মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ
মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ

মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ

  • অথবা, মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা দাও। 
  • অথবা, মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবনের উপর একটি নিবন্ধ রচনা কর।
  • অথবা, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবনের আলোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ইংরেজরা মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কারস্বরূপ তাকে বাংলার মসনদে বসায়। 

কিন্তু তাদের দাবি পূরণে তিনি ব্যর্থ হলে ১৭৬০ সালে তাকে সরিয়ে দিয়ে তার জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার নবাব নিযুক্ত করেন। 

ইংরেজদের দয়ায় নবাব হলেও মীর কাশিম ছিলেন স্বাধীনচেতা ও দেশপ্রেমিক। তিনি মসনদে বসেই ইংরেজ ও তাদের দালাল স্থানীয় জমিদারদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ণ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সিংহাসন আরোহণ : মীর জাফর ইংরেজদের প্রত্যাশা মাফিক অর্থ যোগান দিতে ব্যর্থ হলে তারা তাকে ডাচদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ এনে পদচ্যুত করে এবং ১৭৬০ সালের ২২ অক্টোবর তার জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার মসনদে বসানো হয়।

→ মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন : ইংরেজদের সাহায্যে ক্ষমতায় আসলেও মীর কাশিম ছিলেন সত্যিকারের স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিক শাসক। নিম্নে তার সংগ্রামী জীবনের উপর আলোকপাত করা হলো:

(ক) প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ : দূরদর্শী মীর কাশিম উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, তার শ্বশুরের পতনের প্রধানতম কারণ ছিল। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা। 

তাই তিনি সিংহাসনে বসেই ইংরেজদের প্রাপ্য অর্থ বাবদ তাদের বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা দান করে দেন এবং শাসনব্যবস্থার ব্যয় যথাসাধ্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি . কয়েকটি নতুন আবওয়াব প্রবর্তন করে আর্থিক ভিত্তি মজবুত করেন।

(খ) বিদ্রোহী জমিদারের দমন : আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করে মীর কাশিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার বিদ্রোহী জমিদারদের তার আনুগত্য মানতে বাধ্য করেন। ১৭৬২ সালের মধ্যে তিনি প্রশাসনে একটা স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হন।

(গ) রাজধানী স্থানান্তর : মীর কাশিম অনুধাবন করেন মুর্শিদাবাদের উপর ইংরেজদের সতর্ক নজর রয়েছে আর এখানে থেকে নবাবের পক্ষে স্বাধীনভাবে শাসন করা সম্ভব হবে না। তাই তিনি ইংরেজদের প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুগের স্থানান্তর করেন।

(ঘ) সৈন্যবাহিনী পুনর্গঠন : ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ অনিবার্য বুঝতে পেরে মীর কাশিম তার সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনে তৎপর হয়ে উঠলেন। 

তিনি সুমেরু ও মার্কার নামক দুজন ইউরোপীয় সৈন্যের সাহায্যে তার বাহিনী ইউরোপীয় কায়দায় প্রশিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করেন। তার প্রধান সেনাপতি ছিলেন আর্মেনীয় বণিক খোজা পিদ্রুর ভাই গ্রেগরি।

(ঙ) অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন : উন্নত অস্ত্রসস্ত্র ছাড়া সিংহাসনে টিকে থাকা যাবে না, তাই তিনি মুঙ্গেরে একটি উন্নত কামান ও বন্দুক নির্মাণের কারখানা স্থাপন করেন।

(চ) বাণিজ্যের শুল্ক প্রত্যাহার : ১৭৫৭ সালে কোম্পানি মুঘল সম্রাট ফররুহুঁশিয়ারের কাছে থেকে শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ লাভ করেন। 

কিন্তু কোম্পানির দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মচারী এই সরকারি ফরমানের অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত বাণিজ্য শুরু করে ফলে নবাবের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি. দেশীয় বণিকরাও মারাত্মক সমস্যায় পতিত হয়। এই সমস্যার সমাধানে জন্য রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর শুল্ক উঠিয়ে দেন।

(হ) ড্যাপিটার্টের সাথে চুক্তি : নবাবের সাথে কোম্পানির সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি ঘটলে ইংরেজ কর্মকর্তা ভ্যাপিটার্ট নবাবের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। 

এতে বলা হয়, কোম্পানি সপ্তকের অপব্যবহার রোধ করবেন এবং আন্তঃবাণিজ্য কর প্রদান করবেন। কিন্তু এই চুক্তি কলকাতা কাউন্সিল বাতিল করলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়ে পড়ে।

(জ) মীর কাশিমের পদচ্যুতি : ইংরেজরা ১৭৫৩ সালে ১ অক্টোবর পাটনা দুর্গ আক্রমণ করলে কোম্পানির সাথে তার সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। 

ইংরেজরা তাকে পদচ্যুত করে তার শ্বশুর মীর জাফরকে বার্ষিক ৩০ লক্ষ টাকা পরিশোধের চুক্তিতে পুনরায় বাংলার সিংহাসনে বসান।

(ঝ) কাটোয়ার যুদ্ধ : মীর কাশিমের পদচ্যুতির ফলে ১৭৬৩ সালের ১৯ জুলাই তার সেনাপতি তকী খানের সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ আরম্ভ হয়, যা ইতিহাসে কাটোয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

যুদ্ধের শুরুতে তকী খানের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ইংরেজরা পিছু হটতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ একটি বুলেট তকী খানের মাথায় লেগে তিনি মৃত্যুবরণ করলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় এবং মীর কাশিম পরাজিত হয়ে পিরিয়ার চলে যায়।

(ঞ) গিরিয়ার যুদ্ধ : ইংরেজরা বিনাযুদ্ধে কাটোয়ার দুর্গ দখল করে মুর্শিদাবাদও দখল করে এবং ১০০০ ঘোড়া ও ৪০০০ সৈন্য নিয়ে গিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করে। ১৭৬৩ সালের ২ আগস্ট যুদ্ধ আরম্ভ হয়।

যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে ইংরেজরা নাজেহাল হয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ নবাবের সেনাপতি মীর বদরুদ্দিন আহত হলে যুদ্ধের গতি পাল্টে যায় এবং সমেরু মার্কার তাদের দল নিয়ে পালিয়ে যান । ফলে এই যুদ্ধেও নবাবের বাহিনী পরাজিত হয়।

(ট) উদয়নালার যুদ্ধ : গিরিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম তার বাহিনী নিয়ে উদয়নালার প্রান্তরে ইংরেজদের মুখোমুখি হন। কিন্তু এই যুদ্ধে তার দেশি-বিদেশি সৈন্যদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তিনি পরাজিত হন।

(ঠ) পার্টনার হত্যাকাণ্ড : উদয়নালার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। পরে ১৭৬৩ সালের ১ অক্টোবর মুঙ্গের দুর্গ ইংরেজগণ দখলে নিলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি বন্দি ইংরেজদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। এই হত্যার | প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইংরেজরা মীর কাশিমকে মুঙ্গের হতে পাটনা পর্যন্ত তাড়িয়ে বেড়ান ।

(ড) বক্সারের যুদ্ধ : মীর কাশিম অযোধ্যার নবাব সুজা- উদ-দৌলা এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সাহায্য নিয়ে ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর বক্সার প্রান্তরে সমবেত হন। 

কিন্তু যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনচরার কৌশলের কাছে নবাবের সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হয় এবং নিরুপায় সুজা-উদ-দৌলা ও শাহ আলম ইংরেজদের সাথে চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হন। যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মীর কাশিম ১৭৭৭ সালের ৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নবাব মীর কাশিম ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক শাসক। কিন্তু তার সৈন্যবাহিনীর অদক্ষতা, অস্ত্রশস্ত্রের স্বল্পতা এবং দূরদর্শিতার অভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত তার নির্মম পরাজয়বরণ করতে হয়। যার ফলে বাংলার স্বাধীনতা ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ। যদি তোমাদের আজকের মীর কাশিমের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ