সেলজুকদের উত্থান পতনের ইতিহাস লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুকদের উত্থান পতনের ইতিহাস লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুক তুর্কিদের উত্থান ও পতনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখ ।

সেলজুকদের উত্থান পতনের ইতিহাস লিখ
সেলজুকদের উত্থান পতনের ইতিহাস লিখ

সেলজুকদের উত্থান পতনের ইতিহাস লিখ

  • অথবা, সেলজুক তুর্কিদের উত্থান ও পতনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখ ।
  • অথবা, সেলজুকদের উত্থান পতনের বিবরণ দাও। 
  • অথবা, সেলজুক বংশের উত্থান পতন সম্পর্কে যা জান লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : একাদশ শতাব্দির মধ্যভাগে আব্বাসীয় খেলাফতে সেলজুকদের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তারা মৃতপ্রায় আব্বাসীয় খেলাফতকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং সাম্রাজ্যে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধ ও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অভিযানের কারণে তাদের পতন ঘটে।

→ সেলজুকদের পরিচয় : সেলজুকরা তুরকিস্তানের কিরঘিজ তুন্দ্রা অঞ্চলে তুর্কি গোত্রীয় ঘুজ বংশোদ্ভূত ছিলেন। ৯৫৬ সালে তারা সেলজুক বিন বায়হাকের নেতৃত্বে তুর্কিস্তানের কিরঘিজ মালভূমি ছেড়ে বুখারার এসে বসবাস শুরু করেন। 

কালক্রমে তারা সুন্নি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলামের ধারক ও বাহক হয়ে উঠেন। এরপর সেলজুকের পুত্র পিগু আরসলিনের নেতৃত্বে তারা পূর্ব পারস্যে এসে বসতি স্থাপন করেন। সেলজুক বিন বায়হাকের নামানুসারে এই বংশের নামকরণ করা হয় সেলজুক বংশ।

→ সেলজুকদের উত্থান : সেলজুকদের উত্থান একটি বিচিত্র ঘটনা। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১. গজনী রাজ্যের সাথে দ্বন্দ্ব ও আত্মরক্ষা : গজনীর সুলতান মাহমুদ তার সাম্রাজ্যের প্রান্তে সেলজুকদের উত্থানে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন। তিনি তাদের প্রতিরোধ করলে তারা আত্মরক্ষার্থে আজারবাইজানে চলে যান। 

পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যু হলে সুলতান মাসুদের সময় গজনী বংশের পতনের সুযোগে তারা আবার পারস্যে ফিরে আসেন। এরপর সেলজুকরা শক্তি

সঞ্চার করতে থাকেন।

২. হিপ্টের যুদ্ধে জয়লাভ : গজনী বংশের পতনের সুযোগে সেলজুকরা প্রাচীন ইলখানী ও সামানী রাজ্যের অঞ্চলসমূহ দখল করে গজনী রাজ্যে হানা দিতে থাকেন। এক সময় তারা খোরাসান অধিকার করেন। 

১০৩৭ সালে গজনীর সুলতান মাসুদকে হিপ্টের যুদ্ধে পরাজিত করে। অতঃপর সেলজুকগণ তাদের আদি নেতা সেলজুকের পুত্র তুমিল বেগকে দলনেতা নির্বাচন করেন ।

৩. তুমিলের রাজ্য বিস্তার : তুলি বেগ ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা এবং অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী। দলপতি হয়ে তিনি তার ভাইয়ের সহযোগিতায় ১০৪০ সালে গজনীর সুলতানকে মার্ভের নিকট পরাজিত করে নিশাপুর দখল করেন।

৪. খলিফার আমন্ত্রণে তুমিলের বাগদাদ অভিযান : তুমিলের ক্ষমতার কথা শুনে ১০৫৫ সালে দুর্বল খলিফা আল কাইম বিল্লাহ বুইয়াইয়াদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তুমিলকে বাগদাদে ডেকে পাঠান। 

খলিফার আমন্ত্রণে তুমিল দুর্ধর্ষ বাহিনী নিয়ে ৮ ডিসেম্বর বাগদাদে প্রবেশ করে বুয়াইয়া আমির মালিক আর রহিমকে পরাজিত করেন । খলিফা তাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে দরবারে আমন্ত্রণ জানান ।

৫. আল বাসাসির বিদ্রোহ দমন : তুলি বাগদাদে আসার পূর্বে আল বাসাসী নামক একজন তুর্কি নেতা বুয়াইয়া আমির মালিককে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেকে আমির আল ওমারা ঘোষণা করেন। কিন্তু তুমিল বাগদাদে আসলে সে পলায়ন করেন । 

তুমিল বাগদাদে স্বীয় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে পারস্যে ফিরে গেলে এ সুযোগে আল বাসাসী আবার এসে ফাতেমীয় বংশের খলিফা মুসতানসীরকে বাগদাদের খলিফা ঘোষণা করেন। এ সংবাদ পেয়ে তুমিল বাগদাদে এসে তাকে পরাজিত করে হত্যা করেন ।

৬. তুমিলের সুলতান উপাধিলাভ : আল বাসাসিকে হত্যার পর আব্বাসীয় খলিফা আল কাইম বিল্লাহ সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তুমিলকে সমগ্র মুসলিম জাহানের কর্তৃত্ব দান করেন। তাকে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সুলতান ঘোষণা করেন। সুলতান হিসেবে সমগ্র ক্ষমতার অধিকারী হলেও তিনি খলিফাকে শ্রদ্ধা করতেন।

৭. মার্ভে প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা : খলিফার সাথে ক্ষমতা নিয়ে যেন দ্বন্দ্ব না হয় সেজন্য তিনি তার দপ্তর মার্ভে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশের পর দেশ জয় করে বাইজেন্টাইন সীমান্তে উপনীত হন এবং সম্রাটকে কর প্রদানের নির্দেশ দেন। ১০৩৭ থেকে ১০৬৩ পর্যন্ত | তিনি স্বগৌরবের শাসন কার্য পরিচালনা করেন ।

→ সেলজুকদের পতন : মালিক শাহের মৃত্যুর পরে সেলজুক সাম্রাজ্যের আধিপত্য খর্ব হতে থাকে আব্বাসীয় খেলাফতে মদ্যপ বরকিয়ারুক অধিষ্ঠিত হলে সেলজুকদের পতন হয়। সানজার সেলজুক সুলতান হলে তার উত্তরাধিকার নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। 

ফলে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয় এবং সেলজুক সালতানাত পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ১১৯৪ সালে খাওয়ারিজমের শাসনকর্তা পারস্যের সেলজুকদের এবং ওসমানীয় সুলতানগণ এশিয়ার মাইনরে সেলজুকদের পতন ঘটান ।

→ সেলজুকদের পতনের কারণ : সেলজুকদের পতনের পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো 

১. দুর্বল উত্তরাধিকারী : সেলজুক বংশের পরবর্তী সুলতানদের অযোগ্যতা, দুর্বলতা, অকর্মণ্যতা তাদের পতনের অন্যতম কারণ। মালিক শাহের মৃত্যুর পর সেলজুক সালতানাত দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয় ।

২. অভ্যন্তরীণ কলহ : মালিক শাহের মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে সিংহাসনের উত্তারাধিকার দিয়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ফলে ক্ষমতার চূড়ান্ত লিপ্সা তাদের পতন ত্বরান্বিত করে।

৩. গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উদ্ভব : সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে এক রক্তপিপাসু গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। নিজামুলমূলকের বন্ধু হাসান বিন সাবাহ কর্তৃক এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয় । এদের হাতে নিজামুলমূলকসহ বহু লোক নিহত হয় ।

৪. আমির ও সেনাপতিদের স্বাধীনতা ঘোষণা : আমির ওমরাগণ সেলজুক সুলতানদের দূর্বলতার সুযোগে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে সেলজুক সাম্রাজ্য আরো দুর্বল হয়ে পড়ে।

৫. তাকাসের অভ্যুদয় : ১১৭৪ সালে পারস্যের খাওয়ারিজমের শাসনকর্তা তাকাশ, পারসিক ইরাকের শেষ সেলজুক সুলতান তুম্রিলকে আক্রমণ করলে তাদের পতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেলজুকগণ আব্বাসীয় খেলাফতের এক যুগসন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয়ে আব্বাসীয় খেলাফত ও সুন্নি ইসলামের সেবা করেন। 

কিন্তু আত্মকলহের কারণে তাদের পতন ঘটে। তারা নিজেদেরকে পূর্ববর্তীদের থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন করতে পারেননি। ফলে ১১৯৪ সালে তাদের চূড়ান্ত পতন ঘটে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুকদের উত্থান পতনের বিবরণ দাও

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক বংশের উত্থান পতন সম্পর্কে যা জান লিখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ