সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর ।

সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর
সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর

সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর

উত্তর:ভূমিকা: আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বল শাসন এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহসহ সাম্রাজ্যের অরাজকতার জন্য আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব হয় যার অধিকাংশই খলিফাদের প্রতি অনুগত ছিল বাকিরা আনুগত থাকলেও স্বাধীনভাবে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে। 

যার মধ্যে অন্যতম একটি ক্ষুদ্র রাজবংশ হচ্ছে সাফফারী রাজবংশ। যারা নামেমাত্র আব্বাসীয় খলিফাদের প্রতি অনুগত থেকে স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করেন যার জন্য ইতিহাসে এই রাজবংশের ইতিহাস খুবই গুরুত্ব বহন করে ।

→ সাফারী শাসকের ইতিহাস : সাফারী রাজবংশের দুটি | শাখা ছিল যার মধ্যে প্রথম শাখাটি ছিল ইয়াকুব ইবনে আল লায়েস কর্তৃক অপর শাখাটি হচ্ছে খলিফাদের। নিম্নে এই রাজবংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা করা হলো :

১. ইয়াকুব ইবনে লায়েস : ইয়াকুব ইবনে লায়েস ৮৬৭ খ্রি. ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি এই সময় খোরাসানকে দখল করার জন্য দারুল আকুল নামক স্থানে খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন

২. আমরের ক্ষমতা গ্রহণ পর : তার ভাই আমর ৮৭৯ খ্রি. সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এবং ৮৭৯ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন। ইয়াকুব ইবনে লায়েসের মৃত্যুর ক্ষমতার জন্য অপর ভাই আলীর স্বল্পকালীন স্থায়ী শক্তি পরীক্ষার পর তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। 

সেই সময় আব্বাসীয় খলিফা মুতামিদ দ্বারা সমর্থিত হয়ে তিনি তাহেরি সেনাপতি রাফি ইবনে হামজাকে পরাজিত করেন এবং সেই সাথে ইয়াকুব বিজিত খোরাসান পুনরায় দখল করেন। ৯০২ খ্রি. তিনি বাগদাদে বন্দি হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।

৩. তাহির ইবনে মুহাম্মদের ক্ষমতা লাভ : আমরের মৃত্যুর পর তার পৌত্র তাহির ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি তার ভাই ইয়াকুবের সাথে যৌথভাবে শাসনকার্য চালান । পরবর্তীতে আলীর সাথে তার ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

৪. আল লায়েস ইবনে আলীর ক্ষমতা লাভ : আল লায়েস ইবনে আলী ৯০৯ খ্রি. সংঘটিত যুদ্ধে তাহির ইবনে মুহাম্মদকে পরাজিত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাহেরীর সেনাপতি সেবুকত্ররী এ সময় ফারস প্রদেশ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ৯১০ খ্রি. তিনি সেক।। ভাল লায়েসকে পরাজিত করে ক্ষমতার দখল নেন ।

৫. মুহাম্মদ আলীর ক্ষমতা গ্রহণ : যারং দখলের পর মুহাম্মদকে যারং-এর আমিররূপে সমর্থন দেওয়া হয় কিন্তু তিনি বাগদাদের খলিফা আল মুক্তাদির সামানী বংশীয় আহমদ ইবন ইসমাঈলকে সিজিস্থানের গভর্নর নিযুক্ত করে সাফফারীদের শাসনাবসান করার নির্দেশ দেন। ৯১১ খ্রি. আহমদ যারং দখল করলে মাধ্যমে এ বংশের প্রথম শাখার রাজত্বকারের সমাপ্তি ঘটে।

৬. সাফারীদের দ্বিতীয় শাখা : ৯১১৯২৩ খ্রি. সময়কে অন্তর্বর্তী সময় বা কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সময়ে খারেজী বিরোধীরা মারমুখী হয়ে আফাররা শহরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলশ্রুতিতে ৯২৩ খ্রি. পুনরায় খলিফা শাখার উত্থান হয়।

৭. লায়সি ও খালাফি শাখার মধ্যকার সম্পর্ক : সাফফারীর দ্বিতীয় শাখা তথা খালাফি শাখার প্রথম শাসক আবু জাফরের প্রপিতামহ আল লায়েস। তিনি সাফারী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াকুবের পিতা নন। তিনি ইয়াকুবের দূর সম্পর্কীয় জ্ঞাতি। তথাপি আবু জাফরের বিমাতা মুহাম্মদের স্ত্রী বানু ছিলেন মূল সাফফারী শাখা আমর ইবন আল লায়েসের পৌত্রী।

৮. আবু জাফর আহমদের ক্ষমতা গ্রহণ : ৯২৩ খ্রি. যারাং-এর আইয়্যার গোষ্ঠীর লোকেরা আবু জাফর আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন খালফ ইবন আল লায়েসকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর রাজত্ব করেন। রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ফলে ৯৬৩ খ্রি. তিনি জৈনিক তুর্কি সৈন্যের হাতে নিহত হন।

৯. আবু আহমদ খালাফের সিংহাসন গ্রহণ : আবু জাফরের মৃত্যুর পর আবু আহমদ খালফ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই বংশের সর্বশেষ ও খ্যাতিমান পুরুষ। তিনি ১০০৩ খ্রি. আফগানিস্তানে গজনবী সুলতান মাহমুদ কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন এবং এই বংশের ইতি ঘটে।

১০. সাফফারীদের সাম্রাজ্য বিস্তৃতি : ইয়াকুব প্রথম আফগানিস্তানে ইসলামের প্রচার ঘটান। তাদের এই সাম্রাজ্য, কিরমান, ফারস, কাবুল, আফগানিস্তান, ইরান, খোরাসান এবং ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত তাদের এই রাজবংশের বিস্তার ছিল।

১১. খলিফাদের সাথে সম্পর্ক : এই বংশের শাসকদের সাথে আব্বাসীয় খলিফাদের সম্পর্ক দুই রকম ছিল; যেমন- 

(ক) প্রথম দিকে সুসম্পর্ক এবং

(খ) শেষের দিকে ভালো সম্পর্ক ছিল না।এই বংশের শাসকগণ খুৎবায় নিজ নাম সংযোজন করেন খলিফার নামের পাশে। সেই সাথে মুদ্রায়ও নিজ নাম লিখেন। তাই তাদের সাথে আব্বাসীয়দের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং এই রাজবংশের পতন ঘটে। এই রাজবংশের শাসকগণ স্বাধীনভাবে রাজ্যশাসন করতেন ।

১২. সাফারীদের পতন : ১০০৩ খ্রি. গজনবী সুলতান মাহমুদের সাথে আবু আহমদ খালাফের পরাজয়ের মাধ্যমে এই রাজবংশের পতন হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গজনবী রাজবংশের কাছে পরাজিত হয়ে এই রাজবংশের পতন ঘটে। এই রাজবংশ খলিফাদের প্রতি নামেমাত্র অনুগত ছিল যার জন্য তাদের পতন হওয়ার সময় আব্বাসীয় খলিফারা কোনো ভূমিকা রাখেননি। এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিল ইয়াকুব ইবনে আল লায়েস।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ  সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাফারী শাসকদের ইতিহাস আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ