মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর
মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর

মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর

  • অথবা, মার্কিন সিনেটের ভূমিকা আলোচনা কর।
  • অথবা, “মার্কিন সিনেট পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ। "ব্যাখ্যা কর।
  • অথবা, মার্কিন সিনেটকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয় কেন? আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মার্কিন শাসনব্যবস্থায় সিনেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিচারে সিনেট প্রতিনিধি সভার ঊর্ধ্বে অবস্থিত। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের আইন সভার উচ্চকক্ষের হাতে এতো বেশি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়নি। 

তাই মার্কিন সিনেটকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের | দ্বিতীয় পরিষদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বলে অভিহিত করা হয়। J. P. Haris-এর মতানুসারে বিশ্বের যেকোনো আইনসভার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ।

→ মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব : সিনেটের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি পর্যালোচনা করলে তার মর্যাদা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধির কারণগুলো অনুধাবন করা যাবে। নিম্নে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো :

১. গঠন ব্যবস্থা : সিনেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে দু'জন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত। সমমর্যাদাসম্পন্ন সকল প্রতিনিধি নিজ নিজ রাজ্যের দূত হিসেবে প্রতিপন্ন হন। 

সিনেটরগণ হলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নির্বাচিত বিজ্ঞ ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা, সৈন্যাদ্যক্ষ বা আইনজীবী। এই গঠন | ব্যবস্থা সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিতে পরিণত করেছে এবং বিশেষ মর্যাদাযুক্ত করেছে।

২. সদস্য সংখ্যা : প্রতিনিধি সভার তুলনায় সিনেটের সদস্য সংখ্যা অনেক কম। কমসংখ্যক সদস্য বিশিষ্ট ক্ষুদ্রতর পরিষদ হিসেবে সিনেট সক্রিনা ও সুষ্ঠুভাবে কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারে।  

তাই সিনেটের আলাপ-আলোচনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু ৪৩৫ জন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিসভা সভাকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তেমন সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না।1

৩. সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা : মার্কিন শাসনতন্ত্রে সিনেটকে প্রতিনিধিসভার তুলনার চেয়ে কিছু বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং বৈদেশিক চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সিনেটই কেবল রাষ্ট্রপতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আবার রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি পদস্থ সরকারি কর্মচারী প্রভৃতি ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট বিচারের ক্ষমতা একমাত্র সিনেটেরই আছে।

৪. কার্যকাল : একজন সিনেটরের কার্যকাল ৬ বছর। কিন্তু প্রতিনিধি সভার একজন সদস্য মাত্র ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এর ফলে দেশের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে সিনেটরদের সংযোগ অনেক বেশি গভীর। 

স্বভাবতই আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্যে সিনেটরদের অভিজ্ঞতা বেশি এবং তাদের মতামতের গুরুত্বও বেশি। প্রবীণ, প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সিনেট স্বভাবতই বিশেষ মর্যাদা ও কর্তৃত্ব সম্পন্ন হয়ে থাকে।

৫. স্থায়ী পরিষদ : সিনেট একটি স্থায়ী পরিষদ। প্রতিনিধি সভার মতো এর সকল সদস্য কখনই এক সঙ্গে পদত্যাগ করে না। প্রতি দু'বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন মাত্র। 

এই স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা সিনেটের মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করেছে। সিনেটরগণ প্রতিনিধিসভার সদস্যদের তুলনায় বৃহত্তর নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই তারা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্ত।

৬. ঐক্যবোধ : প্রতিনিধি সভার সদস্যদের তুলনায় সিনেটরদের মধ্যে ঐক্য অধিকার ও সংহতি অধিক পরিমাণ বর্তমান থাকে। সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণের স্বার্থে সিনেটরগণ সব সময় পরস্পরকে সাহায্য করে থাকেন। 

এই কারণে অনেকে সিনেটকে পারস্পরিক সংরক্ষণ সমিতি হিসেবে অভিহিত করেন। এই ঐক্যবোধ ও সিনেটের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৭. প্রত্যক্ষ নির্বাচন : ১৯১৩ সালের সপ্তদশ সংশোধনের পর সিনেটরগণ প্রতিনিধি সভার সদস্যদের মতোই নিজ নিজ রাজ্যের জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। 

সিনেটরদের প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা সিনেটের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সাম্প্রতিকালে সিনেট প্রতিনিধি সভার তুলনায় অধিক উদারপন্থি হয়েছে।

৮. পদমর্যাদা : বর্তমানে সিনেটের সদস্যপদ অধিকতর আকাঙ্ক্ষিত বস্তুতে পরিণত হয়েছে। মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে উৎসাহী তাঁরা সিনেটের সদস্যদের জন্য লালায়িত থাকেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা, প্রাক্তন সৈনাধ্যক্ষ, আইনবিদ প্রভৃতি সুবিখ্যাত ব্যক্তিই সিনেটের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করা হয়। সিনেটরদের দীর্ঘ কার্যকলাপ এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা দেশের রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বেশি আকর্ষণ করে।

৯. রাষ্ট্রপতি ও সিনেটের ক্ষমতা বৃদ্ধি : অনেকের মতে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকাবেই সিনেটের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগের সঙ্গে সিনেট অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। 

পারস্পরিক ক্ষমতা বজায় রাখার ব্যাপারে সিনেট ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে একটা সমঝোতার ভাব সাধারণত বজায় থাকে। রাষ্ট্রপতি নানারকম পৃষ্ঠপোষকতা ও সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে থাকে।

১০. পৃষ্ঠপোষকতার বণ্টন : সিনেটরদের পৃষ্ঠপোষক ফটনের ক্ষমতা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিশেষভাবে সাহায্য করে। 

সিনেটের নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতার সাহায্যে সিনেটরগণ নিজ নিজ রাজ্যে কেন্দ্রের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা বণ্টন এবং কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটের সৌজন্য বিধি নামত শাসনতান্ত্রিক প্রথার মাধ্যমে সিনেট রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বণ্টনের সুযোগ পেয়েছে।

১১. নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা : অনেকের মতানুসারে শাসনতন্ত্রের প্রণেতাগণ রাষ্ট্রপতি ও প্রতিনিধি সভাকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে সিনেটকেই বেছে নিয়েছিলেন। 

রাষ্ট্রপতির স্বৈরাচার রোধ করার জন্য গঠন ও প্রকৃতিগত নানা ত্রুটির জন্য প্রতিনিধি সভার উপর নির্ভর করা সম্ভব ছিল না। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতিকে বাস্তবে রূপায়িত করার মাধ্যম হিসেবে সিনেটকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

১২. প্রতিনিধিত্বের তাৎপর্য : সিনেটের সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে একই সময়ে দুজন সিনেটর নির্বাচিত হন না। একই সময়ে একজন করে প্রতিনিধি সিনেটে নির্বাচিত হন। 

একজন সিনেটরকে | নির্বাচিত করার ব্যাপারে রাজ্যের জনগণের মধ্যে আন্তরিকতা ও আগ্রহের আধিক্য দেখা যায়। এইভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বলে পরিবর্তিত জনমতও সিনেটে প্রতিফলিত হয়।

১৩. সিনেটরদের নিরপেক্ষতা : অনেক সিনেটর নিরপেক্ষতাকে সিনেটের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। 

সিনেটের সৌজন্যবোধ লঙ্ঘন করল বা রাষ্ট্রা অন্য কোনো অযৌক্তিক কাজের জন্য তাঁর বিরোধিতা ও সমালোচনা করতে দলমত নির্বিশেষে সিনেটের সদস্যগণ দ্বিধাবোধ করে না। তার ফলে জনস্বার্থে সিনেটরদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

১৪. কার্যপরিচালনা পদ্ধতি : সিনেটর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে তাঁর কার্যপরিচালনার পদ্ধতিও সাদৃশ্য করেছে। সিনেটের সদস্যগণ দীর্ঘক্ষণ ধরে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পান। এখানে আলোচনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। দীর্ঘসময় ধরে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পান। 

এখানে সিনেটের মর্যাদা বজায় রাখার ব্যাপারে সদস্যদের সচেতন প্রয়াস সকল বিষয়ে সিনেটের মতামতকে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদামণ্ডিত করেছে। অপরদিকে প্রতিনিধি সভায় | আলোচনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

উপসংহার ; পরিশেষে বলা যায় যে, বস্তুতপক্ষে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বিচারে মার্কিন সিনেট পৃথিবীর যেকোনো দেশের উচ্চকক্ষের কাছে ঈর্ষার যন্ত্র। মার্কিন সিনেট হলো পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ। 

অন্য কোনো দেশের দ্বিতীয় পরিষদ দেশের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে এতো ব্যাপক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ভোগ করে না। মার্কিন সিনেট হলো একটি অদ্বিতীয় দ্বিতীয় কক্ষ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের মার্কিন সিনেটের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ