সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল।

সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল
সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল

সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল

উত্তর : ভূমিকা : যে কয়জন মহৎ ব্যক্তি কোনো রাজবংশে জন্মগ্রহণ না করেও স্বীয় কর্মক্ষমতা দ্বারা ইতিহাসে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন তার মধ্যে নিজামুলমূলক অন্যতম। তিনি সেলজুক সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে প্রধান উজির ছিলেন। 

নিজামুলমূলকের অবদান অপরিসীম। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দরুনই মালিক শাহের রাজত্বকালে তিনি ইতিহাসে মহিমান্বিত ও স্থায়ী হয়ে আছেন। নিজামুলমূলকের হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্র ব্যাপক পাণ্ডিত্য ছিল। 

নিজামুলমূলকের বিচক্ষণতার জন্য মালিক শাহ সিংহাসন অধিকার করতে পেরেছিলেন। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্রি তাকে ইসলামের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম অলংকার বলে অভিহিত করা হয় ।

→ নিজামুলমূলকের অবদান : নিম্নে নিজামুলমূলকের অবদান বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :

১. নিজামুলমূলকের পরিচয় : নিজামুলমূলকের আসল নাম খাজা আবু আলী আল হাসান। তিনি ১০১৬ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের তুস নগরীতে রাকন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলী। 

নিজামুলমূলকের প্রথম চাকরি জীবন শুরু হয় সুলতান মাহমুদের শাসনামলে এবং গজনীদের পতন ঘটলে তিনি সেলজুকদের অধীনে চাকরি করতেন। তার বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন দেখে অনেক ঐতিহাসিক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমরা তা ইতিহাসের মাধ্যমে জানতে পারি।

২. উপাধি গ্রহণ : মালিক শাহের ২০ বছরে রাজত্বকালে নিজামুলমূলক স্বীয় হস্তে সকল ক্ষমতা এরূপে কেন্দ্রীভূত করেন যে, সুলতানের সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকা অথবা মৃগয়ায় যাওয়া ব্যতীত কোন কাজ ছিল না। 

নিজামুলমূলকের একনিষ্ঠ সেবা, অসাধারণ ত্যাগ, বিচক্ষণতা এবং জনমঙ্গলের শাসনকল্পে সুলতান মালিক শাহ তাকে আতাবেগ উপাধিতে ভূষিত করেন।

৩. প্রধান উজিরের পদ অলংকরণ : ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তুমিল বেগের সুনিপুন কৌশলে সুলতান মাহমুদকে পরাজিত করে গৌড় রাজ্য অধিকার করেন। তিনি নিজামুলমূলককে স্বীয় কাতিব নিযুক্ত করেন। 

অতঃপর তুমিল বেগের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলপ আরসনালের আমলে নিজামুলমূলক প্রধানমন্ত্রী/উজির পদে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় তিনি বিখ্যাত উপাধি নিজামুলমূলক উপাধি প্রাপ্ত হন ।

৪. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণ : আলপ আরসনালের মৃত্যুর পর তদীয়পুত্র মালিক শাহ সেলজুক সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ সময় থেকে নিজামুলমূলকের গৌরবময় জীবন শুরু হয় । তিনি বাহ্যিকভাবে প্রধানমন্ত্রী থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। 

ঐতিহাসিক ইবনে মলিকের মতে, মালিক শাহের বিশ বছরের রাজত্বকালে নিজামুলমূলক নিজ হস্তে এমনভাবে ক্ষমতা হস্তগত করেন যে, সুলতানের সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকা ছাড়া অন্য কোন কাজ ছিল না ।

৫. বিদ্রোহ দমন ও শাসন সংস্কার : সুলতান মালিক শাহের রাজত্বকাল সম্প্রসারণ অপেক্ষা শাসন সংস্কারের জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ। মালিক শাহের শাসনামলে কয়েকটি বিদ্রোহ দেখা দিলে নিজামুলমূলক কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমন করেন। 

সেলজুক রাজত্বের শাসন সংস্কার, সমৃদ্ধি এবং প্রভাব প্রতিপত্তির জন্য মালিক শাহের সুযোগ্য এবং ব্যুৎপত্তি জ্ঞানসম্পন্ন উজির খাজা হাসানের অবদান ছিল অপরিসীম। নিজামুলমূলকের বিচক্ষণতা, কর্মনৈপুণ্যতা, দূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জন্যই মালিক শাহের রাজত্বকাল মহিমান্বিত ও চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

৬. রাজনৈতিক সংস্কার : নিজামুলমূলকের বহুবিধ কর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্ম হচ্ছে 'সিয়াসত নামা'। রাজনৈতিক সংস্কার সাধনের জন্য মালিক শাহের শাসনামলে নিজামুলমূলক ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।

৭. মানমন্দির প্রতিষ্ঠা : নিজামুলমূলকের পরামর্শক্রমে সেলজুক সুলতান মালিক শাহ ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে নিশাপুরে একটি জ্যোতির্বিদ সম্মেলন আহ্বান করেন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে একটি জ্যোতির্বিদ্যার চর্চার সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণীত হয়। 

আব্বাসীয় শাসনামলে সেলজুক সুলতানদের যেগুলো অবদান ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো নিশাপুরে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রভূত উন্নতিকল্প মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করা। প্রখ্যাত দার্শনিক ওমর খৈয়াম যিনি একাধারে জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ ও কবি ছিলেন। মানমন্দির প্রতিষ্ঠাকল্পে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন ।

৮. শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা : নিজামুলমূলক শিক্ষার অগ্রগতিতে এক অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই জন্য শিক্ষার প্রসার, মান মন্দির প্রতিষ্ঠা, জ্ঞানবিজ্ঞানে আব্বাসীয়দের শাসনামলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তিনি অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো পরবর্তীকালে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছিল।

৯. নিজামের নামে মাদ্রাসা নির্মাণ : নিজামুলমূলক মুলত একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি শিক্ষা সম্প্রসারণে বাগদাদে ১০৬৫-৬৭ খ্রিস্টাব্দে নিজামিয়া মাদ্রাসা যা ইসলামের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। জ্ঞানপিপাসু নিজামুলমূলক কায়রোতে অবস্থিত ইসমাঈলী শিক্ষায়তন আল আজহার-এর প্রতীদ্বন্দ্বীরূপে বাগদাদে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শাফেয়ী এবং আশয়ারী মতবাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন ।

১০. সিয়াসত নামা রচনা : নিজামুলমূলকের সিয়াসত নামা রাজ্যের শাসন প্রণালির উপর লিখিত একটি গবেষণামূলকগ্রহ রচনা বলে মনে করা হয়। সুলতান মালিক শাহের অনুরোধে এ গ্রন্থটি ১০৯২ খ্রিস্টাব্দে রচনা করা হয়। এর মূল বিষয়বস্তু ছিল রাজনৈতিক নীতিমালা সম্বলিত একটি দার্শনিক নিবন্ধন। 

এটিকে শাসন প্রণালি দরবার বিচারকার্য, সামরিক বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং অর্থনৈতিক কার্যাবলির উপর ব্যবহারিক উপদেশ প্রদান করা হয়। এটিকে সেলজুক সুলতানদের রাজতন্ত্রের ব্যাখ্যাও রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়টি বই বা গ্রন্থ রাজকার্য পরিচালনার জন্য রচিত হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো নিজামুলমূলকের সিয়ামত নামা গ্রন্থখানি ।

১১. সুষ্ঠু কর ব্যবস্থা প্রচলন : নিজামুলমূলকের যুগোপযোগী ব্যবস্থার গ্রহণের ফলে সেলজুক সাম্রাজ্য কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। 

পারস্য ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে নিজামুলমূলক এরূপ একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যার ফলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। 

তিনি সুষ্ঠু কর ব্যবস্থার প্রচলনের মধ্যদিয়ে সামন্ততন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন এবং সৈন্যদের মধ্যে ভূমি বণ্টন করে তাদের নিকট থেকে নিয়মিত কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন।

১২. নতুন পঞ্জিকার প্রচলন : সেলজুক সুলতান মালিক শাহ, জালালের নামানুসারে এক নতুন জালালী পঞ্জিকার প্রবর্তন- করেন। চন্দ্র মাসের পরিবর্তে সৌর মাস অনুযায়ী গণনার প্রথা চালু করেন। 

মূলত নিজামুলমূলককে জালালী পঞ্জিকা প্রচলনের জন্য পরামর্শ প্রদান করেছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক ও কবি সাহিত্যিক জ্যোতিবিজ্ঞানী ওমর খৈয়াম। প্রচলিত গণনা পদ্ধতির যাবতীয় ভুল সংশোধন করে ও জালালী পঞ্জিকাটি রচনা করা হয় । 

জালালী পঞ্জিকা, বর্তমান প্রচলিত যে কোন পঞ্জিকা অপেক্ষা সূক্ষ্ম ও নির্ভুল ছিল। ঐতিহাসিক গিবন তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এটি জুলিয়ানের পঞ্জিকা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং গ্রেগরী পঞ্জিকার নির্ভুলতার সমকক্ষতা দাবি করে ।

১৩. অন্যান্য কার্যাবলি : খলিফা মালিক শাহের শাসনামলে নিজামুলমূলক প্রধান উজিরের পদ লাভ করেন। তিনি আব্বাসীয় খিলাফতের রাস্তাঘাট নির্মাণ, সরাইখানা সাম্রাজ্য পরিবেশ পরিস্থিতির উন্নতি এবং রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রভূত উন্নতি বিধান করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী নিজামুলমূলক এক অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ইয়াহিয়া বার্মাকির পরে তিনিই ছিলেন এশিয়ার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শাসক। তার সদগুণাবলি ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য উঁচু নিচু নির্বিশেষে সর্বজনের সমাদৃত ছিলেন। 

The History of Saraens গ্রন্থে সৈয়দ আমির আলী বলেছেন যে, এশিয়ার যে কয়েকজন সুদক্ষ উজির ও শাসকের জন্মদান করে তন্মধ্যে সম্ভবত মালিক শাহের উজির নিজামুলমূলক অন্যতম ছিলেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান মালিক শাহের শাসনামলে উজির নিজামুলমূলকের অবদান কী ছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ