হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণের প্রাথমিক অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণের প্রাথমিক অসুবিধাগুলো আলোচনা কর
হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণের প্রাথমিক অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণের প্রাথমিক অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

  • অথবা, হুমায়ূনের সিংহাসনে আরোহণের প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর।
  • অথবা, হুমায়ূনের সিংহাসনারোহণের প্রাথমিক সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।
  • অথবা, সিংহাসনে বসার পর হুমায়ূনের প্রাথমিক বাধা-বিপত্তিসমূহ আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে যে কয়জন মুঘল শাসকের পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে হুমায়ূন অন্যতম। তিনি ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। 

১৫৩০ সালে বাবরের মৃত্যুর পর মাত্র ২৩ বছর বয়সে হুমায়ূন সিংহাসনে আরোহন করেন। শাসনক্ষমতা পরিচালনা করার মতো দক্ষতা হুমায়ূনের ছিল। 

কেননা তিনি পূর্বে বাদাখশানের শাসনকর্তা ছিলেন এবং বাবরের সাথে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু হুমায়ূনের সিংহাসনলাভ খুব একটা সুখকর ছিল না।

→ হুমায়ূনের সিংহাসনারোহণের প্রাথমিক সমস্যাসমূহ : হুমায়ূন ১৫৩০ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করলে বেশকিছু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হন। 

নিম্নে সিংহাসন লাভ পরবর্তী হুমায়ূনের প্রাথমিক সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. অগঠিত সাম্রাজ্য : হুমায়ূনের সামনে প্রথম প্রাথমিক সমস্যা ছিল বাবার অগঠিত সাম্রাজ্য। কেননা সম্রাট বাবর তার পুত্রের জন্য কোনো সুগঠিত সাম্রাজ্য রেখে যাননি। বাবর সমগ্র ভারত জয় করতে পারে নি। 

তাছাড়া যেসকল অঞ্চল জয় করেছিল সে সকল অঞ্চলের শত্রুদের পুরোপুরি দমন করতে পারেননি। তাছাড়া তিনি সার্বভৌম শাসক হিসেবে নিজেকে যোগ্য করলেও স্থায়ী কোনো শাসনব্যবস্থা স্থাপন করে যেতে পারেননি।

২. অর্থনৈতিক সংকট : অর্থনৈতিক সংকট ছিল হুমায়ূনের প্রাথমিক সমস্যাগুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম সমস্যা। হুমায়ূনের পিতা সম্রাট বাবর ছিলেন বেহিসেবী ও উদাসীন প্রকৃতির শাসক। 

তিনি যখন যে অঞ্চল বিজয় করতেন সেখান থেকে প্রাপ্ত সকল সম্পদ সৈনিকদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। তাছাড়া বাবর সুগঠিত কোনো অর্থভাণ্ডারও তার পুত্রের জন্য রেখে যাননি। যার দরুন হুমায়ূন অর্থাভাবে পড়েন।

৩. ভাইদের ষড়যন্ত্র : হুমায়ূনের সামনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা ছিল ভাইদের ষড়যন্ত্র। বাবর মৃত্যুর পূর্বে জ্যেষ্ঠপুত্র হুমায়ূনকে উত্তরাধিকারী করে যান। 

তবে তিনি তার ভাইদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে বলে যান। হুমায়ূন সে অনুযায়ী তার ভাইদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা ভাগ করে নেন। 

কিন্তু ইসলামি আইনে জ্যেষ্ঠপুত্রের উত্তরাধিকারের আইন স্বীকৃত না থাকায় হুমায়ূনের অন্যান্য ভাইয়েরা হুমায়ূনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

৪. সেনাবাহিনীর আনুগত্যের অভাব : হুমায়ূন তার উত্তরাধিকারসূত্রে যে সেনাবাহিনী পেয়েছিলেন তারা ছিল তুর্কি, মুঘল, পারসিক, আফগান, ভারতীয় প্রভৃতি নানান জাতি নিয়ে গঠিত। 

বাবর তার সেনাবাহিনীর উপর কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু হুমায়ূন সেনাবাহিনীর উপর সেই কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারেননি। 

তাছাড়া হুমায়ূনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সৈন্যগণ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে জড়িয়ে পড়ে। যা হুমায়ূনের সামনে সমস্যারূপে আবির্ভূত হয়।

৫. কামরানের বিদ্রোহ : কামরানের বিদ্রোহ ছিল হুমায়ূনের সামনে আরেকটি কঠিন পরিস্থিতি। হুমায়ূন কামরানকে কাবুল ও কান্দাহার প্রদান করেছিলেন। কিন্তু কামরান এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তাই তিনি 'হুমায়ূনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। 

কামরান তার নিজস্ব এলাকা পার হয়ে প্রথমে সিন্ধু নদ অতিক্রম করে লাহোর দখল করেন। পরবর্তীতে কামরান হুমায়ূনের অন্তর্গত সমগ্র পাঞ্জাব দখল

৬. অভিজাতবর্গের ষড়যন্ত্র : রাজপরিবারের অভিজাতবর্গের ষড়যন্ত্রও হুমায়ূনের জন্য ছিল আরেকটি বড় সমস্যা। বাবরের ভগ্নীপতি মুহাম্মদ জামান মির্জা এবং চাচাতো ভাই সুলায়মান মির্জা দিল্লির সিংহাসন দখলের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। 

অন্যদিকে 'আমীর ওমরাহ সহ অন্যান্য অভিজাতবর্গও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের আশায় হুমায়ূনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

৭. আফগানদের বিরোধিতা : যদিও সম্রাট বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে আফগানদের পরাজিত করেছিলেন তবুও তিনি। আফগানদের মূল উৎপাটন করতে পারেননি। 

তাই বাবরের মৃত্যুর পর ছন্নছাড়া আফগানরা ইব্রাহীম লোদীর ভাই মাহমুদ লোনীর আশ্রয়ে সংগঠিত হওয়া শুরু করেন এবং তারা হুমায়ূনের বিরোধিতা করেন ও হুমায়ূনের প্রধান শত্রুরূপে আবির্ভূত হন।

৮. কালিগুরের যুদ্ধ : কালিঞ্জারের যুদ্ধ ছিল হুমায়ূনের প্রথম যুদ্ধ। হুমায়ুনের পিতা বাবরের মৃত্যুর মাত্র ছয় মাস পরে ১৫৩১ সালের মে-জুন মাসে তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের অভিযোগে কালিগুরের রাজার বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। হুমায়ূন এ সময় কালিঞ্জরের দুর্গ অবরোধ করেন। তবে এখানেও হুমায়ূন কিছু ভুল করেন।

৯. রাজপুতদের বিরোধিতা : রাজপুতদের বিদ্রোহী মনোভাব হুমায়ূনের জন্য ছিল যথেষ্ট উদ্বেগের। যদিও বাবর খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংহসহ অন্যান্য রাজপুতদের পরাজিত করেন। 

কিন্তু তবুও রাজপুতরা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তারা সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে হুমায়ূনের সময় আবার ফিরে আসে।

১০. শেরখানের কূটকৌশল : বাংলার শাসক শেরখান ছিল। হুমায়ূনের জন্য আরেকটি বাধা। কেননা শেরখানের সুতীক্ষ্ণ কূটকৌশলের সাথে হুমায়ূন ছিল অনেকটা ধরাশায়ী। 

শেরখান যাকে আমরা ইতিহাসে শেরশাহ বলে চিনি তিনি হুমায়ূনের সিংহাসন লাভের পর আফগানদের নেতায় পরিণত হন এবং হুমায়ূনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন।

১১. বাহাদুর শাহের প্রতিদ্বন্দ্বিতা : প্রাথমিক পর্যায়ে হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় বাধা বা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বাহাদুর শাহ। বাহাদুর শাহ আহমেদনগর, খান্দেশ ও মেবারের শাসকদের পরাজিত করে গুজরাটের একক অধিপতিতে পরিণত হন এবং হুমায়ূনের প্রতি তিনি ছিলেন বিদ্বেষ ভাবাপন্ন। 

বাহাদুর শাহের এরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ছিল হুমায়ূনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই বাহাদুর শাহের সাথে হুমায়ূনের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হুমায়ূন সিংহাসনে আরোহণের পরই যে সকল বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিল তা ছিল তার জন্য হুমকিস্বরূপ। 

বিশেষ করে ভাই, অভিজাতবর্গ, রাজপুতগণ, আফগানগণসহ সকলেই হুমায়ূনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলে হুমায়ূনের সামনে রাজ্য হারানোর ভয় কাজ করতে শুরু করে। যা হুমায়ূনের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ