সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর |
সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর
- অথবা, সাংবিধানিক সরকার বলতে কী বুঝ? সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
- অথবা, সাংবিধানিক সরকারের সংজ্ঞা দাও । সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সংবিধানের উপর ভিত্তি করে -একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
এটি একটি দেশের সম্পদ ও রাষ্ট্র পরিচালনার লিখিত দলিল। সংবিধানবিহীন কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে না। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস বলেন, “রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার জন্য আইন রীতিনীতি, সমষ্টিকেই সংবিধান বলে।”
তবে কোনো দেশের সংবিধান থাকলেই কেবল সরকারকে সাংবিধানিক সরকার বলা যায় না, বরং সাংবিধানিক সরকারের সংবিধানের গুরুত্ব দিয়ে সাংবিধান মোতাবেক সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনাকেই বোঝায় এবং সেখানে স্বৈরাচারী শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাংবিধানিক সরকার একটি রাষ্ট্রের আদর্শস্বরূপ। এ সরকার জনগণের কল্যাণে গঠিত হয়ে থাকে। সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল করলে
এ সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো নিরূপণ করা যায়। কিন্তু বর্তমান, বিশ্বে সাংবিধানিক সরকারের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনার বাণী শোনা যায়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
সাংবিধানিক সরকার : সাধারণ প্রেক্ষাপটে সাংবিধানিক সরকার বলতে বোঝায় যেখানে সংবিধানের রীতিনীতি অনুযায়ী সরকার গঠিত হয় তাকেই সাংবিধানিক সরকার বলে।
কিন্তু ব্যাপক অর্থে, সাংবিধানিক সরকার বলতে স্বৈরাচারী শাসন নয়, বরং আইনের শাসন মেনে সংবিধান অনুযায়ী সীমাবদ্ধ ক্ষমতা সম্পন্ন সরকারকে সাংবিধানিক সরকার বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সাংবিধানিক সরকার প্রসঙ্গে বিভিন্ন মনীষী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নানা রকম সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তার মধ্যে কতিপয় সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
প্রফেসর ডাইসি এ প্রসঙ্গে বলেন, "Constinational government is a government refers the government in which the powers of the government is distrubted according to the constitution also responsible to the people."
অধ্যাপক কার্ল জে. ফ্রেডারিক বলেন, “ক্ষমতার বিভক্তিকরণ যেকোনো সভ্য সমাজের ভিত্তি আর এটাই হচ্ছে সাংবিধানিক সরকার । বর্তমানে সাংবিধানিক সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র বলে গণ্য করা হয়।"
প্রফেসর কে. সি. হুয়ার মতে, “সাংবিধানিক সরকার কেবল সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সরকার নয়, এ সরকার আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত যা সরকারি ক্ষমতা কার্যকরী করে এবং তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Willloughby সাংবিধানিক সরকার প্রসঙ্গে বলেন, “সাংবিধানিক সরকার কেবল সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নয়, এ সরকার আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত যা সরকারি ক্ষমতা কার্যকরী এবং তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও নয়।”
সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনায় সাংবিধানিক সরকার সম্পর্কে এটি বলা যায় যে, সাংবিধানিক সরকার হলো সংবিধান নিয়ন্ত্রিত সরকার।
এ সরকার জনগণের স্বার্থ বিরোধী বা সংবিধানে বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করবে না, বরং স্বৈরতন্ত্রকে পরিহার করে গণতন্ত্র রক্ষায় সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক সরকার প্রত্যেকটি কল্যাণ রাষ্ট্রের কামনা। এ দাবি দিন দিন আরো জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক সরকার নিয়েও যথেষ্ট সমালোচনা রয়েছে।
সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য : সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্টগুলো নিম্নরূপ :
১. সাংবিধানিক সরকার : সংবিধানকে প্রধান্য দেওয়া সাংবিধানিক সরকারের অন্যতম একটি দায়িত্ব। এই সরকার সংবিধানের নীতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ ও মৌলিক আইন বলে গণ্য করা হয়। এতে সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষিত ।
২. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব : সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন। তাঁর পরামর্শেই অন্য মন্ত্রীকে নিয়োগ বা বরদাস্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই তাঁর মন্ত্রিপরিষন দেশ শাসন করবে কোনো স্বৈরাচারী শাসক নয়।
৩. দায়িত্বশীলতা : সাংবিধানিক সরকার সর্বদাই জনগণের নিকট দায়িত্বশীল হবে তাদের অধিকার ও কর্তব্য পালনে।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা তাদের সব কাজের ব্যাপারে আইনসভার কাছে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। আইনসভা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থা হারালে মন্ত্রিসভা বা সরকারের পতন ঘটে
৪. বিচার বিভাগের প্রাধান্য : সাংবিধানিক সরকার অবশ্যই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখবে। বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নির্ধারণ করবে।
বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থেকে বিচার কার্য সম্পন্ন করবে এখানে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ চলবে না। সুপ্রিম কোর্টে সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
৫. ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ : সাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বণ্টন করে নিবে। কঙ্গো প্রত্যেক বিভাগ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। সুতরাং কোনো একটি বিভাগের যাতে একক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে পারবে না।
৬. মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা : সাংবিধানিক সরকারের অন্যতম একটি দায়িত্ব হলো জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করা। এ সরকার শুধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সংবিধানে উল্লিখিত জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে এবং জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কার্যকলাপও করবে না এবং জনগণকে ভোটাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
৭. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা : সাংবিধানিক সরকার নির্বাচন কমিশনের উপর কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বা কমিশনকে ক্ষমতার বলে প্রভাবিত করবে না, বরং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং জনগণকে সঠিকভাবে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাও প্রদান করবে।
৮. গণতান্ত্রিক : সাংবিধানিক সরকারকে স্বৈরাতন্ত্র বিরোধী এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে।
জনগণের অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং বিরোধী দলের উপরও নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
৯. সরকারের জবাবদিহিতা : সাংবিধানিক সরকারকে তাদের সকল কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। কোনো প্রকার কারচুপি বা গোপনীয়তা করা যাবে না।
জনগণের সামনে স্বচ্ছ ও সঠিক তথ্য তুলে ধরে জনগণের সামনে নিজেদের সচ্ছতা | প্রমাণ করতে হবে। আর স্বৈরাচারী পন্থা দূর করতে হবে।
১০. গতিশীলতা : সাংবিধানিক সরকাকে গতিশীল হতে হবে। অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনগণের কল্যাণে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে যুগ উপযোগী আইন প্রণয়ন ও পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের কল্যাণে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
১১. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও উন্নয়ন : সাংবিধানিক সরকারকে অবশ্যই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনগণের কল্যাণে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী থাকতে হবে। একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনেও এই সরকারের ভূমিকা থাকতে হবে।
১২. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও দুর্নীতি রোধ : সাংবিধানিক সরকার অবশ্যই সকল ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখবে অর্থাৎ জনগণের স্বাধীনতা বজায় রাখবে এবং দুর্নীতি রোধে নানারকম কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে জনগণের কল্যাণে।
১৩. সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ ও হস্তান্তর : সাংবিধানিক সরকার অবশ্যই গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের সরাসরি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা গ্রহণ করবে নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে এবং পূর্বের ব্যক্তি ক্ষমতা ছেড়ে দেবে। ক্ষমতা গ্রহণ ও অর্পণের ক্ষেত্রে কোনো অসাধুতা সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য কোনো ক্রমেই হতে পারে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সাংবিধানিক সরকার একটি দেশের উন্নতির চাবিকাঠিস্বরূপ। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই এ সরকারকে পছন্দ করে কিন্তু বর্তমানে স্বৈরতন্ত্রী সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র সাংবিধানিক সরকার গঠনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সাংবিধানিকভাবে সরকার গঠন হলেও সেনাবাহিনী।
সে শাসক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কলুষিত, মানসিকতা, বিরোধী দলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব জনগণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রভৃতি এক প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথাপি এই সমস্যাগুলো দূর করে সংবিধান অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্র পরিচালিত হলে জনগণের জন্য যে সাংবিধানিক সরকার হবে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়ার মতো বিষয়। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই সাংবিধানিক সরকার মনে প্রাণে প্রত্যাশা করে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের সাংবিধানিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সমূহ সমূহ উল্লেখ কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।