মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব আলোচনা কর

মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব আলোচনা কর
মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব আলোচনা কর

মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব আলোচনা কর

  • অথবা, মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল মুসলিম শাসকদের নাম বিশেষ গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয় তার মধ্যে সুলতান আল নাসির অন্যতম। 

বাহারি মামলুকদের মধ্যে আল নাসিরই ছিলেন সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান। মামলুক সুলতানদের মধ্যে তিনি ৪২ বছর রাজত্ব করেন। 

এ সময়ে মধ্যে তিনি বিদ্রোহ দমন, রাজ্যের সংহতি বিধান ও রাজ্যবিস্তারের মাধ্যমে মামলুক সাম্রাজ্যকে গৌরবের স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছেন। তার সুদীর্ঘ রাজত্বকাল নানাবিধ বৈচিত্র্যময় । 

তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও বিচক্ষণ কুটনীতিবিদ ছিলেন । শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তা তাকে ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

সুলতান আল নাসিরের পরিচয় : মালিক আল-নাসির ছিলেন বাহারি মামলুকদের মধ্যে খ্যাতনামা সুলতান কালাউনের সুযোগ্য পুত্র। তার মাতা ছিলেন জনৈক মোঙ্গল রাজকন্যা। 

আল নাসির ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সুলতান কালাউনের পর তদীয় পুত্র তদীয় পুত্র খলিফা আল- আশরাফ মামলুক সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

খলিফা আল আশরাফের মৃত্যুর পর তার কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় মামলুক সালতানাতের প্রধান আমিরেরা তার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা নাসিরকে আল-মালিক আল-নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ উপাধি দানপূর্বক ১২৯৩ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে মিশরের সিংহাসনে বসান। 

মামলুক সুলতানদের মধ্যে তার রাজত্বকাল ছিল সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত। তিনি তিন বার সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং দু বার পদচ্যুত হন। ১৩০৯ সাল থেকে মূলত সুলতান মালিক আল-নাসিরের প্রকৃত রাজত্বের সূচনা হয়।

মামলুক সুলতান আল নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব : মামলুক সুলতান আর নাসিরের প্রশাসনিক কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। তিনি বৈদেশিক নীতি ও ধর্মীয় নীতিতে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। নিচে তা আলোচনা করা হলো :

১. বৈদেশিক নীতি : PK. Hitti বলেন, আল নাসিরের দীর্ঘ রাজত্বকাল যুদ্ধ বিগ্রহ অপেক্ষা কৃতিত্বের জন্য সমধিক পরিচিত ছিল। বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে তিনি তার পিতাকে অনুসরণ করতেন। 

তিনি পোপ, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের রাজ ন্যবর্গকে ক্রুসেড প্রেরণ করতে উত্তেজিত করে পত্র প্রেরণ করেন। তিনি বিদ্রোহী নেতা আইয়ুব তাশকে নাসির হত্যা করেন। 

১৩৪১ সালে ভারতের সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুলকের সঙ্গে খোরসেন আক্রমণের জন্য সন্ধি করেন। ১৩২০ সালে রাজা পঞ্চম লিউ লাগলেগ বলে ঝগড়া বাধলে রাজ্য ও রাজধানী লুন্ঠন করে আগুন দিয়ে পুড়ে দেওয়া হল। 

তিনি তিনবার হজ্ব পালন করেছিলেন। ১৩১৭ সালে মদিনায় তার স্বীকৃতি হয়। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ রাজ্যে ব্যর্থ হলে নাসির পশ্চিমাঞ্চলে রাজ্যবিস্তারে সমর্থ হন।

২. ধর্মীয় নীতি : আল নাসিরের ধর্মীয় নীতি ছিল অসাধারণ। তিনি গির্জাগুলোকে হেফাজত করতেন। যার কারণে মুসলমানরা তার উপরে ক্ষেপে যান। 

১৩২১ খ্রি: ২০,০০০ লোকের সামনে তিনি বলেন “ইসলামই একমাত্র ধর্ম" খোদা এটাকে রক্ষা করেন। “ইসলামের সুলতান আমাদেরকে রক্ষা করেন, অবিশ্বাস্য খ্রিস্টানদেরকে নয়।” 

জনমতের চাপে পড়ে মসির পূর্বের ফরমানকে বাধ্যতামূলক করেন। সুলতান খ্রিস্টানদের সাহায্য করায় তারা মুসলমানদের শোষণ করত।

৩. সামরিক সফলতা : সুলতান সম্রাট হলেও তিনি সৈন্য চালনায় দক্ষ ছিলেন না। তার সামরিক বাহিনীর সফলতা মামলুক বাহিনীর সফলতার ফল, নিজের সেনাপতিত্ত্বের নয়। নাসিরের বৈদেশিক নীতি মোটের উপরে সাফল্যমণ্ডিত ছিল।

৪. শিল্প ও স্থাপত্য : ইউরোপের জাদুঘরগুলোতে মুসলিম শিল্পের কোন নিদর্শন গেলেই ধরে নেয়া হত যে, আল সালেফি বা আল নাসিরের কথাটা লেখা থাকবে। 

একথা থেকেই বোঝা যায় যে, শিল্প ও স্থাপত্যে নাসিরের কতটা অবদান ছিল। নাসিরিয়া কলেজ (১২৯০-১৩০৪), কায়রো দুর্গ, নাসিরিয়া মসজিদ (১৩১৮) তার প্রধান স্থাপত্যকীর্তি ।

৫. জনকল্যাণমূলক কাজ : শাসক হিসেবে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও কঠোর ছিলেন।

(ক) তিনি জমি জরিপ করে নতুন রাজ্য নির্ধারণ করেছিলেন। 

(খ) খাল খনন ও অনেক বাগান বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। 

(গ) ঘাটতি পূরণের জন্য তিনি সিরিয়া থেকে খাদ্য শস্য আমদানি করেছিলেন।

(ঘ) ঘোড়া, নৌকা, আখ, মুরগি, লবণ ও ক্রীতদাসের উপর কর মওকুফ করেন।

৬. কূটনৈতিক সম্পর্ক : তিনি প্রাধান্য বিস্তারের জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর বেশি জোর দিতেন। তিনি ১৩২৭, ১৩২৬ সালে গ্রিক সম্রাটের কাছে পুনপুন দূত প্রেরণ করেন। ১৩৩১-৩২ সালে কায়রোতে দূত প্রেরণ করেন। এভাবে তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মামলুক সুলতান আল-নাসির ছিলেন একজন প্রশস্ত হৃদয়, দৃঢ়চিত্ত, সম্পন্ন স্বেচ্ছাচারী, কঠোর নীতিবান, বিচক্ষণ বুদ্ধিমান এবং প্রতি হিংসাপরায়ন লোক। 

শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমন ও বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন- উভয় ক্ষেত্রেই তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। 

তার রাজত্বকালে মিশরের ঐশ্বর্য্য ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এবং জনগণ সুখশান্তিতে বসবাসের নিশ্চয়তা লাভ করে । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ