ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।।

ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর
ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর

ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর

  • অথবা, ব্রিটিশ লর্ডসভার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধর। 

উত্তর : ভূমিকা : গ্রেট ব্রিটেন পৃথিবীর পার্লামেন্টীয় শাসনব্যবস্থার পীঠস্থান। পার্লামেন্ট ব্রিটেনের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ সংস্থা। বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বলতে রাজা বা রানিসহ পার্লামেন্টকে বুঝায়।

 অন্যভাবে বলা যায়, রাজা বা রানি এবং লর্ডসভা ও কমন্সসভা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট গঠিত বিশ্বের অনেক দেশের আইনসভাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুকরণে গড়ে উঠেছে। সেজন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে পার্লামেন্টের জননী (Mother of parliaments) বলে অভিহিত করা হয়।

লর্ডসভার সমালোচনা : ব্রিটেনের সংবিধানবিদ ও রাজনীতিকগণ দীর্ঘকাল যাবৎ বিভিন্ন যুক্তিতে লর্ডসভার গঠনরীতি ও কার্যকারিতার সমালোচনা করে আসছেন। তাদের কেউ কেউ লর্ডসভার সংস্কার, আবার কেউ কেউ লর্ডসভা বিলুপ্ত করে দেওয়ার পক্ষেও মত ব্যক্ত করেছেন। 

তাদের সমালোচনার নিম্নোক্ত যুক্তি দেখান হয় :

১. লর্ডসভার গঠন অগণতান্ত্রিক : লর্ডসভার গঠন প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে একে প্রকৃতিগতভাবে অগণতান্ত্রিক কক্ষ বলে সমালোচকরা অভিহিত করেন। কারণ লর্ডসভার সকল সদস্যই উত্তরাধিকারসূত্রে কিংবা উপাধির ভিত্তিতে সদস্যপদ লাভ করেন। 

এখানে জনগণের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি স্থান পান না। গণতান্ত্রিক সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ধ্যানধারণার প্রতি এটি কখনোই সহানুভূতিসম্পন্ন হতে পারে না, বরং এটি সর্বসাধারণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করতে প্রয়াস পায়। 

বংশগত উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে আইনসভার সদস্যপদ এবং আইন প্রণয়নের অধিকার লাভ গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।

২. লর্ডসভা বিত্তশালীদের দুর্গ : লর্ডসভা ব্রিটিশ সমাজের সম্পদশালীদের একটি কক্ষে পরিণত হয়েছে। কার্টার, রেনী এবং হার্জ বলেছেন, লর্ডসভা কেবল সম্পদ এবং বিশেষ সুযোগ- সুবিধার প্রতিনিধি নয়। 

এ কক্ষ হলো সম্পদ এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যক্তিত্ব বিশেষ।লাস্কি (Laski) বলেন, “ব্রিটেনে এমন কোনো বৃহৎ জাতীয় শিল্প নেই যার উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব পর্ডসভায় অনুপস্থিত।

৩. রক্ষণশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা : সা রক্ষণশীল দলের এবং প্রতিক্রিয়াশীল দলের স্বার্থ সংরক্ষণের যন্ত্রস্বরূপ। লর্ডসভার প্রগতি বিরোধী ও জনস্বার্থ বিরোধী ভূমিকা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কমপসভায় প্রগতিশীল কোনো দল যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তখনই তাকে পদে পদে বাধাদান করা লর্ডসভার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

৪. লর্ডসভা একটি বিশেষ দলের প্রতিনিধি : পর্ভসতা একটি বিশেষ দল অর্থাৎ রক্ষণশীল দলের পৃষ্ঠপোষিত কক্ষে পরিণত হয়েছে। আইভর জেনিংস-এর মতে, সবদিক থেকেই লর্ডসভা রক্ষণশীল দলের একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। 

লর্ডসভাকে ধীরে ধীরে রক্ষণশীলতার দিকে নিয়ে যাবার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দলের বিভাজন মূলত অর্থনৈতিক বিভাজন। 

৫. লর্ডসভায় উপস্থিতির সংখ্যা : অত্যয় লর্ডসভা যে বিত্তশালীদের স্বার্থ সংরক্ষণের দুর্গ তা আরেকটি বিষয় হতেও প্রমাণিত হয়। লর্ডসভার সদস্যসংখ্যা এক হাজারের বেশি। কিন্তু সভায় উপস্থিতির সংখ্যা অভ্যয়। আবার উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে খুব কম জনই সভার কাজে অংশগ্রহণ করেন। সদস্যাদের মধ্যে মন্ত্রী থাকলে কেবল তারাই সভার আলোচনা ও বিতর্কে যোগ দেন।

৬. লর্ডসতা অপ্রয়োজনীয় : অনেকের মতে, কমলসতার আকস্মিক ও অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নে বাধা দান করে লর্ডসভা দেশের কল্যাণ সাধনই করে। 

লর্ডসভা না থাকলে কমন্সসভায় এমন সব আইন প্রণীত হত যা জনস্বার্থের ক্ষতিসাধন করে। কিন্তু এসব যুক্তি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। 

কারণ আইন পাস হওয়ার বিভিন্ন ধারার এবং পাঠের মধ্যদিয়ে যেতে বিলম্ব হয়। বস্তুত, বর্তমান সময়ে কেবিনেট প্রথম কক্ষ এবং কমন্সসভার দ্বিতীয় কক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৭. লর্ডসভার সদস্যগণ অনুপযুক্ত : লর্ডসভার সদস্যগণ অনুপযুক্ত বলেও সমালোচনা করা হয়। কোনো কোনো সদস্য আইন প্রণয়নে আগ্রহী, উৎসাহ বা সামর্থ্যের পরিচয় দেয় না। 

অধিকাংশ সদস্যই বংশগত পিয়ার আইন প্রণয়নের কার্য পালনের জন্য নিয়োগ করা সন্তোষজনক বিষয় নয়। 

কোনো কোনো ব্যক্তিকে গুণাবলি বা দেশসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ নয়, বরং দলীয় তহবিলে অর্থ দানের পুরস্কার স্বরূপ লর্ডসভার সদস্যদের প্রদান করা হয় বলে ও গুরুতর সন্দেহ পোষণ করা হয়।

৮. লর্ডসভা দায়িত্বহীন : লর্ডসভার সদস্যগণ নির্বাচিত হন না বলে তাদের কারও কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয় না। ফলে তারা অধিকাংশ সময় জনমতকে উপেক্ষা করে দায়িত্বহীনের মতোই আচার আচরণ করেন। 

এরূপ একটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন কক্ষকে গণতান্ত্রিক আইনসভার অংশ হিসেবে রাখার বিরুদ্ধে প্রতিটি গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তাই বলা যায়, লর্ডসভা হলো দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি কক্ষ।

৯. আধুনিকতার অভাব : সমালোচকদের মতে, লর্ডসভার সদস্যগণ বয়সে সাধারণভাবে প্রাচীন হওয়ায় তাদের চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব এ আধুনিকতার অভাব লক্ষ করা যায়।

১০. বাস্তবতাবোধের অভাব : সমালোচকরা উল্লেখ করেন, লর্ডসভার সদস্যগণ তাদের কাজকর্মে দীর্ঘসূত্রিতার পরিচয় দেন। তারা কোনো বিষয়ের গুরুত্ব বুঝাতে চান না। তাদের মধ্যে বাস্তবতাবোধের অভাব রয়েছে।

১১. আরামপ্রিয়দের কক্ষ : লাস্কি (Laski)-এর মতে, লর্ডসভা আরামপ্রিয় ও বিলাসীদের একটি কক্ষ। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোনো অগণতান্ত্রিক বা প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের দাবির সাথে নিজের আচার আচরণের নিরন্তর এবং দ্রুত সামঞ্জস্য রক্ষা না করে নিজ নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না ।

১২. আপিল আদালতের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ নয় : লর্ডসভা ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে -এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। সংস্কার আইনের মাধ্যমে নতুন আদালত গঠন করে সেই আদালতের হাতে সর্বোচ্চ আপিল আদালতের দায়িত্ব ন্যস্ত করা যায়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জনগণের দৃষ্টিতে জাতীয় আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষ হিসেবে লর্ডসভার মর্যাদা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। 

বর্তমান উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যুগে লর্ডসভার মত একটি অগণতান্ত্রিক রক্ষণশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বকে নেহাতই একটি গরমিল হিসেবে গণ্য করা হয়। 

তাই লর্ডসভার অস্তিত্বের সপক্ষে যুক্তি থাকতেই পারে না, বিশেষ করে যখন এটি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের ব্রিটিশ লর্ডসভার সমালোচনা সম্পর্কে বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ