ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয়

ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয় - আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয় জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয় । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন। 

ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয়
ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয়

ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয়

উত্তর : ভূমিকা : স্পেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওমর বিন হাফসুন একজন বিতর্কিত নেতা ছিলেন। ওমর বিন হাফসুনের উত্থান ও পতন স্পেনের ইতিহাসে একটি চাঞ্চল্যকর ও চমকপ্রদ ঘটনা। তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান সংগঠক ও সমরকুশলী নেতা। 

ক্রমাগত ত্রিশবছর ধরে তিনি তিনজন আমির এবং একজন খলিফার সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন। তবে তার ধূর্তামি, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা ও দস্যুবৃত্তি তার বীরত্বের অহমিকাকে ম্লান করে দেয়; তবুও একজন সফল নেতার যাবতীয় গুণাবলি তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। 

তাই নিঃসন্দেহে তাকে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা বলে অভিহিত করা যায়। তাকে স্পেনের ইতিহাসে "The champion of a long suppressed nationality." বলা হয় ৷

→ ওমর বিন হাফসুনকে একজন বিতর্কিত নেতা বলার কারণ : ওমর বিন হাফসুনকে একজন বিতর্কিত নেতা বলার কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. ইসলাম ধর্ম গ্রহণ : ওমর বিন হাফসুন মুসলিম স্পেনের রাজত্বকালে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন। তার পিতা হাবস্ বিন ওমর বিন জাফর আল ইসলামি ছিলেন ভিজি গথিক খ্রিস্টান জাতি, তিনি আল হাকামের রাজত্বকালে খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং হাফসুন নামে পরিচিত হন। ওমর বিন হাফসুন একজন অসৎ চরিত্রের লোক ছিলেন ।

২. দস্যুবত্তি গ্রহণ : ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করলে ও তার মনটি উগ্র বাসনায় উদ্দীপ্ত হয়ে তাকে শান্ত ও নীরব জীবনযাপন হতে অনেক দূরে রাখে ।

ওমর বিন হাফসুন ৮৮০ সালে চাচা মুজাহিবের সহায়তা বোবাস্ট্র পাহাড়ের পাদদেশে কাম্পিলন নামে একটি দুর্গে আশ্রয় নেন । তিনি সেখানে ৪০ জন ডাকাতের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে দস্যুবৃত্তি অবলম্বন করেন। 

এ সময় খ্রিস্টান ও নব মুসলিমগণ তার সাথে মিলিত হয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে লুণ্ঠন ও স্পেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যা স্পেনের জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।

৩. প্রথম মুহাম্মদের সাথে সংঘর্ষ : ওমর বিন হাফসুন বর্ধিত শক্তিতে উৎসাহিত হয়ে একদা রিজিও আক্রমণ করেন। মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হিশাম বিন আজিজকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে হিশাম প্রথমে পরাজিত হয় পরে অবশ্য ওমরকে পরাজিত করেন। 

তার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে হিশাম তাকে ৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভার নগরপালের সাথে হাফসুনের মনোমালিন্য হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে ব্যর্থ হন এবং পদত্যাগ করে পুনরায় বোবাস্ট্র পর্বতের দস্যুদের সাথে মিলিত হন। 

প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করে মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মুহাম্মদ জায়েদ বিন কাশিমকে প্রেরণ করলে ওমর ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে ওমরা অতর্কিতে রাজকীয় বাহিনীকে আক্রমণ করে জায়েদকে হত্যা করেন। 

অতঃপর মুহাম্মদ ক্রুদ্ধ হয়ে ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে আল মুনজিরকে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে প্রেরণ করলে ওমর আল হামায় পালায়ন করে । কিন্তু দুর্ভাগ্য এ সময় পিতার মৃত্যু সংবাদে মুনজির রাজধানীতে ফিরে আসেন ।

৪. মুনজিরের সাথে সংঘর্ষ : ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুনজির সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের কিছু অসমাপ্ত কাজের প্রতি মনোযোগ দেন। এ সুযোগে ওমর সারাগোসা দখল করে তলেদোর অভিমুখে যাত্রা করেন। 

মুনজির সেনাপতি বিন হিশাম বিন আব্দুল আজিজকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে ওমর একটি বন্ধুত্বমূলক চুক্তি করার আবেদন করেন। তিনি নগরে প্রবেশ করলে বিশ্বাসঘাতক ওমরের অনুচরগণ তাকে আক্রমণ করে। 

অবশেষে আমির তাঁর ভ্রাতা আব্দুল্লাহকে প্রেরণ করেন। তিনি ৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে বসন্তকালে দুর্ভেদ্য বোবাস্ট্র অবরোধ করলে ওমর আত্মসমর্পণ করে একশত খচ্চর প্রার্থনা করেন। কিন্তু তিনি দলবলসহ রাতের অন্ধকারে আমিরের তাবু হতে পলায়ন করেন।

৫. আব্দুল্লাহর সাথে সংঘর্ষ : ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল্লাহ ওমরের বিরুদ্ধে চল্লিশ দিন ব্যাপী এক অভিযান পরিচালনা করে বহু বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন। পর পর কয়েকটি যুদ্ধে ব্যর্থতা ও অমাত্যবর্গের দৌরাত্ম্যের ত্রিসংকুল অবস্থায় পড়ে আব্দুল্লাহ ওমরের স্মরণাপন্ন হন। 

ওমর উদ্দেশ্য গোপন রেখে সেনাবাহিনীতে যোগদেন এবং ষড়যন্ত্র করে সেনাপতি ইব্রাহিম বিন খামিরকে ও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে বন্দি করেন। 

খ্রিস্টানদের সহায়তায় রাজধানীতে এতদূর প্রভাব বিস্তার করেন যে রাজধানীর জন্য তিনি হুমকি হয়ে দাঁড়ান। ওমর গোয়াদল কুইভার নদীর উত্তরের প্রধান দুর্গসমূহ দখল করেন।

ফলে দলে দলে স্পেনবাসী তাকে নেতা বলে স্বীকার করতে থাকে। এখানেই ওমরের কৃতিত্বের চূড়ান্ত পর্যায় এবং উমাইয়া শাসনের জন্য খুবই দুঃখজনক ছিল ।

৬. খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ : স্বীয় শক্তি ও সাফল্যে গর্বিত হয়ে ওমর সমস্ত পরিবারবর্গসহ ৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘স্যামুয়েল’ নাম ধারণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ায় খ্রিস্টানগণ তাকে সাহায্য করবে বলে তার বিশ্বাস ছিল কিন্তু খ্রিস্টানরা ওমরকে বিশ্বাসঘাতক মনে করতো। 

এদিকে ইয়াহিয়া বিন আনাতুসসহ তার সাঙ্গ পাঙ্গরা তার আনুগত্য অস্বীকার করে আব্দুল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করেন। এ সময় আমিরের পক্ষে ওমরকে একেবারে দমন করা সম্ভব ছিল না বলে চুক্তি সম্পাদন করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ওমর বিন হাফসুন ছিলেন একজন প্রতিভাবান সংগঠক ও সমরকুশলী নেতা। ক্রমাগত ত্রিশবছর ধরে তিনি তিনজন আমির এবং একজন খলিফার সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন। 

তবে তার ধূর্তামি, কপটতা, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতা ও দস্যুবৃত্তি তার বীরত্বের অহমিকাকে ম্লান করে দেয়; তবুও একজন সফল নেতার যাবতীয় গুণাবলি তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয়

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ওমর বিন হাফসুনকে কেন একজন বিতর্কিত নেতা বলা হয় । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ