ক্রুসেডের কারণ আলোচনা করো

ক্রুসেডের কারণ আলোচনা করো
ক্রুসেডের কারণ আলোচনা করো

ক্রুসেডের কারণ আলোচনা করো

  • অথবা, ক্রুসেডের কারণগুলো সংক্ষেপে বিবৃত কর।

উত্তর : ভূমিকা : ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ইতিহাসে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। মুসলমান খ্রিস্টানদের মাঝে সংঘটিত হয় এ যুদ্ধ। প্রায় তিন শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। 

এটি খ্রিস্টানদের প্রধানকর্তা ও ধর্মগুরু পোপ আরবান-২ এ যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ক্ষমতালোভী ও ধর্ম ব্যবসায়ী খ্রিস্টান যাজকতন্ত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ পরিচালনা করে।

→ ক্রুসেডের কারণ : বিভিন্ন কারণে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নিম্নে ক্রুসেডের কারণ সমূহ তুলে ধরা হলো :

১. ধর্মীয় কারণ : ধর্মীয় দিক থেকে জেরুজালেম মুসলমান ও খ্রিস্টানদের উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রত্যেকে এটিকে -পবিত্র মনে করত। 

কারণ মুহাম্মদ (সা.) এখান থেকে মেরাজে গমন করেছিলেন অন্যদিকে যিশু খ্রিস্ট এখানে জন্মগ্রহণ করেন। ফলে উভয়েই এটিকে নিজেদের কর্তৃত্বে রাখতে চেয়েছিল ।

২. আধিপত্য বিস্তার : তীর্থযাত্রার উপর নির্যাতন নিয়ে ইউরোপ যখন উত্তেজনা আরম্ভ হয়। ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ দখল করে নেয়। এতে ইউরোপীয়রা আতংকিত হয়ে যায় পোপের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ।

৩. রাজনৈতিক কারণ : এ যুদ্ধের পেছনে ধর্মের চেয়ে বেশি। ছিল ক্ষমতার লোভ। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই রাজ্য দখলের নেশায় মত্ত ছিলেন। যার ফলে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৪. অর্থনৈতিক কারণ : দশম শতাব্দী হতে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় বণিকগণ বাধার সম্মুখীন হন। 

ভেনিস, জেনোয়া, পিচলে প্রভৃতি শহরের উপর মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা খ্রিস্টানরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

১০ শতক হতে ইউরোপে জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমাণ কমতে থাকলে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়। বেকারত্ব বাড়তে থাকে। 

এ অবস্থায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা মুসলমানদের কর্তৃত্ব চলে যাওয়ায় তারা খুব হতাশ হয়ে পড়ে এবং তা উদ্ধারে আগ্রহী হয়।

৫. সাংস্কৃতিক কারণ : ইসলামের আর্বিবাবের পূর্বে রোমান ও গ্রিকরা তাদের শিক্ষা ও সভ্যতার জন্য নিজেদের গর্বিত এবং অন্যান্য জাতিসমূহকে বর্বর ও কুসংস্কারচ্ছন্ন মনে করতেন। কিন্তু ইসলামের | আবির্ভাবের পরে গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়ে।

৬. প্রত্যক্ষ কারণ : ১০৯৫ সালের ২৬ নভেম্বর দক্ষিণ পূর্ব ফ্রান্সের ক্লারমেন্ট শহরে খ্রিস্টানদের প্রধান কর্তা পোপ আরবান-২ একটি সুদূরপ্রসারী ভাষণ দেন এবং তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান । বাইজান্টাইন সম্রাট আলফ্রিস কমনেনাস আবেদন ও পোপের প্রচারণা এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের এক | জঘন্যতম অধ্যায় হচ্ছে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। জেরুজালেম দখল করার জন্য খ্রিস্টানরা নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করে। 

একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় তিন শতাব্দীকাল স্থায়ী ছিল এ হিংসাত্মক যুদ্ধ। এ ধর্মযুদ্ধ ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইউরোপের খ্রিস্টানদের লালিত ঘৃণ্য, বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব কলহের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তবে যুদ্ধের পিছনে ধর্মের থেকে লোভই বেশি ছিল খ্রিস্টানদের।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ