোহীদের কাছ থেকে তিউনিস পুনরুদ্ধার করেন। সিসিলির একাংশসহ তার সাম্রাজ্য মিশর থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

৪. আবু ইকাল আঘলাব : জিয়াদাতুল্লাহর পর আবু ইকাল আঘলাব ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন জিয়াদাতুল্লাহর | ভ্রাতা। তিনি জিয়াদাতুল্লাহ কর্তৃক উত্তরাধিকারী মনোনীত হন। তার রাজত্বকালে কোনো প্রকার বিদ্রোহ, গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা | ছিল না। তার শাসনকালে মানুষ সুখে-শান্তিতে বাস করতো।

৫. আবুল আব্বাস মুহাম্মদ : আৰু ইকাল আঘলাবের পর তার পুত্র আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি পিতা কর্তৃক শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। ক্ষমতায় আরোহণ করে তিনি রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তিনি ৮৪৪ সালে সিসিলি এবং ৮৪৭ সালে ল্যান্টাইন শহর দখল করেন। তিনি ৮৪৮ সালে নৌবহর নিয়ে রোম লুন্ঠন করেন। 

তিনি পরবর্তীতে দুই বছর ধরে কাতানা, কালেটাভুটোরো, নাটাস, সাইকারাকাস, আরবা এবং ফেসটেনিউডা জয় করেন। ৮৫৯ সালে আঘলাবীয় সেনাবাহিনী মাল্টা দ্বীপ দখল করেন। শেষ সময় তা সুখের হয়নি। ৮৬০ সালে তিনি তার ভাই আবু জাফর কর্তৃক পদচ্যুত হন এবং ৮৬১ সালে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

৬. ইব্রাহিম আহমদ : আবুল আব্বাসের পর তাঁর পুত্র ইব্রাহীম আহমেদ ক্ষমতায় বসেন কিন্তু তিনি এক বছর রাজত্ব করার পর ৮৬২ সালে ইন্তেকাল করেন।

৭. জিয়াদাতুল্লাহ দ্বিতীয় : ইব্রাহিম আহমদ এরপর তার ভাই দ্বিতীয় জিয়াদাতুলাহ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি এক বছরের কম সময় ক্ষমতায় টিকে থাকেন ।

৮. আবু খরানিক : দ্বিতীয় জিয়াদাতুল্লাহ-এর মৃত্যুর পর তাঁর ভাই আবু খরানিক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন বাইজান্টাইন সিসিলির কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করে। তখন তা মুসলমানের শাসনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

তিনি বাইজান্টাইনদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চলে সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ করেন। ১১ বছর শাসন করার পর তিনি মারা যায় ।

৯. দ্বিতীয় আবুল আব্বাস : আবু খরানিকের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় আবুল আব্বাস ক্ষমতায় বসেন। আবুল আব্বাসের সময় ফাতেমীয়রা আঘলাবীদের ভীতি প্রদর্শন করে। প্রথমবার ফাতেমীয়রা পরাজিত হয় 

কিন্তু দ্বিতীয়বার আঘলাবীরা চরমভাবে পরাজিত হয়। যা আঘলাবী বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবুল আব্বাস ঘুমন্ত অবস্থায় গুপ্তঘাতক কর্তৃক ৯০৩ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন।

১০. আবু মুজার : পিতার মৃত্যুর পর আবু মুজার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনি তার সব দাসদাসীদের প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন। যারা তার পিতার হত্যার সাথে জড়িত ছিল । পরবর্তীতে তিনি ফাতেমীয়দের দ্বারা পরাজিত হন। এভাবে আঘলাবী বংশের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এক শতাব্দীর অধিককাল আঘলাবী শাসকগণ ৮০০-৯০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় খিলাফতের নামে রাজ্য শাসন করলেও তারা কেন্দ্রীয় খলিফাদের হস্তক্ষেপ ব্যতীত শাসন কার্য পরিচালনা করেন। এই বংশের কয়েকজন্য/শাসক দক্ষতার সাথে শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন বলে এক শতাব্দী পর্যন্ত তারা টিকে ছিলেন ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আঘলাবী বংশের উত্থান সম্পর্কে বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ