বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর
বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর

বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর

উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণের অল্পদিনের মধ্যেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়। 

এই বিরোধের পরিণতিই হচ্ছে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী ইতিহাসিক ঘটনা। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ- শাসনের পথ প্রস্তুত হয় এবং বাংলা দীর্ঘকালের জন্য স্বাধীনতা হারায় । 

এ যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সমাধি রচিত হয়ে তার উপর শোষণ নিপীড়নের কোম্পানির শাসনের সূত্রপাত হয়ে। তাই বাংলার ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।

পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্য : হতাহতের সংখ্যা এবং যুদ্ধের ব্যাপকতার নিক নিয়ে বিচার করলে পলাশির যুদ্ধ তাৎপর্যপূর্ণ মনে না হলেও বাংলার ইতিহাসের জন্য এ যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। 

নিম্নে বাংলার ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্য আলোচনা করা হলো-

১. নবাবী শাসনের সমাপ্তি : ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে নবাব মুর্শিদকুলী খান বাংলায় নবাবী শাসনের সূত্রপাত করেন। তার সময় থেকে নবাবরা স্বাধীনভাবে নবাবরা শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে। নবাবদের এই শাসনধারা আলীবর্দী খান আরো শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন। 

কিন্তু ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের ফলে এই দীর্ঘ নবাবী শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে বাংলার ইতিহাসে একটি যুগের সমাপ্তি এবং একই সাথে আরেকটি যুগের সূত্রপাত হয়।

২. বাংলায় ইংরেজ প্রভুত্বের সূচনা : পলাশির পরাজয়ের পর সকল ক্ষেত্রে বাংলার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এই প্রথম ভারতের সর্বাধিক সমৃদ্ধ অঞ্চল বাংলা বিদেশি শক্তির পদানত হলো এবং এর সঙ্গে ইংরেজ ও বাঙালিদের মধ্যে আকস্মিক সম্পর্কের রূপান্তর ঘটে। 

এযাবত ইংরেজ কোম্পানি বাংলার শাসক গোষ্ঠীর নিকট ছিল কৃপা ও অনুগ্রত প্রার্থী। কিন্তু পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজগণ নিজেরাই অনুগ্রহ বিতরণের অধিকার অর্জন করে। ইংরেজগণ প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং অতঃপর তারা 'নৃপতি স্রষ্টার' ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।

৩. রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি : পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলায় এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই বিজিত রাজ্যের প্রকৃত প্রভুকে এই পত্র অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। 

কারণ নবাবকে প্রকৃত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিও ছিল বহুদূরে এবং এটা ছিল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যায়। 

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব গ্রহণ করার মত উপযুক্ত সংগঠন এর ছিল না। এক কথায় বাংলায় 'রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ শূন্যতার উদ্ভব হয়, যা বাংলার পক্ষে এক বিশেষ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক লেকি-এর মন্তব্য, "Power was practically monopolised by a great multitude of isolated officials...far removed from control.....

৪. ভারতবর্ষে ইংরেজ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা : পলাশির যুদ্ধের ফলেই যে বাংলাদেশে তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব স্থাপিত হয়েছিল একথা নিঃসন্দেহ। পলাশির যুদ্ধের পর ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা রবার্ট ক্লাইভের এক পত্রে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ইংরেজদের সার্বভৌমত্ব স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানা যায়। 

কিন্তু ক্লাইভের এ পরিকল্পনার সাথে ব্রিটিশ সরকার সম্মত হননি। তবে একথা অনস্বীকার্য ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা পলাশির যুদ্ধ ও মীরজাফরের অযোগ্যতার পরোক্ষ ফল। 

অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ছিল ভারতের সর্বাধিক সমৃদ্ধ অঞ্চল। বাংলার ধনাগার আওরঙ্গজেবকে সাহায্য করেছিল। 

পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার সম্পদ -ইংরেজগণকে ভবিষ্যতে ভারতে রাজ্যবিস্তারের অভাবনীয় সাহায্য করেছিল সন্দেহ নেই। বস্তুত বাংলাদেশ থেকেই ইংরেজগণ ভারতের অন্তর্দেশে প্রবেশ করে প্রভুত্ব স্থাপন করার সুযোগ পেয়েছিল।

৫. পাশ্চাত্য সভ্যতার বিস্তার : বাংলার শাসন ব্যবস্থায় পরোক্ষভাবে ইংরেজগণ এক অতি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়। তদানীন্তন বাংলার দুর্নীতিপূর্ণ সমাজের উপর ইংরেজদের প্রভাব যে ফলপ্রসূ হয়েছিল একথা স্বীকার না করে উপায় নেই। 

বাংলা তথা ভারতবর্ষের উপর উন্নত ধরনের পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাব পলাশির যুদ্ধের পরোক্ষ ফল। এ যুদ্ধের ফলে বাংলার শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

৬. আধুনিক যুগের সূচনা : পলাশির যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় মধ্যযুগের অবসান হয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। ইউরোপীয় সামরিক সংগঠন, উন্নত কূটনীতি, আধুনিক আইন কানুন শিক্ষা ইত্যাদি বাংলায় এক নতুন প্রগতিমূলক যুগের সূচনা করে। 

বাংলার মানুষ কুসংস্কার অজ্ঞতার বেড়াজাল ছিন্ন করে ধীরে ধীরে আধুনিকতার পথে ধাবিত হয়। যে মুসলিম সম্প্রদায় ছিল শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ তারা পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজি সভ্যতার ছোঁয়ায় আধুনিকতার দিকে যাত্রা শুরু করে। 

তবে পলাশির যুদ্ধের পরপরই এই আধুনিকতার সামগ্রিক ফলাফল আসেনি। এর প্রভাব ধীরে ধীরে বাংলার সমাজজীবনে প্রবেশ করেছে এবং দীর্ঘ পরিক্রমায় আধুনিকতার বিস্তার ঘটিয়েছে।

৭. জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ : জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্য অপরিসীম। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত হয়। 

ফলে বাংলায় ইংরেজি সভ্যতার স্পর্শে এসে প্রগতিশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাদের মধ্যে নিজ দেশ, জাতি, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান জন্ম লাভ করে। 

এভাবে একসময় মানুষের মধ্যে জাতি রাষ্ট্র ও জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে। আর এসব সম্ভব হয়েছিল পাশ্চাত্য সভ্যতার কল্যাণে। যার ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের মধ্যে।

৮. বাংলায় ফরাসি প্রাধান্য হ্রাস : পলাশি যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় যেমন ব্রিটিশ আধিপত্যের সূচনা হয় তেমনি বাংলা থেকে ফরাসি প্রাধান্য হ্রাস পেতে থাকে। 

পলাশির যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফল ছিল দাক্ষিণাত্যের ফরাসিদের সঙ্গে যুদ্ধে ইংরেজদের চূড়ান্ত জয়লাভ। বলা হয়ে থাকে, “The battle of plassey may be truely said to have decided the fate of french in India." দাক্ষিণাত্যে ফরাসি প্রভুত্ব ক্ষুণ্ণ হওয়ার সাথে বাংলায়ও ফরাসিদের প্রাধান্য কমতে থাকে। 

কি শাসনতান্ত্রিক, কি রাজনৈতিক বা কি বাণিজ্যিক সর্বক্ষেত্রে ব্রিটিশ আধিপত্যে ফরাসি আধিপত্য বিলুপ্ত হতে থাকে। আর এসবের পিছনে মূল ভূমিকা রেখেছিল পলাশির যুদ্ধ।

৯. অর্থনৈতিক পালাবদল : পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন আসে তা হলো অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন। পলাশির যুদ্ধের পর ১৭৬৫ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি ক্ষমতা লাভ করে। 

ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে তারাই হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। ফলে বাংলার নবাব হয়ে পড়েন আর্থিকভাবে পঙ্গু। কেননা শাসন ক্ষমতা নবাবের হাতে থাকলেও কোনো প্রকার অর্থনৈতিক ক্ষমতা নবাবের ছিল না। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পালাবদল পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।

১০. দ্বৈত শাসনের উদ্ভব : পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার ইতিহাসে আরেকটি শাসন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত এ শাসন ব্যবস্থা দ্বৈতশাসন নামে অভিহিত। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলার শাসন ক্ষমতা নবাব ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ভাগ করা হয়। 

দ্বৈত শাসনের মূল কথা হলো ‘ক্ষমতাহীন দায়িত্ব, দায়িত্বহীন ক্ষমতা” অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তি রক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব পায় বাংলার নবাব, পক্ষান্তরে রাজস্ব আদায় ও লাভের অধিকার এবং দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার কোম্পানির হাতে বর্তায়। শাসন ক্ষমতার এ বিভাজনকে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

১১. মীর জাফরী যুগের সূচনা : পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অংশ হিসেবে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর বাংলার মসনদে আরোহণ করেন। 

শুরু হয় মীর জাফরী নামক পুতুল নবাবের শাসন। সিংহাসনে আরোহণ করেই মীর জাফর কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রায় দেড়কোটি টাকা প্রদান করেন। 

চুক্তি অনুযায়ী মীর জাফর বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলী প্রভৃতি পরগনার রাজস্বও তাদের হাতে অর্পণ করে। এভাবে শুরু হয় বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাকর মীর জাফরী শাসনকাল ।

উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি কলঙ্কজনক ও লজ্জাকর অধ্যায়। তবে সামগ্রিকভাবে এ যুদ্ধের তাৎপর্য ছিল অপরিসীম। 

যদিও এ যুদ্ধের ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তথাপি এ যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ব্রিটিশ শাসনের ফলে বাংলায় আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়। 

এ যুদ্ধের মাধ্যমে দ্বৈত শাসনের মত উদ্ভট ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে, ফরাসি প্রাধান্য হ্রাস পায়। বাংলার সর্বত্র রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের সূচনা হয়। 

স্বাধীন নবাবীর অবসান ঘটে, বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষমতা ইংরেজ কোম্পানির হাতে ন্যাস্ত হয়। তথাপি এ যুদ্ধের ফলে মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদ চেতনা বিকাশ লাভ করে। তাই বাংলার ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধের তাৎপর্য অপরিসীম।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের বাংলার ইতিহাসে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব কি ছিল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ