বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও |
বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : একজন ভাগ্যান্বেষী ও অসীম সাহসী তুর্কি বীর হিসেবে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি ব্রয়োদশ শতাব্দীতে পূর্বভারতে অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে দক্ষিণ বিহার ও পরে পশ্চিম-উত্তর বাংলার অধিকাংশ এলাকা জয় করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি ভারতের ইতিহাসে তথা বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম স্বাক্ষর করেন। তার বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসনের পথ সুগম হয়।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পরিচয় : তার পূর্ণ নাম ইনডিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি হলেও ইতিহাসে তিনি বখতিয়ার খলজি নামেই বেশি পরিচিত। তার পূর্ব পরিচয় সম্পর্কে এতটুকু জানা যায় যে, তিনি আফগানিস্তানের অধিবাসী ছিলেন।
জাতিতে তুর্কি বংশে খলজি ও পেশায় ভাগ্যান্বেষী একজন সৈনিক। পরবর্তীতে মুহাম্মদ ঘুরীর নিকট চাকরি প্রার্থী হলে তার কুৎসিত চেহারা, উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়া ও আজানুলম্বিত হাতের কারণে প্রত্যাখ্যান হন।
পরে বলারুনের শাসনকর্তা হিজবরউদ্দিনের কাছে নগদ বেতনের চাকরি নেন। এরপর তিনি চাকুরি ছেড়ে অযোধ্যা চলে যান।
২. যোগ্য সংগঠক : অযোধ্যার শাসনকর্তা হিসামউদ্দিন বখতিয়ারের প্রতিভার কথা জানতে পেরে তাকে মুসলেম বাজারে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন এবং বিনিময়ে তাকে মির্জাপুর জেলায় ভগবত ও ভিউলি নামক দুটো পরগণার জায়গীর প্রদান করেন।
উচ্চাভিলাষী বখতিয়ার খলজি উন্নতির পথ খুঁজে পেয়ে বিশাল সেনাবাহিনী পঠনের লক্ষ্যে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল লুণ্ঠন করেন।
৩. সেনাবাহিনী গঠন : বখতিয়ারের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্বদেশত্যাগী তার নিজ বংশের যুবকরা তার সৈন্য বাহিনীতে যোগদান করেন।
তিনি তাদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন । এ দক্ষ বাহিনী তার পরবর্তী অভিযানে সাফল্য বয়ে আনে।
৪. বিহার বিস্তার : বখতিয়ার খলজি তার জায়গীরের সীমান্তবর্তী এলাকায় ১২০৩ সালের দিকে ২০০ জন সৈন্য নিয়ে এক অভিযানের মাধ্যমে পাল বংশীয় রাজা গোবিন্দ পালকে পরাজিত ও নিহত করে বিহারের রাজধানী উদজাপুর বিহার দখল করেন। এর পরে বখতিয়ার খলজি সুজলা-সুফলা বাংলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।
৫. বাংলা বিজয় : সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বখতিয়ার খলজি ১২০৪ সালে বাংলা জয় করেন। এ সময় বাংলার রাজধানী ছিল নদীয়া এবং গৌড়।
তবে নদীয়া আক্রমণের তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও তবাকাত নাসিরিতে বলা হয়েছে বিহার বিজয়ের পরের বছর তিনি নদীয়া অভিযানে আসেন। আধুনিক ঐতিহাসিক ড. আব্দুল করিমের মতে, বখতিয়ার খলজি ১২০৪ সালে নদীয়া আক্রমণ করেছেন।
৬. বাংলা বিজয়ের ধারা : বখতিয়ারের বাংলা আক্রমণের সময় রাজা লক্ষণ সেন দ্বিতীয় রাজধানী নদীয়াতে ছিলেন। নদীয়া ছিল গঙ্গাতীরে অবস্থিত একটি তীর্থস্থান।
ডেলিয়াগড়ের দক্ষিণে বাংলার পশ্চিম সীমান্তের গভীর জঙ্গল হতে তার বাহিনী নিয়ে নবদ্বীপের ২০ মাইল উত্তর থেকে যাত্রা করে দুপুর নাগাদ যাত্রা দ্রুতগতিতে আসায় ১৮ জন সৈন্য নিয়ে নদীয়া পৌঁছে। এ সময় রাজা লক্ষণ সেন দুপুরের ভোজ ও সিঙ্গা পালনে ব্যস্ত ছিলেন।
৭. লক্ষণ সেনের পলায়ন : আক্রমণের সংবাদ শুনে মধ্যাহ্ন ভোজরত লক্ষণ সেন অবস্থা সংকটাপন্ন বেগতিক দেখে নিজ জীবন রক্ষার্থে নগ্নপদে পিছনের দরজা দিয়ে পূর্ববঙ্গে পলায়ন করেন। লক্ষণ সেনের সৈন্যরাও আক্রমণ করার সাহস পায়নি।
৮. লখনৌতি জয় : নদীয়ার মতো অরক্ষিত না থাকলে ও বাংলার ঐতিহাসিক রাজধানী গৌড় বা লখনৌতি বিনা বাধায় বখতিয়ার খলজির অধীনে আসে।
গৌড় বিজয়ের পর বখতিয়ার খলজি এখানে রাজধানী স্থাপন করেন। গৌড় জয়ের পর তিনি আরো পূর্বদিকে এগিয়ে বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলায় নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং সুশাসনে মনোযোগী হন।
৯. বখতিয়ারের পক্ষে সহজে বাংলা জয়ের কারণ : একজন সময়নায়ক বা বাংলায় প্রথম মুসলিম বিজেতা হিসেবে বখতিয়ার খলজি মাত্র কয়েক জন সৈন্য নিয়ে বাংলার রাজধানী দখল করেন।
১০. হতবেশী আক্রমণ : ১৮ জন হয়বেশী সৈন্য নিয়ে বখতিয়ার খলজি নগরীতে প্রবেশ করলে তাদেরকে মোড়া ব্যবসায়ী মনে করে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। তার এ ছদ্মবেশের কারণে তিনি বাংলা জয় করতে সক্ষম হন।
১১. প্রচলিত পথে না আসা : বখতিয়ার খলজি বাংলায় প্রবেশ করতে প্রচলিত ডেলিয়াগড় গিরির পথ পরিত্যাগ করে চতুরতার সাথে দুর্গম গিরিপথ দিয়ে বাংলা আক্রমণ করে জয়লাভ করেন।
১২. লক্ষণসেনের গুপ্ত দফতরের অযোগ্যতা : কর্ম তৎপরহীন লক্ষণসেনের অদক্ষ গুপ্তচর বাহিনী বহিঃশত্রুর আক্রমণের সংবাদ রাজাকে প্রদান করতে পারেনি। তাদের এ ধরনের মনোযোগহীনতার কারণে বখতিয়ার খলজি সহজে বাংলা জয় করেন।
১৩. গণঅসন্তোষ লক্ষণ : সেনের গণঅত্যাচারী শাসনের ফলে জনগণ তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। ফলে বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের সময় তিনি জনগণের কোনো সহায়তা পাননি। যার ফলে সহজে বখতিয়ার খলজি বাংলা জয় করে।
১৪. অরক্ষিত রাজধানী : নদীয়া লক্ষণ সেনের উপরাজধানী হওয়ায় তেমন নিরাপত্তা বলয় প্রদান করা হয়নি। আর নদীয়া অরক্ষিত থাকায় ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি অতি সহজে বাংলা আক্রমণ করে জয় করেন।
১৫. দক্ষ তুর্কি সেনা : বখতিয়ার খলজির সেনাবাহিনী ছিল দক্ষ, সুকৌশলী ও চৌকষ। তার এ দক্ষ বাহিনীর আক্রমণের ফলে লক্ষণ সেনের সৈন্যরা আক্রমণ করার সাহস পায়নি। এ সুযোগে তিনি বাংলা জয় করেন।
১৬. পরিষদবর্গের পশ্চাৎ প্রসারণ : ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বিহার বিজয়ের পর বাংলা আক্রমণ করতে পারে এ ভয়ে রাজা লক্ষণ সেনের মন্ত্রীরা পূর্ব বঙ্গে চলে যায়। যা বখতিয়ার খলজিকে বাংলা জয় করতে সুযোগ প্রদান করেন।
১৭. বখতিয়ারের মূল বাহিনীর দ্রুততা : বখতিয়ার একদিকে ১৮ জন সৈন্য নিয়ে প্রাসাদে ঢুকে পড়ে তখন অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে তার মূল বাহিনী নগরীর তোরণদ্বারে পৌঁছে যায়। এ অবস্থায় লক্ষণ সেনের পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
১৮. গুজব। বখতিয়ারের বাংলা বিজয়ের অন্যতম সাফলা ছিল গুজব। কারণ গুজব রটে যে বখতিয়ার বিশাল বাহিনী নিয়ে বাংলা জয় করতে এসেছে। এতে করে লক্ষণ সেনের সৈন্যরা | তার সেনাবাহিনীকে সাথে আক্রমণ করতে সাহস পায়নি।
বাংলা বিজয়ের ফলাফল : মধ্যযুগীয় বাংলার ইতিহাসে বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয় এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। তার বাংলা জয়ের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
নিচে তার বাংলা বিজয়ের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. মুসলিম শাসন ও আধিপত্য : বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে বখতিয়ার এ অঞ্চলের হিন্দু অধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে মধ্যযুগ থেকে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামি শাসন ও সংস্কৃতির | বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
২. রাজ্যবিস্তার : বখতিয়ার খলজি বাংলার রাজ্যসীমা উত্তরে পূর্ণিমা, দেবকোট ও রংপুর, পূর্বে তিস্তা ও করতয়া নদী পশ্চিমে কুশা নদীর ভাটি থেকে রাজমহল পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। এসব অঞ্চল জয় করার ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পায়।
৩. সুশাসনের ব্যবস্থা : বখতিয়ার খলজি বাংলা জন্ম করার মাধ্যমে সেখানে একটি সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি বাংলায় একটি ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন তার সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থার ফলে রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা : বখতিয়ার খলজি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি বাংলার মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ তৈরি করেন। তার এসব কার্য তাকে বাংলার ইতিহাসে অমরত্ব দান করেছে।
৫. ইসলাম প্রচার : বাংলায় ইসলাম প্রচারে বখতিয়ার খলজির অবদান অপরিসীম। তার বিজয়ের কালে বহু সুফী সাধক বাংলায়া আগমণ করেন। যদুনাথ সরকার বলেন যতদিন বাংলায় ইসলাম ধর্ম থাকবে বখতিয়ার খলজির ততদিন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
৬. বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা : বখতিয়ার খলজি বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং নব প্রতিষ্ঠিত রাজ্যে সুশাসনের ব্যবস্থা করে। তিনি রাজ্যকে ইকতায় ভাগ করে প্রত্যেকটিতে একজন শাসক নিয়োগ প্রদান করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির কর্মজীবন ইতিহাসের একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। সুদূর আফগানিস্তান হতে এসে নিঃস্ব সৈনিক হিসেবে জীবন আরম্ভ করে নিজ ক্ষমতা ও সাহসিকতার বলে তিনি বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
শুধু তাই নয়, এখানে মুসলিম শাসন অব্যাহত রাখতে এবং ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিভিন্ন রাজ্য জয় করে এগুলোকে সংগঠিত করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের বাংলায় বখতিয়ার খলজির মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।