১২টি রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জানুন

১২টি রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জানুন
রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. নুরুল হুদা অনেক সুরা মুখস্থ করেছেন কেন?

উত্তর: ‘রেইনকোট' গল্পে নুরুল হুদা যে অমুসলিম নন, তা প্রমাণ করার জন্য তিনি অনেক সুরা মুখস্থ করেছেন ।

‘রেইনকোট' গল্পে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সম্প্রদায়িক নির্যাতনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে কালেমা ও সুরা জিজ্ঞেস করে তাদের ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চিত হতো। 

কালেমা ও সুরা বলতে অপারগ হলে, তাদের ওপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন । নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর এই সাম্প্রদায়িক নির্যাতন থেকে বাঁচতে অনেক সুরা মুখস্থ করেছেন ।

প্রশ্ন-২. প্রিন্সিপ্যাল সাহেব সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর পরামর্শ দিয়েছেন কেন ?

উত্তর: প্রিন্সিপ্যাল সাহেব পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সমর্থক ছিলেন বলে সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। গল্পে প্রিন্সিপ্যাল সাহেব একজন স্বার্থান্বেষী ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি । তিনি পাকিস্তানের জন্য দিন-রাত দোয়া-দরুদ পড়েন এবং কান্নাকাটি করেন ।

তিনি মনে করে, শহিদ মিনার হচ্ছে পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। তাই তিনি পাকিস্তানি মিলিটারিকে সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ করেন।

প্রশ্ন-৩. ‘এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা'— উক্তিটি বুঝিয়ে দাও । 

উত্তর: প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিতে ভাষাশহিদদের স্মরণে নির্মিত শহিদ মিনার সম্পর্কে পাকিস্তানিদের দোসর প্রিন্সিপ্যালের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।

‘রেইনকোট' গল্পে বর্ণিত প্রিন্সিপ্যাল কট্টর পাকিস্তানপন্থি। শিক্ষিত বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করেন। 

বাঙালির স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে নানারকম পরামর্শ দেন । এরই অংশ হিসেবে, তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশের সকল শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন। 

তাঁর মতে, শহিদ মিনার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উজ্জীবিত করে। তাই এগুলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা

প্রশ্ন-৪. মিন্টু কেন বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল?

উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য মিন্টু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশে পাকিস্তানি হানাদাররা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। 

বিবেকবোধসম্পন্ন কোনো মানুষ তখন ঘরে বসে থাকতে পারেনি। দেশের সম্মান রক্ষার্থে তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল । 

‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুও ঠিক এ কারণেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল । অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মিন্টু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল ।

প্রশ্ন-৫. নুরুল হুদার স্ত্রী কেন বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে গেলেন?

উত্তর: পাশের ফ্ল্যাটের গোলগাল মুখের মহিলা নুরুল হুদার স্ত্রীকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে গেলেন ।

নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে নুরুল হুদা ও তাঁর স্ত্রী ভীতু প্রকৃতির সাধারণ মানুষ। মিন্টুর ব্যাপারে তাঁরা সব সময়ই তটস্থ থাকেন। 

মিন্টুকে নিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালেই তাঁরা ভয় পেয়ে যান। তাই পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা যখন নুরুল হুদার স্ত্রীর কাছে ছোটো ভাইয়ের খবর জানতে চান, তখন তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দ্রুত নিবাস পরিবর্তনের জন্য অস্থির হয়ে যান।

প্রশ্ন-৬. 'আব্বু ছোটোমামা হয়েছে।'- কথাটি কী অর্থ বহন করে? 

উত্তর: মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট পরার পর প্রফেসর নুরুল হুদাকে দেখতে মিন্টুর মতো লাগছে এ প্রসঙ্গে ছোট্ট মেয়ে এ উক্তিটি করেছে । 

‘রেইনকোট' গল্পে নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা । মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগে নুরুল হুদাকে সেনাক্যাম্পে ডেকে পাঠানো হয়। বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাচ্ছেন দেখে নুরুল হুদার স্ত্রী তাঁকে মিন্টুর রেইনকোর্ট পরিয়ে দেয়। 

নুরুল হুদা বিপদ ও ঝুঁকি এড়িয়ে চলা একজন সাধারণ মানুষ। রেইনকোট গায়ে দেওয়ার পর তাঁর মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয় যে, তাঁকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো দেখাচ্ছে। ছোট্ট মেয়ে যখন এ কথা বলে তখন তিনি আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েন।

প্রশ্ন-৭. ‘ড্রেসিং টবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুনরূপে সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়।'— কে, কেন ভ্যাবাচ্যাকা খায়? 

উত্তর: নুরুল হুদা একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট পরিধান করায় পাকিস্তানি সেনারা তাকেও মুক্তিযোদ্ধা ভেবে আক্রমণ করতে পারে ভেবে সে আতঙ্কিত হয়েছে।

‘রেইনকোট' গল্পের প্রধান চরিত্র কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির মানুষ। কলেজের প্রিন্সিপ্যালের নির্দেশে প্রবল বৃষ্টির মাঝেও কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন তিনি। 

বৃষ্টির কারণে মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরিধান করায় তাকেও মুক্তিযোদ্ধার মতোই লাগছিল। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে গ্রেপ্তার করতে পারে । তাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন রূপ দেখে তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান ।

প্রশ্ন-৮. 'টুপির তেজ কি পানিতেও লাগল নাকি? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট পরিধান করে ভীতু নুরুল হুদার মাঝে যে সাহসের সঞ্চার ঘটেছে তারই প্রতিফলন বোঝাতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।

‘রেইনকোট' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা ভীতু প্রকৃতির মানুষ। শ্যালক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর ভয়ে সে চারবার বাড়ি বদল করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে সর্বদা ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। একদিন শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরিধান করে সে সাহসী হয়ে ওঠে। 

একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট কীভাবে মানুষের মাঝে সাহস, উষ্ণতা ও দেশপ্রেমের সঞ্চার করে— তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্যদিয়ে।

প্রশ্ন-৯. ‘ক্রাক-ডাউনের' রাতে কী ঘটেছিল?

উত্তর: ক্রাক-ডাউনের রাতে নিরীহ বাঙালির ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল।

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালি শোষণ-নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। 

এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। সে রাতের ভয়াবহতা বোঝাতে 'ক্রাক-ডাউনের রাত' কথাটি বলা হয়েছে ।

প্রশ্ন-১০. 'রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন’– ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: ‘রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বর্ষা ঋতুর সহায়ক ভূমিকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শীতের কবলে পড়ে জার্মান বাহিনী রাশিয়ায় পর্যুদস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ষা ঋতুর কারণে পাকিস্তানি বাহিনী একইভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিল। 

বাংলার প্রবল ঝড়-বৃষ্টির সাথে হানাদার বাহিনীর পরিচয় ছিল না। ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বর্ষা ঋতুর সাথেও লড়তে হয়েছিল। ‘রেইনকোট' গল্পে বর্ষা ঋতুকে তাই রাশিয়ার জেনারেল উইনটারের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-১১. নুরুল হুদার কাছে কোন বিষয়টিকে ‘স্রেফ উৎপাত' বলে মনে হয়? ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: পাকিস্তানি মিলিটারিদের নির্যাতন নুরুল হুদার কাছে 'স্রেফ উৎপাত' বলে মনে হয়।

'রেইনকোট' গল্পে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা কলেজের সামনে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্যে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। 

মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরিধান করার ফলে নুরুল হুদার মাঝে সাহস ও দেশপ্রেমের সঞ্চার ঘটে। মিলিটারিরা তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করলে নুরুল হুদা গর্ব অনুভব করে। 

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আঁতাত রাখার উত্তেজনায় পাকিস্তানি সেনাদের চাবুকের বাড়ি তার কাছে 'স্রেফ উৎপাত' বলে মনে হয় ।

প্রশ্ন-১২, ‘যেন বৃষ্টি পড়ছে মিন্টুর রেইনকোটের ওপর।'- বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: মুক্তিসেনা মিন্টুর রেইনকোটটি পরে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার ভেতরে যে চেতনা সঞ্চারিত হয়েছিল, তার নিখুঁত পরিচয় আছে ‘রেইনকোট' গল্পে ।

মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি পরার পর থেকেই ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে সঞ্চারিত হয় সাহস ও দেশপ্রেমের এক বিচিত্র অনুভূতি। 

মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নুরুল হুদার সংযোগ থাকায় তাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে তথ্য বের করার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি সেনারা। 

কিন্তু রেইনকোটটির কারণে তার মাঝে, যে প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছিল, তা যেন তার চাবুকের আঘাতকে ভুলিয়ে দিয়েছিল । নুরুল হুদার কাছে চাবুকের আঘাতের ব্যাপারটি রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতোই স্বাভাবিক লাগছিল ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ