নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নারীবাদের সংজ্ঞা দাও। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।

নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর
নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর

 নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর

  • অথবা, নারীবাদের সংজ্ঞা দাও। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
  • অথবা, নারীবাদ বলতে কী বোঝ? নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তর : ভূমিকা : সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজকে নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে হয়। আর এ সকল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন একদল মানবহিতৈষী ব্যক্তি। তেমনি সময়ের বিবর্তনের সমাজে নারী অধস্তনতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদেরকে নারীবাদী এবং তাদের নারী সম্পর্কিত সুচিন্তিত মতামতকে বলা নারীবাদ ।

“ নারীবাদ শব্দের উৎপত্তি : নারীবাদী শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Feminism যা ফরাসি শব্দ Femme থেকে এসেছে। যার অর্থ নারী। শব্দটির সাথে ISM যুক্ত হলে তা Feminism বা নারীবাদ হিসেবে পরিচিত হয়। নারীবাদ 'নারীবাদ' শব্দটি বিভিন্ন সময় ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। 

ফলে নারীবাদের সর্বজনীন স্বীকৃত সংজ্ঞায়ন খুঁজে পাওয়া যায় না। উনিশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফরাসি সমাজতন্ত্রী চার্লস ফুরিয়ের (Charley Fourier) Feminism শব্দটি আবিষ্কার করলেও ১৮৮০ দশকে 'French Women's Suffrege Society'-এর প্রতিষ্ঠাতা হুবারটিন অকলাটি নারীবাদ শব্দটি ব্যবহার করেন। 

তবে উনিশ শতাব্দীর শেষার্ধে ইউরোপ ও আমেরিকাতে Feminism শব্দটির ব্যবহৃত হতে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে এসে 'নারীবাদ' শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার ও সংজ্ঞায়ন করা হয়। 

প্রচলিত অর্থে 'নারীবাদ' হচ্ছে এমন একটি 'তত্ত্ব' যার দ্বারা নারী সমাজের ওপর পুরুষের আধিপত্য, নিপীড়ন ও এর কারণ ফলাফল এবং নারী মুক্তির কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।

Rosalind Delmat বলেন, “সাধারণভাবে নারীবাদ হলো 'সমাজে নারী অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সজিনা আগ্রহ।” সিডো বিশেষজ্ঞ সালমা খানের মতে, “নারীবাদ মূলত পুরুষ ও নারীর সমন্বয়ে একটি ন্যায়বিচার ভিত্তিক সুষম ও উন্নত সমাজ সৃষ্টির প্রক্রিয়া মাত্র।

" Christina Hoff Sommers বলেন, “নারীবাদ হলো নারীর জন্য উদ্বেগ ও নারীর প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ প্রত্যক্ষ করার দৃঢ়সংকল্প।” Anthony গিভেন্স বলেন, “Feminism is the streeggle to defend and expands the rights of women." 

সাসকিয়া উইরিঙ্গা বলেন, “নারীবাদ হচ্ছে একটি বিধ্বংসী প্রক্রিয়া, যা নারী সম্বন্ধে প্রচলিত ধারণা পাল্টে নিয়ে এর নতুন অর্থ খুঁজে বের করে, জেন্ডার সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে বর্জন করে, ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিকভাবে নারীত্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে।

" সুতরাং নারীবাদ হলো এমন এক মতবাদ যা নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক ও আইনগত অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা বিধান এবং সুষম সমাজ গঠনের কথা বলে।

→ নারীবাদের উদ্দেশ্যসমূহ: নারীবাদী ধারণা নারীর ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও তার থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত মতামতের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। নারীবাদ একটি সামাজিক আন্দোলন যার উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে- 

১. নারীর চিরাচরিত ভূমিকা ও ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটানো : নারীরা সমাজে এখন আর অবহেলিত বা নিগৃহীত নয়। কেননা সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে নারী তার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে এগিয়ে আসছে। নারী ও রাজনীতি নারীর ভূমিকা ও ভাবমূর্তির পরিবর্তনের লক্ষ্যে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। নারীবাদীরা এ উদ্দেশ্য অর্জনে কাজ করে।

২. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : প্রত্যেক নারীকে তার বয়স, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী জীবিকা অর্জন তথ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নারীবাদ ও রাজনীতি ভূমিকা রাখে।

৩. সহিংসতা ও যৌনতার ঘেরাটোপ হতে নারীকে মুক্ত করা : আদিমকাল থেকে নারীকে যৌনতার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাছাড়া কারণে অকারণে তাদের উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। নারীবাদের উদ্দেশ্য হলো যৌনতার ঘেরাটোপ হতে নারীকে মুক্তি দান ও নারীর প্রতি যাবতীয় সহিংসতার অবসান ঘটানো।

৪. নারীর ন্যায্য অধিকার অর্জনে সহায়তা করা : নারী তার যোগ্যতা ও সামর্থ্যানুযায়ী যাতে পরিবার ও সমাজে ন্যায্য অধিকার অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা নারী ও রাজনীতির উদ্দেশ্য। তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ন্যায় সমান অধিকার অর্জনে নারীকে সহায়তা করাও নারীবাদের উদ্দেশ্য।

৫. সুসম সমাজ প্রতিষ্ঠা : নারীবাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সমতা ও মর্যাদাভিত্তিক সুসম সমাজ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

৬. সহযোগিতা ও সহমর্মিতা : অধিকাংশ নারীবাদী নারী-পুরুষের প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার কথা বলেছেন। যে প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকেই কেবল নিজের জন্য নিবেদিত, ইসলাম সেরূপ প্রতিযোগিতা অনুমোদন করে না, বরং শয়তান এরূপ প্রতিযোগিতার ইচ্ছন পাতা। নারীবাদীরা ইসলামের দৃষ্টান্ত নিয়ে বিনয়ী প্রতিযোগিতা এবং পরের জন্য সহযোগিতা এ দু'য়োর সমন্বয়ের কথা বলেছেন।

৭. নারীর মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও মূল ধারায় প্রত্যাবর্তন : নারীরা যেদিন মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে অধিকার বঞ্চিত হয়েছিল সেদিন হতেই নারীর পরাজয় শুরু। নারীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে নারীদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা নারীবাদের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

→ নারীবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ : নারীবাদের প্রধান লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে নারীবাদীরা যে সকল ক্ষেত্রে নারীবঞ্চিত, সেই সমস্ত ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে, অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করে আসছে সুদূর ৬০-৭০ এর দশক থেকে। ফলে নারীবাদী কর্মকাণ্ডের কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। যেমন—

১. নারীকে মানুষ হিসেবে অভিষিক্ত করা : নারীরাও মানুষ। মানুষ হিসেবে নারীরাও সমান মর্যাদার অধিকারী। নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে প্রচেষ্টা চালানো নারীবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ।

২. নারী শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ : নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্বারোপ নারীবাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য । কেননা নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো ছাড়া নারীর সত্যিকার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় ।

৩. অর্থনৈতিক অধিকারে নারী-পুরুষ সাম্য প্রতিষ্ঠা : অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন । নারীবাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সম্পত্তিসহ অর্থনৈতিক অধিকারে নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

৪. আইনি বৈষম্য দূর করা : নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন আইনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদসহ সকল প্রকার আইনি বৈষম্য দূর করা নারীবাদের বৈশিষ্ট্য।

৫. কর্মক্ষেত্রে সুযোগের সমতা সৃষ্টি : সমাজের অর্ধেক অংশ নারী। তাদেরকে সামাজিক উৎপাদনশীল কার্যকলাপ হতে সরিয়ে রেখে তাদের নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে। নারীবাদের বৈশিষ্ট্য হলো কর্মক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সুযোগের সমতা সৃষ্টি ও কর্মবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা ।

৬. নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা : বর্তমান বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারীবাদের বৈশিষ্ট্য হলো পুরুষের ন্যায় নারীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

৭. পিতৃতন্ত্রের মূলোৎপাটন : পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীবাদের পশ্চাৎপদতার দিকে ধাবিত করছে। নারীবাদীরা পিতৃতন্ত্র উচ্ছেদ করে তথা পিতৃতন্ত্রের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে সুসম সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নারীবাদ নারীকে মানবজাতির অংশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পুরুষের পাশাপাশি চলার ও সমযোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকল বৈষম্য দূর করে নারীকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। যার ফসল হলো আধুনিক নারী নেতৃত্ব।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ নারীবাদ বলতে কী বোঝ? নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নারীবাদ কি। নারীবাদের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ