মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর |
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর
- অথবা, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে গিয়ে মুহাম্মদ -বিন-তুঘলক ব্যর্থ হয়েছিলেন কেন? মতামত তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলের অন্যতম গুণধর শাসক ছিলেন মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক। ১৩২৫ সালে তার পিতা গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
শাসক হিসেবে তিনি কল্পনা বিলাসী ছিলেন। যার প্রমাণ মিলে পঞ্চপরিকল্পনার ক্ষেত্রে। আর এই পঞ্চ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন এর পুত্র মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক ব্যর্থতার মুখে পড়েন।
মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন তা ইতিহাসে অনেক কারণ উল্লেখিত আছে। নিম্নে তুলে ধরা হলো :
→ মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের ব্যর্থতার কারণ : মুহাম্মদ-বিন- তুঘলকের মহাপরিকল্পনা নানা কারণে ব্যর্থ হয়। এলফিন স্টোন এর মতে, মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক এর অবিমৃশ্যকারিতা তার প্রতিভাকে বিনাশ করে দিয়েছিল। খামখেয়ালি মনোবৃত্তিও তার ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল।
নিম্নে মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো তুলে ধরা হলো :
১. খামখেয়ালি মনোবৃত্তি : মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের চরিত্রে স্বৈরাচারী মনোবৃত্তি ও খামখেয়ালি মনোবৃত্তির সংমিশ্রণ ঘটেছিল। তিনি ইতিহাসে ডন কুইকজোট এর মতো খামখেয়ালি রাজা বলে অভিহিত হয়ে থাকেন। আর এই খামখেয়ালি মনোবৃত্তি, তার পঞ্চপরিকল্পনা ব্যর্থ করতে সহায়তা করেছিল।
২. মানসিক ভারসাম্যের অভাব : ফলাফল বিপরীতে গেলে সাধারণত যেকোনো মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যয়ে পড়েন। আর মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের বিফলতাকে সহজে গ্রহণ করার মতো শক্তি তার ছিল না। সংস্কারকার্যে প্রয়োজনীয় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে পারেননি বলে তার পরিকল্পনা ভেঙে গিয়েছিল।
৩. দুর্ভিক্ষ : দোয়াব অঞ্চলে অতিরিক্ত কর বৃদ্ধি করলে দুভাগ্যবশত সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সুলতান দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি, কেননা সেই সময় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে আন্তরিকতার সাথে সাহায্য করেনি।13
৪. অভিজ্ঞতার অভাব : অভিজ্ঞতার আলোকে সুলতান মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক অনেকটা পিছিয়ে ছিল। মুদ্রা সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসাধারণের বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক জ্ঞানের সাথে সাথে আধুনিক শাসনতন্ত্রের প্রয়োজন ছিল।
অন্যদিকে জনগণের নৈতিক আদর্শের কমতি পরিলক্ষিত হয়। তার পরিকল্পনাসমূহ যুক্তিসঙ্গত মহৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল। কিন্তু জনগণ তা উপলব্ধি করতে পারেনি 1
৫. অন্তর্দৃষ্টির অভাব : সুলতান মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে ইতিহাসবিদরা অনেক' সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে তিনি ছিলেন পরস্পরবিরোধী স্বভাবের মানুষ।
তিনি করিতকর্মা, উগ্র মেজাজি, অসহনশীল ও অবাস্তব কল্পনা প্রবণও ছিলেন। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি যে কারণে ব্যর্থ হন তার অন্যতম কারণ হলো অন্তর্দৃষ্টির অভাব ।
৬. জনগণের শিক্ষার অভাব : সুলতানি আমলে জনসাধারণ খুব কম শিক্ষিত ছিল। প্রজা সাধারণেরা অগ্রগতি চিন্তাধারা উপলব্ধি ও গ্রহণ করতে পারেনি। তাই অশিক্ষিত" জনগণ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসহযোগিতা করেছে।
৭. অর্থনৈতিক সংকট : একজন শাসক হিসেবে মুহাম্মদ-বিন- তুঘলক যে মহাপরিকল্পনা করেছিলেন তা বাস্তবায়নের অন্তরায়ের অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট।
রাজধানী স্থানান্তর, কারাচিল ও খোরাসান অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মুহাম্মদ-বিন- তুঘলককে অনেক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
৮. জনসমর্থনের অভাব : সাম্রাজ্য বা রাজ্য পরিচালনার মধ্যে জনসমর্থন ব্যাপক হারে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জনমর্থন ছাড়া কোনো শাসক বংশই সুষ্ঠুভাবে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারেনি।
মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এ জনসমর্থনের কোনো প্রমাণ মিলেনি, তাই তার পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে সাহায্য করে।
৯. সময় উপযোগী পরিকল্পনার অভাব : মুহাম্মদ-বিন- তুঘলকের যে পঞ্চমহাপরিকল্পনা ছিল তা ছিল রাজ্য ও জনসাধারণের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু সময়ের আলোকে তা ছিল অবাস্তব ও কল্পনাপ্রসূত। প্রাগ্রসর চিন্তাধারার আলোকে জনগণের জন্য এ রকম কঠিন সিদ্ধান্ত কোনো শাসকই নিতে পারেনি ।
১০. রাজকর্মচারীদের অসহযোগিতা : জিয়াউদ্দিন বারানি তার রাজকর্মচারীদের নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছেন। যে সকল কর্মচারীর উপর সুলতানের সংস্কার ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল তারা সুলতানকে যথাযথভাবে সহযোগিতা করেননি, বরং তারা ব্যাপকহারে তার বিরোধিতা করেছিলেন। ব্যর্থতার জন্য কর্মচারীরা বহুলাংশে দায়ী।
১১. ধর্মনিরপেক্ষ শাসন : সুলতান মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য বহুলাংশে তার ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়।
উলামা শ্রেণির মতামতকে উপেক্ষা করে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করেন। ফলে মুসলিম জনতার মনে অসন্তোষের জ্বালা জ্বলতে থাকে। এটিও একটি অন্যতম কারণ তার মহাপরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ।
১২. স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব : সুলতান গিয়াসউদ্দিনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের যে যোগ্যতা থাকা দরকার ছিল তা ব্যাপক হারে ঘাটতি দেখা দেয়।
রাজধানী স্থানান্তরকালে তিনি জনসাধারণকে নির্দেশ দেন যে, যত দ্রুত সম্ভব দিল্লি ছেড়ে দেবগিরিতে অবস্থান নেওয়ার জন্য। এতে তার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মুহাম্মদ-বিন-তুঘলকের মহাপরিকল্পনাগুলো অবাস্তব কল্পনাবিলাসী হলেও তা যদি বাস্তবায়ন হতো সত্যই প্রজাদের ব্যাপক মঙ্গল বয়ে আনত ।
কিন্তু প্রজাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতা ছিল না। যার দরুন মুহাম্মদ-বিন-তুঘলক কোনো সহযোগিতা পাননি। চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব অন্তর্দৃষ্টি, অভিজ্ঞতার অপর্যাপ্ততা প্রভৃতি কারণে তার মহাপরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। মহাপরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার সাথে তাকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।