হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর ।

হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর
হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর

হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর উত্থান-পতনের খেলায় প্রতিটি জীব, প্রাণী, সমাজ, সংস্কৃতি সভ্যতা একটি অপরটির সাথে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উত্থান-বিকাশ এ পতন ও তিনটি প্রকৃতির নিয়ম ব্যক্তির জীবনে এটি যেমন সত্য, সাম্রাজ্য ও সভ্যতার ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। এ নিয়মের কালে বহনকারী জনপদ বিলীন হয়েগেছে কালের অতল গহ্বরে। 

কিন্তু ১২৫৮ সালের হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ নগরী ধ্বংস বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক ঘটনা। যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। হালাকু খান শুধু একটি নগরীকেই ধ্বংস করেনি এর সাথে এক পুরোনো সভ্যতা সংস্কৃতি এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগকে ধ্বংস করেছিল।

→ বাগদাদ ধ্বংসের ফলাফলসমূহ : আমরা বাগদাদ নগরীর ধ্বংসের ফলাফলকে দু'ভাগে ভাগ করতে পারি-

১. পরোক্ষ ফলাফল ও 

২. প্রত্যক্ষ ফলাফল।

→ পরোক্ষ ফলাফল : নিম্নে পরোক্ষ ফলাফল তুলে ধরা হলো :

১. নতুন নতুন সাম্রাজ্যের জন্ম : আব্দুল শাকুর-এর মতে, এ বিভীষিকাময় ধ্বংস যাই হোক শোচনীয় পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারেনি। এ সভ্যতার আবার পুনঃবিকাশ ঘটে এবং পরবর্তী আড়াই শতকের মধ্যে এটি বিশ্বের তিনটি বৃহত্তর সাম্রাজ্যের জন্মদান করে ।

২. দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও দূর প্রাচ্যের সভ্যতার মিলন : ঐতিহাসিক বার্নার্ড লুইসের মতে, মোঙ্গল বিজয় তাদের অধীনস্ত দূরপ্রাচ্য অর্থাৎ চীনের এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের সভ্যতাকে একত্রিত করে। যারা পূর্বে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বাধার দ্বারা পৃথক হয়ে পড়েছিল।

৩. কায়রোকেন্দ্রিক সভ্যতার উত্থান : ঐতিহাসিক জোসেফ এর মতে, বাগদাদ ধ্বংসের পর নীল নদ টাইগ্রিসের এবং কায়রোর বাগদাদের রূপ পরিগ্রহ করে। তখন থেকে কায়রো ইসলামি কৃষ্টির লীলাভূমিতে পরিণত হয়। 

মিসরে পাশ্চাত্য মুসলিম এবং প্রাচ্য দেশীয় খ্রিস্টানদের মধ্যে সংযোগ সূত্র স্থাপিত হয় এবং কৃষ্টি ও ভাবের আদান-প্রদান শুরু হয় ।

৪. প্রশাসনিক প্রতিভার বিকাশ : ১২৫৮ থেকে ১২৬০ সালের মধ্যে মোঙ্গল আক্রমণ বিভীষিকার সৃষ্টি করলেও তাদের পুর্বসূরি সেলজুকদের মতো তারা পারসিক শাসনতান্ত্রিক প্রতিভা সম্বন্ধে সম্যক অবগত হয়ে তা কাজে লাগাতে আরম্ভ করে এবং আলাউদ্দীন সুবাইনী, রশীদ উদ্দীন প্রমুখ পণ্ডিতবর্গ দ্বারা তাদের রাজদরবার অলংকৃত হতে থাকে ।

৫. ইসলামের স্বার্থে সেবা : হালাকু খানের আক্রমণে সুন্নি ইসলামি এক সময় নিঃস্ব হওয়ার উপক্রমে হলেও পরবর্তী ১২৯৫ সালে ইলখানি শাসক গাজান খান মাহমুদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা দান করেন। 

তাই পি.কে হিট্রি বলেন, মুহাম্মদ (সা.) এর ধর্মের পক্ষে এটি একটি অত্যুজ্জ্বল বিজয় ঘটে, যে এটি সেলজুকদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।

৬. তুর্কী জাতির উত্থান : জোসেফ হেল এর মতে, বাগদাদ ধ্বংসের ফলে শিয়া-সুন্নি, মালিকী – হাম্বলী, আরব পারসিক দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এর ফলে সুযোগ বুঝে তুর্কী জাতি ক্রমে ক্রমে নেতৃত্বের অবস্থান উন্নীত হয়।

→ প্রত্যক্ষ ফলাফল : নিম্নে বাগদাদ আক্রমণের প্রত্যক্ষ ফলাফল বর্ণনা করা হলো :

১. আব্বাসীয় বংশের বিলুপ্তি : হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ, পাঁচশত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী আব্বাসীয় বংশের চির বিলুপ্তি ঘটে এবং বাগদাদ মোঙ্গল শাসিত পারস্যের ইলখানি সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।

২. খলিফা শূন্য মুসলিম জাহান : বাগদাদ ধ্বংসের ফলে ইসলামি রাজনীতিতে বিরাট শূন্যতা সূচিত হয়। কিছু কালের জন্য মুসলিম জাহান খলিফা শূন্য থেকে যায়। তাই পি.কে. হিট্টি বলেন, ইতিহাসে এই প্রথম মুসলিম দুনিয়ায় কোনো খলিফা রইলো না যার নামে শুক্রবারে খুৎবা পাঠ করা হয় ।

৩. মুন্নিদের বিপর্যয় : আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের ফলে সুন্নি ইসলাম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় এবং সুন্নি মুসলমানরা ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে। খলিফা মুসতাসিমের বিদ্রোহী শিয়া মন্ত্রী মুয়হিদউদ্দিন এক্ষণে সুন্নি সম্প্রদায়কে উৎখাতে আত্মনিয়াগ করেন।

৪. লুণ্ঠন : মোঙ্গলদের লুণ্টন, হত্যা ও মানবতার অবমাননার ফলে বাগদাদ নগরী একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। প্রাসাদ, মসজিদ, | সমাধি সৌধ ও ঘরবাড়ি ধুলিসাৎ হওয়ায় বাগদাদের উপর এক করুণ ছায়া নেমে আসে।

৫. ধ্বংসযজ্ঞ হত্যা : ইবনে খালদুনের মতে, বাগদাদ ধ্বংসের পূর্বে এর লোকসংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। কিন্তু হালাকুর ছয় সপ্তাহের ধ্বংসযজ্ঞ ১৬ লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। তারখি আল কাসিমের মতে, এ হত্যাযজ্ঞ ৩৪ দিন চলে এবং ১৮ লক্ষ লোককে তরবারি দ্বারা হত্যা করা হয়।

৬. নারী নির্যাতন : নৃশংস মোঙ্গলদের হাত থেকে বাগদাদের অন্তঃপুরী রমণী ও শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। স্ত্রী লোক ও শিশুগণ মোঙ্গল আক্রমণের প্রচণ্ডতায় হতবুদ্ধি হয়ে তাদের একমাত্র ভরসাস্থল পবিত্র কুরআন শরীফ হাতে মোঙ্গলদের করুণা প্রার্থনা করলেও তাদের হত্যা করা হয়।

৭. কৃষ্টি সভ্যতার বিনাশ : ঐতিহাসিক আমির বলেন, শিক্ষা গৃহের সভ্যতার ক্ষেত্রে এবং সারাক্ষণ জগতের চক্ষু ও কেন্দ্রভূমি বাগদাদ চিরতরে ধ্বংস প্রাপ্ত হলো। যে বিপ্লব পৃথিবীকে অভিভূত করেছে তা জ্ঞান ও জ্ঞানীদেরকে ধ্বংস করেছে। 

বিশেষ করে যে খোরাসান জ্ঞানলোকের কেন্দ্র ও বিজ্ঞ এবং জাহান কুশার লেখক জুয়াইনী বলেন, বিদ্বজ্জলের সমাগমন স্থানেই এরূপ দুর্ঘটনার ঘটেছে। পণ্ডিতবর্গ তরবারির আঘাতে নিদন প্রাপ্ত হলো। হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংস কৃষ্টি ও সভ্যতার উপর এত বেশি আঘাত হানে যে ব্যষ্টন বলেন এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা ।

৮. শিক্ষা সংস্কৃতির বিলোপ : শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল বাগদাদ আব্বাসীয় খলিফাদের গৌরবের বস্তু বাগদাদ, মুসলিম সভ্যতার ধারক বাগদাদ, বর্তমান ইউরোপীয় রেনেসাঁর জনক বাগদাদ মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ধরাতল থেকে বিলুপ্ত হলো। 

মহামূল্য গ্রন্থরাজিকে কোথায় অগ্নির লেলিহান শিখায়, কোথায়ও টাইগ্রিসের জলধারায় নিক্ষেপ করা হলো। যে নদীর রূপময় শোভা দর্শনে বাগদাদবাসীর প্রাণজুড়াতো সে নদীর স্রোতের রক্ত মিশিয়ে তাতারগণ বিরাট উল্লাস করলো।

৯. ইসলাম ধর্মের বিজয় : মুসলমানদের অস্ত্রশস্ত্র সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল, সেখানে তাদের ধর্ম বিজয় লাভে সমর্থ হয়েছিল। ইসলামি সভ্যতা, কৃষ্টি ধ্বংসের সাধনে হালাকু খানের নির্দয় ধ্বংসলীলার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের কম সময়ের মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে তার পৌত্র গাজান খান একই কৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত করতে মনস্থ, সময় ও উদ্যম উৎসর্গ করেছিলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংস বর্ণনাতীত। তাই ঐতিহাসিক আমির আলী বলেন, বাগদাদ ধ্বংসের কাহিনি বর্ণনা করতে গিবনের মতো শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকদের প্রয়োজন। তবে মঙ্গল বিজয়ের প্রথম ধাপ বিভীষিকা সৃষ্টি করলেও অতি শীঘ্রই মোঙ্গলরা তাদের ভুল বুঝতে পারে। 

পরবর্তী সময়ে তারা সুশাসনের দিকে আত্মনিয়োগ করে এবং কৃষ্টি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে যে ক্ষতি সাধিত হয় তা পূরণ করতে মনোনিবেশ করে। এক্ষেত্রে তারা বহুলাংশে সফল হয়েছিল। সত্যই বাগদাদ ধ্বংসের ফলাফল ছিল ইতিহাসের এক চরম লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা।          

আর্টিকেলের শেষকথাঃ হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ