৩০টি লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর


৩০টি লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
৩০টি লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ‘তাই তারা ছোটে, ছোটে’– কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: অভাব-অনটন দূর হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে শস্যহীন অঞ্চলের লোকেরা ছোটে।

‘লালসালু' উপন্যাসে শস্যহীন জনবহুল অঞ্চলের বাসিন্দাদের কথা বলা হয়েছে । এই অঞ্চলের বাসিন্দারা সুখে থাকার আশা নিয়ে দিন কাটায় । 

ঘরে খাবার না থাকলেও দূরে তাকিয়ে থেকে অভাব মেটাবার দুরাশায় মত্ত হয় তারা। কিন্তু, কেবল আশায় বুক বেঁধে অভাব মিটবে না বুঝতে পেরে তারা দিন-ক্ষণের হিসাব না করেই ছুটে চলে অজানার উদ্দেশে ।

প্রশ্ন-২. “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি'— বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 

উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে থেকেও সাধারণ মানুষের তা থেকে উত্তরণের চেষ্টার চেয়ে তথাকথিত ধর্মচর্চার প্রতি অধিক আগ্রহের দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।

‘লালসালু' উপন্যাসে অভাবপীড়িত এক জনবহুল অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার মানুষ অনাহার থেকে বাঁচতে ফসল উৎপাদনে যত্নশীল না হয়ে ধর্মচর্চায় বেশি ব্যস্ত থাকে। 

অর্থাৎ ফসল উৎপাদন করে অভাব দূর করার জন্য যতটুকু যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন তা তারা করে না। পক্ষান্তরে তারা যে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে সেটাও বাহ্যিক, এটা তাদের অন্তরের বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি । 

আর এ কারণেই তাদের মন ধৰ্মীয় নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন । এমনকি কেউ কেউ ধর্মকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতেও পিছপা হয় না । আর তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।

প্রশ্ন-৩. ‘দেশটা কেমন মরার দেশ'— এখানে কোন অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, কেন? 

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে তৎকালীন সময়ে শস্যহীন জনবহুল নোয়াখালী অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে ।

‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত শস্যহীন জনবহুল অঞ্চল নোয়াখালী। চল্লিশ দশকের শেষে প্রকাশিত এ উপন্যাসে বলা হয়েছে সেখানে জনসংখ্যার তুলনায় শস্যের উৎপাদন হয় খুবই সামান্য। না খেতে পেরে সেখানকার মানুষের চোখে দীনতা ও অসহায়তার ভাব ফুটে ওঠে। 

শীর্ণ দাড়ি তাদের মুখে মাহাত্ম্য ফোটাতে চাইলেও ক্ষুধার্ত চোখের দিকে তাকালে চোয়ালের দীনতা প্রকাশ পায়। সে কারণে দেশটাকে ‘কেমন মরার দেশ’ বলা হয়েছে । 

প্রশ্ন-৪. ‘চোখে তার তেমনি শিকারির সূচ্যগ্র একাগ্রতা’– বুঝিয়ে লেখো ।

উত্তর: তাহের সম্পর্কে বলা হয়েছে চোখে তার তেমনি শিকারির একাগ্রতা।

তাহের-কাদের মাছ ধরছিল। কাদের সন্তর্পণে নৌকা চালাচ্ছিল আর তাহের নৌকার সম্মুখভাগে বসে ছিল। তাহেরের দৃষ্টি যেন সূচের অগ্রভাগের মতো তীক্ষ্ণতাসম্পন্ন। যেখানেই মাছ থাকুক না কেন— দৃষ্টির প্রখরতায় তা তার চোখে ধরা পড়বেই।

প্রশ্ন-৫. মজিদের হঠাৎ মহব্বতনগর গ্রামে আগমনের কারণ ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর: শস্যহীন নিজ অঞ্চল থেকে অস্তিত্বের প্রয়োজনে মজিদ হঠাৎ মহব্বতনগর গ্রামে আগমন করে।

মজিদ তার জীবন-জীবিকার চাহিদা পূরণে অপারগ ছিল। তার নিজ অঞ্চল শস্যহীন হওয়ায় সে জীবনসংকটে পড়ে। 

তাই সে ভাগ্যান্বেষণে নিজ অঞ্চল ত্যাগ করে অন্যত্র পাড়ি জমায়। সেই সূত্রে হঠাৎ সে অস্তিত্ব রক্ষার্থে মহব্বতনগরে আগমন করে। সেখানে একটি অচেনা কবরকে আশ্রয় করে সে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে ।

প্রশ্ন-৬. মজিদের মনে সন্দেহ ও ভয় ছিল কেন?

উত্তর: মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে গড়ে তোলা মাজার-ব্যবসার সাফল্য নিয়ে মজিদের মনে সন্দেহ ও ভয় ছিল ।

মোদাচ্ছের পিরের দোহাই দিয়ে মহব্বতনগর গ্রামে মাজার প্রতিষ্ঠা করে মজিদ। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য মজিদ ধর্মকে কেন্দ্র করে এই মাজার-ব্যবসা শুরু করে। 

মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে অবলম্বন করে সে যে সাংঘাতিক মাজার-ব্যবসায় লিপ্ত হয়, তা নিয়ে সে নিজেও সংশয়গ্রস্ত ছিল । আদৌ সে এই খেলায় জয়ী হতে পারবে কি না, এ নিয়েই তার মনে সন্দেহ আর ভয় ছিল।

প্রশ্ন-৭. ‘গ্রামের মানুষ যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ'— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মহব্বতনগরের লোকেরা মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমার মতোই দৈহিক শক্তিতে বলীয়ান, কিন্তু সহজ-সরল এবং মানসিকভাবে দুর্বল ও ভীতু প্রকৃতির, যা প্রশ্নোক্ত বাক্যটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে ।

মহব্বতনগরের মানুষগুলো কাজ করে আনন্দ পায়। তাদের অন্তরজুড়ে শুধু জমি আর ধান। সারা বছর খোদার কথা ভুলেই থাকে তারা। কেবল বর্ষণহীন খরার দিনে যখন জমিতে ফাটল ধরে তখন তারা খোদাকে স্মরণ করে। 

বিশাল শরীর নিয়ে তারা সবসময় কাজে মগ্ন থাকে। মোটাতাজা শরীর হলেও লোকগুলো রহিমার মতো অন্তরে নারীসুলভ ভয় লালন করে। রহিমার মতোই তারা মজিদকে ভয় পায় ও শ্রদ্ধা করে । এজন্যই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-৮. মজিদ কীভাবে মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়েছিল? 

উত্তর: মানুষের খোদাভীতিকে কাজে লাগিয়ে মাজার ব্যবসার মাধ্যমে মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়েছিল ।

এক নিরাকপড়া (বাতাসহীন স্তব্ধ গুমোট আবহাওয়া) শ্রাবণের দুপুরে মহব্বতনগর গ্রামে আগমন ঘটে মজিদের। সেখানে একটি পুরোনো কবরকে মোদাচ্ছের পিরের মাজার বলে দাবি করে সে। এই কবরকে কেন্দ্র করে মজিদ তার ধর্মব্যবসা শুরু করে । 

কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে ঝকঝকে পয়সা, ঘষা পয়সা, সিকি-দুয়ানি-আধুলি, আসল টাকা, নকল টাকার ছড়াছড়ি হতে থাকে। এতে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হয় সে। 

একই সাথে রহিমাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে মজিদ। মানুষের মনে ধর্মভীতি জাগিয়ে গ্রামের সমাজেও নিজের আধিপত্য গড়ে তোলে সে। আর এভাবেই ধর্মকে পুঁজি করে মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়েছিল ।

প্রশ্ন-৯. ‘মজিদের শক্তি ওপর থেকে আসে, আসে ঐ সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে” – ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: মজিদ মহাব্বতনগর গ্রামে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তার শক্তি সে পেয়েছিল সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে— প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ কথাই প্রকাশিত হয়েছে।

মজিদ মহব্বনগর গ্রামে আগন্তুক হিসেবে প্রবেশ করে একসময় সেই গ্রামেই মজিদ শক্তির শিকড় গেড়েছিল। এই শক্তি সে পেয়েছিল মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সরল মানুষের বিশ্বাস থেকে। 

সালু কাপড়ে আবৃত মাজারটি মজিদকে দিয়েছিল শক্তি, যা দিয়ে গ্রামে সে প্রভাব বিস্তার করেছিল । প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে ।

প্রশ্ন-১০. হাসুনির মাকে তার বাপ পিটিয়েছিল কেন?

উত্তর: হাসুনির মাকে তার বাবা প্রহার করার কারণ হলো ঘরের খবর বাইরে বলা ।

হাসুনির নানা ও নানি দুজনে মিলে সারাক্ষণ সংসারে কলহ করে। এ কারণে হাসুনির মা বিরক্ত হয় এবং ঘরের শান্তি ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে মজিদের স্ত্রীকে বাবা-মায়ের কলহের কথা বলে দেয়। 

মজিদের মাধ্যমে যখন হাসুনির মায়ের বুড়ো বাপ বিষয়টি জানতে পারে, তখন খুব অপমান বোধ করে এবং অপমানের জ্বালা কমানোর জন্যই হাসুনির মাকে প্রহার করে ।

প্রশ্ন-১১. আওয়ালপুরে পিরের আগমন ঘটলে মজিদ কেন শঙ্কিত হয়ে ওঠে?

উত্তর: আওয়ালপুরে পিরের আগমন ঘটলে মজিদের একক ধর্মীয় আধিপত্যে ভাটা পড়ায় মজিদ শঙ্কিত হয়ে ওঠে।

মজিদ নিজেও জানে যে, সে পির নয়। শুধু বুদ্ধির জোরেই সে মহব্বতনগরে পিরের আসন লাভ করেছে। আওয়ালপুরের পির বিদ্বান হলে মজিদের বিদ্যাহীন বুদ্ধির রাজত্ব বেশি দিন টিকবে না। এ কারণেই মজিদ শঙ্কিত হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন-১২, ‘যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে'— ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আওয়ালপুরে আগত পির সাহেব এবং মজিদের তুলনামূলক অবস্থান বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

‘লালসালু’ উপন্যাসে দেখা যায়, আওয়ালপুরে আগত নতুন এক পির মজিদের জন্য অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়ায়। নানারকম চিন্তা করতে করতে মজিদ একদিন আওয়ালপুরের পিরের সমাবেশে হাজির হয়। 

সেখানে সে দেখতে পায় ঐ পিরের সামনে শত শত লোক বিভোর হয়ে বসে আছে; কেউ কাউকে লক্ষ করছে না। এমনকি, মজিদকে চেনে এমন লোকও এই ভিড়ের মধ্যে তার প্রতি মনোযোগী হয় না। 

সেখানে পির সাহেব যেন সূর্যের উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছেন; আর মজিদ যেন প্রদীপের সামান্য আলো, যা সূর্যের আলোর কাছে ম্লান হয়ে গেছে । তাই বলা হয়েছে, যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

প্রশ্ন-১৩. ‘দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা’— কথাটি কখন ও কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে? 

উত্তর: দুনিয়ায় বাস করতে গেলে সময়ে অসময়ে মিথ্যা কথা না বললেই নয় বলে মজিদ মনে করে, দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা।

করিমগঞ্জ হাসপাতালে মহব্বতনগরের আহত লোকদের দেখতে যায় মজিদ। অসুস্থ লোকদের দেখাশোনা করে গ্রামে ফিরে এসে মজিদ গুরুতর আহত কালু মিয়ার বাপকে বলে, সেখানে তার ছেলের সেবা-যত্ন ও ওষুধ-পথ্যের কোনো অভাব নেই। 

কারণ হাসপাতালের ডাক্তার তার মুরিদ। এ কথাটা অবশ্য মিথ্যা, তবু মজিদ জেনে-শুনে মিথ্যা কথা বলে । কারণ তার মতে, দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা। এখানে সময়ে অসময়ে মিথ্যা কথা না বললে চলে না ।

প্রশ্ন-১৪. আমেনা বিবি আওয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায় কেন?

উত্তর: আমেনা বিবি সন্তানকামনার জন্য আওয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায় ।

খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি পিরের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসী। ব্যাপারীর সাথে বহুদিন ঘর করেছে সে, কিন্তু তার কোনো সন্তান হয় না। 

তার বিশ্বাস, পির সাহেবের পানিপড়া খেলে সে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবে । আর তাই আমেনা বিবি মাতৃত্বের সাধ পূর্ণ করার জন্যে আওয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায় ।

প্রশ্ন-১৫. 'দলিল-দস্তাবেজ জাল হয়, কিন্তু খোদাতালার কালাম জাল হয় না'— এ কথার তাৎপর্য কী? 

উত্তর: ‘লালসালু' উপন্যাসের ভণ্ড মজিদ তার দেওয়া পানিপড়া, প্রতিদ্বন্দ্বী পিরের নামে খাওয়ানো হবে শুনে খেপে গিয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি সন্তান কামনায় আওয়ালপুরে আসা নতুন পিরের কাছ থেকে পানিপড়া খেতে চায়। কিন্তু ভণ্ড মজিদের সাথে সেই পিরের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব থাকার কারণে ব্যাপারী তার ছোট স্ত্রীর ভাই ধলা মিয়াকে গোপনে রাতের অন্ধকারে আওয়ালপুরে গিয়ে পানিপড়া আনতে বলে। 

কিন্তু ধলা মিয়া ভীতু প্রকৃতির লোক হওয়ায় রাতের অন্ধকারে সেখানে না গিয়ে মজিদের কাছে আসে পানিপড়া নিতে । আর মজিদকে এই পানিপড়া দেওয়ার কথা গোপন রাখতে বলে । 

মজিদের পানিপড়া আওয়ালপুরে আগত পিরের নামে চালিয়ে দেওয়ার হঠকারিতাপূর্ণ প্রস্তাবে মজিদ রেগে গিয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে ।

প্রশ্ন-১৬. আমেনা বিবিকে তালাক দেওয়ার কথা শুনে খালেক ব্যাপারী হকচকিয়ে যায় কেন ?

উত্তর: দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় আমেনা বিবিকে তালাক দেওয়ার কথা শুনে খালেক ব্যাপারী হকচকিয়ে যায় ।

মাত্র তেরো বছর বয়সে আমেনা বিবি খালেক ব্যাপারীর সংসারে প্রবেশ করে। অবস্থাপন্ন সংসার হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেরই ছিল। 

কিন্তু মজিদ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমেনা বিবিকে এমনভাবে অসতী বলে প্রতিপন্ন করে যে খালেক ব্যাপারীর কাছে বিষয়টি সত্য বলে মনে হয়। কিন্তু দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের হঠাৎ ভাঙনে খালেক ব্যাপারী সাময়িকভাবে অপ্রস্তুত বোধ করে।

প্রশ্ন-১৭. ‘দুনিয়াটা বড় বিচিত্র। যেখানে সাপ জাগে সেখানে কোমলতার ফুল ফোটে।' ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে মজিদের চারিত্রিক স্খলনের দিকটি ফুটে উঠেছে

আওয়ালপুরের পিরের পানি পড়া খেতে চাওয়ায় মজিদ খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবির প্রতি রাগান্বিত হয়। 

ক্রোধের বশবর্তী হয়ে মজিদ আমেনা বিবির শাস্তির আয়োজন করে। তবে মাজারে আমেনা বিবির পায়ের উন্মুক্ত অংশে মজিদের কুদৃষ্টি পড়ে। তবে শয়তানের এ কুমন্ত্রণা থেকে মজিদ নিজেকে মুক্ত রাখতে চায়। 

যদিও তার নৈতিক স্খলনের কারণেই সে আমেনা বিবিকে শাস্তি দেয়। আর এ সকল দিক বিবেচনায় আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে ।

প্রশ্ন-১৮. আক্কাস মিয়া গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেন?

উত্তর: সমাজের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আক্কাস মিয়া গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।

গ্রামে মক্তব থাকা সত্ত্বেও স্কুলে না পড়লে মুসলমান ছেলের উন্নতি হবে না এবং আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে, এ ধারণা থেকেই আক্কাস মিয়া গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। 

সে মনে করে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কারের রাহু দূর হলে মানুষ তার নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখবে। এসব কারণে আক্কাস মিয়া মনে করে গ্রামে একটি স্কুল থাকা উচিত ।

প্রশ্ন-১৯. মজিদ স্কুল নির্মাণে বাধা দেয় কেন?

উত্তর: মজিদ তার নিজের বিপদের কথা ভেবে স্কুল নির্মাণে বাধা দেয়। আক্কাস মিয়া গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্কুল নির্মাণের কথা বললে মজিদের তা পছন্দ হয় না। 

কারণ লোকজন শিক্ষিত হলে তারা ভালো-মন্দ বুঝবে, কুসংস্কার মানবে না, মজিদের ভণ্ডামি বুঝতে পারবে। ফলে অন্ধকারে থাকা ধর্মভীরু মানুষের সাথে তার ধর্মব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই মজিদ স্কুল নির্মাণে বাধা দেয়।

প্রশ্ন-২০. গ্রামে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠায় স্বপ্ন কীভাবে ভেঙে যায়? 

উত্তর: ভণ্ড মজিদ তার স্বার্থ রক্ষার জন্য স্কুলের বদলে মসজিদ প্রতিষ্ঠার কথা বললে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভেঙে যায় ।

গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ সচেতন হবে এবং মজিদের ধর্মব্যবসার খোলস উন্মোচিত হবে। এমন ভয় থেকে মজিদ আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠায় ঘোর বিরোধিতা করে ও ভরা মজলিসে আক্কাসের দাড়ি নেই বলে তিরস্কার করে। 

কিন্তু আক্কাস মজিদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে নিশ্চুপ থাকে। ফলে তার দ্বারা আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

প্রশ্ন-২১. ‘এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়, সচ্ছলতায় শিকড় গাড়া বৃক্ষ’– ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে মজিদের জীবনের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির পার্থক্য বোঝানো হয়েছে ।

“লালসালু” উপন্যাসের মজিদ মসজিদে যাওয়ার পথে তার অতীত জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। দশ বা বারো বছর আগে এক নিঃস্তব্ধ শ্রাবণের ...দুপুরে সে মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করেছিল । 

তখন সে ছিল ভাগ্যান্বেষী ও দুস্থ একজন মানুষ। কিন্তু আজ সে জোত-জমি, সম্মান-প্রতিপত্তির মালিক। বছরগুলো ভালোই কেটেছে তার; হয়তো ভবিষ্যতেও এমনই কাটবে। তাই নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতেই মজিদ প্রশ্নোক্ত কথাটি ভেবেছে।

প্রশ্ন-২২. কোন ঘটনায় মজিদ 'বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ' করে?

উত্তর: যে লোকটির কবরটিকে মজিদ মাজার বানিয়েছে, সেই মৃত লোকটিকে সে চেনে না বলে বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে। 

মজিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি সাধারণ কবরকে পুণ্যবান লোকের মাজার বলে ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় । 

একসময় সে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় । কিন্তু তার মনে সবসময় ভয় কাজ করে। একদিন সন্ধ্যায় মাজারে একা একা দোয়া-দরুদ পড়ার সময় তার চোখে পড়ে মাজারের ঝালরওয়ালা সালু কাপড়টার এক কোণ উল্টে আছে। 

ঘরের ম্লান আলোয় কবরের সে অনাবৃত অংশটা মজিদের কাছে মৃত মানুষের খোলা চোখের মতো মনে হয়। কররের কাপড় উল্টোনো নগ্ন অংশই হঠাৎ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মৃত লোকটিকে সে চেনে না। এবং চেনে না বলেই তার পাশে নিজেকে বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে মজিদ।

প্রশ্ন-২৩. “রহিমার অলক্ষে ছাপিয়ে ওঠা অশ্রুর সঙ্গে কতক্ষণ লড়াই করে জমিলা, তারপর কেঁদে ফেলে”— তার এই কান্নার কারণ কী? 

উত্তর: পিতার বয়সি মজিদের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় নিজের ভাগ্য বিড়ম্বনার কথা ভেবেই জমিলা কেঁদে ফেলে ।

রহিমা ও জমিলা পাটি বুনছিল। গল্প করতে করতে একপর্যায়ে জমিলা রহিমাকে বলে, সে বিয়ের দিন মজিদকে দেখে তার শ্বশুর ও রহিমাকে শাশুড়ি ভেবেছিল । নিয়তিকে মেনে নিয়ে সংসার করলেও আসলে সুখী ছিল না জমিলা। তাই হাসতে হাসতে গল্প করলেও শেষ পর্যন্ত রহিমার অলক্ষে কেঁদে ফেলে জমিলা ।

প্রশ্ন-২৪. ‘জমিলা যেন ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে গেছে'— এ বাক্যটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর: চঞ্চল জমিলার পিতৃবয়সি মজিদের সাথে বিয়ের পর স্বামীর প্রতিনিয়ত শাসন আর উপদেশের কারণে সৃষ্ট মানসিক বৈকল্যকে বোঝানো হয়েছে আলোচ্য উক্তিটিতে অল্পবয়সি কিশোরী বধূ জমিলা জীবনকে যেভাবে ভেবেছিল, তার জীবনটা সে রকম হয়নি। 

তার বিয়ে হয় পিতৃবয়সের এক বুড়ো লোকের সঙ্গে, যার পূর্বের এক স্ত্রী আছে। এছাড়া জমিলার স্বামী মজিদ নানাভাবে তাকে শাসন করার চেষ্টা করে। 

ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে জমিলা । আর এটি বোঝানোর জন্যই প্রশ্নোক্ত বাক্যটি বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-২৫. ‘আজ সেখানে নির্ভেজাল নিষ্ঠুর হিংস্রতা’– এর অর্থ বুঝিয়ে দাও। 

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা রহিমার মনে স্বামী মজিদকে রাগান্বিত দেখে যে ভাবের উদয় হয়, সেটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

রহিমা তার স্বামী মজিদকে অনেকবার রেগে যেতে দেখেছে। তার মনে হয়, মজিদ যখন রাগ করে তখন তার রাগান্বিত মুখে কেমন যেন একটা সমবেদনার কোমল আভা ছড়িয়ে থাকে। 

কিন্তু মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার ঔদ্ধত্য যখন সীমাহীন হয়ে ওঠে, তখন রহিমা যেন তার স্বামীর অন্য রূপ দেখতে পায়। তখন তার কাছে মনে হয়, মজিদের মুখে হিংস্রতার নিষ্ঠুর ছায়া পড়েছে । প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা একথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-২৬. ‘কেবল ধীরে ধীরে কাঠের মত শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখটা’- কার মুখ শক্ত হয়ে ওঠে এবং কেনো?

উত্তর: মজিদের শাসনমূলক কথা শুনে জমিলার মুখ ধীরে ধীরে কাঠের মতো শক্ত হয়ে উঠে 1

মজিদ নামাজ পড়তে বলায় জমিলা সন্ধ্যার পরপরই নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু তাকে ঘুমাতে দেখে মজিদ মনে করে নামাজ না পড়েই জমিলা ঘুমিয়ে পড়েছে। 

একারণে মজিদ নির্মমভাবে জমিলাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। জমিলা এমন ব্যবহারের প্রতিবাদস্বরূপ নামাজ পড়ার কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে। 

পরদিন সকালে মজিদ এ বিষয় নিয়ে তাকে ও তার পরিবার নিয়ে কথা বলতে থাকলে ঘৃণা ও রাগে জমিলার মুখটা কাঠের মতো শক্ত হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন-২৭. ‘লালসালু' উপন্যাসের মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা বেঁকে বসে কেন?

উত্তর: ‘লালসালু' উপন্যাসের জমিলা যখন বুঝতে পারে মজিদ তাকে মাজারে নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে বেঁকে বসে।

জমিলা প্রথমে বোঝেনি যে তাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে যখন বুঝল তখন সে বেঁকে বসে। কারণ মাজার সম্পর্কে তার ভীতি কাজ করে। প্রথমত, সে মাজারের ত্রিসীমানায় কখনো ঘেঁষেনি; দ্বিতীয়ত, মজিদ আজ যে গল্প বলেছে তাতে ভয় আরও বেড়ে গেছে। সেজন্য সে মজিদের শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।

প্রশ্ন-২৮. জমিলা মজিদের মুখে থুথু দিয়েছিল কেন? 

উত্তর: মজিদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাকে শাস্তি দিতে জোর করে মাজারের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে মজিদের মুখে থুথু দিয়েছিল

মজিদের আদেশে নামাজ পড়তে গিয়ে জমিলা জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়ে । বিষয়টি লক্ষ করে মজিদ জমিলার ওপর ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। 

জমিলাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সে তার হাত ধরে টানতে টানতে মাজারের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু জমিলা মাঝ উঠোনে এসে আর সামনে এগোতে চায় না। 

সে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে মজিদের বজ্রমুষ্টি থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যখন অনেক চেষ্টা করেও হাত ছাড়াতে পারে না, তখন সে হঠাৎ সোজা হয়ে মজিদের কাছে এসে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করে।

প্রশ্ন-২৯. ‘ধান দিয়া কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে'— এ উক্তি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ‘লালসালু' উপন্যাসের রহিমার মাতৃহৃদয় বিচলিত হয়ে ওঠার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা তাকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। কিন্তু মজিদ তার অল্পবয়সি দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার ওপর নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে। 

এজন্য সে দুর্যোগপূর্ণ অন্ধকার রাতে জমিলাকে মাজারে বেঁধে রেখে আসে'। মজিদ যখন জমিলাকে ঝড়বৃষ্টির রাতে একা মাজারে বেঁধে রেখে আসে, তখন রহিমা জমিলার কথা ভেবে বিচলিত হয়ে ওঠে। 

জমিলার জন্য রহিমার মানসিক পরিবর্তন লক্ষ করে মজিদ তার মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে চায়। তাই সে শিলাবৃষ্টির প্রসঙ্গ তুলে ধানের ক্ষতি হওয়ার কথা বলে । 

কিন্তু এ পরিস্থিতিতে স্বামীভক্ত রহিমা প্রতিবাদী ভাষায় মজিদকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে। রহিমার এই উক্তির দ্বারা তার মাতৃহৃদয়ে কমবয়সী জমিলার জন্য শঙ্কা ও সন্তানবাৎসল্যসুলভ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন-৩০. ‘বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ'— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: শিলাবৃষ্টির পর মজিদসহ মহব্বতনগরবাসী সম্পর্কে বলা হয়েছে “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ' ।

মহব্বতনগরে শিলাবৃষ্টিতে ধানক্ষেত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সেই ধানক্ষেত দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের দৃষ্টিতে কোনো ভাব বা উদ্দেশ্য ছিল না। 

মজিদ এই অবস্থা দেখে সকলকে খোদার ওপর বিশ্বাস রাখতে বলে। তখন সকলের দৃষ্টি দেখে মনে হয় যেন তাদের চোখের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে ।

Next Post Previous Post
13 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 09 September

    Masha Allah .vai onek help hoisa😊

    • Anonymous
      Anonymous 18 November

      Thank you

    • Anonymous
      Anonymous 18 November

      Thank you

  • Anonymous
    Anonymous 29 November

    Thank you vaiya

  • Anonymous
    Anonymous 15 December

    Thank you brother.

  • Anonymous
    Anonymous 16 January

    very very thank you

  • Anonymous
    Anonymous 04 February

    Thanks vaiya.

  • Anonymous
    Anonymous 05 February

    Thanks👍👍

  • Anonymous
    Anonymous 16 February

    সত্যি‌ ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ‌ ।এত সুন্দর করে গুছিয়ে প্রশ্নগুলোর‌ উওর‌ তৈরি‌ করে দেওয়ার জন্য । 🥰🥰🥰❤️🌼

  • Anonymous
    Anonymous 18 February

    ধন্যবাদ ভাইয়া _🙂

  • Anonymous
    Anonymous 18 February

    many many thanks

  • Anonymous
    Anonymous 27 February

    অনেক ধন্যবাদ 😍💝

  • Anonymous
    Anonymous 15 March

    অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ❤️

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ